তাকওয়া হলো আল্লাহর ভালোবাসা হারানোর ভয়। আল্লাহর অসন্তোষের ভয়। প্রকৃত মুমিন তাকওয়া দ্বারাই পরিচালিত হন। তাকওয়া মানুষকে পাপ থেকে দূরে রাখে এবং সৎ কাজে অনুপ্রাণিত করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা যারা ইমান এনেছ, তারা তাকওয়া অর্জন করো।’ (সুরা-৩৩ আহযাব, আয়াত: ৭০) কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘যারা ইমান আনল এবং তাকওয়া অর্জন করল, তারা আল্লাহর বন্ধু; তাদের কোনো ভয় নেই, তারা চিন্তিতও হবে না।’ (সুরা-১০ ইউনুস, আয়াত: ৬২)
ক্ষুধা-পিপাসার দহনজ্বালায় নফসকে দাহ করে পরিশুদ্ধ করা রোজার মূল লক্ষ্য। এটিই কোরআনের ভাষায় তাকওয়া বা খোদাভীতি। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর; যাতে তোমরা তাকওয়া (আল্লাহর অসন্তুষ্টির ভীতি) লাভ করতে পারো।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৩)
তাকওয়া মানে পরিশুদ্ধ অন্তর, তাকওয়া মানে বিশুদ্ধ কর্ম। তাকওয়া মানে শুদ্ধাচার, নৈতিকতা, ন্যায়পরায়ণতা, মানবিক মূল্যবোধ, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও মানবিকতা। সঠিকভাবে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানুষ নিখাদ খাঁটি সোনায় পরিণত হতে পারে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘এই কোরআন মুত্তাকিদের জন্য হিদায়াত।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২)
মানব প্রবৃত্তির যেসব নেতিবাচক গুণ বা বৈশিষ্ট্য মানুষের জ্ঞানকে বাধাগ্রস্ত করে, তাদের বলা হয় রিপু বা শত্রু। রিপু মূলত জ্ঞানের শত্রু। রিপুর অনিয়ন্ত্রিত ও অপব্যবহার মানুষকে পশুর অধম করে দেয়। অধঃপতনের অতলে নিমজ্জিত করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি বহু জিন ও ইনসানকে (তাদের কর্মফলের দোষে) জাহান্নামের জন্য নির্ধারণ করেছি—তাদের অন্তর আছে কিন্তু অনুধাবন করে না, চোখ আছে কিন্তু দেখে না, কান আছে কিন্তু শোনে না; তারা চতুষ্পদ জন্তু বা পশুতুল্য বরং তারা তার চেয়েও নিকৃষ্ট; তারা উদাসীন।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ১৭৯)
তাকওয়া তথা রমজানের উদ্দেশ্য হলো ষড়্রিপুর ওপর নিয়ন্ত্রণ লাভের নৈতিক শক্তি অর্জন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করো, যেন তোমরা তাঁকে দেখছ; যদিও তোমরা তাঁকে দেখতে না পাও, তবে নিশ্চয়ই তিনি তোমাদের দেখছেন।’ (বুখারি: ৪৮)।
পঞ্চ ইন্দ্রিয়—চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিব, ত্বক ও দেহের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সঠিক সংযত ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার নিশ্চিত করাই হলো রোজা। দেহ ও মনকে অন্যায়, নিষিদ্ধ কাজ ও বস্তু থেকে বিরত রাখাই রোজার উদ্দেশ্য। সারা জীবন এগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখার সক্ষমতা অর্জন করাই হলো রোজার সফলতা।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মানবদেহে এমন একটি গোশতের টুকরা আছে, যা পরিশুদ্ধ হলে তার পুরো দেহ পরিশুদ্ধ হয়, সঠিকভাবে কাজ করে; আর তা বিনষ্ট হলে তার সমস্ত দেহই বিনষ্ট হয়, সঠিকভাবে কাজ করে না; জেনে রেখো তা হলো কলব।’ (বুখারি: ৫০)
তাকওয়া হলো প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের রোজা—মুখের বা জবানের রোজা হলো কুবাক্য ও কুকথা পরিহার করা; পরচর্চা, গিবত, শিকায়েত ও পরনিন্দা থেকে বিরত থাকা। চোখের রোজা হলো হারাম দৃশ্য দেখা বর্জন করা। কানের রোজা হলো হারাম শোনা থেকে বেঁচে থাকা। হাতের রোজা হলো হারাম ধারণ ও হারাম স্পর্শ থেকে দূরে থাকা। পায়ের রোজা হলো অন্যায় পথে গমন বা পদচারণ না করা।
মন, মস্তিষ্ক ও অন্তরের রোজা হলো পাপ ও অন্যায় চিন্তা, কল্পনা ও পরিকল্পনা থেকে মুক্ত থাকা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই শ্রবণ, দর্শন ও চিন্তন এসব সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।’ (সুরা-১৭ বনি ইসরাইল, আয়াত: ৩৬)
তাকওয়া মানে পরিশুদ্ধ অন্তর, তাকওয়া মানে বিশুদ্ধ কর্ম। তাকওয়া মানে শুদ্ধাচার, নৈতিকতা, ন্যায়পরায়ণতা, মানবিক মূল্যবোধ, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও মানবিকতা। সঠিকভাবে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানুষ নিখাদ খাঁটি সোনায় পরিণত হতে পারে।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম