যুক্তরাষ্ট্রের ৯/১১-এর কাজ শেষ করতে চায় ইসরায়েল

ইসরায়েল বর্তমানে তার তাণ্ডবকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য ৭ অক্টোবরের অজুহাত আঁকড়ে ধরছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের নব্য রক্ষণশীলেরা ৯/১১-এর সময় আল-কায়েদার নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ার ধ্বংস করার অজুহাত কাজে লাগিয়েছিল। এসবই ছিল তাদের ‘মধ্যপ্রাচ্য পুনর্নির্মাণের’ ছুতা। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের ভূমিকা নিয়ে লিখেছেন জনাথন কুক

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে ফ্রান্সে বিক্ষোভছবি: এএফপি

প্রায় এক দশক আগে, একজন নেতৃস্থানীয় ইসরায়েলি মানবাধিকারকর্মীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। তিনি ইসরায়েলে নিযুক্ত ইউরোপের একজন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তাঁর আলাপের কথা বলেছিলেন আমাকে। বলেছিলেন যে সেই আলাপ করতে গিয়ে তিনি শঙ্কায় কেঁপে উঠেছিলেন।

আমাদের মানবাধিকারকর্মী রাষ্ট্রদূতকে একটা সহজ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছিলেন—ইসরায়েল রাষ্ট্র কোথায় থামবে, সেই সীমা কোথায়?

বেশ কিছুক্ষণ ভেবে কাঁধ ঝাঁকিয়ে রাষ্ট্রদূত উত্তর দিয়েছিলেন, নেই, ইসরায়েলের থামার কোনো সীমা নেই। ইসরায়েল আজ গাজা প্রায় নিশ্চিহ্ন করে ফেলার পর, সেই কথা একেবারে ভবিষ্যদ্বাণীপূর্ণ শোনাচ্ছে। ইসরায়েলের থামার কোনো লাল দাগ দেওয়া সীমা নেই। কখনো ছিলও না।

■ ইসরায়েল দেখিয়েছে যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতার পুনরাবৃত্তি এড়াতে পশ্চিমাদের দেওয়া আইনি সীমা তারা মেনে চলবে না 

■ সহিংসতা আরও সহিংসতার জন্ম দেয়। ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের কয়েক দশকের কাঠামোগত সহিংসতা পরিস্থিতি এই পর্যায়ে নিয়ে গেছে।

■ নব্য রক্ষণশীলেরা মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মোড়লগিরিও বজায় রাখতে ইসরায়েলকে গুন্ডা হিসেবে কাজে লাগানোর পক্ষপাতী।

আন্তর্জাতিক আদালত এড়িয়ে যাচ্ছে 

ইসরায়েলের গাজা ধ্বংসের প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বের দুটি সর্বোচ্চ আদালতও নীরব। কোন সীমা পর্যন্ত ইসরায়েল গেলে তারা কোন পদক্ষেপ নেবে, কেউ জানে না।

ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস জানুয়ারিতে গণহত্যার জন্য ইসরায়েলের বিচার করতে সম্মত হয়েছিলেন।

গণহত্যা এক চূড়ান্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ। আদালত এমন বিষয়ে দ্রুত নির্দিষ্ট রায় দেওয়ার কথা। গাজার জনগণের হাতে তো অপেক্ষা করার মতো সময় নেই। তাঁদের দেশ বধ্যভূমি হয়ে গেছে। অনাহারে কাটছে এক বছরের ওপর। অথচ আন্তর্জাতিক আদালতগুলোতে বিরাজ করছে নীরবতা।

এই আদালত রায় দিয়েছিলেন যে ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ইসরায়েলের ৫৭ বছরের সামরিক দখল অবৈধ। এই দখলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ করার অধিকার রয়েছে। ইসরায়েলকে অবিলম্বে গাজা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করতে হবে।

পশ্চিমা রাজনীতিবিদ ও সংবাদমাধ্যম স্পষ্ট কারণে এই রায়ের তাৎপর্য উপেক্ষা করেছে। এই উপেক্ষা বলে দেয় কেন হামাসের জন্ম হয়েছে। এই হামাসই আবার যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে নিষিদ্ধ।

ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের সমস্যা দ্বিমুখী। গাজায় গণহত্যা স্বীকার না করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের কাছে চাপের মধ্যে রয়েছে। আদালতের এ ধরনের রায় তাদের ঘোমটা ছিঁড়ে ফেলবে। প্রকাশ করে দেবে যে এই সর্বোচ্চ অপরাধে তারা সরাসরি যুক্ত। 

দ্বিতীয়ত, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বাইরে এই আদালতের রায় প্রয়োগের কোনো ব্যবস্থা নেই। আর পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিয়ে নিয়মিত ইসরায়েলকে রক্ষা করে।

একইভাবে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টও (আইসিসি) নিজেকে সরিয়ে রাখছে। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। ইউরোপীয় দেশগুলো আইসিসির যেকোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করতে বাধ্য।

কিন্তু কয়েক মাস ধরে, আইসিসির বিচারকেরা পরোয়ানা অনুমোদন করতে বিলম্ব করেছেন। কারণ, তাঁরাও ওয়াশিংটনের ক্রোধের শিকার হতে চান না। 

একদিকে ইসরায়েল দেখিয়েছে যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতার পুনরাবৃত্তি এড়াতে পশ্চিমাদের দেওয়া আইনি সীমা তারা মেনে চলবে না আর পশ্চিমা শক্তিগুলো বুঝিয়ে দিয়েছে যে ইসরায়েলকে আটকানোর কোনো ইচ্ছাই তাদের নেই। তারা বরং তাদেরই দেওয়া সীমালঙ্ঘনে ইসরায়েলকে সহায়তা করবে।

অন্যদিকে মাসের পর মাস ইতস্তত করে এই দুটি আন্তর্জাতিক আদালত যুদ্ধের বিধিবিধানকে অসম্মান করেছেন। তাঁরা পারমাণবিক যুগে পৃথিবীকে জঙ্গল আইনের যুগে ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন। 

যুদ্ধের পথে

পশ্চিমা রাজনীতিবিদ, পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম আর দুই আন্তর্জাতিক আদালতের জবাবদিহির কোনো বালাই নেই। আর এই জবাবদিহির অভাবই ইসরায়েলকে এখন অধিকৃত পশ্চিম তীর, লেবানন, ইয়েমেন ও সিরিয়াকে জড়িয়ে দিনের পর দিন রক্তপাত করার পথ প্রশস্ত করেছে।

ইসরায়েলের যুদ্ধের যে মঞ্চ বানিয়েছে, তা এখন স্পষ্ট। পুরো বিশ্ব ইরানে ইসরায়েলি হামলা দেখার জন্য দর্শক হয়ে অপেক্ষা করছে।

এক অঘোষিত আঞ্চলিক যুদ্ধ বিশ্বযুদ্ধে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে প্রতিদিন। এর সঙ্গে আছে পারমাণবিক সংঘর্ষের শঙ্কা। কিন্তু কেন? এমনটা ঘটতে দেওয়া হচ্ছে কেন?

ইসরায়েলের পক্ষে যারা সাফাই দেয়, তাদের পক্ষে এর উত্তর সহজে দেওয়া সম্ভব। এই সাফাইবাদীদের মধ্যে পড়ে পশ্চিমা সব প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এই কথা তারা স্পষ্টভাবে বলতে পারে না। বললে তাদের বর্ণবাদী চেহারা লুকিয়ে রাখা যাবে না।

উত্তরটা এ রকম—ইসরায়েলিদের নিরাপদ রাখার জন্য গাজায় হামাস এবং তার সমর্থকদের নিশ্চিহ্ন করতে হবে। আর এর জন্য যারা ইসরায়েল আর পশ্চিমের সভ্যতাগত শ্রেষ্ঠত্বের কাছে নতি স্বীকার করতে অস্বীকার করবে, তাদেরও মুছে ফেলতে হবে।

ইসরায়েলের সমালোচকদের ‘অ্যান্টি-সেমেটিক’ বলে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়। তো এই সমালোচকেরা যুক্তি দেন যে কূটনৈতিক সমাধানের পরিবর্তে কেবল সামরিক আগ্রাসনের মাধ্যমে ইসরায়েলিদের নিরাপদ করা যাবে না। সহিংসতা আরও সহিংসতার জন্ম দেয়। ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের কয়েক দশকের কাঠামোগত সহিংসতা পরিস্থিতি এই পর্যায়ে নিয়ে গেছে।

সভ্যতার সংঘর্ষ 

তবে এত কথা বলে আমরা সমস্যাটি বোঝার অর্ধেক মাত্র পার হলাম।

ইসরায়েল এবার ফিলিস্তিনি জনগণকে নির্মূল করার জন্য সব কাজ শেষ করতে বদ্ধপরিকর বলে মনে হচ্ছে। এই পরিকল্পনায় পশ্চিমাদের সমর্থন আছে। তাদের বসতি স্থাপনকারী ঔপনিবেশিক প্রকল্পটি তারই পূর্বাভাস দিয়েছিল।

ইসরায়েল বারবার ঐতিহাসিক ফিলিস্তিনকে জাতিগতভাবে নির্মূল করতে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী অভিজ্ঞতা বলছে যে ইসরায়েল থামবে না। এখন তারা ৭ অক্টোবরের ছুতা ধরে গাজায় গণহত্যা শুরু করেছে। সেটা পার পেয়ে গেলে শুরু হবে পশ্চিম তীরে।

প্রেসিডেন্ট জজ বুশের সময় নব্য রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত একদল চরম মতাদর্শী যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতির উদ্যোগ দখল করেছিল। তখন থেকে তারা ওয়াশিংটনের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ন্ত্রণ করে, সে যে প্রশাসনই ক্ষমতায় থাকুক।

নব্য রক্ষণশীলদের বৈশিষ্ট্য হলো তাদের দুনিয়ার কেন্দ্রে আছে ইসরায়েল; তারা ইসরায়েলের ইহুদি আধিপত্যবাদ ও সামরিকবাদকে পশ্চিমের জন্য মডেল হিসেবে বিবেচনা করে। তারা আসলে ঔপনিবেশিকতার চেতনায় নির্লজ্জ সাদা আধিপত্যবাদ ও যুদ্ধবাজিতে ফিরে আসতে চায়।

ইসরায়েলের মতো এই নব্য রক্ষণশীলরা পৃথিবীকে দেখে মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে সভ্যতার অন্তহীন সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে। আর এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক আইন পশ্চিমাদের বিজয়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। 

এ ছাড়া নব্য রক্ষণশীলেরা মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মোড়লগিরিও বজায় রাখতে ইসরায়েলকে গুন্ডা হিসেবে কাজে লাগানোর পক্ষপাতী। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বব্যাপী আধিপত্যের জন্য যে কৌশল, এর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ইসরায়েল।

মধ্যপ্রাচ্যে এ ধরনের আধিপত্য অর্জনের জন্য ইসরায়েলের কৌশল তাই নব্য রক্ষণশীলেরা অনেক আগেই গ্রহণ করেছে। এর বিনিময়ে দাবি করেছে ইসরায়েলের সম্পূর্ণ আনুগত্য, যা কিছু এর বিপক্ষে দাঁড়াবে, সব ধ্বংস করে দেওয়া হবে। গাজায় এই কৌশলরই প্রয়োগ দেখলাম আমরা। ইসরায়েল সেখানকার পাঠাগার, স্কুল, হাসপাতাল, বাজার, সব ধ্বংস করে ফিলিস্তিনি জনগণকে অস্তিত্বহীন করতে চাইছে। যেন জাতীয় পরিচয় মুছে যায়। যেন প্রতিরোধ করার ইচ্ছাও বিলাসিতা বলে মনে হয়। যেন বেঁচে থাকাই সবচেয়ে বড় পাওয়া বলে মনে হয়।

ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীর, লেবানন ও ইরানের জন্য একই পরিকল্পনা চালু করতে শুরু করেছে।

মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করা

এতক্ষণ যা বলা হলো, এর কোনোটাই নতুন নয়। ঠিক যেমন ইসরায়েল বর্তমানে তার তাণ্ডবকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য ৭ অক্টোবরের অজুহাত আঁকড়ে ধরছে, তেমনই নব্য রক্ষণশীলরা এর আগে ৯/১১-এর সময় আল-কায়েদার নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ার ধ্বংস করার অজুহাত কাজে লাগিয়েছিল। এসবই ছিল তাদের ‘মধ্যপ্রাচ্য পুনর্নির্মাণের’ ছুতা। 

সাবেক ন্যাটো কমান্ডার ওয়েসলি ক্লার্ক আফগানিস্তানে মার্কিন আগ্রাসনের পরপরই পেন্টাগনে একটি বৈঠকের কথা বর্ণনা করেছিলেন। বৈঠক ছিল ২০০৭ সালের। একজন কর্মকর্তা তাঁকে বলেছিলেন, ‘আমরা পাঁচ বছরে সাতটি দেশের সরকারকে আক্রমণ করে ধ্বংস করতে যাচ্ছি। ইরাক দিয়ে শুরু হবে। তারপরে সিরিয়া, লেবানন, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইরান।’

এরপর ক্লার্ক নব্য রক্ষণশীলদের সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘তারা চেয়েছিল যে আমরা মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করে তুলি, ওলটপালট করে দিই, আমাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসি।’

আমি আমার ২০০৮ সালে ছাপা হওয়া বই ইসরায়েল এন্ড দ্য ক্ল্যাশ অব সিভিলাইজেশনস এ নথিপত্রসহ দেখিয়েছি যে ইরাক-পরবর্তী পর্বে পরিকল্পনার একটি কেন্দ্রীয় অংশের দায়িত্ব ছিল ইসরায়েলের। সে অনুযায়ী তারা ২০০৬ সালে লেবাননের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। সেখান থেকে তাদের আক্রমণ সিরিয়া ও ইরান পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। তাহলে যুক্তরাষ্ট্র সেই যুদ্ধ আরও বাড়ানোর অজুহাত পেত। 

ইসরায়েল লেবাননে প্রথম ধাপে আটকে যাওয়ায় পরিকল্পনাটি ভন্ডুল হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত বোমা দিয়ে বৈরুতের মতো শহরগুলোকে উড়িয়ে দিয়েছিল ওরা। কিন্তু ইসরায়েলি সেনারা দক্ষিণ লেবাননে স্থল আক্রমণে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে সুবিধা করতে পারেননি। 

পশ্চিমারা পরবর্তী সময়ে সিরিয়া ও লিবিয়াকে মোকাবিলা করার অন্যান্য উপায় খুঁজে বের করে।

তিক্ত সমাপ্তির দিকে

এখন আমরা ফিরে আসি যেখানে আমরা শুরু করেছি। ইসরায়েল, হিজবুল্লাহ ও ইরান—সবাই এই দ্বিতীয় দফার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

পশ্চিমাদের আর ইসরায়েলের লক্ষ্য আগের মতোই আছে। গাজার মতো লেবানন ও ইরানকে ধ্বংস করা। লেবানন আর ইরানের জনগণকে এক আদিম যুগের রাষ্ট্রে নিমজ্জিত করা। তারা যেন উপজাতি, গোত্রে বিভক্ত হয়ে শুধু বেঁচে থাকার জন্য কামড়াকামড়ি করে মরে।

দুই দশক আগের মতোই এই লক্ষ্য আজকেও বাস্তবায়িত হওয়ার কোনো লক্ষণ পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি ইসরায়েলের শীর্ষ সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারিকেও স্বীকার করতে হয়েছে যে ‘কেউ যদি মনে করে আমরা হামাসকে নির্মূল করতে পারব, তাহলে তারা ভুল ভাবছে।’

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আবারও দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর গেরিলা যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে। গত সপ্তাহে ইসরায়েলি সামরিক স্থাপনাগুলোতে ইরানের খুব সীমিত আকারে নমুনা ব্যালিস্টিক-মিসাইল আক্রমণ দেখিয়েছে যে তারা ইসরায়েলের মার্কিন সরবরাহকৃত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারে।

গত সপ্তাহে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার চেপে রাখা কথাটা বলেই ফেলেছেন, ‘আমরা কখনোই হামাসের সঙ্গে কূটনৈতিক সমাধান চাইনি।’

ব্রাউন ইউনিভার্সিটি হিসাব করে দেখিয়েছে যে কম করে হলেও যুক্তরাষ্ট্র গত এক বছরে ইসরায়েলে সামরিক সহায়তা হিসেবে ২২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয় করেছে। গাজায় বসবাসকারী প্রত্যেক ফিলিস্তিনির মধ্যে এই অর্থ ব্যয় করলে প্রত্যেকে ১০ হাজার ডলারের বেশি করে পেতেন। ওয়াশিংটনের পকেট তলাবিহীন বলে মনে হচ্ছে।

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের মরিয়া হওয়ার, গণহত্যার কোনো দাগ কেউ টেনে দিতে পারেনি। ইউরোপের জন্যও একই কথা প্রযোজ্য। তারা সবাই কোনো এক তিক্ত সমাপ্তি পর্যন্ত এই সংঘাত চালিয়ে যেতে প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে।

জনাথন কুক সাংবাদিক, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের ওপর তিনটি বইয়ের লেখক।

মিডল ইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনুবাদ জাভেদ হুসেন