ডিজিটাল শৃঙ্খলে সংবাদমাধ্যম: ১০ দফা দাবি

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘ডিজিটাল শৃঙ্খলে সংবাদমাধ্যম’। ব্যাখ্যাটি এ রকম, আজকের ডিজিটাল প্রযুক্তির বিশ্বে গণমাধ্যম যেমন মুক্তভাবে দায়িত্ব পালনের অবারিত সুযোগ পেয়েছে, তেমনি এই ডিজিটাল পৃথিবী সংবাদমাধ্যমের জন্য নতুন সংকটও তৈরি করেছে। ডিজিটাল প্রযুক্তির অপব্যবহার করে অপতথ্যের প্রবাহ বেড়েছে। আবার এই অপতথ্য নিয়ন্ত্রণের নামে বিভিন্ন দেশ ডিজিটাল নিরাপত্তার কথা বলে নানা আইন করছে, যা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকেই টুঁটি চেপে ধরছে।

এই পরিস্থিতি সামনে রেখেই এ বছর বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের মূল উৎসবটি হচ্ছে উরুগুয়েতে। ইউনেসকো ও উরুগুয়ে যৌথভাবে এ আয়োজন করেছে। এই উৎসবে সরাসরি ও ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত থাকছেন বিশ্বের মুক্ত গণমাধ্যম আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। দিবসটি সামনে রেখে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছে শতাধিক সংগঠন।

এ বছর ইউনেসকো প্রবর্তিত গুইরেমো ক্যানো ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম পুরস্কার লাভ করেছে বেলারুশ সাংবাদিক ইউনিয়ন। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় সাহসী ভূমিকা রাখায় তাদের পুরস্কৃত করা হয়। পুরস্কারের আর্থিক মূল্য ২৫ হাজার ডলার।

ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনস্টিটিউট (আইপিআই) রাষ্ট্র ও সরকারগুলোর প্রতি ১০ দফা আহ্বান জানিয়েছে। ‘নিজ দেশে এবং বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা শক্তিশালী করুন’ শিরোনামের আহ্বানে বিশ্বের গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে বলা হয়েছে নিজের দেশের দিকে তাকাতে। বলা হয়েছে বিশ্বজুড়ে তাদের দায়িত্ব পালনের কথা।
কী আছে এই ১০ দফায়?

১. নিজের দিকে তাকান। প্রতিটি রাষ্ট্রকে প্রথমে তাকাতে হবে নিজের দিকে। সব দেশকে প্রথম নিজের দেশেই সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা অবারিত করতে হবে।
২. এমন আইন করা এবং এর প্রয়োগ থেকে বিরত থাকুন, যে আইন কর্তৃত্ববাদী সরকার বা রাষ্ট্রের সামনে মডেল হয়ে দাঁড়ায়। সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে অনেকে এ আইন অনুসরণ করতে পারে।
৩. অপতথ্যের মোকাবিলায় সামাজিক মাধ্যম ও অনলাইন জগৎ নিয়ন্ত্রণে যে বিধিমালা করা হবে, তা যাতে সর্বজনীন মানবাধিকারের শর্তাবলি পূরণ করে।
৪. অপতথ্য এবং ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে যে লড়াই, তা যাতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সংকুচিত না করে। কর্তৃত্ববাদী গোষ্ঠীর এ ধরনের ক্ষমতার অপপ্রয়োগ পরিস্থিতির অবনতি ঘটায়।
৫. সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের ওপর বেআইনি নজরদারি থেকে বিরত থাকুন।
৬. সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের ওপর যেকোনো ধরনের আক্রমণে শূন্য সহিষ্ণুতা দেখান।

৭. মানবাধিকার ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় বহুমুখী প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগকে সমর্থন করুন।
৮. সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করে নাগরিক সমাজের এমন উদ্যোগকে সহায়তা দিন।
৯. সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা ও উন্নয়নকে নিজ দেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল উপাদান হিসেবে যুক্ত করুন। সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের ওপর যেকোনো ধরনের আক্রমণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করুন এবং এ ধরনের অপরাধে দায়ী অন্য সরকারকে জবাবদিহির আওতায় আনুন।
১০. সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত হয় এমন পরিবেশ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখুন।
মনজুরুল আহসান বুলবুল, সাবেক সভাপতি, বিএফইউজে; সাবেক ভাইস চেয়ার, আইপিআই; সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি, জাতীয় প্রেসক্লাব