ঢাকার দুটি প্রবেশমুখ যানজটমুক্ত রাখা
পদ্মা সেতুর প্রধানতম মানবিক উপযোগ হচ্ছে মধ্যপশ্চিম, দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ফেরি পারাপারের দীর্ঘ সময় অপচয় ও কষ্ট লাঘবকরণ। এর অর্থনৈতিক উপযোগ হচ্ছে কর্মমুখী যাত্রী ও পণ্যবাহী যানের সময়, জ্বালানি খরচ, শ্রমঘণ্টা সাশ্রয়। এই অঞ্চলকেন্দ্রিক কাঁচা ও পচনশীল কৃষি ফলন ও মৎস্য অর্থনীতিকে গতিশীল করবে পদ্মা সেতু। বর্তমানে ফেরি পারাপারে সময়ভেদে গড়ে দেড় থেকে তিন ঘণ্টা প্রয়োজন (ঈদ ও যানজটে প্রায় ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত), যা পদ্মা সেতুর মাধ্যমে মাত্র ১৫ মিনিটে নেমে আসবে। কিন্তু পদ্মা সেতু পেরিয়ে খুব কম সময়ে বুড়িগঙ্গার সেতুদ্বয়ে এলেও ঢাকার প্রবেশমুখের যান চলাচল ব্যবস্থাপনা উন্নত না করলে এখানে পেছনের রাস্তায় এসে অর্জিত শ্রমঘণ্টা, কষ্ট এবং অর্থনৈতিক উপযোগগুলোর (অপরচুনিটি কস্ট) কিছু অংশ অপচয় হয়ে যাবে। বিশেষ করে পোস্তগোলা সেতু-পোস্তগোলা বাসস্ট্যান্ড এবং বাবুবাজার সেতু-বাবুবাজার মোড় ঢাকার এই দুই প্রবেশ ও বাহিরপথের যানজট নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পদ্মা সেতুর পূর্ণ সুফল ভোগ করা যাবে না। বর্তমানে ফেরি পারাপারের ধীরতার কারণে পিক আওয়ারে ঢাকামুখী যানের মোট সংখ্যা সময়ের হারে বেশ কম। ফলে পদ্মা সেতু চালু হলে দিনের ব্যস্ত সময়ে দুই প্রবেশমুখের ট্রাফিক প্যাটার্ন পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে। ঢাকার প্রবেশপথকে যানজটমুক্ত রাখা তাই পদ্মা সেতুর পূর্ণ সুফল কিংবা সব অর্থনৈতিক উপযোগ লাভের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।
বিমানবন্দর ও ঢাকা বাইপাস করা ট্রাফিক নগর ট্রাফিক থেকে আলাদা করা
পদ্মার অপর পাড়ের তিন বিভাগের মোট ২১ জেলার সব মানুষ ও পণ্যের গন্তব্য মূল ঢাকা নয়। অনেকেই ঢাকা বিমানবন্দরের ট্রাফিক এবং উল্লেখযোগ্য অংশ ঢাকা বাইপাস করা ট্রাফিক। ঢাকার সড়ক নকশার একটা উল্লেখযোগ্য ত্রুটি কিংবা দুর্বলতা হচ্ছে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও ঢাকা বাইপাস করে দেশের অন্য ৪৩ জেলায় যাওয়ার ট্রাফিক নগর ট্রাফিকের সঙ্গে সংযুক্ত। ফলে ঢাকার প্রবেশমুখের যানজট অর্থনীতিকে ভোগায়। পদ্মা সেতুর সময়, জ্বালানি খরচ, শ্রমঘণ্টার সাশ্রয় এবং পচনশীল পণ্য সুরক্ষাবিষয়ক উপযোগগুলো সঠিকভাবে পেতে হলে বিমানবন্দর ও ঢাকা বাইপাস ট্রাফিককে অবশ্যই নগর ট্রাফিক থেকে আলাদা করতে হবে। বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা ড্যাপ, মেট্রোরেল ও বিআরটি পরিকল্পনায় নগরের নিজস্ব ট্রাফিক, বিমানবন্দর ও ঢাকা বাইপাস ট্রাফিকগুলোকে শ্রেণিকৃত করে সড়ক ও রুট নকশার বিষয়কে অতীব গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।
দূরত্ব, জ্বালানি খরচ এবং টোল হারের ত্রিপক্ষীয় সমন্বয়
দেশের মধ্যপশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাগুলোর পণ্য ও যাত্রীবাহী বাহনগুলো প্রধানত পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ ফেরিঘাট ব্যবহার করে ঢাকায় প্রবেশ করে ও বের হয়। এই জেলাগুলো হচ্ছে সাতক্ষীরা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ইত্যাদি। অন্যদিকে দেশের মধ্যাঞ্চলের বেশ কিছুসহ মূলত দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুরো মাওয়া-জাজিরা ফেরিঘাট ব্যবহার করে থাকে। এগুলো হচ্ছে মোংলা, খুলনা, বাগেরহাট, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা ইত্যাদি। এই দুই ফেরিঘাট হয়ে রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলায় সড়ক যোগাযোগ চলে।
মাওয়া-জাজিরায় পদ্মা সেতু চালু হলেও তা ব্যবহার করে দেশের মধ্যপশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমের এই জেলায় যাতায়াতে পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ রুটের চেয়ে বেশি সময় ও জ্বালানি লাগবে। তথাপি পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ ফেরিঘাট ব্যবহারকারী যানবাহনের কিছু অংশ বেশি দূরত্ব পাড়ি দিয়েও পদ্মা সেতু ব্যবহার করতে চাইবে। এই নতুন ঝোঁক (ট্রাফিক রি-ডিস্ট্রিবিউশন) বাস্তবতা পাবে কি পাবে না, তা তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। এক. বাবুবাজার ও পোস্তাগোলা ব্রিজ ঢাকার এই দুই দখিনা প্রবেশমুখে যানজটের পরিবর্তিত পরিস্থিতি। দুই. বর্ধিত যাত্রাপথের দৈর্ঘ্য ও জ্বালানি খরচের নতুন বিন্যাস (কষ্ট বেনিফিট)। তিন. টোলের হার। প্রথম দুটি নিয়ামককে টোলের নিম্ন হার দিয়ে কমপেন্সেইট করা যাবে কিছুটা। বিপরীতে অধিক জ্বালানি পুড়িয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার পর যাত্রী বা পণ্যবাহী যানের কোনোটাই উচ্চ টোল দিয়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে চাইবে না। এতে অর্থনীতির স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
পদ্মা সেতুর টোল এখনো নির্ধারিত না হলেও খসড়া টোল তালিকায় ফেরির দেড় গুণ টোল নির্ধারণ থেকে সরে আসা এবং টোল বৈষম্যগুলোর বিলোপ দরকার। বরং প্রান্তিক অর্থনীতিকে এগিয়ে রাখা খাত বিবেচনায় নতুন টোলব্যবস্থা সাজানো দরকার, যেখানে উচ্চবিত্ত বেশি টোল পরিশোধ করবে এবং নিম্নবিত্ত করবে নামমাত্র।
ফারাক্কার সব গেট একসঙ্গে খোলার পরিপ্রেক্ষিতে পদ্মার উত্তাল বন্যা ও বর্ষাকালীন ঝুঁকিপূর্ণ প্রবাহকালে কিংবা টানা বৃষ্টি, ঘন কুয়াশা ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফেরি চলাচল বন্ধ হলে, নাব্যতা সংকট হলে, ঈদের আগে-পরে পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ ফেরিঘাটে বেশি যানজট হলে, কোরবানির ঈদে গরুর ট্রাকের অতি দীর্ঘ অপেক্ষা থাকলে কেউ কেউ পদ্মা সেতু দিয়ে পার হওয়ার বিকল্প ভাববেন। কিংবা ফেরিডুবি, বড় ধরনের যানজট, সড়ক দুর্ঘটনায় রাস্তা বন্ধ সাপেক্ষে পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ ফেরিপথ হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করা কিংবা ঢাকাকে বাইপাস করা যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহনের উল্লেখযোগ্য অংশ পদ্মা সেতু ব্যবহারের একটা স্বাভাবিক প্রবণতা দেখাবে। অর্থনীতি গতিশীল রাখার এই বিকল্প প্রবণতাগুলোকে স্বাগত জানাতে হবে এবং তার জন্য অবশ্যই টোলের হার সহনীয় এবং কম রাখতে হবে।
গতানুগতিক নয়, বুদ্ধিদীপ্ত নতুন টোলব্যবস্থা
পদ্মা সেতু শুধু যোগাযোগব্যবস্থা সহজ করবে না, এতে কৃষি, মৎস্য, জরুরি স্বাস্থ্যসেবা ও শিল্পসহ বেশ কিছু খাতে অর্থনৈতিক উপযোগও সৃষ্টি হবে। কিন্তু টোল বেশি হলে ফেরির বিপরীতে প্রাপ্ত বর্ধিত অর্থনৈতিক উপযোগ সরকারই খেয়ে ফেলবে, জনগণ তেমন পাবে না। যেখানে সেতু বিভাগসহ সরকারের সব বিভাগই বার্ষিক বাজেট বরাদ্দে চলে, সেখানে অর্থ বিভাগ থেকে টাকা ধারের অজুহাত দেখিয়ে বাজেট অর্থায়নে নির্মিত সেতুতে উচ্চ টোল আদায় কাম্য নয়। বরং দেশীয় অর্থায়নে তৈরি বলে কৃষি ও কৃষির উপখাত যেমন সবজি, ফল, মাছ, সার, কোরবানি ঈদের গরুবাহী যান ইত্যাদিকে টোলমুক্ত রাখা যায়। বাংলাদেশ সরকার সারে কিছু ভর্তুকি দেয়, এটা ছাড়া কৃষিপণ্যের উৎপাদন মূল্য নিশ্চিত করতে তেমন ভূমিকা রাখে না। তাই ভারতের চলমান কৃষিবিপ্লব থেকে শিক্ষা নিয়ে কৃষিতে অবকাঠামোগত সুরক্ষা তৈরির নতুন চিন্তা দরকার।
বিদেশি ঋণের কথা বলে বাংলাদেশের বড় ও মাঝারি সেতুতে টোল ওঠানো থামে না কখনোই। অন্যদিকে টোলের অর্থ হারেও বৈষম্য দেখা যায়। গাড়ি, জিপ, মাইক্রোবাস সবার একই হার বিস্ময়কর। ১০ লাখ টাকার গাড়ি এবং ১ কোটি টাকার গাড়ি একই হারে টোল দিতে বাধ্য থাকে। নিম্নবিত্তের মুড়ির টিন মার্কা যাত্রী পরিবহনকারী বাসের টোল বিলাসবহুল বাসের চেয়ে সামান্য মাত্র কম রাখা হয়। এভাবে ধনী তোষণ একটা দেশের উন্নয়ন দর্শন হয়ে উঠতে পারে না। পদ্মা সেতুর টোল এখনো নির্ধারিত না হলেও খসড়া টোল তালিকায় ফেরির দেড় গুণ টোল নির্ধারণ থেকে সরে আসা এবং টোল বৈষম্যগুলোর বিলোপ দরকার। বরং প্রান্তিক অর্থনীতিকে এগিয়ে রাখা খাত বিবেচনায় নতুন টোলব্যবস্থা সাজানো দরকার, যেখানে উচ্চবিত্ত বেশি টোল পরিশোধ করবে এবং নিম্নবিত্ত করবে নামমাত্র। পাশাপাশি টোল নির্ধারণে কৃষিসেবা ও শিল্পের খাতভিত্তিক বিবেচনা দরকার।
মোংলা ও পায়রা বন্দরমুখী শিল্প অঞ্চলে প্রাধান্য
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল উত্তরাঞ্চলের মতো দরিদ্র্যপ্রবণ নয়, কিন্তু বাজেট বরাদ্দে দক্ষিণাঞ্চলের কিছু জেলা ব্যাপকভাবে এগিয়ে আছে। ২০১০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে মাত্র ৬ বছরে মাদারীপুরের দারিদ্র্য কমেছে ৬৪ জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ ৩১ দশমিক ২ শতাংশ। অথচ কুড়িগ্রাম জেলার প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৭১ জনই গরিব, ৬৪ শতাংশ দারিদ্র্য নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে দিনাজপুর। তথাপি শিল্প স্থাপনের দিক থেকে উত্তরবঙ্গ থেকেও পিছিয়ে দক্ষিণবঙ্গ। পায়রা বন্দর, মোংলা বন্দরের সঙ্গে পদ্মা সেতু ও রেল সংযোগ এই পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে পারে। কিন্তু এর প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াবে জমি প্রাপ্তি ও জমির উচ্চ মূল্য। সাময়িক স্থাপনা তৈরি করে পদ্মা সেতুর ভূমি অধিগ্রহণে মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির মচ্ছব যুক্ত হয়েছে, তাতে জমির বাজারমূল্য আসলে সরকারি দরের ২ থেকে ৩ গুণ বেশি হয়েছে। উপরন্তু, দেশে কৃষি, আবাসন বাণিজ্য ও শিল্পের জমি শনাক্তকরণ করা হয়নি। জমির দামের অন্যায্য উল্লম্ফন প্রত্যাশিত শিল্প বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এমতাবস্থায় মোংলা ও পায়রা বন্দর ব্যবহারকারী শিল্পকে কীভাবে জমি প্রাপ্তিতে প্রাধান্য দেওয়া যাবে, তার উপায় খুঁজতে হবে। দক্ষিণে বসে পদ্মা সেতু এবং ঢাকার যানজট পেরিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে গেলে শিল্প পরিবহনে উচ্চ দক্ষতা আনা যাবে না।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, পদ্মা সেতুর দুই পাড়ের রেলস্টেশন ব্যবস্থাপনাকে দক্ষ করতে হবে। মাত্র এক লাইনের রেলপথ হওয়ায় রেলজট এড়াতে দুই পাড়ের রেলস্টেশনগুলোকে বিশেষ দক্ষ করে তোলা না গেলে শিল্প পরিবহনে দক্ষতা আনা যাবে না। সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি প্রাপ্তি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ-সংযোগে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে যমুনার মতো অনুৎপাদনশীল বিনিয়োগের অভিজ্ঞতা হবে অনেকেরই। শুধু জমি ক্রয়নির্ভর বেসরকারি বিনিয়োগ সত্যিকারের উৎপাদনশীলতা বাড়াবে না। পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চল দুর্যোগপ্রবণ বলে আবহাওয়াজনিত সুরক্ষাও দরকার। অতি দক্ষ ঘূর্ণিঝড় পুনর্বাসন ব্যবস্থা, সমন্বিত সংকেত ব্যবস্থাপনা, কার্যকর বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ও জলাবদ্ধতা নিরসন অবকাঠামো দক্ষিণাঞ্চলের শিল্প সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ। তদুপরি, অর্থনৈতিক অঞ্চলকেন্দ্রিক উন্নত স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নিরাপত্তাসেবাও শিল্প বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ। সব মিলিয়ে শিল্পায়নকে মোংলা ও পায়রা বন্দরের আঞ্চলিক ব্যবহার, ভূমি ব্যবহার ও আঞ্চলিক সেবার সঙ্গে সম্পর্কিত করা গেলেই পদ্মা সেতুর প্রকৃত শিল্প সুফল আসবে। বাংলাদেশে শিল্পায়নের নিয়ামক আলোচনা করতে গিয়ে সবাই গ্যাস, বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট ও ব্রিজের কথা বলেন, কিন্তু কখনোই নাগরিক সুযোগ-সুবিধা, সুরক্ষা ও নিরাপত্তার কথা বলেন না। এই অবস্থান থেকে সরে শিল্প উন্নয়নের দর্শন ঠিক করতে হবে, না হলে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ দেশীয় উৎপাদন বাড়ার প্রাক্কলন অর্জিত হবে না পুরোপুরি। বরং প্রাপ্তি হবে শুধু জমির উচ্চমূল্য, অনুৎপাদনশীল যে প্রবৃদ্ধি আমাদের কাম্য নয়।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব টেকসই উন্নয়নবিষয়ক লেখক। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও বাংলাদেশ গ্রন্থের রচয়িতা। [email protected]