২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

আমাদের অপু ও ব্রিটিশ রাজবধূ

অপু বিশ্বাস  ও মেগান মার্কেল
অপু বিশ্বাস ও মেগান মার্কেল

অপু বিশ্বাস আমাদের দেশের চলচ্চিত্রে প্রথম সারির নায়িকা। যখন আর রাখঢাক সম্ভব হচ্ছিল না, তখন তিনি বিয়ে ও সন্তান নিয়ে সংবাদমাধ্যমে সব গোপন তথ্য ফাঁস করে দিলেন। একজন প্রতিষ্ঠিত বিত্তশালী চিত্রনায়িকা স্বামী ও তাঁর সন্তানের পিতার দায়দায়িত্বের অবহেলার কথা তুলে অঝোরে কাঁদলেন। সন্তান যাতে পিতৃপরিচয় নিয়ে গৌরবের সঙ্গে বাঁচতে পারে, সে জন্যই ছেলে কোলে একজন মা ও বিবাহিত নারীর আত্মপ্রকাশ। অপু এসব প্রকাশ করে দেওয়ায় শাকিব খান প্রথমদিকে বলেছিলেন তিনি শুধু সন্তানের দায়িত্ব নেবেন, স্ত্রীর দায়িত্ব নেবেন না। পরে অবশ্য বলেন, স্ত্রীর দায়িত্বও নেবেন। এভাবে মধুরেণ সমাপয়েৎ হলো বলে মনে হয়েছিল।

কিন্তু সম্প্রতি জানা গেল সম্পর্কটি আর টিকছে না। শাকিব খান তাঁর স্ত্রী অপু বিশ্বাসকে তালাকনামা পাঠিয়েছেন। কেন তালাক? না, স্বামীর অবাধ্য হয়ে নতুন সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন অপু। এ ছাড়া সন্তানকে গৃহপরিচারিকার জিম্মায় রেখে তিনি ভারতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। শাকিবের আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, ধর্মান্তরিত হয়ে শাকিবের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার কারণে অপুর ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী গৃহিণী হয়ে জীবনযাপন করার কথা এবং স্বামীর হুকুম পালন করার কথা। কিন্তু অপু এসব লঙ্ঘন করেছেন বলে তাঁর মক্কেল তাঁকে তালাক দিতেই পারেন।

ধর্ম মানলে স্বামী-স্ত্রীর একে অন্যের প্রতি সমান অধিকারের কথাও বলা আছে। আবার আমাদের নারী উন্নয়ন নীতিমালার ২৮.২ অনুচ্ছেদে ‘রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষ সমান অধিকার লাভ করিবেন’ বলা আছে। এ ছাড়া নারীর কর্মসংস্থান বিষয়ে ২৬.৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘নারীর ব্যাপক কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সব আইন, বিধি ও নীতির প্রয়োজনীয় সংস্কার করা’র কথা। নতুন সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হওয়ায় নারী উন্নয়ন নীতিমালা অপুকে সমর্থন দেয়। তাহলে অপুরই বা অসুবিধা কোথায়? এসব ধারা উল্লেখ করে অপুও শাকিবের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন। কোনটা অগ্রগণ্য? কাবিননামা না নারী উন্নয়ন নীতিমালা?

এসব পাঁচালি পুরোনো হলেও ঘটনা মিথ্যা নয় যে একই পেশার স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে স্ত্রীর অধিক সুনাম ও প্রতিষ্ঠা এই যুগেও অনেক স্বামীর গাত্রদাহের কারণ হয়ে থাকে। মনে করা হয়, নারীর উপযুক্ত স্থান তাঁর ঘরসংসার, তাঁর আদর্শ কাজ স্বামী-সন্তানের সেবা করা। শ্রেণিবিশেষে আবার রোজগার ও সংসার দুই-ই নারীর। পিতৃতন্ত্র শ্রেণিনির্বিশেষে তার সুবিধামতো বিধি জারি করে আসছে। সেখানে সভ্যতার ধ্বজাধারী বিলেতই বলুন আর গরিবের বুকের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া বাংলাদেশই বলুন, সবখানে একই চিত্র।

আমাদের অপু বিশ্বাসের যে হাল, মেগান মার্কেলেরও তা-ই। মেগান মার্কেল প্রথমত একজন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ও মডেল। তিনি নাট্যতত্ত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিপ্রাপ্ত এবং মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গেও জড়িত। বর্তমানে ব্রিটিশ রাজপুত্র হ্যারির বাগ্‌দত্তা। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, বিয়ের পর আর অভিনয়ে ফিরবেন না। এ যেন কোনো উচ্চাসন থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ নয়, জোর করে পদত্যাগপত্রে সই করানো। ফ্রিল্যান্স লেখিকা রুবি বাডেমেয়ারের লেখায় উল্লেখিত রাজপরিবারের ৫০টি গোপন নীতির মধ্যে আছে: জনসাধারণ ব্রিটেনের রাজপরিবারের সদস্যদের কাউকে ছুঁতে পারবে না। রাজপরিবারের কেউ ড্রেস কোড ছাড়া ক্যাজুয়াল পোশাকে বাইরে আসতে পারবেন না। নারীদের নিচু গলা কাটা জামা পরা নিষেধ (প্রিন্সেস ডায়ানার একটা ছবিতে দেখা যায় তিনি গাড়ি থেকে একটু ঝুঁকে নামার সময় হাতের পার্স দিয়ে বুক আড়াল করছেন)। এসব নীতি মেনে মেগান কীভাবে অভিনয় বা মডেলিং করবেন? তিনি যতই মানবাধিকারে সোচ্চার হোন না কেন। আর রাজপরিবারের সদস্য হতে পারলে যদি সেরার সেরা তারকা বনে যাওয়া যায়, তাহলে নিজের মানবাধিকার না হয় সামান্য ক্ষুণ্ন হলোই! অধিকন্তু, একের পর এক সন্তান জন্মদানে সেখানে নিষেধাজ্ঞা নেই। বলা বাহুল্য, রাজপুত্র উইলিয়ামের স্ত্রী কেট প্রতি দুই বছর অন্তর সন্তান জন্ম দিয়ে চলেছেন। সামনের বছর তৃতীয় সন্তান জন্ম নেবে। কবে ক্ষান্ত দেবেন তা নির্ভর করছে রাজপুত্র তথা রাজপরিবারের সিদ্ধান্তের ওপর।

নারীর ক্ষমতায়ন ক্ষমতায়ন করে আমরা গলা ফাটাচ্ছি। পনেরো-ষোলো বছর আগে প্রখ্যাত অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্ন এসেছিলেন বাংলাদেশে সমাজ উন্নয়নমূলক প্রচারণার জন্য। এবারও তাঁরই আদলে রোবট সোফিয়া এল। তাই সেলিব্রিটিদের কাছে আমাদের প্রত্যাশাও বেশি। কোথায় সেলিব্রিটিরা আমাদের আদর্শস্থানীয় হবেন তা নয়, তাঁদেরই লেজে আগুন।

উম্মে মুসলিমা: কথাসাহিত্যিক।