ত্রিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠকে জাপানের প্রস্তুতি ও প্রত্যাশা
জাপান, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার নেতারা আগামীকাল তাঁদের অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দেওয়া একসময়ে ত্রিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন। ২০০৮ সাল থেকে শুরু হওয়া শীর্ষ পর্যায়ের এই ত্রিপক্ষীয় আলোচনা তিনটি দেশ পালাক্রমে আয়োজন করে আসছে। এবারের স্বাগতিক দেশ জাপানের জন্য সময়টা অন্য একটি দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উত্তর কোরিয়াকে ঘিরে দেখা দেওয়া নতুন পরিবেশে জাপান হঠাৎ করেই অনাহূত এক বহিরাগত হিসেবে বিবেচিত হতে শুরু করেছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে চাইছেন কোরীয় উপদ্বীপ-সংক্রান্ত যেকোনো আলোচনার সঙ্গে জাপানকে আবারও সম্পৃক্ত রাখতে। তবে পরিবেশ এখন আর সেভাবে জাপানের অনুকূলে নেই। ফলে জাপানের নেতৃত্ব ত্রিপক্ষীয় এই শীর্ষ বৈঠকে অন্য দুটি দেশকে প্রভাবিত করার সব রকম চেষ্টা করে যাবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিতে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেচিয়াং এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন-জে ইন আগামীকাল সকালে জাপানে এসে পৌঁছাবেন এবং সকাল ১০টায় টোকিওর আকাসাকা প্রাসাদে ত্রিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠক শুরু হবে। বৈঠকের পর আগামীকাল দুপুরে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হবে এবং এরপর চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার নেতারা ভিন্নভাবে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন।
জাপান চাইছে শীর্ষ বৈঠকে যেন উত্তর কোরিয়া বিষয়ে জাপানের অবস্থানের প্রতিফলন ফুটিয়ে তোলা যায়। উত্তর কোরীয় পরমাণু অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা সম্পূর্ণভাবে ও পরীক্ষাযোগ্য উপায়ে বর্জন করার আগে দেশটির ওপর কঠোর চাপ প্রয়োগ জাপান অব্যাহত রাখতে চাইছে। অন্যদিকে জাপানের দুই প্রতিবেশী অবস্থানগত দিক থেকে অনেক বেশি নমনীয়। বিশেষ করে চীনের অবস্থান হচ্ছে এ রকম যে শান্তি প্রক্রিয়ায় দেখা দেওয়া সম্ভাবনাকে ধরে রেখে সেটাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে কট্টর অবস্থান বজায় রাখা কেবল অর্থহীনই হবে না বরং উল্টো ফলাফলও তা নিয়ে আসতে পারে। সে রকম অবস্থান থেকে উত্তর কোরিয়ার ওপর আরোপিত শাস্তিমূলক চাপ পর্যায়ক্রমে শিথিল করে আনার পক্ষপাতী চীন। ফলে শীর্ষ পর্যায়ের ত্রিপক্ষীয় আলোচনায় চীন চাইবে উত্তর কোরিয়ার ওপর খুব বেশি আলোকপাত না করে বরং তিনটি দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও জোরদার করে নেওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সংরক্ষণবাদী অবস্থানের মোকাবিলা করতে হলে বাণিজ্য ও অর্থনীতির ক্ষেত্র আঞ্চলিক সহযোগিতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে চীন মনে করে। ফলে জাপানের জন্য প্রতিবেশীদের নিজের অবস্থানের দিকে নিয়ে আসা সহজ হবে না বলেই বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমও মনে করছে।
মনজুরুল হক: শিক্ষক ও সাংবাদিক