আলী রীয়াজের বিশ্লেষণ
বাংলাদেশ এখন কোন পথে যাবে
বাংলাদেশে গত কয়েক দিনের ঘটনা প্রমাণ করে যে সরকারের পক্ষ থেকে যত বেশি কঠোর অবস্থান নেওয়া হয়েছে, সহিংস পথে আন্দোলন দমনের চেষ্টা হয়েছে, মানুষের ভেতরে তাতে কেবল ক্ষোভই বাড়েনি, তাঁরা রাজপথে সমাবেশে শামিল হয়েছেন। ক্ষমতার এককেন্দ্রীকরণ বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরতান্ত্রিক শাসন এবং ক্লেপ্টোক্রেটিক অর্থনৈতিক নীতি যে ক্ষোভের তৈরি করেছে, তাতে ইস্যুভিত্তিক আন্দোলন স্ফুলিঙ্গের ভূমিকা পালন করেছে। এ রকম অবস্থা থেকে বাংলাদেশ কোন পথে যাবে, তা নিয়ে লিখেছেন আলী রীয়াজ
বাংলাদেশে গত কয়েক দিনের ঘটনাপ্রবাহ দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে এক নতুন বাস্তবতার মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশে একটি গণ-অভ্যুত্থান ঘটছে। এই পরিস্থিতির পটভূমি এক দিনে তৈরি হয়নি, তৈরি হয়েছে এক দশক, কমপক্ষে কয়েক বছর ধরে।
কিন্তু এখনো যাঁরা এই অগ্ন্যুৎপাতের উৎস খোঁজার জন্য গত এক মাসের ঘটনাপ্রবাহের দিকে মনোনিবেশ করে আছেন, সরকারকে আগে জনগণের ভাষা বা দেয়াললিখন পড়তে না পারার জন্য তিরস্কার করছেন, সরকারের কী করা উচিত বলে পরামর্শ দিচ্ছেন, তাঁরাও যে এখন রাজপথের ভাষা বুঝতে অপারগ, সেটা স্পষ্ট। ফলে তাঁরা এখনো যা বলছেন, ক্ষমতাসীনদের শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে ক্ষমতাসীন দল ও সরকারকে যার জন্য মৃদু তিরস্কার করছেন, তা আসলে সরকার যা করেছে-করছে, তা থেকে ভিন্ন নয়।
এসব পরামর্শ ক্ষমতাসীনদের কর্ণকুহরে প্রবেশ করবে বলে মনে হয় না। কেননা যে ব্যক্তিকেন্দ্রিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে সিদ্ধান্ত একক ব্যক্তির। যে গোষ্ঠীগুলো এখন শক্তি প্রয়োগ করে এবং একটি রাজনৈতিক শাসনের কুহেলিকা তৈরি করে এই ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে পারবে, তাদের ছাড়া আর কারও কথাই সরকারপ্রধানের শোনার কারণ নেই, সম্ভাবনাও নেই।
ফলে যাঁরা এখনো এ প্রশ্নের মধ্যেই আছেন জুলাই মাসের ১৪ তারিখের আগে কী হয়েছিল, কী দাবি ছিল, তাঁরা এটা ধর্তব্যেই নিতে পারছেন না, কী বিশাল হত্যাযজ্ঞ ঘটেছে, কী ভয়াবহ নির্যাতন ঘটেছে ও ঘটছে এবং তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যে তাঁরা বছরের পর বছর ভ্রুক্ষেপ করেননি যে তাঁদের তৈরি করা বয়ান তাঁদের বৃত্তের বাইরে আর বিশ্বাসযোগ্য নেই।
চাপিয়ে দেওয়া ভয়ের সংস্কৃতির কারণে মানুষের নীরবতাকে তাঁরা ভেবেছেন সম্মতি। ক্ষমতাসীনেরাও তা-ই ভেবেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাস এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে স্বৈরতান্ত্রিক তো বটেই, যৎকিঞ্চিৎ অগণতান্ত্রিক সরকারের ইতিহাস যাঁরা জানেন তাঁরা এ বিষয়ে অবগত যে ক্ষমতার কাছাকাছিরা তা-ই ভাবেন।
সব স্ফুলিঙ্গ অগ্নিকাণ্ড ঘটায় না, অগ্নিকাণ্ড ঘটার জন্য অন্য উপাদান থাকার প্রয়োজন হয়। সেটা আমি বা আপনি লক্ষ করলাম কি না, অগ্রাহ্য করলাম কি না, তা দিয়ে এর মাত্রা নির্ধারিত হয় না। অগ্নিকাণ্ড শুরু হয়ে যাওয়ার পর স্ফুলিঙ্গ কখন কীভাবে শুরু হয়েছিল সেই আলোচনা না করে দরকার এই হিসাব করা, অগ্নিকাণ্ড বিস্তারের কী কী শর্ত উপস্থিত ছিল, কেন এই শর্ত তৈরি হয়েছিল, কে বা কারা তৈরি করেছিল এবং এই আগুন কী করে নেভানো যায়।
বাংলাদেশে এক দশকের বেশি সময় ধরে যে কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরতান্ত্রিক শাসন এবং ক্লেপ্টোক্রেসি বা চৌর্যবৃত্তির অর্থনীতি তৈরি করা হয়েছে, সেটাই এই স্ফুলিঙ্গকে আগুনের শিখায় পরিণত হওয়ার শর্ত পূরণ করেছে। রাজনীতির ময়দানে আগুনের লেলিহান শিখায় সরকার ও তার বৈধ-অবৈধ বাহিনী জ্বালানি জুগিয়ে যাচ্ছে।
আক্ষরিক ও প্রতীকী অর্থে অস্ত্রের ঝনঝনানি দিয়ে, অত্যাচার-নিপীড়ন করে, আদালত-পুলিশের সাজানো মামলার নামে—ষড়যন্ত্র তত্ত্ব এবং তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতির অজুহাত দিয়ে তাকে আড়াল করা যাবে—এমন আশা কেবল তাঁরাই করতে পারেন, যাঁরা মরিয়া, যাঁরা একটা ভিন্ন বাস্তবতার মধ্যে আছেন।
এর বিপরীতে আমাদের দেখা দরকার, একটি স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণের পথগুলো কী। এক দশকের বেশি সময় ধরে সারা বিশ্বেই গণতন্ত্রের পশ্চাদপসরণ ঘটেছে। কিন্তু সেখান থেকে আবার অনেক দেশ ঘুরেও দাঁড়িয়েছে।
কী উপায়ে স্বৈরতন্ত্র পরাভূত হয়েছে, সে বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনেক আলোচনা আছে। গণতন্ত্র বিষয়ে বিশ্বের যেসব প্রতিষ্ঠান গবেষণা করে তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভ্যারাইটিস অব ডেমোক্রেসি (ভি-ডেম) ইনস্টিটিউট। ভি-ডেম ইনস্টিটিউটের ২০২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত দুই দশকে আটটি দেশ স্বৈরশাসন প্রক্রিয়া উল্টে দিতে সক্ষম হয়েছে।
বাংলাদেশে গত কয়েক দিনের ঘটনা প্রমাণ করে যে সরকারের পক্ষ থেকে যত বেশি সহিংসতা ও নির্মমতা চালানো হয়েছে, মানুষের ভেতরে তাতে কেবল ক্ষোভই বাড়েনি, তাঁরা রাজপথে সমাবেশে শামিল হয়েছেন। ক্ষমতার এককেন্দ্রীকরণ বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরতান্ত্রিক শাসন এবং ক্লেপ্টোক্রেটিক অর্থনৈতিক নীতি যে ক্ষোভের তৈরি করেছে, তাতে ইস্যুভিত্তিক আন্দোলন স্ফুলিঙ্গের ভূমিকা পালন করেছে।
এগুলো হয়েছে পাঁচটি পথে। এসব পথ হয় এককভাবে কিংবা একাধিক পথ একত্রে স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বদলে দিয়েছে। এগুলো হলো ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে বৃহত্তর জনগণের আন্দোলন; বিচার বিভাগ কর্তৃক নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতাকে রুখে দেওয়া, বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে নাগরিক সমাজের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়া; গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন কিংবা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতাসীনদের পরাস্ত করে ক্ষমতার পালাবদল নিয়ে আসা এবং গণতন্ত্রের প্রতি আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর সমর্থন ও সুরক্ষা।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে গণতন্ত্রায়ণের সম্ভাব্য পথরেখা হিসেবে গত দেড় দশকে দুটি পথ কেবল সংকুচিতই হয়েছে তা নয়, রীতিমতো বন্ধ হয়ে গেছে। এর একটি হচ্ছে বিচার বিভাগের স্বতঃপ্রণোদিতভাবে ক্ষমতা ব্যক্তি বা নির্বাহী বিভাগে কুক্ষিগত হওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করা। এর কারণ বাংলাদেশে সবাই অবগত; বাংলাদেশের একজন বিদায়ী প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, কাগজে-কলমে থাকলেও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কতটুকু, সবাই জানেন।
আর অন্যটি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার হাতবদল। ২০১০ সালে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অবসানের পর বাংলাদেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার উপায় নেই। আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কতটা ভূমিকা রাখতে পারে, তার সীমাবদ্ধতা ২০২৪ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকায় স্পষ্ট।
অন্যদিকে ভারত বাংলাদেশে গণতন্ত্রের চেয়ে তার স্বার্থ সংরক্ষণ ও কর্তৃত্বই চায়। ফলে বাংলাদেশে যাঁরাই গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা করেছেন তাঁদের জন্য পথ আছে বৃহত্তর গণ-আন্দোলন এবং রাজনৈতিক শক্তি ও সিভিল সোসাইটির জোটবদ্ধ চেষ্টা। বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলো যেমন সিভিল সোসাইটির সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে পারেনি, তেমনি সিভিল সোসাইটিও গণতন্ত্রের পক্ষে তাদের শক্তি সঞ্চয় করতে পারেনি। এ রকম একটি প্রেক্ষাপটেই এই গণ-অভ্যুত্থান ঘটেছে।
দেশের তরুণেরা ইস্যুভিত্তিক আন্দোলন শুরু করলেও ক্ষমতাসীনদের প্রতিক্রিয়ার কারণে নাগরিকেরা তাতে যোগ দিয়েছেন। গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় কোনো আন্দোলন দমনের জন্য গত ১০০ বছরেও এ ধরনের নির্মমতা ও হত্যাযজ্ঞ দেখা যায়নি। প্রধান বিরোধী দলগুলোর সীমাবদ্ধতা, দুর্বলতা ও গ্রহণযোগ্যতার অভাব এবং সরকারের দমননীতির কারণে এই আন্দোলনে শিক্ষার্থী ও তরুণেরাই রাজনৈতিক শক্তির জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছেন।
গত কয়েক দিনে দেশের সিভিল সোসাইটির এক বড় অংশই এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। বাংলাদেশে আশির দশকে যে শক্তিশালী সিভিল সোসাইটি ছিল, ১৯৯১ সালের পরে তার দলীয়করণ ঘটে এবং ২০০৯ সালের পরে সেগুলোকে সরকারি উদ্যোগী হয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহে বাংলাদেশে নতুন করে সিভিল সোসাইটির, যার অংশ পেশাজীবীরাও, উত্থান ঘটেছে। তাঁরাই এখন আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন।
গত এক দশকে যেসব দেশে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের পতন ঘটছে সেখানে দেখা গেছে, শেষ চেষ্টা হিসেবে ক্ষমতাসীনেরা দল এবং সরকারের ‘কসমেটিক’ (লোকদেখানো) পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। অতীতেও ব্যক্তিকেন্দ্রিক শাসনে ক্ষমতার শীর্ষে থাকা ব্যক্তি নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টায় অন্যদের ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন।
তাঁদের ধারণা হয়, এতে জনগণকে বিভ্রান্ত করা সম্ভব। আবার ক্ষমতাসীনের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে নিজেদের রক্ষার ঘটনাও ঘটে। আলজেরিয়ার ২০১৯ সালের আন্দোলনের ক্ষেত্রে কার্যত তাই হয়েছে। শ্রীলঙ্কার আন্দোলনের ফলে রাজাপক্ষে পরিবারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হলেও আন্দোলনের সাফল্য শেষ পর্যন্ত তার দলই ভোগ করেছে এবং রনিল বিক্রমাসিংহে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন। এতে নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলো অংশত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কিন্তু কাঠামোগত পরিবর্তন হয়নি।
এ ধরনের পরিবর্তনের সময় ক্ষমতাসীনেরা টিকে থাকার জন্য সহিংসতার যে ধরনের পথ অবলম্বন করেন, তার আকার সাধারণত সীমিতই হয়। শ্রীলঙ্কার কথা স্মরণ করা যেতে পারে। যেসব দেশে পুলিশ ও বেসামরিক প্রশাসন তুলনামূলক পেশাদারি হয় এবং সেভাবে আচরণ করে। এর ফলে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা ও পরিধি হয় সীমিত।
কিন্তু বিপরীতক্রমে যখন আমরা দেখতে পাই, রাষ্ট্র, সরকার ও ক্ষমতাসীন দল একীভূত হয়ে গেছে কিংবা এমন এক সুবিধাভোগী কোয়ালিশন (জোট বা চক্র) তৈরি হয়েছে, যাদের সুবিধা ও অস্তিত্বের প্রশ্নই ক্ষমতায় থাকা না-থাকার সঙ্গে যুক্ত। তখন তা অত্যন্ত সহিংস হয়ে ওঠার আশঙ্কা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি লাভ করে।
জনগণের আন্দোলন সত্ত্বেও যেসব ক্ষেত্রে ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরাচারী ব্যবস্থা টিকে গেছে, সেগুলোয় দেখা গেছে যে টিকে থাকার জন্য ক্ষমতাসীনেরা সর্বোচ্চ ধরনের সহিংসতাকে ব্যবহার করতে কুণ্ঠিত হননি। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের এই সহিংসতার মাত্রা নির্ধারিত হয় সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর, যেমন সেনাবাহিনীর ওপরে তাঁদের নিয়ন্ত্রণ এবং সেনাবাহিনীর করপোরেট স্বার্থের ওপরে।
এ ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনরতদের শক্তি ও কৌশলও নির্ধারণ করে যে সেনাবাহিনী বা প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলো কী ধরনের আচরণ করবে। এরিকা চেনোওয়াথ ও মারিয়া জে স্টেফান ১৯৬০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে পরিচালিত ৩২৩টি আন্দোলনের বিশ্লেষণ করে দেখান, অহিংস গণতন্ত্রকামী আন্দোলনের সাফল্য বেশি।
এর যে পাঁচটি কারণ তাঁরা চিহ্নিত করেছেন তার মধ্যে বলা হচ্ছে, অহিংস আন্দোলনের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া সহিংস নিপীড়ন বুমেরাং হয়ে ওঠে। এতে আন্দোলন আরও বেশি মানুষের সমর্থন লাভ করে। তা ছাড়া অহিংস আন্দোলনের আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভের সম্ভাবনা অনেক বেশি।
বাংলাদেশে গত কয়েক দিনের ঘটনা প্রমাণ করে যে সরকারের পক্ষ থেকে যত বেশি সহিংসতা ও নির্মমতা চালানো হয়েছে, মানুষের ভেতরে তাতে কেবল ক্ষোভই বাড়েনি, তাঁরা রাজপথে সমাবেশে শামিল হয়েছেন। ক্ষমতার এককেন্দ্রীকরণ বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরতান্ত্রিক শাসন এবং ক্লেপ্টোক্রেটিক অর্থনৈতিক নীতি যে ক্ষোভের তৈরি করেছে, তাতে ইস্যুভিত্তিক আন্দোলন স্ফুলিঙ্গের ভূমিকা পালন করেছে।
বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতাকে উপলব্ধি করার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনদের কথিত শুভাকাঙ্ক্ষীরা পিছিয়ে আছেন। কিন্তু বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা এবং বলপ্রয়োগের ক্ষমতা যাঁদের আছে, তাঁরা তা বুঝতে পারছেন কি না, সেটাই আগামী কয়েক দিনে স্পষ্ট হবে।
আলী রীয়াজ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও অধ্যাপক