মধ্যপ্রাচ্যের নেতাদের সঙ্গে এমানুয়েল মাখোঁর গভীর আলিঙ্গন, তাঁর বাচনভঙ্গি, উদ্বেগ প্রকাশের ধরন সবকিছুই চোখে পড়ার মতো। তাঁর নিজ দেশ বহুধাবিভক্ত। এ অবস্থাতেও তিনি মধ্যপ্রাচ্য সফরের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাঁর অবস্থানকে যেন জানান দিলেন।
এই সফরে তিনি নিজেকে পশ্চিমের ইতিবাচক ও সুদৃঢ় এক নেতা হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যুক্ত হওয়া থেকে, ইউক্রেন সমস্যা সমাধানে শান্তি সংলাপের প্রতি সমর্থন প্রকাশের মধ্য দিয়ে মাখোঁ দেখিয়েছেন ভূরাজনীতির জটিল কুটিল চ্যালেঞ্জ নিতে তিনি প্রস্তুত।
তাঁর কাছে কূটনৈতিক সমাধান আছে। গত সপ্তাহে মাখোঁ ইসরায়েল, অধিকৃত পশ্চিম তীর ও মিসর সফরে যান। বিশ্বনেতারা মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়েছেন। এ অবস্থায় মাখোঁ কি সত্যিই ভাবছেন, তিনি সফল হবেন? এ নিয়ে অনেকের মনেই এখন কৌতূহল।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার আগে মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কে মাখোঁর তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি। কিন্তু প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমেই তিনি মরক্কো সফরে যান। এর পর থেকে যখনই সুযোগ পেয়েছেন, তখনই তিনি এই অঞ্চলে তাঁর প্রভাব স্পষ্ট করার চেষ্টা করেছেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের ব্যাপারে অন্যদের সঙ্গে তাঁর মতভিন্নতা আছে, তিনি উপসাগরীয় অঞ্চলের নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করতে চান, লেবানন ও ইরাকে তাঁর যোগাযোগ আছে।
মধ্যপ্রাচে৵র উপদ্রুত রাজধানীগুলোয় মাখোঁর এই সফর বলছে, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে চান না; বরং তাঁর ভাবভঙ্গি অনেকটা জ্যাক শিরাকের মতো। যদিও ফ্রান্সের নিজস্ব অনেক জটিল সমস্যা আছে এবং এসব সমস্যার কারণে ভূরাজনীতিতে এ দেশের নেতারা খুব একটা প্রভাব রাখতে পারেন না।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে যৌথ বিবৃতিতে মাখোঁ ইসরায়েলের প্রতি তাঁর সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে বেসামরিক জনগণের প্রাণহানি পরিহার করার কথা মনে করিয়ে দেন। তিনি এই সমস্যার যে রাজনৈতিক সমাধান খোঁজা হচ্ছে, তা থেকে বিরত থাকা যাবে না বলেও উল্লেখ করেন।
কূটনৈতিক মঞ্চ যেমন বাগদাদ সম্মেলন, ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং সফট পাওয়ার যেমন লুভ আবুধাবির মতো সাংস্কৃতিক প্রকল্প, জেরুজালেমের কিছু ক্যাথলিক তীর্থস্থানের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে ফ্রান্স মধ্যস্থতাকারীর চেয়েও বড় ভূমিকা রাখতে চায়। ফ্রান্স চায় এ অঞ্চলের কূটনৈতিক নেতা হতে।
ঐতিহ্যগতভাবে ফ্রান্স যুদ্ধবিবাদের ক্ষেত্রে ‘দুই দেশেরই বন্ধু’—এমন নীতিতে চলে। তিনি পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে অবৈধ বসতি স্থাপনের নিন্দা জানান। একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষাবলম্বন করলেও ফ্রান্স হামাসকে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে গণ্য করে বলে ঘোষণা দেন এবং তাদের সহিংসতা পরিহার করার আহ্বান জানান। মধ্যপ্রাচ্যের রাজধানীগুলোয় সফরের পাশাপাশি মাখোঁ রামাল্লায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও এই দফায় দেখা করেছেন।
ফ্রান্স ও মধ্যপ্রাচ্যের সম্পর্ক দীর্ঘমেয়াদি। লেভান্তের সঙ্গে প্যারিসের একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে বহু আগে থেকে। লেবানন, সিরিয়া, ইরাক, ইসরায়েল ও অধিকৃত অঞ্চলের আধুনিক ইতিহাস ও রাজনীতির সঙ্গেও ফ্রান্সের রয়েছে গভীর যোগাযোগ। চলমান সংকটে ফ্রান্স এই অঞ্চলের সঙ্গে তার ঐতিহাসিক সম্পর্ককে আবার ঝালিয়ে নিতে পারে।
মাখোঁ লেবাননের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলছেন। এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতায় লেবাননের গুরুত্বের কথা বারবার তিনি বলছেন। সেই সঙ্গে লেবাননের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
সিরিয়ার বেলায় মাখোঁ আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থানের কথা জোরালোভাবে উপস্থাপন করেছেন। কিন্তু সিরিয়ায় যুদ্ধের শেষ প্রান্তে তিনি ক্ষমতায় আসার কারণে খুব একটা প্রভাব রাখতে পারেননি।
ফলে তাঁর নজর ছিল ইরাকের দিকে। মাখোঁ বাগদাদ সম্মেলনে আঞ্চলিক সম্পর্ককে আরও সংহত করার ব্যাপারে জোর দেন। তবে মধ্যপ্রাচ্যের চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতির কারণে আগামী বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
কূটনৈতিক মঞ্চ যেমন বাগদাদ সম্মেলন, ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং সফট পাওয়ার যেমন লুভ আবুধাবির মতো সাংস্কৃতিক প্রকল্প, জেরুজালেমের কিছু ক্যাথলিক তীর্থস্থানের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে ফ্রান্স মধ্যস্থতাকারীর চেয়েও বড় ভূমিকা রাখতে চায়। ফ্রান্স চায় এ অঞ্চলের কূটনৈতিক নেতা হতে।
আরব নিউজ থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত
জায়েদ এম বেলবাগি রাজনৈতিক ভাষ্যকার