বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে। খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২০০৯ সালের ২২ হাজার কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে সর্বশেষ মার্চ ২০২৩ নাগাদ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার টাকা। অর্থাৎ বাংলাদেশে গত ১৩ বছরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ছয় গুণের বেশি।
অবশ্য আইএমএফের মতামত অনুসারে পুনঃ তফসিল ও পুনর্গঠন করা ঋণ, সন্দেহজনক ঋণ ও আদালতের আদেশে খেলাপি স্থগিতাদেশ থাকা ঋণকে খেলাপি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা। বর্তমানে দেশের আদালতগুলোতেই খেলাপি ঋণের প্রায় পৌনে এক লাখ মামলা ঝুলে রয়েছে, যাতে ১ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা আটকে রয়েছে। (বাংলাদেশ কেন খেলাপি ঋণ কমাতে পারছে না?, বিবিসি বাংলা, ২৯ মে ২০২৩)।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে খেলাপি ঋণের হারে শ্রীলঙ্কার পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। শ্রীলঙ্কার খেলাপি ঋণ প্রায় ১১ শতাংশ আর বাংলাদেশের প্রায় ৯ শতাংশ। অবশ্য তফসিল ও পুনর্গঠন করা ঋণ, সন্দেহজনক ঋণ ও আদালতের আদেশে স্থগিত থাকা ঋণকে হিসাবে ধরলে খেলাপি ঋণের হার আরও অনেক বাড়বে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মধ্যে ভারতের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশ, মালদ্বীপের ৬ শতাংশের কম, পাকিস্তান ও ভুটানের ৮ শতাংশের কম। (দক্ষিণ এশিয়ায় খেলাপি ঋণে শ্রীলঙ্কার পরেই বাংলাদেশ, ১৩ মে ২০২৩, প্রথম আলো)।
প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ বছর বছর এভাবে বাড়ছে কেন? যেখানে যথাযথ জামানত ও কাগজপত্র থাকলেও অনেক সময় ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া কঠিন, তরুণ উদ্যোক্তাদের যেখানে ব্যাংক থেকে সামান্য কয়েক লাখ টাকার ঋণ পাওয়ার জন্য দিনের পর দিন ঘুরতে হয়, সেখানে এ রকম হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ খেলাপ হওয়া কীভাবে সম্ভব হচ্ছে? কারা এই ঋণ খেলাপ করছে, কীভাবেই–বা তারা পার পেয়ে যাচ্ছে?
গত নভেম্বরে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক নামের একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়ার অভিযোগে ১২ জন কৃষককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানোর ঘটনাটি নিশ্চয়ই অনেকের স্মরণে আছে। (২৫ হাজার টাকা ঋণের মামলায় ১২ কৃষক জেলে, প্রথম আলো, ২৫ নভেম্বর ২০২২) যেই দেশে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণের জন্য ১২ জন কৃষককে জেলে পাঠানোর ঘটনা ঘটে, সেই দেশে কী করে হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপির ঘটনা নিয়মিত ঘটতে পারে?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের দেশের রাজনৈতিক–অর্থনৈতিক কাঠামো, শাসনব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি, জবাবদিহির প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন ইত্যাদি বিষয়কে বোঝার চেষ্টা করতে হবে।
পল হাচক্রাফট তাঁর বুটি ক্যাপিটালিজম: দ্য পলিটিকস অব ব্যাংকিং ইন দ্য ফিলিপিনস বইয়ে ফিলিপাইনের অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন, ব্যাংক খাত হলো এমন একটা প্রিজম, যার মধ্য দিয়ে দেখলে কোনো দেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক চরিত্রটা স্পষ্ট বোঝা যায়। আর ব্যাংকিং খাতের যে বিষয়গুলোর ওপর মনোযোগ দিলে রাষ্ট্র ও গোষ্ঠীতন্ত্রের সম্পর্ক বুঝতে সুবিধা হয়, তার মধ্যে অন্যতম হলো ব্যাংকের ঋণ বিতরণ ও আদায় কার্যক্রম।
এ বিষয়ে খোঁজখবর রাখলে বোঝা যায়, কীভাবে লুটেরা গোষ্ঠীতন্ত্র রাষ্ট্রের কাছ থেকে নানা সুবিধা আদায় করে।
বাংলাদেশের ক্ষমতাকাঠামোর সঙ্গে পরিবারতান্ত্রিক ও গোষ্ঠীতান্ত্রিক লুটেরা পুঁজিপতিদের সম্পর্ক পারস্পরিক নির্ভরশীলতার, এদের একটি আরেকটির ওপর নির্ভর করে বিকশিত হয়। লুটেরা ব্যবসায়ীদের জন্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, স্বাধীন গণমাধ্যম, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা, জবাবদিহি, স্বাধীন নির্বাচনব্যবস্থা ইত্যাদি খুবই বিপজ্জনক।
তাই এই লুটেরা গোষ্ঠী ও ক্ষমতায় যাওয়া তাদের প্রতিনিধি শাসকেরা এমন কোনো স্বাধীন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেনি, যার মাধ্যমে অবাধ লুণ্ঠনে রাশ টানা যায়। ফলে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির অন্য সব খাতের মতো ব্যাংক খাতেও কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন গড়ে ওঠেনি। সরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পরিচালক কারা হবেন, ঋণ কারা পাবেন, কোনো নতুন বেসরকারি ব্যাংক চালু হবে কি না, লাইসেন্স পাবে কি না, টিকে থাকবে কি না, তার অনেকখানিই নির্ভর করে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর আশীর্বাদ পাওয়া বা না–পাওয়ার ওপর।
বেসরকারি ব্যাংকের লাইসেন্স প্রদান থেকে শুরু করে সরকারি সঞ্চয়, ঋণ, জরুরি সহায়তা বা বেইল আউট ইত্যাদি যেসব মূল্যবান সুবিধা কেন্দ্রীয় ব্যাংক বরাদ্দ করে, তার খুব কমই নিরপেক্ষ ও নৈর্ব্যক্তিক কোনো নীতিমালার মাধ্যমে দেওয়া হয়।
ফলে সরকারি ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কাছাকাছি অবস্থান করা ব্যক্তিদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। অন্যদিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকের মালিকপক্ষের বিভিন্ন পারিবারিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। ঘুষ, দুর্নীতি, জালিয়াতির মাধ্যমে বিতরণ করা এসব ঋণের বেশির ভাগই আর আদায় হয় না।
এভাবে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলো থেকে রাজনৈতিক বিবেচনায় ও বেসরকারি ব্যাংক থেকে ব্যাংকমালিক বা পরিচালকদের সঙ্গে যোগসাজশে, ঘুষ, দুর্নীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে বিশেষ বিশেষ গোষ্ঠী নিয়মিত বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়ে আর পরিশোধ করে না বলেই বছর বছর খেলাপি ঋণ বাড়তে থাকে। জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা এসব ঋণ খেলাপির হাত থেকে উদ্ধার করা এবং এদের শাস্তি দেওয়া তো দূরের কথা, উল্টো এদের বছর বছর ঋণ পুনঃ তফসিল, এমনকি সহজ শর্তে, তুলনামূলক কম সুদে ও দীর্ঘ মেয়াদে পুনর্গঠন সুবিধা প্রদান করা হয়।
দায়সারা তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও একটিরও রিপোর্ট প্রকাশিত হয়নি। প্রবল সমালোচনা ও গণরোষের কারণে দায়ীদের কেউ কেউ গ্রেপ্তার হলেও মূল হোতারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ধরাছোঁয়ার বাইরে, যাঁরা ধরা পড়েছেন তাঁদেরও কোনো সাজা হয়নি। বছরের পর বছর মামলা চলছে। অভিযুক্তদের কেউ জেলে আছে, কেউ চিকিৎসার নামে হাসপাতালে আরাম-আয়েশে। অনেকে জামিন পেয়েছে। কেউবা পালিয়ে লাপাত্তা। কিন্তু সুরাহা হয়নি কোনো ঘটনার। লুণ্ঠিত অর্থও ফেরত আসেনি।
কিছু দৃষ্টান্ত দেখা যাক। ডেইলি স্টার–এ প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বেক্সিমকো গ্রুপ ২০১৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে গ্রুপের সব ঋণ পুনর্গঠন করার দাবি জানিয়েছিল। এরপর অন্য ব্যবসায়ীরাও একই দাবি জানালে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৫০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ পুনর্গঠনের নীতিমালা জারি করে। এই নীতিমালার আওতায় ১১টি গ্রুপ প্রায় ১৫ হাজার ২১৮ কোটি টাকার ঋণ পুনর্গঠনের অনুমোদন পায়।
এর মধ্যে বেক্সিমকো গ্রুপেরই ছিল প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। সুবিধা পাওয়া অন্য গ্রুপগুলো হলো যমুনা, শিকদার, কেয়া, অ্যাননটেক্স, রতনপুর, এসএ, বিআর স্পিনিং, রাইজিং গ্রুপ ও অন্যান্য। কিন্তু পুনর্গঠন–সুবিধা নিয়েও এসব ব্যবসায়ীর বড় অংশ নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করেনি, নতুন করে খেলাপি হয়েছেন এবং আরও নতুন ঋণ ও সুদ মওকুফ চেয়েছেন। (বরো মানি, নেভার পে ব্যাক, দ্য ডেইলি স্টার, ৮ এপ্রিল ২০১৮)
২০১৯ সালের মে মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি নির্দেশনায় খেলাপি ঋণের মাত্র ২ শতাংশ ফেরত দিয়ে পুনঃ তফসিলীকরণের মাধ্যমে মাত্র ৯ শতাংশ সুদে ১০ বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধের সুযোগ প্রদান করা হয়।
ফলে একদিকে পুনঃ তফসিলের সুবিধা চেয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শাখায় ঋণখেলাপিদের শত শত আবেদন জমা পড়ে, অন্যদিকে খেলাপি নয়, এমন গ্রাহকও বিশেষ সুবিধার আওতায় আসার জন্য খেলাপির খাতায় নাম তুলতে তদবির করেন। (খেলাপি হতে তদবির: বিশেষ সুবিধা পেতে ব্যাংকের শাখাগুলোয় শত শত আবেদন, বণিক বার্তা, ৮ মে, ২০১৯) এভাবে পুনঃ তফসিলের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ আদায় না করেই খেলাপি ঋণ কমিয়ে দেখানো হয়।
এ ছাড়া খেলাপি ঋণ কমিয়ে দেখানোর জন্য আরও যে দুটি পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়, তা হলো ঋণ অবলোপন ও শ্রেণীকরণের নীতিমালা শিথিল করা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার মাধ্যমে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে দীর্ঘ মেয়াদে খেলাপি ঋণের ঋণ অবলোপন করার সময়সীমা হ্রাস করা হয় এবং এপ্রিলে ঋণ শ্রেণীকরণ নীতিমালা পরিবর্তন করে ঋণকে ‘নিম্নমান’, ‘সন্দেহজনক’, ‘মন্দ/কুঋণ’ ইত্যাদি শ্রেণিতে চিহ্নিত করার সময়সীমা প্রতি ধাপে তিন মাস করে বাড়ানো হয়। (বিআরপিডি সার্কুলার নম্বর ৩, ২১ এপ্রিল ২০১৯, বাংলাদেশ ব্যাংক)।
২০২০ সালে করোনার প্রভাব মোকাবিলার নামে ব্যবসায়ীদের ঋণ পরিশোধে বিশেষ ছাড় দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কোনো গ্রাহক এক টাকা ঋণ পরিশোধ না করলেও সে সময় তাকে খেলাপি দেখানো হয়নি। ২০২১ সালে যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করার কথা, তার ১৫ শতাংশ পরিশোধ করলেই তাকে নিয়মিত দেখানো হয়েছে। আর রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণ দেখিয়ে ২০২২–এর শেষ প্রান্তিকে ঋণের কিস্তির ৫০ শতাংশ পরিশোধেই খেলাপি থেকে রেহাই দেওয়া হয়। এতসব সুযোগ দেওয়ার পরও খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমছে না। (ব্যাংকে তিন মাসে খেলাপি ঋণ বাড়ল ১১ হাজার কোটি টাকা, ২৯ মে ২০২৩, সমকাল)।
বারবার ঋণ পুনর্গঠনের মাধ্যমে ঋণখেলাপিদের প্রত্যক্ষ সুবিধা দেওয়া ছাড়াও খেলাপি ঋণে পৃষ্ঠপোষকতার আরেকটি পদ্ধতি হলো খেলাপি ঋণের জন্য দায়ীদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত না করা। গত এক দশকে ঋণের নামে যতগুলো ব্যাংক লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটেছে, তার একটিরও যথাযথ তদন্ত করা হয়নি।
দায়সারা তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও একটিরও রিপোর্ট প্রকাশিত হয়নি। প্রবল সমালোচনা ও গণরোষের কারণে দায়ীদের কেউ কেউ গ্রেপ্তার হলেও মূল হোতারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ধরাছোঁয়ার বাইরে, যাঁরা ধরা পড়েছেন তাঁদেরও কোনো সাজা হয়নি। বছরের পর বছর মামলা চলছে। অভিযুক্তদের কেউ জেলে আছে, কেউ চিকিৎসার নামে হাসপাতালে আরাম-আয়েশে। অনেকে জামিন পেয়েছে। কেউবা পালিয়ে লাপাত্তা। কিন্তু সুরাহা হয়নি কোনো ঘটনার। লুণ্ঠিত অর্থও ফেরত আসেনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় তদন্ত হলেও তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হয়নি, দোষী ব্যক্তিদেরও বিচার হয়নি। বহুল আলোচিত হলমার্ক গ্রুপের জালিয়াতির মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের ২ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা আত্মসাতের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি অর্থ মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। (হলমার্ক কেলেঙ্কারি: তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করবে না সংসদীয় কমিটি!, ১৭ মে ২০১৩, প্রথম আলো) হলমার্ক গ্রুপের বিরুদ্ধে করা এক মামলার বিচারে তিন বছরে ৪০ বার সময় নেওয়া হয়। (সমঝোতায় বিলম্বিত হলমার্কের বিচার, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, যুগান্তর)।
বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর অনিয়ম-দুর্নীতির কথা দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর জানা থাকলেও তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০১১ সালেই আবদুল হাইয়ের দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ার পরও ২০১২ সালে তার নিয়োগ এক দফা নবায়নও হয়। এ বিষয়ে দুদক ৫৬টি মামলা করলেও কোনো মামলায় মূল হোতা বলে অভিযুক্ত আব্দুল হাই বাচ্চুকে আসামি করা হয়নি। (সাত বছর ধরে ঝুলছে ৫৬ মামলার তদন্ত, যুগান্তর, ২৮ জুলাই ২০২২) বেসিক ব্যাংকের অর্থ কেলেঙ্কারির মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশনের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে সম্প্রতি হাইকোর্ট বলেছেন, সব ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। আমরা কি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখব।
এসব অর্থ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যা করছে, তাতে মনে হয়, আমরা যেন নাটক দেখছি। (সব ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে, আমরা কি শুধু দেখব: হাইকোর্টের ক্ষোভ প্রকাশ, সমকাল, ২৮ নভেম্বর ২২)।
বাংলাদেশে ঋণের নামে ব্যাংক লুণ্ঠনের ঘটনাগুলো লক্ষ করলে এবং এই লুণ্ঠনের পদ্ধতি ও পৃষ্ঠপোষকতার ধরনগুলো বিশ্লেষণ করলে খেলাপি ঋণ–সংস্কৃতির একটা প্রাতিষ্ঠানিক আদল স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যা দেশের পুঁজি গঠনের ধরন, আর্থিক খাত ও ব্যাংকিং খাতের গঠন এবং লুটেরা শাসকগোষ্ঠীর স্বার্থের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। ফলে দেশের শাসনব্যবস্থা ও রাজনৈতিক অর্থনীতির বড় ধরনের পরিবর্তন ছাড়া ঋণের নামে ব্যাংকে থাকা জনগণের অর্থ লুটপাটের এই মেগা সিরিয়ালের সমাপ্তি ঘটার কোনো সম্ভাবনা নেই।
কল্লোল মোস্তফা বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবেশ ও উন্নয়ন অর্থনীতিবিষয়ক লেখক। প্রকাশিত গ্রন্থ: ‘বাংলাদেশে উন্নয়নের রাজনৈতিক অর্থনীতি’, ‘ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদ, নজরদারি পুঁজিবাদ ও মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার ভবিষ্যৎ’।
ই-মেইল: [email protected]