ইউক্রেনে ভ্লাদিমির পুতিন মার খাচ্ছেন। পুতিনের এ ব্যর্থতা চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে তাঁর কৌশলগত জোটকে বড় ধরনের পরীক্ষায় ফেলে দিয়েছে। পুতিন শরবিদ্ধ সিংহের মতো মরিয়া হয়ে ওঠায় সি চিন পিংকে এটি অবশ্যই ভেবে দেখতে হবে, পুতিনের সঙ্গে তাঁর ‘সীমাহীন বন্ধুত্ব’ চীনের অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য, বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা ও তার নিজের ভূরাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্য কতটুকু হুমকি বয়ে আনতে পারে।
গত মাসে পুতিন ইউক্রেনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের যে হুমকি দিয়েছেন সেটি ধাপ্পাবাজি হতেও পারে, না–ও হতে পারে। কিন্তু সি নিজেকে একজন দায়িত্বশীল নেতা মনে করলে তাঁকে সবচেয়ে খারাপ দিকটিই আগে বিবেচনায় নিতে হবে।
সি চিন পিং এই মাসের শেষের দিকে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম জাতীয় কংগ্রেসে চীনের নেতা হিসেবে অভূতপূর্বভাবে তৃতীয় মেয়াদে মনোনীত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ঠিক এ অবস্থায় তাঁকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঠেকানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
ইউক্রেনে রাশিয়া পারমাণবিক হামলা চালালে তা হবে ১৯৪৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র হিরোশিমা-নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা ফেলার পর এ ধরনের অস্ত্রের প্রথম প্রয়োগ। এটি একটি বিপর্যয়কর বৈশ্বিক সংকট তৈরি করবে, যা সি চিন পিংয়ের রাজ্যাভিষেককেও পয়মাল করে দেবে।
চীন-রাশিয়া সহযোগিতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করার জন্য যখন সি এবং পুতিন গত ফেব্রুয়ারিতে বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিকে মিলিত হয়েছিলেন, তখন ইউক্রেন আক্রমণ করার পরিকল্পনাটি একটি ঝুঁকিমুক্ত নিরাপদ বাজির মতো মনে হয়েছিল। তাঁরা ভেবেছিলেন, রাশিয়ানরা দ্রুত ইউক্রেনের নেতৃত্বের পতন ঘটাবে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোকে দুর্বল করবে। সি ভেবেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রক্সি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে মার্কিন প্রশাসন চীনের সঙ্গে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেবে।
কিন্তু দেখা গেল, ইউক্রেন পাল্টা লড়াই করে ব্যাপকভাবে রাশিয়ার সামরিক দুর্বলতা প্রকাশ করে দিল। ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণে রাশিয়ান বাহিনী এখন উত্তর-পূর্বে খারকিভ অঞ্চল থেকে পিছু হটেছে এবং দক্ষিণে খেরসনের কাছে রুশ বাহিনী ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে।
উজবেকিস্তানের সমরখন্দে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন সম্মেলনে পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় সি প্রায় নিশ্চিতভাবেই রাশিয়ার ব্যর্থতা নিয়ে তাঁর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। পুতিনও প্রকাশ্যে যুদ্ধ সম্পর্কে চীনের ‘প্রশ্ন এবং উদ্বেগ’-এর কথা স্বীকার করেছেন।
এটা বিশ্বাস করা কঠিন যে সি এটি ভাবছেন না যে তিনি এত বেপরোয়া মিত্রের সঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক ভাগ্যের গাঁটছড়া বেঁধে ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কি না। ইউক্রেনের লড়াইয়ে যোগদানের জন্য পুতিন আরও তিন লাখ রুশ তরুণকে স্বেচ্ছাসেবী সেনা হিসেবে নেবেন বলে ঘোষণা দেওয়ার পর রাশিয়াজুড়ে প্রতিবাদ হয়েছে এবং এর জের ধরে দুই লাখের বেশি যুবক দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে
বাধ্য হয়েছেন।
পুতিনের নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত আনাড়ি সেনাদের (যাঁদের মধ্যে দোষী সাব্যস্ত হওয়া অপরাধীও আছেন) সামরিক গুণমান সির উদ্বেগকে প্রশমিত করবে, সে সম্ভাবনা কম।
একটি প্রক্সি যুদ্ধের লক্ষ্য হলো, প্রত্যক্ষভাবে লড়াই করা একটি পক্ষকে সমর্থন দিয়ে প্রতিপক্ষকে দুর্বল করা। সি ঠিক সেভাবে পুতিনের মাধ্যমে পশ্চিমাদের কাবু করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পুতিনের অযোগ্যতা সির জন্য ঠিক বিপরীত ফল ডেকে আনছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক আধিপত্য মোকাবিলায় চীনকে সাহায্য করা এক প্রচণ্ড প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রমাণিত করার বদলে রাশিয়া নিজেকে এমন দুর্বল ও দুর্নীতিগ্রস্ত শক্তি হিসেবে প্রকাশ করেছে, যে কিনা একটি মধ্যম সারির দেশকেও হারাতে পারে না।
যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক আধিপত্য মোকাবিলায় চীনকে সাহায্য করা এক প্রচণ্ড প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রমাণিত করার বদলে রাশিয়া নিজেকে এমন দুর্বল ও দুর্নীতিগ্রস্ত শক্তি হিসেবে প্রকাশ করেছে, যে কিনা একটি মধ্যম সারির দেশকেও হারাতে পারে না।
পুতিন যদি ইউক্রেনের ভূখণ্ডটিকে (যা তিনি বেআইনিভাবে সংযুক্ত করেছেন) ‘রক্ষা’ করার জন্য একটি কৌশলগত পারমাণবিক ডিভাইস ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে তিনি সম্ভবত একটি ভয়ংকর প্যান্ডোরার বাক্স খুলতে পারেন।
তাঁর যুদ্ধ ইউক্রেনের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে ইতিমধ্যে যথেষ্ট বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। এটি আর মনে করার কারণ নেই যে সেখানকার পারমাণবিক জ্বালানি রডগুলো সুরক্ষিত আছে। কোনো উন্মাদ প্রকৃতির লোক প্রতিশোধ নিতে এ সাইট ব্যবহার করে একটি ‘নোংরা’ বোমা বানাতে পারে—এমন আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
ইংরেজি থেকে অনূদিত, স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
চার্লস ট্যানক ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সাবেক সদস্য এবং নিরাপত্তা, সমৃদ্ধি এবং টেকসইয়তা বাড়ানোয় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ব্রাতিস্লাভাভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক গ্লোবসেক-এর একজন ফেলো