২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

এই রায়ে জামায়াত পুনর্বাসিত হবে

ইমরান এইচ সরকার
ইমরান এইচ সরকার

যুদ্ধাপরাধ বিচার ট্রাইব্যুনাল দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দিলেও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তাঁর শাস্তি কমিয়ে আমৃতু্য কারাদণ্ড দিয়েছেন। এ ব্যাপারে  গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বায়ক ইমরান এইচ সরকার–এর সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হলো।
প্রথম আলো: আপিল বিভাগের রায়ের পর আপনি এবং গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা পুলিশি হামলার শিকার হলেন। ঘটনাটিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন।
ইমরান এইচ সরকার: মঙ্গলবার রাতেই আমরা শাহবাগে সমবেত হয়েছিলাম। জানিয়েছিলাম রায়ে সর্বোচ্চ সাজা না হলে আমরা কর্মসূচি অব্যাহত রাখব। সে অনুযায়ী গতকাল সকালে আপিল বিভাগের রায়ের প্রতিবাদে আদালত অভিমুখে মিছিল নিয়ে যাই। পরে সেখানে বাধাপ্রাপ্ত হলে শাহবাগে এসে সমাবেশ করার উদ্যোগ নিলে পুলিশ আমাদের ওপরে অতর্কিত হামলা করে। এর আগেও মঞ্চের ওপরে নানা হামলা দিয়ে একটি ক্ষেত্র তৈরি করা হচ্ছিল। এবার পুলিশ বাহিনী সরাসরি আমাদের ওপরে গরম পানি, পিপার স্প্রে ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে আমিসহ গণজাগরণ মঞ্চের ১৫-২০ জন কর্মী আহত হয়েছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে নামা এই আন্দোলনের একটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে এভাবে হামলা চালানো সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক। এটি প্রতিবাদের ভাষাকে স্তব্ধ করার চেষ্টা ছাড়া কিছু নয়। সরকার যা ইচ্ছা তাই করবে। কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারবে না। প্রতিবাদ করলেই হামলা চালাবে। এমন পরিস্থিতিই তৈরি করা হয়েছে। আমরা আন্দোলন করছি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে। এই আন্দোলন তো দেশে সব মানুষের দাবি পূরণের জন্য।
প্রথম আলো: সাঈদীর রায়কে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
ইমরান এইচ সরকার: এটা পুরোপুরি আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামীর আঁতাতের রায়। সরকার বেশ আগে থেকেই আদালতের ওপরে প্রভাব সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছিল বলে আমাদের ধারণা। বিচারপতিদের ব্যাপারে সংসদে যে অভিশংসন আইন আনা হয়েছে, সেটাও তার অংশ। এর আগে আমরা যুদ্ধাপরাধ বিচার ট্রাইব্যুনালে সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে দেখেছি। কিন্তু উচ্চ আদালতে গিয়েই তা বদলে গেছে। বিচারকদের হাতে অবশ্য সেই ক্ষমতা আছে। কিন্তু তাঁরা কেন জন-আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে অবস্থান নেবেন সেটাই আমাদের প্রশ্ন।
প্রথম আলো: এই আপিল বিভাগ যখন কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় দিল, তখন তো আপনারা তা সমর্থন করেছিলেন। এখন কেন ভিন্নমত?
ইমরান এইচ সরকার: যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি আসলে ফাঁসি বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের ব্যাপার নয়। দেশবাসী তথা লাখ লাখ শহীদ পরিবার এই রায়কে কীভাবে মূল্যায়ন করছে, সেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার আইন ছিল শহীদ পরিবারগুলোর ন্যায়বিচার পাওয়ার আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। গত বছর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালও সাঈদীকে সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়েছিলেন।
আমরা আশা করেছিলাম, উচ্চ আদালত সেই ন্যায়বিচার সমুন্নত রাখবেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে প্রচলিত আইনের দৃষ্টিতে দেখলে চলবে না। কিন্তু আমরা ন্যায়বিচার পাইনি বলেই হতাশ হয়েছি, রাজপথে নেমেছি। সাঈদীর হাতে নিহত এবং নির্যাতনের শিকার পরিবারগুলো মনে করে, এই রায়ে তারা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বিশ্বের যেসব দেশে গণহত্যার দায়ে যুদ্ধাপরাধিদের বিচার হয়েছে সবখানেই অপরাধীরা সর্বোচ্চ শাস্তি পেয়েছে। নুরেমবার্গ ট্রায়ালের ক্ষেত্রেও আমরা ফাঁসি দিতে দেখেছি। কিন্তু আমাদের দেশে একই অপরাধে কেন লঘু শাস্তি হলো?
প্রথম আলো: সাঈদীর রায় কেন এমন হলো বলে মনে করেন। প্রসিকিউশনে বা অন্য কোনো ব্যাপারে কোনো দুর্বলতা ছিল?
ইমরান এইচ সরকার: একটি পরিপ্রেক্ষিত তৈরির মধ্য দিয়েই সাঈদীর রায় দেওয়া হয়েছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে আমরা সরকারের পক্ষ থেকে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা, ইসলামী ব্যাংকসহ জামায়াতের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।
কিন্তু আমরা দেখলাম, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকেই সরকারের প্রভাবশালী মহল উল্টো সুরে কথা বলতে থাকে। আইনমন্ত্রী জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ না করার ব্যাপারে অভিমত জানানোর পর আমরা দেখলাম প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের অন্য মন্ত্রীরাও একই কথা বলছেন। পশ্চিমা প্রভাবশালী কূটনীতিকেরাও একই ধরনের কথা আগে থেকেই বলে আসছিলেন। ফলে এই দুইয়ের মধ্যে একটি যোগসূত্র আমরা দেখতে পেয়েছি।
প্রথম আলো: তার মানে আপনি বিদেশি চাপ এবং জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের আঁতাতের কথা ইঙ্গিত করছেন?
ইমরান এইচ সরকার: অবশ্যই। একই সঙ্গে আমি বলব, এই রায় জামায়াতে ইসলামীকে বাংলাদেশে পুনঃপ্রতিষ্ঠা দেবে। গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের কারণে দেশ থেকে জামায়াতে ইসলামী দল হিসেবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছিল। সরকারের আচরণ এবং আপিল বিভাগের এ রায়ের মধ্য দিয়ে জামায়াত আবার তার শক্তি ফিরে পাবে। জামায়াতে ইসলামীর আগামী দিনের রোডম্যাপ বাস্তবায়নে সরকার সহযোগিতা করছে বলেই অনেকেই মনে করেন।
গোলাম আযম এবং সাঈদী জামায়াতের ‘আইকন লিডার’। তাঁদের ফাঁসি দেওয়া হলো না। কাদের মোল্লা তেমন গুরুত্বপূর্ণ না হওয়ায় তাঁর ফাঁসি হলো। এসব দেখে মনে হচ্ছে, রায়গুলোতে জামায়াতের ইচ্ছারই প্রতিফলন ঘটেছে।
প্রথম আলো: সরকার থেকে তো আপনাদের কর্মসূচিতে নিয়মিভাবেভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে। গণজাগরণ মঞ্চ দুভাগে ভাগ হয়ে গেছে। একটি পক্ষ তো এখনো শাহবাগে অবস্থান করছে। আপনারা এখন কী করবেন?
ইমরান এইচ সরকার: গণজাগরণ মঞ্চ গড়ে উঠেছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও স্বাধীনতার চেতনা সমুন্নত রাখার প্রত্যয়ে। গণজাগরণ মঞ্চ এই লক্ষ্যে যে ছয় দফা কর্মসূচি দিয়েছে তা থেকে সরে আসবে না। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। বাধা আসবে এটা জেনেই আমরা শহীদদের স্বপ্ন পূরণে মাঠে নেমেছি। সামনের দিনগুলোকে এই আন্দোলনে সাধারণ মানুষকে আরও বেশি সম্পৃক্ত করতে আমরা কাজ করে যাব।