প্রিগোশিনের বিদ্রোহ বলছে দুগিনদের উত্থান হচ্ছে রাশিয়ায়

আলেক্সান্দার দুগিন

২০১৪ সালে ইউক্রেনে মাইদান অভ্যুত্থানের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির বিশ্বায়নবাদী অংশের মূল উদ্দেশ্য হলো, রাশিয়ায় সরকার পরিবর্তন। সে সময় ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ছিলেন ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ড। তাঁর নির্দেশনাতেই অভ্যুত্থানটি হয়েছিল।

ন্যুল্যান্ড এখন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্ডার সেক্রেটারি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও রাশিয়ায় সরকার পরিবর্তনের সেই দাবিকে গ্রহণ করে নিয়েছেন। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর ২০২২ সালের ২৬ মার্চ বাইডেন ঘোষণা দেন, পুতিন আর ‘ক্ষমতায় থাকতে পারেন না’।

ভাড়াটে সেনাদল ভাগনার গ্রুপের বিদ্রোহের পর সংবাদমাধ্যমের সম্পাদকীয় ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই মন্তব্যের বন্যা বয়ে যায় যে এই বিদ্রোহের ফলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হবে। পুতিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার লুকাশেঙ্কো ভাগনারপ্রধানের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছানোর পর মস্কো অভিমুখ থেকে তাঁর সেনাদল ফিরিয়ে নেন ইয়েভগেনি প্রিগোশিন।

আরও পড়ুন

এ যাত্রায় পুতিনের ক্ষমতা বহাল থেকে যায়। কিন্তু এই বিদ্রোহ রাশিয়ার রাজনৈতিক হাওয়া দেশটির অতি ডানপন্থী-জাতীয়তাবাদীদের দিকে ঘুরিয়ে দিল। ট্যাকটিক্যাল বা কম ক্ষতি করতে সক্ষম, এমন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কাসহ বড় ধরনের কৌশলগত ঝুঁকি বাড়িয়ে দিল।

প্রিগোশিনের বিদ্রোহ থেকে এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে যে রাশিয়ার সেনাবাহিনী ও নাগরিক সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশের মধ্যে এই ঐকমত্য হয়েছে যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা বিশ্বের পদক্ষেপে পুতিনের ভিত্তি দুর্বল হয়েছে। তাঁদের মধ্যে চেচনিয়ার যুদ্ধবাজ রামজান কাদিরভও রয়েছেন।

পুতিনের সামরিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কাদিরভ ও প্রিগোশিনের মৈত্রী রয়েছে। তাঁরা দুজনেই ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আরও আগ্রাসী ও ফয়সালামূলক পদক্ষেপ দাবি করে আসছেন। এই বিদ্রোহের উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে প্রিগোশিন তাঁর সেনাদের জড়ো করলেও পুতিন এর বিন্দুবিসর্গও জানতে পারেননি। পক্ষান্তরে সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে জানা যাচ্ছে, পশ্চিমা গোয়েন্দারা ঘটনাটি জানতেন।

আরও পড়ুন
এর মধ্যে আলেক্সান্দার দুগিন সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন। তিনি নিজেকে নিজে ‘লাল নাৎসি’ বলে অভিহিত করেছেন। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে এক পোস্টে দুগিন রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সব জনবলকে একসঙ্গে করা, প্রতিপক্ষকে ঘেরাও করা এবং ট্যাকটিক্যাল পারমাণবিক বোমা ব্যবহারের দাবি জানান। তাঁর এই পোস্ট ভাইরাল হয়ে যায়।

আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, রোস্তভ থেকে মস্কো অভিমুখে প্রিগোশিনের সেনাবহর যখন যাত্রা শুরু করেছে, তখন মাঝের ২০০ কিলোমিটার রাস্তায় বাধা দেওয়ার জন্য রাশিয়ার একজন সেনাও ছিলেন না। শুধু গুটিকয় হেলিকপ্টার উড়তে দেখা গেছে, যার তিনটিকে ভূপাতিত করে ভাগনার বাহিনী।

আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, বিদ্রোহীদের দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না, এমন শর্তে লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে প্রিগোশিনের চুক্তি হওয়ার আগে মস্কো রক্ষার জন্য প্রিগোশিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র কাদিরভকে ডাকতে হয়েছিল পুতিনকে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছে, রাশিয়ার নিয়মিত সেনাবাহিনী চুপ করে বসে ছিল। তারা চেয়েছে প্রিগোশিন যেন পুতিনকে শক্ত বার্তা দেন। মস্কোর জাতীয়তাবাদীরা মনে করেন, পশ্চিমের প্রতি নমনীয় পুতিন। ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের কাছে ন্যাটোতে যুক্ত হওয়ার আরজি জানিয়েছিলেন পুতিন।

আরও পড়ুন

তাঁর সেই আরজি প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল। ওয়াশিংটনের কাছে পুতিন ইউক্রেনে হস্তক্ষেপ না করার অঙ্গীকার করেছিলেন এবং সেটা মেনে চলেছিলেন। প্রিগোশিনের বিদ্রোহের পর পুতিনকে রাশিয়ার উগ্র ডানপন্থীদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে হবে।

যদি পুতিনকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হয়, তাহলে ক্রেমলিনের ক্ষমতায় যিনি বসবেন, তিনি ওয়াশিংটনের স্বপ্নের উদার গণতন্ত্রী কেউ নন। রুশ জাতীয়তাবাদীদের এমন কেউ একজন প্রেসিডেন্ট হবেন, যিনি ইউক্রেনকে পুরোপুরি পরাভূত করতে চাইবেন।

আরও পড়ুন

বর্তমান রাশিয়ায় উদারবাদীদের বিন্দুমাত্র গুরুত্ব নেই। রাশিয়ার অভিজাত শাসকগোষ্ঠী তাঁদের গর্ভে অতি ডানপন্থী জাতীয়তাবাদীদের শক্তিশালী একটি গোষ্ঠীকে লালন করে চলেছেন। তাঁরা ‘মহান রাশিয়ার’ পুনর্জন্মের স্বপ্ন দেখেন। আশঙ্কাজনক বিষয় হচ্ছে, একই সঙ্গে বেশ কয়েকটি উগ্রপন্থী গোষ্ঠী একসঙ্গে মিলেছে।

এর মধ্যে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা লিওনিড সলৎস্কি, ইউরেশিয়াপন্থী দার্শনিক আলেক্সান্দর দুগিন, জনপ্রিয় টেলিভিশন উপস্থাপক ভ্লাদিমির সলোভিয়েভ ও দিমিত্রি দিবরভ, চেচেন নেতা কাদিরভ রয়েছেন। হাইড্রার (নিডারিয়া পর্বের জলজ উদ্ভিদ) মতো রুশ অতি-জাতীয়তাবাদীদের অনেকগুলো মাথা রয়েছে। এর মধ্যে আলেক্সান্দার দুগিন সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন।

আরও পড়ুন

তিনি নিজেকে নিজে ‘লাল নাৎসি’ বলে অভিহিত করেছেন। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে এক পোস্টে দুগিন রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সব জনবলকে একসঙ্গে করা, প্রতিপক্ষকে ঘেরাও করা এবং ট্যাকটিক্যাল পারমাণবিক বোমা ব্যবহারের দাবি জানান। তাঁর এই পোস্ট ভাইরাল হয়ে যায়।

এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, মূল ভাষ্য থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ

  • জেমস ডেভিস এশিয়া টাইমস–এর লেখক