ইসলামে অজু–গোসলের ফজিলত ও পদ্ধতি

পবিত্র বিশ্বাস ও পবিত্র জীবনযাপনের সর্বোত্তম পদ্ধতি হলো ইসলাম। কালেমা তাইয়েবা, অর্থাৎ পবিত্র কালেমা। পবিত্রতা ইমানের অর্ধেক। কুফর, শিরক ও মোনাফেকি থেকে অন্তরকে মুক্ত করা হলো ইসলামে মানসিক ও আত্মিক পবিত্রতা।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং ভালোবাসেন তাদের, যারা অত্যধিক পবিত্রতা অর্জনকারী।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২২২)। ‘তাদের মাঝে রয়েছে এমন বান্দা, যারা পবিত্রতাকে পছন্দ করে আর আল্লাহ তাআলা পবিত্র মানুষকে ভালোবাসেন।’ (সুরা-৯ তাওবা, আয়াত: ১০৮)

শারীরিক পবিত্রতার জন্য ইসলামি শরিয়তে রয়েছে অজু ও গোসল। এর বিকল্প হিসেবে রয়েছে তায়াম্মুম। অজু আরবি শব্দ, অর্থ ধোয়া; গোসল অর্থও ধৌত করা। তাই অজুকে ‘ছোট গোসল’ এবং গোসলকে ‘বড় অজু’ বলা হয়।

নামাজ আদায় করা, কোরআন মাজিদ স্পর্শ করা ও কাবা শরিফ তাওয়াফ করার মতো বিশেষ ইবাদতের জন্য পবিত্রতা ফরজ। তবে পানি ব্যবহারে অক্ষম হলে অজু ও গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করলেই হয়

ফিকহি পরিভাষায় অজু হলো পবিত্রতা অর্জন, বিশেষ ইবাদত সম্পাদন ও আল্লাহ তাআলার নৈকট্য হাসিলের জন্য পানি দিয়ে মুখমণ্ডল, হাত–পা ধোয়া ও মাথা মাসেহ করা।

আর তায়াম্মুম হলো অজু বা গোসল করতে অপারগ হলে পবিত্র মাটি বা মাটিজাতীয় বস্তুতে দুই হাতের পাতার সম্মুখভাগ লাগিয়ে তা দিয়ে মুখমণ্ডল ও উভয় হাত কনুইসহ মাসেহ করা। গোসল হলো কুলি করা, নাকের ভেতরে পানি দেওয়া ও পুরো শরীর ধোয়া।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! যখন তোমরা নামাজের জন্য প্রস্তুত হও, তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করো এবং তোমাদের মাথা মাসেহ করো আর পাগুলো টাকনু পর্যন্ত ধৌত করো; যদি তোমরা অপবিত্র থাকো তবে বিশেষভাবে (গোসলের মাধ্যমে) পবিত্র হবে। তোমরা যদি পীড়িত হও বা সফরে থাকো অথবা তোমাদের কেউ শৌচস্থান থেকে আসো বা তোমরা স্ত্রীর সহিত সংগত হও এবং পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করবে তথা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত মাসেহ করবে। আল্লাহ তোমাদের কষ্ট দিতে চান না; বরং তিনি তোমাদের পবিত্র করতে চান ও তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পরিপূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো।’ (সুরা-৫ মায়িদাহ, আয়াত: ৬)

অজুর ফজিলত বিষয়ে হাদিস শরিফে রয়েছে, যে ব্যক্তি সব সময় অজুর সঙ্গে থাকবে, সে শয়তানের ধোঁকা থেকে মুক্ত থাকবে এবং ইমানের সঙ্গে মৃত্যু নসিব হবে। হাদিস শরিফে আরও আছে, ‘অজু মুমিনের অস্ত্র।’ সদা সর্বদা অজুর সঙ্গে থাকা একটি সুন্নত আমল।

অজুর সঙ্গে ঘুমানোও একটি সুন্নত আমল; এতে ঘুমের মধ্যে শয়তান প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। পাঁচ ওয়াক্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের জন্য নতুন অজু করা সুন্নত।

খাবার গ্রহণের আগে অজু করা ও খাবার গ্রহণের সময় মাথা ঢেকে রাখা সুন্নত। সব সময় অজু করার পর দুই রাকাত নামাজ পড়া সুন্নত। এই নামাজকে ‘তাহিয়্যাতুল অজু’ নামাজ বলা হয়; তবে নামাজের নিষিদ্ধ সময় বা মাকরুহ ওয়াক্ত হলে এই নামাজ পড়তে হবে না।

বিশেষ অপবিত্রতার ক্ষেত্রে গোসল করা ফরজ। প্রতি শুক্রবার জুমার দিন গোসল করা সুন্নত। এ ছাড়া বছরে তিন দিন গোসল করা সুন্নত। যথা: পয়লা শাওয়াল তথা রমজানের ঈদের দিন, দশম জিলহজ অর্থাৎ কোরবানির ঈদের দিন এবং নবম জিলহজ ইয়াওমুল আরাফা বা হজের দিন। অজু ও গোসল দ্বারা গুনাহ মাফ হওয়ার সুসংবাদ রয়েছে।

অজু ও গোসল ইবাদতের জন্য যেমন শর্ত, তেমনি অজু ও গোসল স্বয়ং স্বতন্ত্র ইবাদত। হাদিস শরিফে রয়েছে, যারা অজুর সুন্নত আমল করবে, কঠিন হাশরের দিনে তাদের অজুর অঙ্গগুলো নূরে চমকাতে থাকবে; নবীজি (সা.) তা দেখে তাদের আপন উম্মত হিসেবে চিনতে পারবেন এবং তাদের জন্য সুপারিশ করবেন।

নামাজ আদায় করা, কোরআন মাজিদ স্পর্শ করা ও কাবা শরিফ তাওয়াফ করার মতো বিশেষ ইবাদতের জন্য পবিত্রতা ফরজ। তবে পানি ব্যবহারে অক্ষম হলে অজু ও গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করলেই হয়। অজু ও গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম একই পদ্ধতিতে করতে হয়।

  • মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

  • যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

  • [email protected]