এই নিবন্ধের শিরোনামে চিহ্নিত অধ্যায়ের শুরুতেই রয়েছে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১, আমাদের বিজয় দিবস। আর অন্তে রয়েছে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২; আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামের মহানায়ক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। এ দুইয়ের মাঝের দিনগুলোর অসাধারণ তাৎপর্য রয়েছে আমাদের ইতিহাসে।
১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর অপরাহ্ণে মুজিবনগর সরকারের নেতা অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ঢাকায় পৌঁছেই বঙ্গভবনে তাঁদের দপ্তর স্থাপন করলেন। করলেন রাজনৈতিক কর্তৃত্বের দৃশ্যমান প্রতিষ্ঠা। একজন সরকারি আমলা হিসেবে তা প্রত্যক্ষ করা ছিল একটি প্রীতিদায়ক অভিজ্ঞতা। দেশ গঠনের সূচনালগ্নে আমার মতো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মীর অভিজ্ঞতা, একটি সুবিশাল ক্যানভাসে লাখো সুতার সূচিকর্মের একটি সুতার ভগ্নাংশও নয়। তবু একজন সরকারি কর্মচারীর জীবনে তা ছিল একটি বিরাট ও রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।
১৯৭২ সালের প্রথম দিনে নবনিযুক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদ ইঙ্গিত দিলেন যে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি জরুরি সভায় মিলিত হতে আগ্রহী। কিন্তু তখনো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য নির্দিষ্ট ভবনটিকে কাজকর্মের উপযোগী করা যায়নি। গোপনীয়তা রক্ষা করা ছিল একটি বিরাট সমস্যা। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অফিস ছিল সবার জন্য অবারিত। অবশেষে সিদ্ধান্ত হলো, সভাটি অনুষ্ঠিত হবে ধানমন্ডির ৫ নম্বর সড়কে আমার বাসভবনে। সেই সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানালেন যে তিনি চার-পাঁচ দিনের মধ্যেই একটি বৃহদাকার প্রতিনিধিদল নিয়ে ভারতে জরুরি সফরে যাবেন। ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আমরা যেন বিশ্ব পরিস্থিতি সম্বন্ধে একটি সম্যক ধারণা লাভ করি। দ্বিতীয়ত এবং অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বঙ্গবন্ধুর দেশে ফিরে আসার জন্য কীভাবে আমরা পাকিস্তানের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারি, তার পন্থা নির্ধারণ করা।
দিন চারেক পরিশ্রম করে আমরা সফরটির জন্য ‘ব্রিফ’ প্রস্তুত করলাম। স্বাধীনতার সেই প্রারম্ভিক দিনগুলোতে তথ্য পাওয়া ছিল দুরূহ। কিন্তু তবু সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তৈরি হলো ‘ব্রিফ’, অর্থাৎ সফরের উদ্দেশ্য এবং আলোচনা সম্বন্ধে তথ্য ও খসড়া নির্দেশনা। পরিকল্পনা কমিশন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আর আসবাববিহীন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তিন-চারজন কর্মীর ওপর বর্তেছিল সেই দায়িত্ব। ৪ জানুয়ারি ১৯৭২-এর সন্ধ্যা নাগাদ ‘ব্রিফ’ তৈরি শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে গেলাম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের বাসভবনে। ব্রিফটি অত্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে পাঠ করলেন তাজউদ্দীন সাহেব। গভীর সন্তুষ্টিতে সেদিন লক্ষ করেছিলাম, সমস্যার গভীরে পৌঁছে প্রশ্নাদি করার অসাধারণ ক্ষমতা আর প্রাঞ্জল ও সহজবোধ্য তাঁর নির্দেশনা ও বাচনভঙ্গি।
৫ জানুয়ারি ১৯৭২-এ আমরা কলকাতা হয়ে দিল্লির পথে ঢাকা ত্যাগ করলাম। ঢাকা ত্যাগের প্রাক্কালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদ সংবাদমাধ্যমে বললেন যে বঙ্গবন্ধুর আশু স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রচেষ্টাই তাঁর দিল্লি সফরের মুখ্য উদ্দেশ্য। ৬ জানুয়ারি ১৯৭২-এ আমাদের প্রতিনিধিদল দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে কর্মকাণ্ড শুরু করল। অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিষয়াদিতে আলোচনা শুরু হলো ভারত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। সেই ভোরে আবদুস সামাদ আজাদের দিনের কার্যসূচির প্রথমেই রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকার। তারপর আলোচনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিংয়ের সঙ্গে। তারপরই গুরুত্বপূর্ণ একান্ত সাক্ষাৎকার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে।
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আমলা পর্যায়ের বৈঠক চলল দিনভর। বঙ্গবন্ধুর মুক্তি ত্বরান্বিত করার জন্য সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ সম্বন্ধে আলোচনা হলো। আমরা যখন দিল্লিতে, তখন আমাদের অজান্তে পাকিস্তানেও ঘটনাপ্রবাহ এগিয়ে চলেছে দ্রুততার সঙ্গে। সেই ঘটনাবলি সম্বন্ধে নব্বইয়ের দশকে আমাকে প্রদত্ত একটি সাক্ষাৎকারের জন্য ড. কামাল হোসেনের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। সেই সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে আমি আমার দেশ দেশান্তর বইটিতে ঘটনাবলির বর্ণনা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছিলাম।
২৮ ডিসেম্বর ১৯৭১। দুপুর গড়িয়ে এসেছে। কামাল হোসেন তখন পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদের কারাগারে। জেলের কর্মকর্তা এলেন অপ্রত্যাশিতভাবে। বললেন, তৈরি হয়ে নিন। গাড়িতে ওঠানো হলো কামাল হোসেনকে। ‘কোথায় যাচ্ছি আমি?’ কামাল হোসেনের সভয় প্রশ্ন। ‘যেখানে যাচ্ছেন, আপনার ভালোই লাগবে।’ বারবার প্রশ্নের উত্তর একই। সন্ধ্যা নামছে। হঠাৎ পাকা রাস্তা ছেড়ে কামাল হোসেনের দুই গাড়ির কাফেলা নামল কাঁচা একটি রাস্তায়। অবশেষে গাড়ি থেকে নেমে একটি বাংলোর সদর দরজা। সামনে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই পুলকজাগানো চিরপরিচিত হাসি। পরনে লুঙ্গি আর লালচে ড্রেসিং গাউন। হাতে তাঁর প্রিয় সঙ্গী পাইপ। আত্মবিশ্বাসে ভরপুর।
বঙ্গবন্ধু কামাল হোসেনকে বললেন ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত তাঁর মিয়ঁাওয়ালি জেলে অবস্থানের কথা। বিচারের প্রহসন। মৃত্যুদণ্ড। অদূরে কবর খোঁড়ার আয়োজন। তারপর হঠাৎ গেল সব বদলে। জেলের ডিআইজি শেখ আবদুর রশিদ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গেলেন নিজ বাসস্থানে। শেখ রশিদ বঙ্গবন্ধুকে বললেন, মিয়ঁাওয়ালি জেল বঙ্গবন্ধুর জন্য নিরাপদ নয় মোটেও। মিয়ঁাওয়ালি পরাজিত জেনারেল নিয়াজির বাসস্থান। যদি নিয়াজির কোনো অঘটন ঘটে? যদি তার প্রতিক্রিয়া হয় মিয়ঁাওয়ালিতে? শেখ রশিদের বাসস্থান থেকে বঙ্গবন্ধু সিহালা অতিথি ভবনে এলেন ২৬ ডিসেম্বর ১৯৭১-এ। এর পরদিনই ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করলেন। সেই সাক্ষাৎকারের খবর ঢাকায় বসে আমরাও শুনলাম, পরম স্বস্তিতে।
তত দিনে বঙ্গবন্ধু আর কামাল হোসেনের কাছে স্পষ্ট যে যুদ্ধে পরাভূত ভুট্টো বঙ্গবন্ধুকে মুক্তিদানের উপায় খুঁজছেন। তাঁরা দুজনই তখন বুঝে গেছেন যে তাঁদের সম্ভাব্য মুক্তির বৃহত্তম আশ্বাস—৯৩ হাজার পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দী। এদিকে ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর মুক্তির সপক্ষে জনমত সৃষ্টির দৃশ্যমান প্রচেষ্টা চালালেন ২ ও ৩ জানুয়ারিতে।
৫ জানুয়ারি ১৯৭২। ভুট্টো লারকানায় তাঁর জন্মদিন উদ্যাপনে। আমরা দিল্লিতে মূলত বঙ্গবন্ধুর মুক্তির প্রচেষ্টায়। পরে জানা যায় যে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজিজ আহমদ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ কেরন ৩১ ডিসেম্বর ১৯৭১-এ। এখন প্রশ্ন, পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে যাওয়ার উপায় কী? রাজনীতি আর যুদ্ধ পিন্ডি—ঢাকার আড়াই ঘণ্টার যাত্রাপথকে পরিণত করেছে অলঙ্ঘনীয়। ‘আপনারা ইরান অথবা তুর্কি হয়ে যেতে পারেন। অথবা লন্ডন হয়ে।’ বললেন আজিজ আহমদ। ‘লন্ডন হয়েই যাই।’ বঙ্গবন্ধুর তাৎক্ষণিক উত্তর। ‘ওখানে আমাদের লোকজন রয়েছেন।’ বললেন তিনি। কিন্তু যাত্রাপথ নির্ধারণের চেয়েও বড় প্রশ্ন মুক্তির। পাকিস্তানের সেই সময়ের অনিশ্চিত রাজনীতিতে যেকোনো বিবর্তনই সম্ভব। তবে বঙ্গবন্ধু তখন ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছেন যে ভুট্টো পরাভূত। ভুট্টোর ইচ্ছা একটি সম্ভাব্য কনফেডারেশন সম্বন্ধে বঙ্গবন্ধুকে চাপ দেওয়া। বঙ্গবন্ধুর উত্তর একটিই, ‘আমি দেশে ফিরে গিয়েই আপনাকে জানাব।’
ভুট্টো ৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় পিন্ডিতে রাষ্ট্রপতির অতিথিশালায় বঙ্গবন্ধুকে নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানালেন। কামাল হোসেনও নিমন্ত্রিত সেই ভোজে। নৈশভোজ শেষে পিআইয়ের বিশেষ বিমানে তাঁরা হবেন ঢাকার পথে লন্ডনের যাত্রী। কিন্তু ভুট্টোর প্রচেষ্টার শেষ নেই। তিনি বঙ্গবন্ধুকে আরও একটি দিন থেকে যেতে অনুরোধ করলেন। বললেন, ‘আগামীকাল ইরানের শাহ আসছেন। তিনি আপনার দর্শনাগ্রহী। থেকেই যান। কথাবার্তা হবে আমাদের।’ তিন দশকের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা বঙ্গবন্ধুর। ভুট্টো এক মুহূর্তের জন্যও তাঁর সন্দেহের ঊর্ধ্বে নন। বঙ্গবন্ধু জানেন, ঘটনাবলি সম্বন্ধে তাঁর জ্ঞান অপরিপূর্ণ। এ অবস্থায় কারও সঙ্গেই প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বলা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। ইরানের শাহর সঙ্গে তো নয়ই।
সেদিন মধ্যরাতের পরপরই বিশেষ বিমানটি পিন্ডি যাত্রা করল। বিমানে বঙ্গবন্ধু, কামাল হোসেন ও তাঁর স্ত্রী-কন্যা। বিমানবন্দরে বিমানে আরোহণ করে বঙ্গবন্ধুকে বিদায় জানালেন জুলফিকার আলী ভুট্টো। ঢাকায় ফিরে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২-এ ঢাকার রেসকোর্সের বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু স্পষ্টভাবে বললেন, ‘আমি তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো ঘৃণার ভাব পোষণ করি না। তোমাদের স্বাধীনতা তোমাদের রইল। আমাদেরকে স্বাধীনতায় থাকতে দাও।’ ভুট্টোকে বঙ্গবন্ধুর শেষ জবাব।
এদিকে ৮ জানুয়ারি ১৯৭২-এর ভোরে দিল্লির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আমাদের বৈঠক চলছে। অকস্মাৎ সম্মেলনকক্ষটির দরজাটি সশব্দে খুললেন মানি দীক্ষিত, পরবর্তী সময়ে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব। আমার অতি ঘনিষ্ঠ বন্ধু, আজ প্রয়াত। চোখেমুখে তাঁর উত্তেজনার ছাপ। বললেন, ‘এইমাত্র খবর এসেছে, শেখ মুজিব মুক্তি পেয়েছেন। তিনি পাকিস্তান ত্যাগ করেছেন।’ ভেঙে গেল বৈঠক। সম্মেলনকক্ষটি ভেঙে পড়ল স্বতঃস্ফূর্ত করতালিতে। নিজেকে একটি সাধারণ দিন স্মৃতির মণিকোঠায় প্রবিষ্ট হলো অসাধারণের বৈশিষ্ট্যে।
আজ থেকে সাড়ে চারটি দশক আগের ১০ জানুয়ারি ১৯৭২-এর সেই অবিশ্বাস্য প্রত্যুষ। দিল্লির পালাম বিমানবন্দর। ৮টা বেজে ১০ মিনিট। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর রুপালি কমেট। ধীরে ধীরে এসে সশব্দে সুস্থির। তারপর শব্দহীন কর্ণভেদী নীরবতা। সিঁড়ি লাগল। খুলে গেল দ্বার। দাঁড়িয়ে সহাস্য, সুদর্শন, দীর্ঘকায় ঋজু, নবীন দেশের রাষ্ট্রপতি। তাঁর সম্মানে বিমানবন্দরের আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে তোপধ্বনি। ব্যাস ব্যান্ডে বেজে ওঠা, ‘আমার সোনার বাংলা’। ‘জনগণ মন অধিনায়ক জয় হে’। অমর কবির দুটি জাতীয় সংগীত। তারপর আবেগে স্মৃতি এতই ঝাপসা যে তার বর্ণনা প্রায় অসম্ভব।
বঙ্গবন্ধু তাঁর বিমানবন্দরের ভাষণে বললেন, তিনি ফিরছেন বিজয়কে শান্তি, প্রগতি আর উন্নতির পথে চালিত করতে। বললেন, তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এই সান্ত্বনায় যে অবশেষে অসত্যের ওপর সত্যের, উন্মাদনার ওপর প্রকৃতিস্থতার, কাপুরুষতার ওপর শৌর্যের, অবিচারের ওপর ন্যায়বিচারের, অমঙ্গলের ওপর মঙ্গলের হয়েছে জয়।
মায়াময় সেই প্রভাতে হঠাৎ ঢাকাগামী আমরা। প্লেনে বঙ্গবন্ধুর মুখোমুখি। এ িক স্বপ্ন, না সত্যি! প্লেনের বাংলাদেশি যাত্রীরা ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদ, সপরিবারে কামাল হোসেন, ইনস্যুরেন্স জগতে এককালে সুপরিচিত, বর্তমানে প্রয়াত মাওলা, আমার অনুজপ্রতিম সাংবাদিক প্রয়াত আতাউস সামাদ আর আমি। প্লেনে বঙ্গবন্ধুর অনেক জিজ্ঞাসা অনেক পরিচিতজনের সম্বন্ধে। বিশেষ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদের কাছে। কী অসাধারণ স্মৃতিশক্তি ক্ষণজন্মা এই মানুষটির। অভিভূত আমি, সাহস সঞ্চয় করে এগিয়ে দিলাম আমার ১৯৭২-এর ডায়েরির ১০ জানুয়ারির পাতাটি। পাতাটি জুড়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষর। শেখ মুজিব। স্পষ্ট, দৃপ্ত, চির অম্লান।
সব যাত্রার শেষ আছে। সব স্বপ্নের। কথাবার্তার মাঝেই প্লেনের ব্রিটিশ স্টুয়ার্ড এসে বললেন, ‘আমরা এখন ঢাকার ওপরে।’ বঙ্গবন্ধুর চোখেমুখে অবিশ্বাসের ছাপ!
সেদিনের পর সাড়ে চারটি দশক অতিক্রান্ত হয়েছে। সেই সময়টিতে থেকে থেকে দুর্বৃত্তরা বারবার আঘাত হেনেছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ম্লান করার দুরাশায়। সফল তারা হয়নি। তারা সফল হবে না। বাংলার মাটিতে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু নেই। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অপ্রতিরোধ্য। বাংলাদেশ যতই এগিয়ে যাবে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর অর্জন আমাদের জাতির জন্য হয়ে উঠবে উত্তরোত্তর ততই প্রাসঙ্গিক।
ফারুক চৌধুরী: সাবেক পররাষ্ট্রসচিব। কলাম লেখক।
[email protected]