২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

সি চিন পিং যে কারণে তাইওয়ান ইস্যুতে ক্ষমতা দেখাচ্ছেন

সি চিন পিং
ছবি : এএফপি

হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফর করা উচিত হয়েছে কি না, তা নিয়ে দুই সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক আলাপ-আলোচনায় তর্কবিতর্ক হচ্ছে। পেলোসির সমর্থকেরা বলছেন, তাইওয়ানে মার্কিন স্পিকারের উপস্থিতি যে এটাই প্রথম তা নয়। চীনের ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে তাইওয়ানকে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া প্রতিশ্রুতি ধরে রাখতে সেখানে মার্কিন কর্মকর্তাদের সফর করা উচিত।

কিন্তু সমালোচকেরা পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেন, পেলোসির এই সফর একেবারেই সময়োপযোগী ছিল না, স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছিল তাঁর সফরে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং কড়া প্রতিক্রিয়া জানানোর প্রয়োজন বোধ করবেন; কেননা তিনি যদি এর জোরালো প্রতিক্রিয়া না দেন, তাহলে এই শরতে অনুষ্ঠেয় চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) কংগ্রেসে তিনি একজন দুর্বল নেতা হিসেবে চিত্রিত হবেন।

তবে চীন প্রতিক্রিয়া হিসেবে যা করেছে, তার কোনোটাই ‘না করলেই নয়’ ধরনের অনিবার্য কিছু ছিল না। চীনা নেতৃত্বের হাতে একাধিক বিকল্প ছিল। চীন চাইলেই পেলোসির সফরকে উপেক্ষা করতে পারত। কিন্তু আমরা চীনকে যা দেখাতে দেখলাম, তা হলো অতি প্রতিক্রিয়া। চীনের অতিমাত্রিক প্রতিক্রিয়া এবং প্রক্রিয়াগত জটিলতা ইঙ্গিত দেয়, এটি দীর্ঘ পরিকল্পনা করেই করা হয়েছে। চীনের প্রতিক্রিয়ার ধরন দেখে মনে হয়, পেলোসি যদি এই সফর না-ও করতেন, তাহলেও চীন তার কর্মকাণ্ডকে ‘ন্যায়সংগত’ প্রমাণের জন্য অন্য কোনো অজুহাত তৈরি করত।

চীনের ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নাজুক পরিস্থিতির সঙ্গে সি চিন পিংয়ের সাম্প্রতিক প্রতিক্রিয়ার যোগসূত্র আছে। আপাতত তাঁর অগ্রাধিকার হলো, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা হিসেবে অভূতপূর্বভাবে তৃতীয় মেয়াদে নিয়োগ পাওয়া। কিন্তু দেশটির অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া, প্রবৃদ্ধির মন্থর গতি, বেকারত্ব বৃদ্ধি এবং আর্থিক বুদ্‌বুদ ফেটে যাওয়া তাঁর পুনর্নির্বাচনের সম্ভাবনাকে কিছুটা হলেও ফিকে করে দিয়েছে। তাঁর ‘শূন্য-কোভিড নীতি’ বজায় রাখার জেদ অভ্যন্তরীণভাবে সমালোচিত হয়েছে এবং তা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস করেছে।

ক্রমবর্ধমানভাবে দেখা যাচ্ছে, সি চিন পিং একটি বিকল্প হিসেবে জাতীয়তাবাদের দিকে ঝুঁকছেন। যখনই চীনে জনসমর্থন তৈরি করার কথা আসে, তখন জোরেশোরে তাইওয়ানের ওপর মূল ভূখণ্ডের সার্বভৌমত্বের দাবি তোলা হয়। এই ইস্যু অন্য যেকোনো বিষয়ের চেয়ে জাতীয়তাবাদকে বেশি উসকে দিতে পারে।

এ অবস্থায় সি চিন পিং ক্রমবর্ধমানভাবে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে একদিকে তাইওয়ানকে বশীভূত করতে চাইছেন, অন্যদিকে এই শক্তি প্রদর্শনকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া হিসেবে চিত্রায়িত করে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার যৌক্তিকতা মেলে ধরতে চাইছেন।

ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ানোর বিষয়ে সি চিন পিংয়ের আগ্রহ যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের দুর্বল অবস্থাকেও প্রতিফলিত করে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদায়ের পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক উন্নত হতে পারে—বেইজিংয়ের এমন আশায় জো বাইডেন প্রশাসন পানি ঢেলে দিয়েছে। এই দুই পক্ষের মধ্যে প্রায়ই প্রকাশ্য বাগ্‌বিতণ্ডা হয় এবং তাদের মধ্যে ঘরোয়া বৈঠকে বসে সংলাপ বিনিময়ের ঘটনা খুবই বিরল। চীন থেকে আমদানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বহাল রয়েছে। সি চিন পিং সম্ভবত এই উপসংহারে পৌঁছেছেন যে পেলোসির সফরের কড়া প্রতিক্রিয়া দেখানোয় তাঁর হারানোর কিছু নেই।

জলবায়ু পরিবর্তন, মাদক পাচারসহ নানা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত অসংখ্য সংলাপ বাতিল করার মাধ্যমে সি চিন পিং এই বার্তা দিয়েছেন যে বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতিতে তিনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। তবে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে বিপদ অবশ্যম্ভাবী। চীন ইঙ্গিত করছে, তাইওয়ানের কাছাকাছি তার সামরিক কার্যকলাপ এক নতুন স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু এই চর্চা নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে—এমন ঝুঁকি আছে।

আরও পড়ুন

আরও বিপজ্জনক হলো, চীন অচিরেই এ সিদ্ধান্তে আসবে যে তাইওয়ানের সঙ্গে চীনের ‘শান্তিপূর্ণ পুনর্মিলন’ একটি বাস্তব বিকল্প হিসেবে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। কারণ, ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ নীতির ভিত্তিতে হংকংকে যে প্রতিশ্রুতি চীন দিয়েছিল, তা যেহেতু তারা রাখেনি। তাই তাইওয়ানের তরুণ প্রজন্ম চীনের প্রতিশ্রুতির ওপর বিশ্বাস করতে পারছে না।

এ অবস্থায় সি চিন পিং ক্রমবর্ধমানভাবে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে একদিকে তাইওয়ানকে বশীভূত করতে চাইছেন, অন্যদিকে এই শক্তি প্রদর্শনকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া হিসেবে চিত্রায়িত করে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার যৌক্তিকতা মেলে ধরতে চাইছেন।

ইংরেজি থেকে অনূদিত, স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট

  • রিচার্ড হাস কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের প্রেসিডেন্ট