লিবিয়ার এই চরম বিপদে পশ্চিমারা কী করছে

এ ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় ২০ হাজারের বেশি প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে
ছবি: রয়টার্স

গত সপ্তাহে লিবিয়া স্মরণকালের ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার সম্মুখীন হলো। লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলে গ্রিন মাউন্টেন এলাকায় দেড় শ বছর ধরে টিকে থাকা দুটি বাঁধ এই ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় ভেঙে গেছে।

১১ সেপ্টেম্বর রাত তিনটার দিকে প্রথম বাঁধটি ভেঙে যায়। এরপর উপকূলীয় শহর দেরনার কাছের দ্বিতীয় শহর রক্ষা বাঁধটিও ভেঙে যায়। উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানি শহরের সবকিছু তছনছ করে ভাসিয়ে নিয়ে সাগরে গিয়ে পড়ে। সকাল নাগাদ লিবিয়ার আরও একটি শহর সম্পূর্ণ ভেসে যায়।

সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত সেখানে ১০ হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়েছে বলে বলা হলেও ধারণা করা হচ্ছে, প্রকৃত সংখ্যা তার দ্বিগুণ বা তারও বেশি হতে পারে। লিবিয়ার অনেকেই এই ধ্বংসযজ্ঞকে বন্যা না বলে সুনামি বলে অভিহিত করছেন। দেরনায় প্রায় এক লাখ মানুষ এখনো পানিবন্দী হয়ে আছে। তাদের জন্য জরুরি আশ্রয়, খাদ্য, সুপেয় পানি এবং চিকিৎসাসামগ্রী দরকার। ভেঙে যাওয়া ঘরবাড়ি ঠিকঠাক করতে জরুরি ভিত্তিতে সেখানে সহায়তা দরকার।

লিবিয়ায় যে মাত্রায় বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস হয়েছে, তা যেকোনো দেশের পক্ষে সামাল দেওয়া অত্যন্ত কঠিন। আর লিবিয়া দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক সংকটে থাকার কারণে প্রায় ভেঙে পড়া একটি দেশ। সে কারণে লিবিয়ার পক্ষে এত বড় দুর্যোগ সামাল দেওয়া আরও বেশি দুরূহ।

২০১৪ সাল থেকে লিবিয়ার নাগরিকেরা দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী শাসকের অধীনে বসবাস করছেন। বিবদমান দুটি পক্ষের কারণ দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা শোচনীয় জায়গায় চলে এসেছে। গত বুধবার লিবিয়াকে সহায়তা দিতে মিসরের সেনাবাহিনী এসে পৌঁছেছে এবং লিবিয়ার সাবেক ঔপনিবেশিক দেশ ইতালি ত্রাণ বহনকারী হেলিকপ্টার পাঠিয়েছে।

কিন্তু আমেরিকানদের মধ্যে অনেকে বলছেন, আমরা কেন লিবিয়ার বিষয়ে আগ্রহী হব? ২০১১ সালে তৎকালীন স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির হাত থেকে বেনগাজি শহরবাসীকে রক্ষার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল। পরে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটের হস্তক্ষেপে গাদ্দাফির স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে। যুক্তরাষ্ট্র তার ইউরোপীয় মিত্রদের হাতে লিবিয়া পুনর্গঠনের বেশির ভাগ কাজ ছেড়ে দিয়ে লিবিয়া থেকে সরে আসে।

আরও পড়ুন

কিন্তু গাদ্দাফির পতনের পরপরই লিবিয়ায় নিরাপত্তাব্যবস্থা দ্রুত ভেঙে পড়ে। ২০১২ সালে আল-কায়েদা যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক মিশনে হামলা চালিয়েছিল। তখন থেকেই লিবিয়ার পূর্ব এবং পশ্চিমের ভেতরে দুই ভাগ হয়ে যায়। তখন থেকেই দেশটির মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত প্রশাসনের অধীনে কাটাচ্ছে। অনেক সমৃদ্ধ শহর তখন থেকেই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। বন্যাকবলিত দেরনা শহর তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ।

প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ দেরনা শহর ১৯৫০ থেকে ষাটের দশকে শিক্ষা ও শিল্পকলার প্রাণকেন্দ্র ছিল। কিন্তু ১৯৯০–এর দশকে গাদ্দাফির দমনমূলক শাসনের কারণে দেরনা চরমপন্থী বিরোধী শক্তির প্রধান ঘাঁটি হয়ে দাঁড়ায়।

আরও পড়ুন

মোটেও অবাক হওয়ার বিষয় নয় যে ২০১২ সালে বেনগাজিতে হামলার বছর দুয়েক পরেই এই দেরনা শহরে আইএস তাদের ‘ইসলামিক খিলাফত’ প্রতিষ্ঠা করে। তখন থেকেই দেরনা এবং লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা একেবারেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে বাঁধ ও অন্যান্য অবকাঠামো দেখভালের বাইরে চলে যায়। তখন থেকেই অনেকে আশঙ্কা করছিলেন এই বাঁধ যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। সর্বশেষ বন্যায় সেই ঘটনাই ঘটল।

গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থার মাধ্যমে লিবিয়ায় ত্রাণ সহায়তা পাঠাতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র চায় লিবিয়ার মানুষ আবার ঘুরে দাঁড়াক।

গাদ্দাফির পতনের পরপর লিবিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে আসায় যে ক্ষতি হয়েছিল, তার কিছুটা হলেও পুষিয়ে দিতে যুক্তরাষ্ট্রের এখন লিবিয়ার দুর্গত এলাকায় সর্বাত্মক শক্তি নিয়ে সহযোগিতা করা উচিত।

নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিতভাবে অনূদিত

  • ইথান চোরিন লিবিয়ায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত