(সম্প্রতি প্রয়াত বিচারপতি সাহাবউদ্দীন আহমদ ছিলেন এক বিরল গুণাবলির মানুষ। রাষ্ট্রের বড় বড় পদে থেকে তিনি নির্মোহভাবে তাঁর দায়িত্ব পালন করে গেছেন, করেছেন সাধারণ জীবন-যাপন। প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর ১৯৯৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তার অবসরজীবনের প্রথম দিনের দিনযাপন নিয়ে লিখেছিলেন সুমনা শারমীন। ভোরের কাগজ পত্রিকায় তা ছাপা হয়েছিল ২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৫ সালে। প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য লেখাটি পুনঃ মুদ্রণ করা হলো।)
গতকাল বুধবার ছিল সাবেক প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের অবসরজীবনের প্রথম দিন। না, আর সব দিনের মতো সকাল পৌনে ৯টায় অফিসে যাওয়ার তাড়া ছিল না তাঁর গতকাল। বিকেল ৪টায় সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের বিদায় সংবর্ধনায় যাওয়ার আগপর্যন্ত বাড়িতেই ছিলেন তিনি। খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠা সাহাবুদ্দীন আহমদের বরাবরের অভ্যাস। গতকালও এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেনি। বিছানায় থেকেই খেলেন এক কাপ চা। সকালবেলায় পত্রিকা পড়েন আর রেডিওর খবর শোনেন তিনি নিয়মিত। গতকালের পত্রপত্রিকাগুলো ছিল তাঁর জন্য কিছুটা ব্যতিক্রম। কেননা গতকাল সাহাবুদ্দীন আহমদই শিরোনাম ছিলেন সব সংবাদপত্রের পাতাজুড়ে।
দুধ-কলা-চিড়া দিয়ে নাশতা সারেন সাহাবুদ্দীন আহমদ। তারপর কিছুক্ষণ হাঁটলেন বাড়ির প্রাঙ্গণেই। গতকাল বিভিন্ন পত্রপত্রিকা থেকে বেশ কিছু ফোন এসেছে তাঁর বাড়িতে। তবে এর অধিকাংশই রিসিভ করেছেন তাঁর কন্যা বা স্ত্রী। গতকাল সকাল-সন্ধ্যা পর্যন্ত দুই-একজন আত্মীয়স্বজন ছাড়া তেমন কেউ আসেননি সাহাবুদ্দীন আহমদের বাসায়। রাতে নতুন বিচারপতি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান এসেছিলেন।
অন্যান্য দিনের মতো নাতনি এষাকে ঘুম থেকে ডেকে তুললেন। এষাকে কে স্কুল নিয়ে যাচ্ছে, সেসব খোঁজখবর নিলেন এবং এষা যখন বিদায় নিতে এল তখন বললেন, ‘কাল থেকে আমিই তোমাকে স্কুলে নিয়ে যাব।’ সকালবেলা যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্থপতি কন্যা সাহানা পারভীন ফোন করলেন। বাবার কর্মময় জীবনের শেষে খোঁজখবর নিলেন। দুধ-কলা-চিড়া দিয়ে নাশতা সারেন সাহাবুদ্দীন আহমদ। তারপর কিছুক্ষণ হাঁটলেন বাড়ির প্রাঙ্গণেই। গতকাল বিভিন্ন পত্রপত্রিকা থেকে বেশ কিছু ফোন এসেছে তাঁর বাড়িতে। তবে এর অধিকাংশই রিসিভ করেছেন তাঁর কন্যা বা স্ত্রী। গতকাল সকাল-সন্ধ্যা পর্যন্ত দুই-একজন আত্মীয়স্বজন ছাড়া তেমন কেউ আসেননি সাহাবুদ্দীন আহমদের বাসায়। রাতে নতুন বিচারপতি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান এসেছিলেন।
এ দেশের চরম রাজনৈতিক সংকটে দেশের হাল ধরেছিলেন সাহাবুদ্দীন আহমদ। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করে দেশবাসীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন তিনি। তবে তাঁর দীর্ঘ কর্মময় জীবনের শেষে গত দুদিনে কোনো রাজনৈতিক নেতা বা নেত্রী ফোন করেননি তাঁকে। তাঁর বাড়িতে সরকারি পিয়ন হিসেবে কাজ করেন সিদ্দিক ও ওহাব। সাবেক প্রধান বিচারপতির অবসর জীবনের প্রথম দিন তাঁরা কিন্তু নির্দ্বিধায় বলেছেন, ‘এ রকম মানুষ হয় না। আমরা তাঁর সঙ্গে তত দিনই থাকতে চাই, যত দিন তিনি আমাদের না ছাড়েন।’
৩৪ বছরের কর্মজীবন তাঁর শেষ হয়েছে। এখন অফুরন্ত অসর। কিন্তু অত্যন্ত সহজ-সরল এই মানুষের জন্য দেশবাসীর গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা কখনোই শেষ হবে না।
(২ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫, দৈনিক ভোরের কাগজ)
সুমনা শারমীন: বর্তমানে প্রথম আলোর ফিচার সম্পাদক।