আমরা যখন কোনো একটা ব্যবস্থার মধ্যে দীর্ঘদিন বসবাস করি, সেই ব্যবস্থাটি যতই নড়বড়ে হোক না কেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এক ধাক্কা দিয়ে তা ভেঙে ফেলা যায় না। ব্যবস্থাটির মধ্যে ছোট ছোট যে ফাঁকফোকর থাকে, তা চিহ্নিত করে যদি ঠিকঠাক পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তবে আবার চলতে শুরু করে, সাময়িক সময়ের জন্য হলেও। এরপর টেকসই ব্যবস্থা নেওয়ার উপায় বের করতে হয়। যেকোনো ক্ষেত্রেই টেকসই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রয়োজন হয় বড় বিনিয়োগ ও সময়।
আমাদের রাজধানী ঢাকা আয়তনের দিক থেকে বিশ্বের ছোট্ট শহরগুলোর একটি। অথচ এই শহরের লোকসংখ্যা কমবেশি দুই কোটি। বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের ৯ ভাগের ১ ভাগই এই শহরে, স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে বাস করেন। কারণ, বাংলাদেশের প্রায় সবকিছুই ঢাকাকেন্দ্রিক। লেখাপড়া, চাকরিবাকরি, শিল্পসাহিত্য, প্রেম–ভালোবাসা—সবকিছুর রাজধানীই ঢাকা! বিকেন্দ্রীকরণের কথা আমরা অনেক বছর ধরে শুনছি বটে, কিন্তু এর তেমন কিছুই দৃশ্যমান নয়।
২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্বস ম্যাগাজিনের এক জরিপে ঢাকাকে পৃথিবীর সবচেয়ে নোংরা শহরের মধ্যে দ্বিতীয় বলে উল্লেখ করা হয়। আবার বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণে বিশ্বের নিকৃষ্ট শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা অন্যতম। সুস্থ মানুষ এই শহরের সড়কে নামলেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন—শারীরিক ও মানসিকভাবে। রিকশার ক্রিং ক্রিং, মোটরসাইকেলের পিপ পিপ, প্রাইভেটকারের প্যাঁ পোঁ, ট্রাকের ভোঁ ভোঁ। শব্দের এই ‘ফিউশনে’ পথচারীদের কানের পর্দা ফাটার জোগাড়। এই শহরে ভালো নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ আছেন গুটিকয়েক। তাই চিকিৎসকের সিরিয়াল না পেয়ে কানের গুরুতর রোগ নিয়েই দিনাতিপাত করতে হচ্ছে অনেক নাগরিককে। কানে আঙুল দিয়ে পথ চলতে গিয়ে এরা আবার আছেন সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে।
ঢাকা এক ‘শিক্ষানগরী’। মহাসড়কের পাশে ও মহাসড়ককে ঘিরে যেমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে, তেমনি অলিতে-গলিতে ছোটখাটো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাব নেই। এখানে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেমন আছে, তেমনি ৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়েও স্কুল চলছে। ধরে নেওয়া যাক, লোকের প্রয়োজনেই এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। পড়াশোনা যতটা হোক বা না হোক, কোনোভাবেই এসব প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব নয়। বরং তা বাড়বে, বাড়ছেও।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল, হলি ক্রস, রাজউক উত্তরা মডেল, আইডিয়াল স্কুল, মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ—এগুলো ঢাকার বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই বাইরেও বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের অনেক নামী স্কুল রয়েছে। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ঢাকার গৌরব। কারণ, এখান থেকে প্রতিবছর হাজার হাজার ছেলেমেয়ে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে উচ্চশিক্ষার দরজায় কড়া নাড়ে।
স্কুল শুরু ও ছুটির সময় শহরের সড়কগুলো দখল করে রাখা ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা যদি অর্ধেকে নামিয়ে আনা যায়, তবে নিশ্চিতভাবেই এই শহরে যানজট পরিস্থিতির লক্ষণীয় উন্নতি ঘটবে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অসহায়ের মতো বসে থাকা লাগবে না। আমাদের সড়ক ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ছোট গাড়িগুলোই যানজট সৃষ্টির বড় কারণ।
২.
ঢাকার দুঃখ যানজট। এ নিয়ে আলোচনা করতে করতে ওয়াটের ওপর ওয়াট বিদ্যুৎ খরচা হয়েছে। কিন্তু নাগরিকের মনে শান্তি আসেনি। আজকাল যানজট নিয়ে উচ্চবাচ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই বেশি।
ঢাকার এই বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো চাইলে যানজট নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ, ঢাকার গতি কমিয়ে দিচ্ছে এই বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। লেখার শুরুতে কোনো ব্যবস্থার মধ্যে যে ফাঁকফোকরের কথা বলেছি, সেটা বন্ধ হতে পারে তাঁদের উদ্যোগের মধ্য দিয়ে।
এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশই ক্লাসে আসে নিজস্ব ব্যক্তিগত গাড়িতে (প্রাইভেটকার)। মঙ্গলবার বিকেলে কথা হচ্ছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা ট্রাফিক জোনের সহকারী কমিশনার মো. রেফাতুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘আমরা বিশ্লেষণ করে দেখেছি, কেবল ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বেইলি রোড শাখায় প্রায় ১০ হাজার প্রাইভেটকার শিক্ষার্থীদের নামায় ও ওঠায়। আর সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজসহ সেখানকার মোট চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বহনকারী প্রাইভেটকারের সংখ্যা কমপক্ষে ২০ হাজার হবে।’
একটি নতুন প্রবণতার কথা জানালেন এই ট্রাফিক কর্মকর্তা। তা হলো, সকালে শিক্ষার্থী নামিয়ে এই গাড়িগুলো সড়ক থেকে সরে যাচ্ছে না। দুপুরে বা বিকেলে স্কুল ছুটির আগপর্যন্ত মালিকদের জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে এই গাড়িগুলো রাইডিংয়ে যুক্ত হচ্ছে। ফলে সারা দিনই শহরে যানজট থাকছে।
একটা বড় স্কুলে গাড়ির সংখ্যা যদি এমন হয়, তবে সব কটি মিলিয়ে কত হতে পারে, কিছুটা অনুমান পাঠক আপনি করতে পারবেন। এর সঙ্গে আছে নামীদামি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলো, যেখানে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের সংখ্যা আরও বেশি। মূলত ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে গাড়ি ছাড়া কোনো শিক্ষার্থী নেই। একজন শিক্ষার্থীর জন্য একটি গাড়ি।
ক্লাস শুরু ও ছুটির সময় শহরের সড়কগুলো দখল করে রাখা এসব ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা যদি অর্ধেকে নামিয়ে আনা যায়, তবে নিশ্চিতভাবেই এই শহরে যানজট পরিস্থিতির লক্ষণীয় উন্নতি ঘটবে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অসহায়ের মতো বসে থাকা লাগবে না। আমাদের সড়ক ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ছোট গাড়িগুলোই যানজট সৃষ্টির বড় কারণ।
ঢাকার কোনো কোনো স্কুলের সীমিত পর্যায়ে নিজস্ব পরিবহনব্যবস্থা আছে, যেমন স্কুলভ্যান, মাইক্রোবাস। কিন্তু অধিকাংশ বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তা নেই। এসব বড় স্কুল যদি তাদের নিজস্ব পরিবহন দিয়ে শিক্ষার্থীদের আনা–নেওয়া করত, তবে ছেলেমেয়েদেরও সুবিধা হতো, আর যানজটের যন্ত্রণা থেকে শহরবাসীরও কিছুটা উপশম হতো।
যেসব অভিভাবক ছেলেমেয়েদের ব্যক্তিগত গাড়িতে করে স্কুলে পাঠান, তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, স্কুলবাস থাকলে তারা ব্যক্তিগত গাড়িতে ছেলেমেয়েদের পাঠাবেন না। স্কুলবাসেই পাঠাবেন। এতে তাঁদের খরচ ও সময়—দুটিই সাশ্রয় হবে। মধ্য বাড্ডার বাসিন্দা ফারহানা মুন, যাঁর দুই সন্তান ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে পড়ে। তাঁদের দুটি গাড়ি ভোর ৬টা ৫০ থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত ব্যস্ত থাকে দুই সন্তানকে শহরের পৃথক দুই স্থানে অবস্থিত ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে আনা-নেওয়ার কাজে। তিনি বললেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ যদি উন্নতমানের বাসসেবা চালু করত, তবে তাঁদের অর্থ ও সময়ের খুব সাশ্রয় হতো।
আবার যেসব ছেলেমেয়ে গণপরিবহনে চড়ে স্কুলে যায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাদের অনেকটা সময় হাতে নিয়েই বাসা থেকে বের হতে হয়। কারণ, এসব গণপরিবহন জায়গায় জায়গায় থামিয়ে লোক তুলতে তুলতে গন্তব্যের দিকে যায়। এতে অনেক শিক্ষার্থীই সঠিক সময়ে ক্লাসে উপস্থিত হতে পারে না। স্কুলবাস চালু হলে তাদেরও সুবিধা হতো। অভিভাবকেরাও নিরাপদ বোধ করতেন। অবশ্য স্কুলবাস চালু হলেও ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কিছু থাকবেই। সেটা থাকতেই পারে।
৩.
এই শহরেই স্কুলবাস চালু হয়েছিল এক দশক আগে। কিন্তু আমরা তা ধরে রাখতে পারিনি। অনেক ভালো কিছুই আমরা ধরে রাখতে পারি না। খবরের কাগজে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় বোর্ড (ডিটিসিবি) ২০১১ সালের ১৫ জানুয়ারি প্রাথমিকভাবে ১৪টি বিআরটিসি বাস নিয়ে এ সেবা চালু করেছিল। ঢাকার আজিমপুর থেকে পল্লবী রুটে ২৬টি স্কুলের জন্য চালু হয়েছিল এ সেবা। শিক্ষার্থীরা, অভিভাবকেরা খুব খুশি হয়েছিলেন এ ব্যবস্থায়।
পরবর্তী সময়ে এ উদ্যোগ আরও জোরদার করার কথা থাকলেও উল্টো কয়েক মাসের মধ্যেই চালু হওয়া স্কুলবাস সেবাটি বন্ধ হয়ে যায়। এখন বিআরটিসি ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউসি) বলছে, তারা এ বিষয়ে কিছু জানে না। তাদের কিছু মনে নেই!
এ বিষয়ে খোঁজখবর করে জানা গেল, স্কুলবাস সেবার বাসগুলোতে শুরুর দিকে যথেষ্ট যাত্রী ছিল। কিন্তু পরে আসন ফাঁকা হতে শুরু করে। দুজন যাত্রী নিয়েও স্কুলবাস ছেড়ে গেছে, এমন খবর তখন পত্রিকায় বেরিয়েছে। এভাবে একদিন থেমে যায় স্বপ্নের স্কুলবাস সার্ভিস। মাউশি ও বিআরটিএ যদি ঠিকমতো প্রচার করতে পারত, হয়তো সেবাটি বন্ধ হতো না। আর এই সেবাটি ছিল নগর-পরিকল্পনারই একটি অংশ। এটা বন্ধ হওয়া দুর্ভাগ্যজনক।
তবে বিআরটিএ বা বিআরটিসির উদ্যোগে নয়, এখন দরকার স্কুলগুলোর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উন্নতমানের স্কুলবাস চালু করা। যে অভিভাবক তাঁর সন্তানকে ব্যক্তিগত গাড়িতে করে স্কুলে পাঠান, তিনি উন্নতমানের বাস না পেলে রাজি হবেন না হয়তো।
আমরা ভালো কিছুর জন্য সব সময় বিদেশের উদাহরণ দিই। আমাদের দেশের উদাহরণও যেন অন্য কোনো দেশ গ্রহণ করতে পারে, সে চেষ্টা করি না। ইউটিউবে একটা ভিডিওতে দেখলাম, কানাডায় যখন কোনো স্কুলবাস থামে, বাচ্চাদের ওঠানো ও নামানোর জন্য, আশপাশের সব গাড়ি দাঁড়িয়ে যায়।
পাশের কলকাতায় খোঁজ নিয়ে জানলাম, সেখানে বড় স্কুলগুলোর নিজস্ব পরিবহনব্যবস্থা আছে। মাঝারি স্কুলগুলোরও একটা ব্যবস্থা আছে। বড় স্কুলগুলোয় শিক্ষার্থীদের একটি অংশ নিজস্ব ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করে। একটি অংশ ব্যবহার করে গণপরিবহন। আর বড় অংশটি ব্যবহার করে স্কুলের নিজস্ব পরিবহন সেবা। কলকাতার সাংবাদিকদের সূত্রে এমন তথ্যই পাওয়া গেল। সেখানে ‘পুলকার’ নামে আরেকটি ব্যবস্থা আছে। কথা বলেছিলাম দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জের বাসিন্দা অদিতি চক্রবর্তীর সঙ্গে। তাঁর দুই ছেলেমেয়ে মিশনারি স্কুলে পড়ে। পুলকারের গাড়ি (ট্যাক্সি ধরনের) তাঁর সন্তানদের আনা–নেওয়া করে। পুলকার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অভিভাবক ও স্কুলের একধরনের চুক্তি থাকে। সাধারণত ১২ জন শিক্ষার্থী একটা পুলকারের গাড়িতে বসতে পারে। বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে কলকাতা শহরে যানজট নেই বললেই চলে। সিগন্যালে অপেক্ষা করতে হয় যতটুকু, ততটুকুই।
৪.
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আরেকটা নিয়ম চালু আছে। যেমন শিক্ষার্থী যে এলাকায় বসবাস করে, তাকে সেই এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য উৎসাহিত করা। ইউরোপ, কানাডা এই নিয়ম অনুসরণ করে। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশে, বিশেষ করে ঢাকার স্কুলগুলো এ বিষয়টিতে জোর দিচ্ছে। এটা ভালো দিক।
শিক্ষার্থীরা যদি নিজ নিজ এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়, তবে সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। জ্বালানি খরচ, অর্থ ও সময়ের সাশ্রয় হয়।
আর সব সময় দূরে গিয়ে বড় স্কুলে পড়লেই যে ফল ভালো হবে, এমন নয়। সব ভালো ফল ঢাকার বড় স্কুলগুলো করে, তা–ও নয়। যেমন সম্প্রতি মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার যে ফল বের হলো, এতে প্রথম হয়েছেন খুলনার ডুমুরিয়ার মেয়ে সুমাইয়া, তিনি তাঁর পড়াশোনা খুলনাতেই করেছেন। দ্বিতীয় হয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি মসজিদের ইমামের ছেলে আবদুল্লাহ। তিনিও পড়াশোনা করেছেন ওই জেলাতেই। গত বছর মেডিকেলে প্রথম হয়েছিলেন পাবনার মেয়ে মুনমুন, যিনি এসএসসি, এইচএসসি পাবনাতেই পড়েছেন।
আবার সর্বশেষ যে বিসিএসের ফল বেরোল, এতে যাঁরা ভালো ফল করেছেন, তাঁদের বেশির ভাগের স্কুল-কলেজ মফস্বলেই ছিল।
মোটের ওপর এটা উদাহরণ নয়। আবার একধরনের উদাহরণও।
৫.
সব রুটে না হলেও রাজউক কলেজ স্কুলবাস চালু করেছে। প্রকৃতপক্ষে স্কুলবাস চালু না করার পক্ষে কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। সিটি করপোরেশন বা সরকারের একটি ভূমিকা এ ক্ষেত্রে রয়েছে, তবে মূল ভূমিকাটা নিতে হবে স্কুলগুলোকেই। ইংরেজি মাধ্যমসহ বড় স্কুলগুলোর আর্থিক কোনো ঘাটতি থাকার কথা নয়। আর স্কুলবাস চালু করার বিষয়টি নতুন কোনো কথাও নয়। বহু বছর ধরেই আমাদের নগর–পরিকল্পনাবিদেরা প্রসঙ্গটি তুলছেন। তবু বড় স্কুলগুলোর ব্যবস্থাপনা কমিটি কেন সাড়াশব্দ করছে না, সেটা একটা জরুরি প্রশ্ন। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন, ফি নেওয়ার বেলায় কোনো ছাড় দেয় না তারা, তবে সেবা দেওয়ার বেলায় এত কুণ্ঠা কেন? একটি সামাজিক চাপ সৃষ্টি হওয়া দরকার, যাতে তারা উদ্যোগী হয়। আগে কিছু সমীক্ষা করে নেওয়া যেতে পারে। কারণ, এটা কোনো বিচ্ছিন্ন পদক্ষেপ না হোক। এটা হোক নগর-পরিকল্পনারই অংশ।
স্কুলবাস শিক্ষার্থীদের আনন্দের সময়কে দীর্ঘায়িত করবে।
কাজী আলিম-উজ-জামান প্রথম আলোর উপবার্তা সম্পাদক
ই-মেইল: alim.zaman@prothomalo. com