কমলা হ্যারিসকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হারিয়ে দেওয়াকে বড় করে দেখানো সহজ। কিন্তু বাস্তবতা হলো ট্রাম্প পপুলার ভোটে খুব কম ব্যবধানে (২ শতাংশের কম ভোটে) জিতেছেন। সর্বশেষ ‘বিপুল জয়’ ঘটেছিল ২০০৮ সালে। সে বছর বারাক ওবামা জন ম্যাককেইনকে ৭ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছিলেন।
এই জয়ের ফলে ১১১তম কংগ্রেসকে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ফলপ্রসূ কংগ্রেস বলে মনে করা হয়। এই জয়ের মাত্র দুই বছর পর অর্থাৎ ২০১০ সালে মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা প্রতিনিধি পরিষদে (হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস) ৬৩টি আসন এবং সিনেটে ৬টি আসন হারায়। এর ফলে ওবামাকে রিপাবলিকান স্পিকার জন বেনারের সঙ্গে বনিবনা করে কাজ করতে বাধ্য হতে হয়; কারণ, তাঁর দল সিনেটে সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রেখেছিল।
২০০৮ সালে ওবামা যে সুস্পষ্ট জয় পেয়েছিলেন, তার বিপরীতে ট্রাম্প এবার হোয়াইট হাউসে ফেরার সময় পাচ্ছেন ৫৯ জন সিনেটর ও ২৫৫ জন প্রতিনিধির সমর্থন। এই সমর্থনের ওপর তিনি নিশ্চিত নির্ভর করতে পারবেন না; বরং রিপাবলিকানদের হাউস ও সিনেটে ক্ষীণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কাজ করতে হবে। অর্থাৎ আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে তঁার দলের সমর্থন অনেক দুর্বল হবে। এটি তাঁর এজেন্ডা বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।
কংগ্রেসের রিপাবলিকানরা ট্রাম্পের স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণকে উচ্ছ্বসিত সমর্থন জানাবেন। তবে যাঁরা সুইং ডিস্ট্রিক্ট (যেখানে ভোটারদের সমর্থন প্রায় সমানভাবে বিভক্ত) থেকে নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ (সংক্ষেপে ‘মাগা’) এজেন্ডা বাস্তবায়নে সমর্থন দিতে দ্বিধাগ্রস্ত হতে পারেন। যদি তাঁরা অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট (যেটি ‘ওবামাকেয়ার’ নামে পরিচিত) বাতিল করতে ভোট দেন বা কর বাড়ান, তাহলে তাঁদের সংসদীয় এলাকার জনগণ চিকিৎসা খরচ ও খাদ্যের দাম বাড়ার মুখে পড়বে।
সেটি হলে ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা এই অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোকে ফলাও করে প্রচার করবেন। সেটি রিপাবলিকানদের এক বা দুই কক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে সংকটে ফেলবে। কংগ্রেসের প্রতিনিধিদের জন্য এমন জটিল পরিস্থিতি নতুন কিছু নয়। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় একটি পরীক্ষিত কৌশল রয়েছে। সেটি হলো ‘স্ট্র্যাটেজিক ডিলে’ বা ‘কৌশলগত বিলম্ব’।
ট্রাম্পের স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণের প্রশংসা করার পর দোদুল্যমান নির্বাচনী এলাকার রিপাবলিকানরা হাউস ও সিনেটের নেতৃত্বকে বলবেন, তাঁর ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ নীতিকে এগিয়ে নেওয়াসংক্রান্ত ভোটগুলো ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের পরে পর্যন্ত স্থগিত রাখা হোক। এই নেতারা দীর্ঘ সময় ধরে কমিটি শুনানি ও আলোচনা চালাবেন, যাতে ট্রাম্পকে বোঝানো যায়, তাঁর মেয়াদের শেষ দুই বছরে তাঁর উদ্দিষ্ট বিজয় অর্জিত হবে।
আর এর মধ্যে রিপাবলিকান নেতৃত্ব ট্রাম্পের কিছু এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবেন। তবে সেগুলো হবে তুলনামূলক সংযত আইন, যা দলের অন্য সদস্যদের পুনর্নির্বাচনের সম্ভাবনাকে বাড়াবে। অর্থাৎ রিপাবলিকানরা এই কৌশল ব্যবহার করে ঝুঁকিপূর্ণ নীতিগুলো বাস্তবায়নে বিলম্ব করবে, যাতে মধ্যবর্তী নির্বাচনে তাদের পরাজয়ের সম্ভাবনা কমে।
মধ্যবর্তী নির্বাচনের পর হাউস এবং সিনেটের রিপাবলিকানরা বুঝতে পারবেন, তাঁদের ভবিষ্যৎ মূলত ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলের ওপর নির্ভর করবে এবং ট্রাম্পই প্রায় নিশ্চিতভাবে তাঁর উত্তরসূরি ঠিক করে যাবেন। এই উপলব্ধি রিপাবলিকানদের মধ্যে একটি শক্তিশালী অনুপ্রেরণা তৈরি করবে। এই প্রেরণা তাঁদের ২০২৭ সাল থেকে ট্রাম্পের মাগা এজেন্ডা বাস্তবায়নে উদ্যোগী করবে।
সাধারণত বিদায়ী প্রেসিডেন্টরা ‘কৌশলগত বিলম্ব’ নীতি মেনে নেন। কারণ, তাঁদের বড় নীতিগত উদ্যোগগুলো সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ওপর ভিত্তি করে হয়। তাঁদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তাঁদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা। কিন্তু প্রেসিডেন্ট পদে ট্রাম্পের আচরণ সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের হবে। তিনি অপেক্ষা করতে চাইবেন না। যে রিপাবলিকান নেতারা তাঁর এজেন্ডা তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়ন না করে বিলম্ব করার কথা বলবেন, তিনি তাঁদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে ভর্ৎসনা করবেন।
এটি হবে ট্রাম্পের শিশুসুলভ অভিমান ও প্রতিক্রিয়াশীল আচরণে পূর্ণ শাসনব্যবস্থার একটি স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। এর ফলে মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানদের ওপর বিপর্যয়কর পরিণতি নেমে আসতে পারে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ভবিষ্যতে দুটি পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
প্রথমত, রিপাবলিকান নেতারা যদি ট্রাম্পের চাপে মাথা নত করেন এবং ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগেই তাঁর মাগা এজেন্ডা কংগ্রেসে পাস করান, তাহলে ডেমোক্র্যাটরা এই আইনগুলোকে তাঁদের নির্বাচনী প্রচারণার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবেন। তাঁরা দেখাবেন, এই নীতিগুলো সাধারণ মানুষের জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এটি রিপাবলিকানদের জনপ্রিয়তায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
দ্বিতীয়ত, অনেক রিপাবলিকান যদি ট্রাম্পের চাপে নতিস্বীকারে অস্বীকৃতি জানান এবং তাঁর এজেন্ডার বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেন, তাহলে কংগ্রেসের নেতৃত্বের সামনে ‘কৌশলগত বিলম্ব’ ছাড়া কোনো বিকল্প থাকবে না। এটি হলে ট্রাম্প তাঁদের তীব্রভাবে আক্রমণ করবেন এবং তা রিপাবলিকান শিবিরে গৃহদাহ তৈরি করবে।
দ্বিতীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে অর্থাৎ রিপাবলিকানরা ট্রাম্পের মাগা এজেন্ডা বাস্তবায়নে বিলম্ব করলে সেটিও ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে তাদের পুনর্নির্বাচনের সম্ভাবনাকে মারাত্মকভাবে দুর্বল করবে। ডেমোক্র্যাটদের জন্য সুযোগ তৈরি হবে।
● ব্রুস অ্যাকারম্যান ইয়েল ইউনিভার্সিটির আইন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক
স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ