এবার বিশ্ব গণমাধ্যম দিবসে ইউনেসকোর মূলমন্ত্র ছিল: জার্নালিজম আন্ডার ডিজিটাল সিজ বা ডিজিটাল অবরোধে সাংবাদিকতা। অভিধাটি বাংলাদেশের সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার জন্য শতভাগ সত্য। আমরা এক অবরুদ্ধ পরিস্থিতিতেই আছি। সব মাধ্যমেই সাংবাদিকতার বিপদ ওত পেতে থাকে; তবে ডিজিটাল মাধ্যমটির মাথার ওপর খাঁড়া হয়ে ঝুলছে। এই খাঁড়ার নাম হলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন।
সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের গবেষণা অনুযায়ী, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৬ মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৮৯০টি মামলা হয়। প্রথম ১৫ মাসে গড়ে ৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পরবর্তী ৯ মাসে গড়ে ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। আর একক গোষ্ঠী বা সম্প্রদায় হিসেবে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেই বেশি মামলা হয়েছে। জরিপে বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ মামলা হয়েছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে, রাজনৈতিক নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ, শিক্ষার্থীদের ২ দশমিক ৯১ শতাংশ, শিক্ষক ২ দশমিক ৯১ শতাংশ, বেসরকারি চাকরিজীবী ২ দশমিক ১৮ শতাংশ, ব্যবসায়ী ২ দশমিক ১৮ শতাংশ, সরকারি চাকরিজীবী ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ ও আইনজীবী শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশ।
আর মামলা যাঁরা করেছেন, অর্থাৎ বাদীরা প্রায় সবাই ক্ষমতাসীন কোনো সংগঠনের নেতা-কর্মী অথবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য।
২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে আইনটি জারি করার সময় সরকারের একাধিক মন্ত্রী বলেছিলেন, ডিজিটাল মাধ্যমে অপরাধ দমন করতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে না। তাঁরা যে কথা রাখেননি, এর প্রমাণ ওপরের পরিসংখ্যান। আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগই অপপ্রয়োগ। এখানে গুণাগুণ বিচারের কোনো সুযোগ নেই। ডিজিটাল মাধ্যমে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি দণ্ডবিধি অনুযায়ী নেওয়া যায়। এই আইনের প্রয়োজন নেই।
এখন দেখা যাক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কীভাবে সাংবাদিক তথা নাগরিকদের হাত-পা বেঁধে দিয়েছে। এতে বলা হয়, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে আক্রমণাত্মক, মিথ্যা, ভীতিপ্রদর্শক তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ, মানহানিকর তথ্য, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো, ঘৃণা প্রকাশ, অনুমতি ছাড়া ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ, প্রকাশ বা ব্যবহার করলে দোষী ব্যক্তির ৩ থেকে ৭ বছরের কারাদণ্ড, জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
আইনটির বেশির ভাগ ধারা জামিন–অযোগ্য। এ কারণে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কারাগারে থেকে প্রমাণ করতে হবে, তিনি নিরপরাধ। এ পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, খুব কম ক্ষেত্রেই বিচার হয়েছে। বিচার করা এ আইনের প্রধান উদ্দেশ্য নয়; উদ্দেশ্য হলো ভয় পাইয়ে দেওয়া। অর্থাৎ এই আইনের মাধ্যমে একধরনের ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছে।
বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশ গত বছরের তুলনায় ১০ ধাপ পিছিয়েছে, এটা অস্বাভাবিক নয়। যেখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে সাংবাদিকদের হাত–পা বেঁধে ফেলা হচ্ছে, সেখানে এটাই স্বাভাবিক। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী জেড আই খান পান্নার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বলেন, ‘আমার ধারণা ছিল আরও নিচে চলে যাবে। যেখানে গণমাধ্যমে কার্টুন ছাপা যায় না, হাস্যকৌতুকমূলক কোনো লেখা প্রকাশ করা যায় না, সেখানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা থাকবে কীভাবে? ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি করাই হয়েছিল বিরুদ্ধমত স্তব্ধ করে দিতে। আর আইনটি প্রয়োগে পুলিশকে যথেচ্ছ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই আইন বহাল থাকতে আমি উন্নতির আশা দেখি না।’
মঙ্গলবার বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) ২০২২ সালের যে প্রতিবেদন প্রকাশ করে, তাতে দেখা যায়, ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬২তম (স্কোর ৩৬ দশমিক ৬৩)। ২০২১ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫২তম (স্কোর ৫০ দশমিক ২৯)। আর ২০২০ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫১তম। অর্থাৎ, গত দুই বছরের সূচকেও বাংলাদেশের এক ধাপ করে অবনতি হয়েছিল। এবারের সূচকে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে মিয়ানমার ছাড়া সবার নিচে বাংলাদেশের অবস্থান। সূচকে বাংলাদেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে ভারত (১৫০), পাকিস্তান (১৫৭), শ্রীলঙ্কা (১৪৬), আফগানিস্তান (১৫৬), নেপাল (৭৬), মালদ্বীপ (৮৭), ভুটান (৩৩)।
সামরিক শাসনে থাকা মিয়ানমারের অবস্থান ১৭৬, গত বছর ছিল ১৪০। এবারের সূচকে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও মালদ্বীপের অবস্থানেরও অবনতি হয়েছে। ভারত পিছিয়েছে আট ধাপ, পাকিস্তান পিছিয়েছে ১৭ ধাপ, শ্রীলঙ্কা ১৯ ধাপ, আফগানিস্তান পিছিয়েছে ৩৪ ধাপ আর মালদ্বীপ পিছিয়েছে ১৫ ধাপ। এই অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি উন্নতি হয়েছে ভুটানের, ৩২ ধাপ এগিয়েছে দেশটি। আর নেপাল এগিয়েছে ৩০ ধাপ।
আরএসএফ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বলেছে, দলটির নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা প্রায়ই তাঁদের অপছন্দের সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন, অন্যদিকে সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করতে ও হয়রানি করতে মামলা-মোকদ্দমার আশ্রয় নিয়ে থাকেন। বাংলাদেশের বেশির ভাগ গণমাধ্যমের বেশির ভাগ কয়েকটি বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর। তাঁরা একে দেখেন প্রভাব সৃষ্টি ও সর্বোচ্চ সুবিধা লাভের হাতিয়ার হিসেবে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণমাধ্যম কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে, তার ভিত্তিতে ২০০২ সাল থেকে আরএসএফ এ সূচক প্রকাশ করে আসছে। সূচক অনুযায়ী, বিশ্বে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে উত্তর কোরিয়া, ১৮০তম (স্কোর ১৩ দশমিক ৯২)। খারাপের দিক দিয়ে দ্বিতীয় ইরিত্রিয়া, তৃতীয় ইরান, চতুর্থ তুর্কমেনিস্তান, পঞ্চম মিয়ানমার, ষষ্ঠ চীন, সপ্তম ভিয়েতনাম, অষ্টম কিউবা, নবম ইরাক ও দশম অবস্থানে রয়েছে সিরিয়া।
আর সবচেয়ে বেশি সংবাদমাধ্যমে স্বাধীনতা নিশ্চিত করা দেশগুলোর মধ্যে নরওয়ের (স্কোর ৯২ দশমিক ৬৫) পরে রয়েছে ডেনমার্ক, সুইডেন, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, পর্তুগাল, কোস্টারিকা, লিথুয়ানিয়া ও লিচেনস্টাইন। আর সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে থাকা ১০টি দেশ হলো উত্তর কোরিয়া, ইরিত্রিয়া, ইরান, তুর্কমেনিস্তান, মিয়ানমার, চীন, ভিয়েতনাম, কিউবা, ইরাক ও সিরিয়া।
সংগঠনটি ২০২০ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান দেখায় ১৫১তম। আর ২০১৯ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান দেখায় ১৫০তম। ২০০২ সাল থেকে আরএসএফ এ সূচক প্রকাশ করে আসছে। ওই বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৪৪তম। গণমাধ্যমের ওপর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪০তম। অর্থনৈতিক সুরক্ষা সূচকে অবস্থান ১৩৮তম। আইনগত নিয়ন্ত্রণ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৮তম এবং সামাজিক সুরক্ষা সূচকে অবস্থান ১৪৯তম এবং গণমাধ্যমের নিরাপত্তা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান একেবারেই তলানির দিকে, ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭২তম।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণকারী শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় এখনো বাংলাদেশ না এলেও তার কাছাকাছি আছে, ১৮তম। আমাদের অবনতির ধারাটিও বেশ চমকপ্রদ। এত দিন আমরা এক পা, দুই পা করে পেছনে যাচ্ছিলাম। এবারে একলাফে ১০ ধাপ। আমাদের চারপাশে যত দেশ আছে, মিয়ানমার ছাড়া আমাদের নিচে কেউ নেই। এমনকি বাংলাদেশের অবস্থান পাকিস্তানেরও নিচে।
অর্থনৈতিক বেশির ভাগ সূচকে বাংলাদেশ নেপাল থেকে এগিয়ে আছে। কিন্তু গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় এতটা পিছিয়ে কেন? এক বছরে নেপাল ৩০ ধাপ এগিয়ে আছে, আর বাংলাদেশ ১০ ধাপ পিছিয়ে। সরকারের সদাশয় মন্ত্রীরা, ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতারা দেশে কতটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আছে, কতটি সংবাদপত্র প্রকাশিত হচ্ছে, তার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। কিন্তু গত দুই যুগে টেলিভিশন ও পত্রিকার মালিক কারা হয়েছেন। ব্যতিক্রম ছাড়া তাঁরা প্রায় সবাই ক্ষমতাসীন দলের নেতা কিংবা তাঁদের আস্থাভাজন।
আরএসএফ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বলেছে, দলটির নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা প্রায়ই তাঁদের অপছন্দের সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন, অন্যদিকে সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করতে ও হয়রানি করতে মামলা-মোকদ্দমার আশ্রয় নিয়ে থাকেন। বাংলাদেশের বেশির ভাগ গণমাধ্যমের বেশির ভাগ কয়েকটি বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর। তাঁরা একে দেখেন প্রভাব সৃষ্টি ও সর্বোচ্চ সুবিধা লাভের হাতিয়ার হিসেবে।
এই মালিকেরা স্বাধীন সম্পাদকীয় নীতি নয়, বরং সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখাকে অগ্রাধিকার দেন। এর ফলে সরকারের লোকজনই ঠিক করে দেন বেসরকারি টিভি চ্যানেলের টক শোর অতিথি কারা হবেন। এতে আরও বলা হয় মূলধারার গণমাধ্যম ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সমস্যাগুলো সামনে আনে না। এমনকি তারা উগ্রবাদী ইসলামি গ্রুপগুলো সম্পর্কেও কিছু প্রকাশ বা প্রচার করে না। এসব গ্রুপ অতীতে সেক্যুলার লেখক-সাংবাদিকদের হত্যা করেছে, এখন তাঁদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে।
আরএসএফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি সাংবাদিক সালিম সামাদের কাছে জানতে চাই, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচকে বাংলাদেশের এই অবনতির কারণ কী? উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এর আগে যেসব আইন ছিল, সেগুলো প্রায় অকার্যকর হয়ে গেছে। এ কারণেই সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন জারি করেছে। সরকারের দাবি, ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের প্রতি কেউ ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ালে এ আইনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে যারা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ায়, ধর্মের নামে যারা অপপ্রচার চালায়, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এ অবস্থায় মতপ্রকাশ কিংবা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব হতে বাধ্য।
আরএসএফের প্রতিবেদনে দেশগুলোকে পাঁচ শ্রেনিতে ভাগ করা হয়েছে। সেগুলো হলো—অতি সংকটজনক, অসুবিধাজনক, সমস্যামূলক, সন্তোষজনক ও ভালো। আমরা শেষোক্ত চারটি বৈশিষ্ট্যের কোনোটিতে নেই। আমরা আছি অতি সংকটজনক পরিস্থিতিতে।
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের জন্য এটি কেবল হতাশাজনক নয়, লজ্জাজনকও। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতি অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। আমরা স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে চলে এসেছি। মানুষের গড় আয় ও আয়ু বেড়েছে। করোনা পরিস্থিতিও সফলভাবে মোকাবিলা করেছি। এত অগ্রগতি সত্ত্বেও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচকে কেন এতটা পিছিয়ে আছি? আপনারা বাংলাদেশকে আর কত নিচে নামবেন?
সব শেষে বলব, উন্নয়নের খোয়াব দেখিয়ে কিছু সময়ের জন্য কিছু মানুষের মুখ বন্ধ করা গেলেও সব মানুষকে সব সময়ে সেটি সম্ভব নয়। ইতিহাসের সত্য তা-ই বলে।
সোহরাব হাসান, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও কবি
[email protected]