ট্রাম্প প্রশাসন এখন এটা স্বীকার করতে প্রস্তুত নয়। কিন্তু এটা সত্যি যে তাঁর মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলটি এখন গভীর সমস্যার মধ্যে পড়েছে। গত মাসে তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটে ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিক জামাল খাসোগির হত্যার ঘটনায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের লক্ষ্য ছিল মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব হ্রাস করা। এ জন্য তারা সৌদি আরবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার কৌশল গ্রহণ করে। কিন্তু খাসোগি হত্যাকাণ্ডে সবকিছু উল্টে গেছে। আমরা এখন এটা আশা করতে পারি যে তেহরান খুব সহজেই মধ্যপ্রাচ্যের ওপর তার প্রভাব বিস্তার করতে পারবে। গত সপ্তাহে দেশটির ওপর ফের কঠোর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরও তেহরান এটি পারবে।
ইরানের নেতারা এখন অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী যে তাঁরা মধ্যপ্রাচ্যে আগের মতোই প্রভাব বজায় রাখতে পারবেন। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে সৃষ্ট আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তঁারা এখন ইউরোপ, রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য যোগাযোগ তৈরি করতে মনোযোগী হবেন।
গত বছর ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধি এড়াতে সক্ষম হয়েছে। এর কারণ, রাশিয়ার প্রতি তার আস্থা ছিল যে দেশটি সিরিয়া নিয়ে তার নীতির ব্যাপারে অটল থাকবে। ইরান এখন পর্যন্ত সিরিয়াকে পরিত্যাগ করার কোনো আভাস দেয়নি, এমনকি সিরিয়ায় ইরানি ঘাঁটিগুলোয় ইসরায়েলের উপর্যুপরি হামলার পরও তারা বিস্ময়করভাবে শান্ত থাকে।
এখন তেহরানের নেতারা আশা করতে পারেন, দুর্বল হয়ে পড়া সৌদি আরব ইয়েমেনে সামরিক অভিযান বন্ধ এবং কাতারের ওপর অবরোধ তুলে ফেলা—দুটোই করতে বাধ্য হবে। শুরু থেকেই ইরানিরা সৌদিদের সঙ্গে আলোচনা করতে চেয়েছিল। এখন সৌদি আরব হয়তো ইরানের সঙ্গে কথা বলার জন্য প্রস্তুত হতে পারে—বিশেষ করে যদি সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শ নেয় এবং ইয়েমেন যুদ্ধ শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয়। রিয়াদও তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার জন্য ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি অনুধাবন করতে পারে। তুরস্কের মাটিতে সৌদি সাংবাদিকের হত্যাকাণ্ডে আঙ্কারা ভীষণ ক্ষুব্ধ।
তেহরানে ক্ষমতার বলয়ে থাকা শাসকদের দেখে মনে হচ্ছে তঁারা এ ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী যে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের অর্থনীতিতে যে ধাক্কা লেগেছে, তা তঁারা অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে পারবেন। ইরান এখন যথেষ্ট তেল বেচতে পারবে এবং দেশটির অর্থনীতি সচল রাখতে ইউরোপ, চীন, রাশিয়া ও ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য করতে পারবে।
ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের পারমাণবিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছে। বেরিয়ে আসার অজুহাত হিসেবে তারা বলছে, এই চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের আঞ্চলিক প্রভাবকে হ্রাস করতে ব্যর্থ হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন চায় আরও শক্তিশালী কোনো চুক্তি করতে, যা মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাবকে হ্রাস করবে। কিন্তু ট্রাম্প এখন দেখতে পাবেন যে ইরানকে আলোচনার টেবিলে আসতে বাধ্য করার যে প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন, তা বাস্তবায়ন করা আরও কঠিন। ইরান যদি আলোচনায় বসেও, তবে তারা দুর্বল অবস্থানে থাকবে না। ট্রাম্প প্রশাসনকে এখন ইরানের সঙ্গে বারাক ওবামার আমলে করা চুক্তিতে ফেরত যেতে হবে এবং চাপ প্রয়োগ করার কৌশলটি যে ভুল, তা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বুঝতে হবে। তারপর তেহরান কথা বলার জন্য প্রস্তুত হতে পারে।
শুরু থেকেই ট্রাম্প প্রশাসনের ধারণা ছিল, সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের আঞ্চলিক প্রভাবের হ্রাস টেনে ধরতে পারবে। কিন্তু সৌদি আরবের ধারাবাহিক ভুলের কারণে, যার সর্বশেষটি হচ্ছে খাসোগিকে হত্যা, উল্টো ফল হয়েছে। এটা ইরানকে কৌশলগত উদ্যোগ গ্রহণের অনেক বেশি সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।
খাসোগি হত্যাকাণ্ড প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কৌশলের দুর্বলতার বিষয়টিকে প্রকাশ্যে এনেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার পরও এ ঘটনা সৌদি যুবরাজকে দুর্বল করেছে। এখন ইসরায়েলকে সহায়তা করা এবং ফিলিস্তিনের সঙ্গে একটি চুক্তি করার ব্যাপারে সৌদি সামর্থ্য নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। খাসোগি হত্যাকাণ্ডে ইসরায়েলের অবস্থানও দুর্বল হয়েছে এবং তুরস্কের অবস্থান শক্তিশালী হয়েছে।
এটা এখন স্পষ্ট, সৌদি আরব ইরানকে আর দমাতে পারবে না এবং সিরিয়া লেবানন ও ইয়েমেনের ওপরও আর খবরদারি করতে পারবে না। যদি না এসব করার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প বিপুলসংখ্যক সৈন্য পাঠানোর পরিকল্পনা করেন। এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতা চাইলে ট্রাম্পকে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধগুলো শেষ করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
ভালি আর নাসর: ওয়াশিংটনের জনস হপকিন্স স্কুল অব অ্যাডভান্সড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ডিন
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া, অনুবাদ: রোকেয়া রহমান