রমজান মাসে দান–খয়রাত ও ফিতরা, জাকাত ইত্যাদি দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এই আমল সমাজের অবহেলিত মানুষের জন্য সহায়ক। কিন্তু কখনো কখনো এ মহতী কাজেও অনেকে ভুল পদক্ষেপ নেন।
কোথাও কোথাও দেখা যায় অনেক কাপড় ব্যবসায়ী অসম্মানজনকভাবে জাকাতের কাপড় বিক্রির ব্যানার ঝোলান। বিজ্ঞাপন দিয়ে কম দামি, নিম্নমানের শাড়ি কাপড় ও লুঙ্গি ‘জাকাতের কাপড়’ হিসেবে বিক্রি করেন।
কোনো কোনো জাকাতদাতা আছেন যাঁরা এগুলো কিনে জাকাত হিসেবে গরিবদের মধ্যে বিতরণ করেন।
যেসব জাকাতদাতা এ ধরনের নিম্নমানের শাড়ি, লুঙ্গি জাকাত হিসেবে দিচ্ছেন, তাঁরা একদিকে জাকাতকে অসম্মান করছেন, অন্যদিকে জাকাতগ্রহীতাকেও অবমাননা করছেন। সব মিলিয়ে ইসলামের পাঁচটি ভিত্তির অন্যতম খোদায়ি বিধান জাকাতের অবমাননা হচ্ছে আর মানবতার সঙ্গে উপহাস করা করা হচ্ছে। সর্বোপরি ইমান ও ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ ও মৌলিক একটি ইবাদতকে ছলচাতুরীর মাধ্যমে খেল-তামাশায় পরিণত করা হচ্ছে।
জাকাত ফরজ ইবাদত; করুণার দান নয়, দয়াদাক্ষিণ্যও নয়; এটি বঞ্চিতদের পাওনা অধিকার। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘তাদের সম্পদে বঞ্চিত যাচ্ঞাকারীদের নির্দিষ্ট অধিকার রয়েছে।’ (সুরা-৫১ জারিয়াত, আয়াত: ১৯; সুরা-৭০ মাআরিজ, আয়াত: ২৪-২৫)।
পাওনাদারের টাকা দিয়ে পাওনাদারকে নিম্নমানের কিছু কিনে দেওয়া ধোঁকাবাজি ছাড়া আর কী? কোরআনে করিমে আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত কল্যাণ পাবে না, যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় জিনিস দান করবে। আর তোমরা যা দান করো, আল্লাহ তা সে বিষয়ে অবগত।’ (সুরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ৯২)।
যেহেতু এটি তার পাওনা সুতরাং প্রাপককে তার পাওনা সসম্মানে প্রদান করতে হবে; যাতে তিনি তা পেয়ে সন্তুষ্ট হন। জাকাত প্রদান করা ফরজ ও সদকা আদায় করা ওয়াজিব; কিন্তু কোনো মানুষকে হেয় জ্ঞান করা, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা, কারও সম্মানহানি করা নাজায়েজ ও হারাম কাজ।
জাকাত, সদকাতুল ফিতর ও যেকোনো ফরজ ওয়াজিব সদকা, যা নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় করতে হয় এবং যেসব শুধুই গরিবের হক। তাই দেওয়ার আগে তিনি প্রকৃত হকদার কি না, তা নিশ্চিত হতে হবে। তবে সেসব প্রদান করার ক্ষেত্রে গ্রহীতাকে এমন বলার প্রয়োজন নেই যে, ‘এটা জাকাত’ বা ‘এটা ফিতরা’।
মুদ্রা বা টাকাই অগ্রগণ্য, কেননা এর দ্বারা গ্রহণকারী নিজের রুচি ও ইচ্ছামতো প্রয়োজন মেটাতে পারেন। কোনো কাপড়চোপড় বা খাদ্যদ্রব্য অথবা অন্য কোনো বস্তু কিনে দিলে ব্যবহার উপযোগী মানসম্পন্ন জিনিসই দেওয়া উচিত।
এমনভাবে বলা উচিত নয়; কেননা এতে গ্রহীতা লজ্জিত, অপমানিত বোধ করবেন। শুধু ফরজ ওয়াজিব দান নয় বরং নফল দান–খয়রাতের মাধ্যমেও কাউকে অসম্মান করা যাবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘উত্তম কথা ও ক্ষমা সেই দান অপেক্ষা উত্তম, যার সঙ্গে অনুগামী হয় যন্ত্রণা। আর আল্লাহ তাআলা ধনী ও সহিষ্ণু।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২৬৩)। সদকা ও জাকাত এমনভাবে দেওয়া উত্তম, যা গ্রহীতা স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করতে পারেন।
এ ক্ষেত্রে মুদ্রা বা টাকাই অগ্রগণ্য, কেননা এর দ্বারা গ্রহণকারী নিজের রুচি ও ইচ্ছামতো প্রয়োজন মেটাতে পারেন। কোনো কাপড়চোপড় বা খাদ্যদ্রব্য অথবা অন্য কোনো বস্তু কিনে দিলে ব্যবহার উপযোগী মানসম্পন্ন জিনিসই দেওয়া উচিত।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
[email protected]