নদীগুলো বাঁধবন্দী করার সর্বনাশ
বেশ কিছু দিন আগে হলিউডের একটা সিনেমা দেখছিলাম, যার গল্পটা একটা গ্রামকে ঘিরে। গ্রামটিতে ছিল না কিছুর অভাব, প্রকৃতির সব উপাদানই ছিল। সবুজের সমারোহ, নদীর বিশুদ্ধ পানি, নির্মল বাতাস আর মানুষের সখ্য। একধরনের স্বর্গেই সবার বসবাস। নদীর অন্যদিকে জঙ্গলের ওপারে ছিল একটা শহর। শহরবাসী একদিন গ্রামবাসীকে বন্ধুত্বের আহ্বান জানিয়ে উপহার হিসেবে নদীর ওপর একটা বাঁধ নির্মাণ করে দিল। গ্রামবাসী ভাবল, বাঁধটি তাদের জন্য আশীর্বাদ। স্বল্প মেয়াদে কিছু সুফল এলেও ধীরে ধীরে পানির উৎস নষ্ট হলো, ব্যাহত হলো প্রকৃতির স্বাভাবিক প্রক্রিয়াও। ঘটতে থাকে নানান দুর্যোগ। গ্রামবাসী দিশেহারা হয়ে শেষ পর্যন্ত বাঁধটা ভেঙে দিল, ফিরে এল আগের অবস্থা। সিনেমার গল্পটার সঙ্গে বাংলাদেশের বন্যা ব্যবস্থাপনার কোথায় যেন একটা মিল রয়েছে। আরেকটু গভীরে যাওয়া যাক।
গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র মেঘনার পলি মাটি দিয়ে হাজার হাজার বছর ধরে গড়ে উঠেছে পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ, ইন্দো-গাঙ্গেয় সমতল ভূমি, যার মধ্যে নদীব্যবস্থার ব্যাপ্তি ১৭৫ মিলিয়ন হেক্টর। কিন্তু এর মাত্র ৭ শতাংশ রয়েছে বাংলাদেশে। এই ছোট্ট অংশ দিয়েই বন্যার সময় সেকেন্ডপ্রতি ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭০০ ঘনমিটার পানি বঙ্গোপসাগরে পড়ে। একসঙ্গে এত পানি নির্গমনের বিবেচনায় বাংলাদেশ পৃথিবীর বৃহত্তম। স্মরণাতীতকাল থেকে ছোট-বড় নদীনালা আর এদের বিস্তীর্ণ প্লাবনভূমি আমাদের সংস্কৃতিকে করেছে সমৃদ্ধ, দিয়েছে প্রাণশক্তি, সঙ্গে হরেক রকমের জীববৈচিত্র্য। ১৯৩০ সালে প্রকাশিত স্যার উইলকক্সের বইতে জানা যায়, নদীর দুকূল ছাপিয়ে বন্যা ছিল বাংলার সেচকাজের জন্য অত্যন্ত কার্যকর, প্লাবনভূমিগুলো মানুষকে দিত জীবন–জীবিকার উৎস। মানুষ জানত, কীভাবে প্রকৃতি তথা বন্যার সঙ্গে বসবাস করতে হয়। ঔপনিবেশিক আমলেও বন্যা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা ছিল, কিন্তু প্লাবনভূমির গুরুত্ব বজায় রেখে। ওই আমলে সড়কপথকে বন্যা থেকে নিরাপদ রাখা হতো ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন দমানোর জন্য।
নদীগুলো বাঁধবন্দী করার সর্বনাশ
সমস্যার শুরু ১৯৫০–র দশকে জনঘনত্ব আর বন্যার প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে। শুরু হয় বড় নদীগুলো ‘বাঁধবন্দী’ করা। যুগ যুগ ধরে প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থানের যে সংস্কৃতি ছিল, তা আস্তে আস্তে ভেঙে পড়ে, মানুষকে পেয়ে বসে প্রকৃতি জয়ের নেশা। হারিয়ে যেতে থাকে প্লাবনভূমির চরিত্র। স্বল্প মেয়াদে ফলাফল প্রত্যাশার চেয়ে ও বেশি হওয়ায় দিন দিন হলিউডের সিনেমার মতো শহরের লোকগুলো (রূপক অর্থে) নিত্যনতুন ইঞ্জিনিয়ারিং সমাধানের দিকে এগোতে থাকে। করবেই না কেন। এ রকম সমাধানে কেউ কেউ দ্রুত আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে ওঠে। মাস্টার্স গবেষণায় (১৯৯৭ সাল) উপাত্ত সংগ্রহে রাজশাহীর শহর রক্ষা বাঁধের কার্যকারিতা জানতে পাউবোর এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথোপকথনে যা তথ্য পাই, তা ছিল এমন, গ্রোয়েন বা বালুর ব্যাগ কতটা নদীতে ফেললাম, তার কোনো হিসাব নেই। কারণ, নদীতে নেমে কেউ গুনতে যাবে না, পারবেও না। যেহেতু জবাবদিহি কম বা নেই, সেহেতু বন্যা নিয়ন্ত্রণে ‘বাঁধবন্দী’ বা বালুর বস্তা ব্যবহারের মজাটা এখানেই!
উপনিবেশ–পরবর্তী সময়ে দক্ষিণ এশিয়ায় বাঁধ বন্যা নিয়ন্ত্রণের বড় হাতিয়ার হয়ে ওঠে। বড় নদীগুলোকে কবজায় আনার জন্য মানুষ বিভিন্ন পন্থা (বাঁধ নির্মাণ তার একটি) অবলম্বন করে, বিশেষ করে নদীর উৎসস্থলে বা ভারতের বিভিন্ন অংশে—যার অনেক কিছুই অস্পষ্ট বা জানানো হয় না। আবার মানুষ নদীকে বশ করতে গিয়ে উল্টো ফলও হয়েছে। জলজ্যান্ত উদাহরণ হচ্ছে গঙ্গার ফারাক্কা ব্যারাজ, যার প্রভাবে ভারতের অনেক স্থানে বন্যা এখন নিয়মিত ঘটনা; অথচ এর মূল লক্ষ্য ছিল কলকাতা বন্দরকে হুগলী নদীতে ক্রমবর্ধমান পলি পড়ার হাত থেকে রক্ষা করা। বাংলাদেশেও এই ব্যারাজের বিভিন্ন প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মাটির/পানির লবণাক্ততার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ফারাক্কা ব্যারাজের অবদান বলে গবেষণায় প্রকাশ। নেপালেও হাইড্রোইলেকট্রিক ড্যামের কারণে গঙ্গার শাখা নদী কোশী এখন খুবই বন্যাপ্রবণ। ২০০৮ সালে প্রলয়ংকরী বন্যায় কোশী নদীর গতিপথের ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষণীয়। তাই কোশী নদীকে বলা হয় বিহারের দুঃখ।
মধ্য ও উত্তরবঙ্গে বন্যা কেন বেশি
কয়েক দিন ধরে গণমাধ্যমে খবর আসছে, অনেক নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে, কিন্তু পানি নামছে না, বিশেষ করে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে। বন্যার তীব্রতা ও এই অঞ্চলগুলোয় এবার বেশি। হবে না কেন? বাঁধের কারণে নদী আর প্লাবনভূমির অনুভূমিক দূরত্ব বিচ্ছিন্ন হয়েছে বহু আগেই। সঙ্গে যোগ হয়েছে হাজারো রকমের অবকাঠামো, অপরিকল্পিত জনবসতি আর জলবায়ুর পরিবর্তনে অল্প সময়ে মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টিপাত।
আমাদের তিনটি বড় নদীব্যবস্থার মধ্যে ব্রহ্মপুত্রে এখন পর্যন্ত উজানে কোনো ড্যাম নেই; যদিও এ ব্যাপারে কাল্পনিক তথ্য অনেক। আনুষ্ঠানিক কিছু জানা যায়নি। পৃথিবীর বড় নদীগুলোর মধ্যে ব্রহ্মপুত্রের বৈশিষ্ট্য খুবই জটিল, একে তো ভূমিবৃত্তির ঢাল খুবই তরঙ্গায়িত, অন্যদিকে এটা বিনুনিসদৃশ। পানিপ্রবাহও গঙ্গা বা মেঘনার তুলনায় বেশি। রয়েছে পলিপ্রবাহ এবং স্রোতের প্রখরতা। আজকে যে জায়গায় এই নদীকে দেখছি, তা একসময় ময়মনসিংহ জেলার পাশ দিয়ে প্রবাহিত হতো, ১৮৯৭ সালের এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়।
ব্রহ্মপুত্রের বাংলাদেশ অংশে ২১৭ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের মাধ্যমে এর গতি-প্রকৃতির পরিবর্তন সাধিত হয়, পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর ভূমি ব্যবহারে আসে ব্যাপক পরিবর্তন, ফলে প্লাবনভূমি হারিয়ে যায় দ্রুত। একই অবস্থা দেখা যায় দেশের অন্য প্লাবনভূমিতে, যেখানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ বা একই রকম অবকাঠামো রয়েছে। স্বল্প মেয়াদে এগুলো কিছু ফল দিলেও দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ভূরি ভূরি। যেমন সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, পাবনা, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইলসহ আশপাশের জেলাগুলোয় বন্যার স্থায়িত্ব অতীতের তুলনায় বেশি হয়। যদিও দেশের মধ্যাঞ্চলের বন্যায় ব্রহ্মপুত্রের প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম, কিন্তু এর পানি যখন পদ্মা আর মেঘনার প্রবাহের সঙ্গে যোগ হয়, তখন মধ্যাঞ্চলেও বন্যার ব্যাপকতা বাড়ে। যদিও এবারের বন্যাকে কেউ ১৯৯৮ সালের মতো বিধ্বংসী বলছে না, স্থায়িত্বের দিক থেকে এটা ইতিমধ্যে ৩৪ দিন অতিবাহিত করেছে, আগস্টের মাঝামাঝি অবস্থার উন্নতির আশা করছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। উজানের এবং দেশের অভ্যন্তরের মাত্রাতিরিক্ত বর্ষণ আর সারা দেশে ‘প্লাবনভূমি সুরক্ষায়’ ৭ হাজার ৫৫৫ কিলোমিটার বাঁধ পানির দ্রুত নির্গমনকে প্রলম্বিত করছে। বন্যার পানি লোকালয়ে একবার ঢুকলে সহজে নামতে পারে না। ভঙ্গুর নিষ্কাশনব্যবস্থার কারণে মানুষের দুর্দশা, ফসলের ক্ষতি অনেক গুণ বাড়ে।
বন্যা নিয়ন্ত্রণের ফাঁদ
শুধু যদি বন্যা হতো তাও একটা কথা, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নদীভাঙন। পলিমাটির দেশ বলে বেশি দিন ভূমিতে পানি জমে থাকলে মাটি নরম হয়ে ভাঙনকে তীব্রতর করে, জমিদার রাতারাতি হয়ে যায় পথের ফকির। পৃথিবীর বড় নদী অববাহিকায় বন্যাকালীন নদীভাঙন স্বাভাবিক, কিন্তু বন্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ভাঙনকে তীব্রতর করে। আমেরিকার মিসিসিপিতে বাঁধের দরুন নদীগর্ভে পলি জমে। এ কারণে ১৯৯৩ সালের বন্যায় বাঁধ ভেঙে মানুষ এবং সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। গবেষণায় দেখা যায়, আমাদের যমুনায় ডান তীরের ২১৭ কিলোমিটার বাঁধের কারণে নদীগর্ভ ভরাটসহ ভাঙন তীব্রতর হচ্ছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ মানুষকে মিথ্যা নিরাপত্তার আশ্বাস দেয়, ফলে তারা প্লাবনভূমিতে গড়ে তোলে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট। ভূমিরূপে আসে ব্যাপক পরিবর্তন, নদী অনেকটা চাপের মধ্যে পড়ে যায়। কাজের বা মানসিক তীব্র চাপ থেকে বাঁচার জন্য মানুষ যেমন হাঁসফাঁস করে, নদীও প্লাবনভূমি আর তীর ভাঙার মাধ্যমে কষ্ট থেকে বাঁচার চেষ্টা করে—আমরা যাকে বলি ‘নদীভাঙন’।
মানুষ নিজেদের জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত—নদী দখল, পানিদূষণ, নদীভরাট কত–কী, পরিণতি নিয়ে ভাবে না। যেমন চাঁদপুরে একটি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রের ‘অকালে’ নদীগর্ভে চলে যাওয়ার পর কেন এমন হলো তার পোস্টমর্টেম চলল কিছুদিন। বলা হলো আশ্রয়কেন্দ্রের নির্বাচিত স্থানটি ছিল ভুল অথচ ২ কোটি ২৯ লাখ টাকার কী অকালপ্রয়াণ, কী অপচয়। ঢাকা মহানগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে দুই সিটি করপোরেশনের প্রতিবছর ২০০ কোটি থেকে ৩০০ কোটি টাকা খরচ করল গত কয়েক বছর, কিন্তু ফলাফল হচ্ছে একটা ‘বড় শূন্য’। কে কাকে বলবে এই অব্যবস্থাপনার কথা, আমজনতার কাছে কোনো উত্তর নেই, শুধু দেখা ছাড়া। বিশাল বাজেটে প্রতিনিয়ত বন্যা নিয়ন্ত্রণের নামে প্লাবনভূমি আর নদীগুলোর ভূসংস্থানিক বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন সাধিত হয়। কিন্তু দেশের ভূসংস্থানিক অবস্থার কথা না ভেবেই গড়ে তোলা নদীর মৃত্যুফাঁদ।
নদীতে ফেলা টাকার কোনো হিসাব হয় না
ছোটবেলায় পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি বাজারে ‘একের ভেতর দুই বা তিন’ বই পাওয়া যেত। তখন বুঝতাম না। ভাবতাম, অল্প শ্রমে পরীক্ষায় বেশি নম্বর। ওই কৌশল ছিল আসলে নিজেকে ঠকানোর। আমাদের দেশের বন্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম অনেকটা ‘একের ভেতর তিন’—প্রতিবেশের ধ্বংস, নদী হত্যা আর হঠাৎ বড়লোক বনে যাওয়া। যেহেতু বন্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে দুর্নীতির বেশি সুযোগ থাকে, জবাবদিহি নেহাত কম, একশ্রেণির লোক এটাকে পুঁজি করে। দেশকে ঠকানোর মাধ্যমে নিজে সম্পদশালী হয়, সঙ্গে ধ্বংস করে পরিবেশ আর প্রতিবেশ। গরিব, প্রান্তিক কৃষক মরলে কার কী আসে–যায়।
প্রশ্ন জাগে, পারব কি আমরা প্লাবনভূমির আগের সেই চরিত্র ফিরিয়ে আনতে, যা প্রকৃতির সঙ্গে বাঁচতে শিখিয়েছে, অনুপ্রেরণা দিয়েছে সহাবস্থানের। নাকি আমরা নদীগুলোকে বাঁধবন্দী করে প্রকৃতি জয়ের বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাব? আমাদের কর্তাব্যক্তিরা কি দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের আহাজারি, নদীগুলোর বাঁচার আকুতি শুনতে পান? নাকি বন্যা শেষ হলেই সব ভুলে গিয়ে নদীগুলো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় মেগা প্রকল্প নেবেন। ইতিমধ্যে নদীভাঙনপ্রবণ ৫৪টি অবস্থান চিহ্নিত হয়েছে বলে খবরে প্রকাশ। এসবের কাজ ঈদের পর শুরু হবে, কিসের ভিত্তিতে করা হবে, জানা যায়নি। যদি ‘বাঁধবন্দী’ করা হয় মূল কাজ; তাহলে নদীভাঙন কমবে না বরং বাড়বে—দুই দশকের গবেষণার আলোকে এটা নির্দ্বিধায় বলতে পারি। হবে আমজনতার অর্থের অপচয়।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ: গরিবের ঘোড়ারোগ
২০২০ সালের জুন-জুলাইয়ে চীনের ইয়াংজি নদী অববাহিকায় ডাইক, বাঁধ ভেঙে বন্যা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, বিশ্বের সর্ববৃহৎ হাইড্রোইলেকট্রিক ড্যাম আজ হুমকির সম্মুখীন। যেখানে চীনের মতো অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তির পরাশক্তি প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করছে বন্যার হাত থেকে বাঁচার, আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের বন্যা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা গরিবের ঘোড়ারোগ বৈকি? সময় গেলে সাধন হবে না—এবার যেমন রোধ হয়নি বন্যার ব্যাপ্তি ও স্থায়িত্ব কমানোর সঙ্গে সম্পদহানি।
যদি বন্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম হয় মানুষকে বাঁচানোর, সম্পদের ক্ষতিরোধের, তাদের কথা মাথায় রেখে কার্যক্রম নেওয়া উচিত, প্লাবনভূমির উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় তাদের সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। কেননা, তারাই স্থানীয় প্রতিবেশ সম্পর্কে শহরের মানুষের চেয়ে বেশি ওয়াকিবহাল। মনে রাখা দরকার, ‘এক আকারে সব ফিট’ প্রবণতা বাস্তুসংস্থানের অপূরণীয় ও অপরিবর্তনীয় ক্ষতি করে। বন্যা ব্যবস্থাপনায় টেকসই প্লাবনভূমির উন্নয়ন, ভূমির বৈশিষ্ট্য, জলবায়ুর পরিবর্তনশীলতা ধর্তব্যের মধ্যে নেওয়া জরুরি। না হয় নিকট ভবিষ্যতে সারা দেশ ‘ওয়াটারওয়ার্ল্ড’–এ পরিণত হলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না।
আজ চারদিকে দুর্যোগের প্রকোপ দেখলে হলিউডের সেই সিনেমার কাহিনি সত্যি মনে হয়। আমরা যতই প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করব, ততই সে বিরূপ আচরণ করবে। তাই ভালো থাকার উপায় প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করা নয় বরং এর সঙ্গে মিলেমিশে থাকা। কেননা, দিন শেষে আমরা যে সবকিছু প্রকৃতি থেকেই পাই!
আশরাফ দেওয়ান: স্কুল অব আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্সেস, কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়া।