কোভিডের পর বিশ্বপরিসরে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যে যুদ্ধের কারণে বদলে যাচ্ছে ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমীকরণ। সোজাসাপটা বললে, বাংলাদেশে আজ যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, তার গোড়ায় এই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এ যুদ্ধের কারণে তেলের দাম বেড়ে যায় এবং পরিণতিতে সারা বিশ্বেই মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পায়। সংকটের সময় বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ডলারের দর বেড়ে যায়। এ দুটি কারণে যে মূল্যস্ফীতির সূচক ঊর্ধ্বমুখী হয়ে যায়, যা এখনো ঊর্ধ্বমুখী।
কিন্তু কেন ও কোন পরিপ্রেক্ষিতে এই যুদ্ধ। বাংলা ভাষায় এ বিষয়ে চমৎকার একটি বই লিখেছেন রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক বদরুল আলম খান। ভূরাজনীতি নিয়ে দেশে বাংলা ভাষায় তেমন কোনো বই নেই, যদিও এসব বিষয়ে আমাদের বিদ্ব্যৎ–সমাজের ও সামগ্রিকভাবে মানুষেরও আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। এই বই সেই চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করতে পারবে বলেই বিশ্বাস।
বইটি সম্পর্কে সংক্ষেপে বিবরণ দিতে ফ্ল্যাপের এই কথাগুলো উদ্ধৃত করা যায়: যুক্তরাষ্ট্রের ভূকৌশলগত স্বার্থ মেটানোর অপ্রতিরোধ্য জেদ আর রাশিয়ার শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠা নিয়ে হিংসা কীভাবে ইউক্রেনকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করছে, তার বর্ণনা রয়েছে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ: সত্য-মিথ্যার লড়াই বইয়ে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন, বিশ্বরাজনীতিতে রাশিয়াকে কোণঠাসা করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা আর সেই সুযোগে ন্যাটো নামের আগ্রাসী জোটের সম্প্রসারণ-নীতির উসকানি এই যুদ্ধকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলে। এ বইকে বলা যেতে পারে স্বাধীন দেশ হিসেবে ইউক্রেনের আত্মপ্রকাশের আকাঙ্ক্ষা, রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের ঐতিহাসিক জাতিগত ঐক্যের পটভূমি ও ইউক্রেনকে পশ্চিমা রাজনৈতিক বলয়ে টেনেহিঁচড়ে আনার মার্কিন প্রয়াসের এক অনবদ্য ও বাহুল্যবর্জিত বিবরণ।
খালি চোখে দেখা যায়, রাশিয়া পার্শ্ববর্তী দেশ ইউক্রেনে হামলা চালিয়ে নিজের ভূরাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করছে। কিন্তু লেখক বদরুল আরব ইতিহাসের বিভিন্ন কালপর্ব থেকে ঘটনা তুলে এনে দেখান, বিষয়টি মোটেও এমন সহজ-সরল ও একপক্ষীয় নয়। বরং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা শক্তিগুলো রাশিয়াকে এই যুদ্ধে যেতে বাধ্য করেছে। বলা বাহুল্য, ইউক্রেনের মতো ছোট একটি দেশ পশ্চিমাদের সাহায্য-সহায়তা ছাড়া রাশিয়ার মতো পরাশক্তিকে এভাবে ক্রমাগত যুদ্ধের উসকানি দিতে পারে না।
সে কারণে লেখক যথার্থই বলেছেন, বইটির শিরোনাম ‘রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ’ কতটুকু প্রাসঙ্গিক, সে বিষয়ে তাঁর নিজেরই সংশয় আছে। তাঁর নিজের ভাষ্য: ‘শিরোনামটি আমার ধারণায় আরও মানানসই হতো যদি তার নাম দেওয়া যেত ‘রুশ-ন্যাটো’ অথবা ‘রুশ-মার্কিন যুদ্ধ’। কেন এই ধারণা, তার পেছনে অন্তত দুটি কারণ উল্লেখ করতে পারি। প্রথমত, এ যুদ্ধ কখনো শুরু হতো না যদি যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো ইউক্রেনকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্ররোচিত না করত। দ্বিতীয়ত, এই যুদ্ধে ইউক্রেন সর্বতোভাবে সাহায্য পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো নামের সামরিক সংস্থা থেকে। আমেরিকার ওপর ইউক্রেন আজ এমনভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে যে তার অর্থনীতি, রাজনীতি, সামরিক সাজসরঞ্জাম সরবরাহ, সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ, কৌশলগত উপদেশ, এমনকি যুদ্ধ বন্ধ করা নাকি চালিয়ে যাওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের নিয়ন্ত্রক যুক্তরাষ্ট্র। ফলে যুদ্ধটা প্রকৃত বিচারে রাশিয়ার সঙ্গে ন্যাটোর, আর সেই অর্থে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের।’
এই দৃষ্টিভঙ্গি লেখকের একার নয়, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের খ্যাতিমান পণ্ডিত যেমন, জন মেরসিমার, ক্রিস হজ বা জেফরি স্যাক্সও এই মত পোষণ করেন বলে লেখক জানিয়েছেন।
লেখক বলছেন, মস্কো যুদ্ধে গেছে তিনটি প্রধান উদ্দেশ্য সামনে রেখে। সেগুলো হলো ইউক্রেনকে মার্কিন-ইউরোপীয় প্রভাববলয় থেকে মুক্ত করা, ইউক্রেনে রুশভাষী নাগরিকদের মানবাধিকার রক্ষা করা ও ইউক্রেনকে নিরপেক্ষ নীতি অনুসরণে বাধ্য করা। এই তিনটি উদ্দেশ্য রাশিয়া সম্পূর্ণ নয়, আংশিকভাবে পূরণ করতে পেরেছে বলে তাঁর মত। রাশিয়া ইউক্রেনকে ইউরোপ-আমেরিকার প্রভাববলয় থেকে বের করতে পারেনি, বরং ইউক্রেনের অর্থনীতি ও নিরাপত্তার প্রশ্ন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর ওপর নির্ভরশীল। দেশটির পশ্চিমাঞ্চল রাশিয়ার ওপর ক্ষুব্ধ ও শত্রুভাবাপন্ন। সেই অনুভূতি যুদ্ধের কারণে আরও তীব্র হয়েছে। রাশিয়া তাদের কাছে আর গ্রহণযোগ্য নয়।
ইউক্রেনের সঙ্গে যে ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথা মস্কো দাবি করে এসেছে, সেই সম্পর্ক ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা এখন শূন্য। কিয়েভ এখনো ন্যাটোর সদস্য হওয়ার আশা ছাড়েনি। ন্যাটোতে না হলেও যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর সে নিশ্চিতভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেবে। ফলে ইউরোপের সঙ্গে তার বন্ধন হবে আরও শক্তিশালী। অন্যদিকে রাশিয়া ইউক্রেনের রুশভাষী অঞ্চল যেমন দানিয়েস্ক, দনবাস, লুহানস্ক, জাপোরিঝঝিয়া দখল করেছে এবং বলা যায়, রুশ রাষ্ট্রে তাদের আত্তীকরণ প্রায় চূড়ান্ত। যে বিভক্তি যুদ্ধের আগে ইউক্রেনের জাতি-পরিচয়ে বিদ্যমান ছিল, সে বিভক্তি এখন এতটা প্রসারিত হয়েছে যে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল আর কখনো ইউক্রেনের রাজনৈতিক কাঠামোতে ফিরে যাবে না। একই দাবি করা যায় ক্রিমিয়া প্রসঙ্গে। তারও ইউক্রেনে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা শূন্য।
অন্যদিকে রাশিয়া এখন আর ইউরোপের একটি দেশ হিসেবে নিজেকে দাবি করতে পারে বলে মনে করি না। ইউরোপের সঙ্গে তার সম্পর্ক এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে সম্পর্কটা প্রায় শত্রুর সঙ্গে শত্রুর। এই বৈরিতা অদূর ভবিষ্যতে দূর করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। অন্যদিকে ট্রাম্প যেভাবে নির্বাচনের আগে থেকেই বলে আসছেন যে যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোতে অর্থায়ন হ্রাস করবে তার কিছু অংশও যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে ইউরোপও সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি করবে। তখন ভিন্ন এক বাস্তবতা তৈরি হবে। সেদিক থেকে ভাবলে রাশিয়া প্রথম উদ্দেশ্য পূরণে আংশিকভাবে হলেও ব্যর্থ হয়েছে।
রাশিয়ার যে করতে পেরেছে তা হলো, ইউরোপ থেকে দূরে সরে আসায় সে আরও বেশি করে সম্পৃক্ত হচ্ছে চীন ও গ্লোবাল সাউথের সঙ্গে, যার মধ্যে আছে ভারত, ইসলামি বিশ্ব, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকা। বিশেষ করে চীনের সঙ্গে তার ব্যবসা-বাণিজ্য ও সামরিক সম্পর্কের উন্নয়ন হয়েছে, যদিও একসময় একই আদর্শিক শিবিরে থাকলেও তাদের সম্পর্ক সাপে-নেউলে পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। এই যুদ্ধ তাদের এক করে দিয়েছে। চীনের আছে অর্থ, রাশিয়ার আছে সমরাস্ত্র ও বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ। এই দুটির মিলন ঘটায় ব্রিকস গতি পেয়েছে। রাশিয়ার মধ্যস্থতায় চীনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত উত্তেজনা অনেকটাই প্রশমিত হয়েছে; এমনকি তারা বিতর্কিত এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করেছে।
বাস্তবতা হলো রুশ জাতীয়তাবাদ উজ্জীবিত করার জন্য দরকার ছিল নাগরিকদের বিশেষ পরিচয় গড়ে তোলা। সেই পরিচয় না ইউরোপীয়, না এশীয় বরং এই দুইয়ের মিশ্রণ; রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যার নাম দিয়েছেন ইউরেশীয়। গ্লোবাল সাউথ আজ বিদ্যমান বিশ্বব্যবস্থার বদলে তাদের জন্য অনুকূল নতুন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আগ্রহী। কিন্তু এটাও সত্য, ওই অঞ্চল নানা বিভেদে জর্জরিত, সেখানে রয়েছে ধর্মীয়, জাতিগত ও শাসনব্যবস্থাগত ভিন্নতা। ফলে নিজের অবস্থানকে ওই জটিল ব্যবস্থার অধীনে শক্তিশালী করা রাশিয়ার পক্ষে সহজ হবে না। যুক্তরাষ্ট্রও নিরন্তরভাবে চেষ্টা করবে সেখানে বিভেদ সৃষ্টি করতে, সম্ভব হলে রুশবিরোধী ঐক্য ফ্রন্ট গড়ে তুলতে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভাষ্য, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনের পর পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার সঙ্গে রীতিমতো প্রতারণা করেছে। রাশিয়া অনেকবার সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু পশ্চিমারা সেই কথা শোনেনি। মার্কিন সাংবাদিক টাকার কার্লসনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে পুতিন আরও বলেন, রাশিয়া তো আর কমিউনিস্ট দেশ নয়, তারপরও পশ্চিমাদের বিদ্বেষ যেন শেষ হওয়ার নয়। সর্বশেষ সেটা তারা করেছে, সেটা হলো ইউরোপের পূর্বাঞ্চলে ন্যাটোর সম্প্রসারণ। এ ঘটনা যেন কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেয়। সেই সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে দেওয়ার সময় তৎকালীন নেতারা প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে পারেননি বলেও সমালোচনা করেন পুতিন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পশ্চিমারা রাশিয়ার ওপর যত ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তাতে প্রাথমিকভাবে অনেকেরই মনে হয়েছিল, দেশটির অর্থনীতি ধসে পড়বে। বাস্তবে তা হয়নি। পশ্চিমা অনেক দেশের তুলনায় রাশিয়ার অর্থনীতি বরং এখন ভালো অবস্থায় রয়েছে; যদিও অন্যান্য দেশে তার প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে।
গত দুই বছরে সারা বিশ্বে ডিডলারাইজেশন ত্বরান্বিত হয়েছে। শুধু রাশিয়া বা পশ্চিমাবিরোধী দেশগুলো নয়, যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত অনেক দেশও ডলারের পরিবর্তে অন্যান্য মুদ্রায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত রাখতে শুরু করেছে। অন্যান্য মুদ্রায় বাণিজ্যও বাড়ছে। ২০২৩ সালের তৃতীয় প্রান্তিক (জুলাই-অক্টোবর) শেষে বৈশ্বিক রিজার্ভ মুদ্রায় ডলারের হিস্যা কমে ৫৯ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসে, ২০০০ সালে যা ছিল ৭০ শতাংশ।
এদিকে চীনা মুদ্রা ইউয়ান ও রুশ মুদ্রা রুবলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাড়ছে। সৌদি আরবের কাছ থেকে চীন নিজস্ব মুদ্রা ইউয়ানে তেল কেনার বন্দোবস্ত প্রায় করে ফেলেছে। বস্তুত রাশিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি রোধে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ যেভাবে আগ্রাসী হারে নীতি সুদহার বাড়ায়, এর জেরে ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি পায়। এতে বাংলাদেশসহ অনেক দেশেই প্রবল ডলার-সংকট দেখা দেয়। অনেক দেশ বাধ্য হয়ে ডলারের পরিবর্তে অন্যান্য মুদ্রায় লেনদেন শুরু করে। ব্রিকসও ডলারের পরিবর্তে অভিন্ন মুদ্রা বা নিজেদের সদস্যদেশের মুদ্রায় লেনদেন করতে চায়। ডিডলারাইজেশন আগেই শুরু হয়েছে, যুদ্ধের কারণে তা আরও গতি পেয়েছে।
বইটিতে মোট আটটি অধ্যায় আছে। যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে কমলা বিপ্লব ঘটিয়ে দেশটিকে নিজের করায়ত্তে আনল, সেই ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বিস্তারের নীলনকশার বিবরণ। আছে যুক্তরাষ্ট্রের অপকর্মের ফিরিস্তি: ‘জন পিলজার অস্ট্রেলিয়ার প্রখ্যাত একজন সাংবাদিক। তাঁর অগণিত লেখা এবং তথ্যচিত্র যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতির নানা অপরাধমূলক দিক তুলে ধরতে সাহায্য করে। তথ্যপ্রমাণ দিয়ে তিনি দাবি করেন, এ পর্যন্ত আমেরিকা অন্তত ৫০টি দেশে সরকার উৎখাতে সফল হয়েছে অথবা উৎখাত ষড়যন্ত্রে জড়িত থেকেছে, যদিও ভুক্তভোগী দেশগুলোর অধিকাংশই ছিল গণতান্ত্রিক। এ পর্যন্ত ৩০টি দেশের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করে। অন্তত ৩০টি দেশে বিমান হামলা চালিয়ে অসহায় নিরীহ মানুষকে হত্যা করে, যারা নিজেদের রক্ষা করতে অক্ষম। যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিল ৫০টি দেশের রাষ্ট্রনায়কদের হত্যা ষড়যন্ত্রে। ২০টি দেশের স্বাধিকার আন্দোলনকে (বাংলাদেশ এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত) দমিয়ে রাখা বা বানচালের চেষ্টার সঙ্গেও আমেরিকার নাম যুক্ত (Pilger, John, 2022)। এই দীর্ঘ অপরাধ তালিকা মার্কিন কূটনীতির ভয়াবহ চিত্রকে তুলে ধরে। সেই ইতিহাসে যেসব প্রেসিডেন্ট জড়িত ছিলেন বা এখনো আছেন, তাঁদের প্রত্যেককে গণহত্যার অপরাধে বিচার করার যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে।’
লেখক বদরুল আলম বলছেন, ভূরাজনীতিতে প্রভাববলয়ের ধারণা আছে, অর্থাৎ দেশের আশপাশে নিজেদের প্রভাব বিস্তার। যে কাজ যুক্তরাষ্ট্র ২০০ বছর আগে শুরু করে। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর যুক্তরাষ্ট্র সেই ধারণা আস্তাকুঁড়ে ফেলে দেয়। রাশিয়াকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে তারা সেটা করে, যেন তার একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। লেখক বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এসব অপরাধের ক্ষমা নেই।
প্রতীক বর্ধন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক