টাকার অভাবে মেধাবী জাহিদ কি মারা যাবে

জাহিদ হাসান

জাহিদ হাসান তরতাজা প্রাণ। মেধাবী শিক্ষার্থী। বিনয়ী আর পড়ুয়া। শৈশবে বাবাকে হারিয়েছে। বিত্তহীন পরিবারে বড় বোন দায়িত্ব নিয়েছিলেন পড়ানোর। দারিদ্র্যকে পরাজিত করার অদম্য স্বপ্ন আর চেষ্টা নিয়ে পঞ্চগড়ের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে সাহস করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে পেছনে ফেলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়েছিল। স্নাতক সম্মান শ্রেণির পরীক্ষা শেষ করেছে। ফলাফলও প্রকাশিত। তার বন্ধুরা স্নাতকোত্তর শ্রেণির ক্লাস করছে। আর জাহিদ মৃত্যুর ক্ষণ গুনছে!

মাসখানেক আগে পরীক্ষা করে জানা গেছে জাহিদের দুটি কিডনির কোনোটি আর কাজ করছে না। তার এ অবস্থায় পরিবারের সবাই দিশেহারা। সন্তানের মতো আগলে রাখা বোনের চোখে পানি, মা দুশ্চিন্তায় পাথর। অসহায় ভাই কোনো কূলকিনারা খুঁজে পাচ্ছেন না। গরিব পরিবারের এমন কোনো সম্পত্তি নেই, যা বিক্রি করে চিকিৎসা চালাতে পারে। তাই বলে কি থেমে যাবে জাহিদের জীবন? জাহিদের মা কি তবে তরতাজা বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া সন্তানের শেষ যাত্রা দেখবেন? সন্তানের মতো আগলে রাখা বড় বোন কি ছোট ভাইয়ের মৃত্যু দেখবেন? অর্থের অভাবে চিকিৎসা হবে না জাহিদের?

জাহিদের বন্ধুরা প্রতিদিন তার খবর রাখছে। এখন তাকে ঢাকার একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যখন ভর্তি ছিল, তখন তার বন্ধুরা নিয়মিত তার কাছে যাতায়াত করেছে। প্রতিদিন ডায়ালাইসিস করতে হয়। রক্ত দিতে হচ্ছে প্রায় প্রতিদিন। তার বন্ধুরা রক্ত সংগ্রহ করে দিচ্ছিল। বন্ধুরা সবাই ন্যূনতম ৫০০ করে টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার বিভাগের ছোট-বড় সবাই এগিয়ে আসছে। তার শিক্ষকেরা পাশে দাঁড়িয়েছে। বাংলা বিভাগের পক্ষেও যথাসম্ভব তাকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু এই টাকা তার চিকিৎসার পক্ষে খুবই নগণ্য।
জাহিদ চলে যেতে পারে না। প্রত্যেককেই মারা যেতে হয়। জাহিদও অনন্তকাল বেঁচে থাকবে না। তাই বলে সামান্য অর্থের অভাবে চিকিৎসাহীন? জাহিদের মা আর বোন কিডনি দেওয়ার জন্য শরীরের সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। আমরা পাশে না দাঁড়ালে জাহিদের পরিবার এ টাকা দিতে পারবে না। মা-বোনের কিডনি নিয়ে দেশে কিডনি প্রতিস্থাপন করতে ১০ লক্ষাধিক টাকার প্রয়োজন আর ভারতে করাতে হলে লাগবে প্রায় ২০ লাখ। প্রতিস্থাপন-পরবর্তী প্রতি মাসে প্রথম বছর অর্ধলাখ টাকা প্রয়োজন। মাত্র এ টাকার অভাবে জাহিদের কিডনি প্রতিস্থাপন হবে না, এটি কিছুতেই মেনে নেওয়ার মতো নয়।

ধুম নদীর পাশে জাহিদ

জাহিদের একটি কথা খুব মনে পড়ছে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমরা তিস্তা ব্যারাজ এবং নীলফামারী গণগ্রন্থাগারে গিয়েছিলাম। যাওয়ার পথে ধুম নদীর পাশে আমি ছবি তুলছিলাম। জাহিদ এসে বলেছিল, ‘স্যার, নদী নিয়ে আপনার কাজ আমার খুব ভালো লাগে। আমিও একটি ছবি এই নদীর সাইনবোর্ডের সঙ্গে তুলতে চাই।’ ছবি তোলা হয়েছিল। নীলফামারী গণগ্রন্থাগার চত্বরে আমরা একটি কাঠগোলাপের চারা রোপণ করেছিলাম। সেই চারা রোপণ করার সময়ে জাহিদ এগিয়ে এসেছিল। গাছ লাগানোর একটি ছবিতে দুজন শিক্ষার্থীকে দেখতে পাচ্ছি। তার একজন জাহিদ।
আমরা হাত বাড়িয়েছি বিশ্বের সব প্রান্তের মানুষের কাছে। যাঁরা যা পারেন, সামর্থ্য অনুযায়ী সহায়তা দিন। অনেকের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সহায়তা জাহিদের মুখে হাসি ফোটাতে পারে। জাহিদ ফেসবুকে সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে অনিবার্য মৃত্যুর পথযাত্রী হিসেবে পোস্ট দিয়েছে। মানুষের প্রতি আমাদের বিশ্বাস আছে। অতীতে মানুষই শেষ পর্যন্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। জাহিদের পাশেও মানুষই দাঁড়াবে।

জাহিদকে সহায়তা পাঠানোর ঠিকানা:
মোছা: নুর নাহার কানিজ। সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর: ৭৫১১ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, পঞ্চগড় শাখা, পঞ্চগড়।
রুপা হক। অ্যাকাউন্ট নম্বর: 0100027669209 জনতা ব্যাংক লিমিটেড, পটুয়া পাড়া শাখা, মাদ্রাসা মোড়, নাটোর।
বিকাশ: 01714460520, 01751000998; নগদ: 01751000998

তুহিন ওয়াদুদ রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক।