বিশ্লেষণ
বার্লিন স্বাস্থ্য সম্মেলন বৈশ্বিকভাবে কেন গুরুত্বপূর্ণ
২০০৯ সাল থেকে বার্লিনে নিয়মিতভাবে স্বাস্থ্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই সম্মেলনে শীর্ষ বিজ্ঞানী, গবেষক ও নীতিনির্ধারকেরা অংশ নেন। এখানে অনেক বৈশ্বিক এজেন্ডা নির্ধারণ করা হয়। বার্লিন স্বাস্থ্য সম্মেলন নিয়ে লিখেছেন শিশির মোড়ল
জার্মানির রাজধানী বার্লিন পরিপাটি একটি শহর। বিজ্ঞানচর্চার জন্য প্রসিদ্ধ। বর্তমান সময়ে বিশ্বের মানুষের কাছে বার্লিনের মূল আকর্ষণ বার্লিন দেয়ালের অবশিষ্টাংশ আর হলোকাস্ট মেমোরিয়ালস। শহরটির বেশ কয়েকটি চৌরাস্তার মোড়ে চোখে পড়ে ‘আইনস্টাইন ক্যাফে’ নামের কফির দোকান। দেখলেই মনে পড়ে যায় বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের কথা।
স্বাস্থ্যসেবা, ওষুধ, চিকিৎসা বা জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা মানুষের কাছে বার্লিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এর স্বাস্থ্য সম্মেলনের কারণে। ২০০৯ সাল থেকে প্রতিবছর এই শহরে বসছে স্বাস্থ্য খাতের শীর্ষ সম্মেলন। ১৩-১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হলো ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য শীর্ষ সম্মেলন ২০২৪’। এ বছর সম্মেলনটি যৌথভাবে আয়োজন করে জার্মানি, ফ্রান্স ও নরওয়ে সরকার। সারা বিশ্বের সাড়ে তিন হাজারের বেশি প্রতিনিধি এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছাড়া তিন দিনের সম্মেলনে মোট ৬৬টি অধিবেশন হয়। অংশগ্রহণকারী ও বক্তাদের মধ্যে ছিলেন শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী ও স্বাস্থ্য পেশাজীবী, মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তা, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ও নাগরিক সংগঠনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং তরুণ পেশাজীবী ও শিক্ষার্থী। বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা কথা বলেছেন তিনটি পৃথক অধিবেশনে।
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের উপস্থিতি ছাড়াও পারিপাট্য, শৃঙ্খলা ও বিষয়ের কারণে সম্মেলনটি মনে ধরেছে। দেশে বা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এখন এমন সম্মেলন হয় না। যেমন এই নভেম্বরে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে হবে ফুসফুস বিষয়ে সম্মেলন। যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া বা ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্রের নানা রোগ, আইন, নীতি, ওষুধ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মসূচি নিয়ে সম্মেলনে নানা অধিবেশন বসবে। অর্থাৎ আজকাল সম্মেলন হয় মূলত স্বাস্থ্যের বিশেষ কোনো শাখা বা বিভাগ নিয়ে।
কিন্তু বার্লিনের সম্মেলনটি হয় ‘স্বাস্থ্য’ নিয়ে। ঠিক তিন-চার-পাঁচ বছর পর যেমন হয় ‘পিপলস হেলথ অ্যাসেম্বলি’। বার্লিন স্বাস্থ্য শীর্ষ সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্বব্যাংক, বিভিন্ন দাতা সংস্থা, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সরব উপস্থিতি থাকে। পিপলস হেলথ অ্যাসেম্বলিতে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্বব্যাংক, বিভিন্ন দাতা সংস্থা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা হয় প্রবলভাবে।
কাগজপত্রে বলা হয়েছে ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য শীর্ষ সম্মেলন ২০২৪’–এর উদ্দেশ্য ছিল ৭টি: বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যের উন্নতি; স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জগুলোর উত্তর খোঁজা, তবে সেই উত্তর হবে বিজ্ঞানচালিত; বিশ্বের সব অঞ্চলের সব খাতের অংশীজনকে একত্র করা; মুক্ত আলোচনাকে উৎসাহিত করা; আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে দৃঢ় করা; স্বাস্থ্য এজেন্ডা ঠিক করা এবং স্বাস্থ্যকে রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে স্বীকৃতির বিষয়টি ত্বরান্বিত করা।
নানা বিষয় নিয়ে বিজ্ঞানী, গবেষক বা নীতিনির্ধারকেরা কথা বললেও এবারের সম্মেলনের মূল বার্তা ছিল স্বাস্থ্য–সংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রে আস্থা তৈরি বা অর্জন বিষয়ে।
আস্থা গড়া জরুরি
জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ একটি অধিবেশনে লম্বা ও গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেওয়া ছাড়াও সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে দেওয়া বার্তায় বলেছিলেন, আস্থার মূল্য অপরিমেয়। আস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়, যখন একে অপরের কথা শোনে; আস্থা তখনই বৃদ্ধি পায়, যখন মানুষ মন খুলে সততার সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেয়। গবেষণা ও বিজ্ঞানে আস্থা যেমন দরকার, তেমনই দরকার বিভিন্ন শাখায় ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতার ক্ষেত্রে। এই আস্থা বাড়াতে হবে দেশের সীমানার বাইরে।
আস্থার প্রশ্নটি আসে সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ার সময়, টিকা নেওয়ার সময় এবং আরও অনেক ক্ষেত্রে। কোভিড-১৯ মহামারির সময় অনেক মানুষ নিজের ক্ষতি করেছিলেন এই কারণে যে তাঁরা মাস্ক, টিকা, বিধিনিষেধের ওপর আস্থা রাখেননি। অনাস্থা তৈরির ক্ষেত্রে ভুল তথ্য, মিথ্যা তথ্য বা অর্ধসত্য তথ্যের ভূমিকা আছে। এইচআইভি, যক্ষ্মা, মানসিক স্বাস্থ্য, কুষ্ঠ, এমপক্স— এসব ক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি করে ভুল, মিথ্যা বা অর্ধসত্য তথ্য। এই একই কারণে অনেক সময় স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর সহিংস ঘটনা ঘটে।
গুজব অনাস্থা তৈরির একটি কারণ। সম্মেলনের প্রথম দিনের শুরুর একটি অধিবেশনে স্বাস্থ্য খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে বলা হয়, ফেসবুকে গুজব ছড়ায় বিশৃঙ্খলভাবে। অন্যদিকে বৈজ্ঞানিক তথ্য বা সত্য ছড়ায় নেটওয়ার্কের মাধ্যমে।
মানুষ যখন চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে যায়, অথবা কোনো ওষুধ সেবন করে, তখন আস্থা বড় বিষয় হয়ে দেখা দেয়। এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানম গেব্রেয়াসুস বলেন, ‘আমরা সবাই চিকিৎসক, নার্স, ওষুধবিদ বা রোগতত্ত্ববিদ হতে পারব না; কিন্তু স্বাস্থ্যের উন্নতি ও স্বাস্থ্যরক্ষায় আমরা তাদের ওপর আস্থা রাখি। তাদের আমরা ভালোবাসি।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই শীর্ষ কর্তাব্যক্তি আরও বলেন, ‘আস্থা নষ্ট হলে পরিণতি ভয়াবহ হয়। আস্থা নষ্ট হলে বিপর্যয়কর প্রভাব পড়ে ব্যক্তি, পরিবার, কমিউনিটি, সমাজ, অর্থনীতি ও জাতির ওপর।’
অনিরাপদ সেবা, অসাধু চর্চা, ভুলত্রুটি, হাসপাতালে বিশুদ্ধ পানি বা বিদ্যুৎ বা দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর সংকট—এসব কারণে মানুষের আস্থা ক্ষয় হতে থাকে বা একসময় নষ্ট হয়ে যায়। এসব ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত দুর্বলতা ঠিকভাবে বুঝে পদক্ষেপ নিলে, কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিলে ও বিনিয়োগ বাড়ালে মানুষের আস্থা ধীরে ধীরে ফিরে আসে।
সম্মেলনের ছয় কেন্দ্রীয় বিষয়
সম্মেলন সাজানো হয়েছিল ছয়টি কেন্দ্রীয় বিষয়কে ঘিরে—স্বাস্থ্যে অর্থায়ন, অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা, নারী ও শিশু স্বাস্থ্যের কৌশল, স্বাস্থ্যে জলবায়ুর প্রভাব, স্বাস্থ্য খাতে তরুণদের ভূমিকা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। প্রতিটি বিষয়ের শাখা-প্রশাখা ধরে একাধিক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
স্বাস্থ্য খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বাড়ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার স্বাস্থ্য খাতে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করেছে বলে একটি অধিবেশনে দাবি করা হয়। ঝুঁকি হচ্ছে, প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের তথ্য নিয়ে কাজ হচ্ছে। রোগী তথ্য দিচ্ছেন, কিন্তু রোগী ডেটাবেজের উপকার বা সুবিধা কতটা পাচ্ছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। উন্নত বিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার যেভাবে বাড়ছে, এশিয়া বা আফ্রিকার অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সেভাবে বাড়ছে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জেরেসি ফারার বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা বেশি নিচ্ছে ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো। এ কারণে স্বাস্থ্য খাতে বৈষম্য বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। অধিবেশনগুলোয় সর্বসাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি বা গবেষণার বিষয় উপস্থাপনার পাশাপাশি নীতি–কৌশল নিয়েও আলোচনা ও বিতর্ক হয়।
নারীর স্বাস্থ্যবিষয়ক এক অধিবেশনে সুইডেনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ইউরোপিয়ান ক্যানসার মিশন বোর্ডের সদস্য পেনিলা গুন্টার বলেন, সচরাচর যেসব ডেটা বা পরিসংখ্যান পাওয়া যায়, নারীর প্রতি বৈষম্য বোঝার জন্য তা যথেষ্ট নয়। নারীর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বা গল্পগুলো পরিসংখ্যানের মতোই গুরুত্বপূর্ণ।
ক্যানসার বা বিভিন্ন রোগে নারীকে যে ওষুধ দেওয়া হয়, সেগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কত তীব্র, তা নিয়ে আলোচনা কম হয়। একাধিক অধিবেশনের আলোচনায় এটা উঠে এসেছে যে অসংক্রামক রোগের বিস্তার নারীর প্রতি বৈষম্যকে নতুন করে সামনে এনেছে। মাতৃস্বাস্থ্য গুরুত্বপূর্ণ ঠিকই, কিন্তু নারী স্বাস্থ্যের আলোচনায় অসংক্রমাক রোগ, মেনোপজ এগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে সামনের কাতারে আনার সময় এখন।
গাজা, ইউক্রেন, হাইতি, সুদান, ইয়েমেন, আফগানিস্তান—এসব অঞ্চল বা দেশে মানুষের স্বাস্থ্য অন্য রকম ঝুঁকির মধ্যে আছে। এসব স্থানে জরুরি চিকিৎসার পাশাপাশি মানবিক সহায়তা, পর্যাপ্ত খাদ্যসরবরাহ ও মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা খুবই জরুরি।
সম্মেলনে বাংলাদেশ
বৈশ্বিক স্বাস্থ্যে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব নিয়ে একটি অধিবেশনে বক্তব্য দেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) সহযোগী বিজ্ঞানী ফারজানা জাহান। ওই অধিবেশনে বলা হয় উষ্ণ তাপপ্রবাহ, দাবানল, বন্যা বা ঘূর্ণিঝড় মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য কাজ করেন এমন কর্মীরা কীভাবে বিজ্ঞানকে কাজে লাগাতে পারেন, অধিবেশনে সে বিষয়ে জোর দেওয়া হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। দেশের উপকূলের জেলা ও কক্সবাজারের শরাণার্থীশিবিরগুলোতে পরিস্থিতি মোকাবিলার কাজ করছে আইসিডিডিআরবি। কাজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে ওই অধিবেশনে ফারজানা জাহান বলেন, ‘সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ, অথচ অর্থায়নের সময় দাতারা সেই বিষয়টি মাথায় রাখেন না।’
সম্মেলনের শেষ দিন, অর্থাৎ ১৫ অক্টোবর সকালে অক্সিজেন নিয়ে একটি অধিবেশন বসে। অধিবেশনে প্রবেশাধিকার ছিল নিয়ন্ত্রিত। অধিবেশনে বলা হয়, হাসপাতালে ওষুধের বিকল্প ওষুধ থাকতে পারে। কিন্তু জীবন বাঁচাতে অক্সিজেনের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে হাসপাতালে অক্সিজেনের পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। প্রযুক্তি, সরবরাহব্যবস্থা ও দক্ষ জনবলের সংকট আছে।
অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্রের নাসার একজন বিজ্ঞানী বলেন, বাতাস থেকে সহজে অক্সিজেন পৃথক্করণের একটি উপায় তাঁরা বের করেছেন। অধিবেশনে জানানো হয়, সারা বিশ্বে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশে মেডিকেল অক্সিজেন পরিস্থিতি কী, ঘাটতি মেটাতে করণীয়—এসব নিয়ে চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেট বিশ্বের ২০ জন বিজ্ঞানী নিয়ে একটি কমিশন গঠন করেছে ২০২২ সালে। সেই কমিশন ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে প্রতিবেদন প্রকাশ করবে।
অক্সিজেনের অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ পরিচালক শামস এল আরেফিন ও বিজ্ঞানী আহমদ এহসানূর রহমান। আহমদ এহসানূর রহমান অক্সিজেন–বিষয়ক ল্যানসেট কমিশনের সদস্য। অধিবেশন শেষে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছর বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে ৭০ লাখ মানুষের মেডিকেল অক্সিজেনের দরকার হয়।
এক মঞ্চে শলৎজ ও গেটস
এ বছরের সম্মেলনে ‘সিগনেচার ইভেন্ট’ ছিল ১৪ অক্টোবর সন্ধ্যায়। অধিবেশনটি আয়োজন করা হয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জন্য তহবিল সংগ্রহের জন্য। অধিবেশনের মূল আকর্ষণ ছিলেন জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ এবং যুক্তরাষ্ট্রের গেটস ফাউন্ডেশনের চেয়ার বিল গেটস। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস।
জার্মান চ্যান্সেলর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ৩৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, বিল গেটস ২৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এ ছাড়া ইউইরোপের আরও কয়েকটি দেশ, কয়েকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ফাউন্ডেশন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তহবিলে অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এক সন্ধ্যার অনুষ্ঠান থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থের প্রতিশ্রুতি পায়।
এই অধিবেশনে প্রবেশের জন্য অংশগ্রহণকারীরা অনুষ্ঠান শুরুর প্রায় এক ঘণ্টা আগে থেকে সভাকক্ষের সামনে হাজির হন। নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়। অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকটি দেশের প্রধান, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বার্লিনে অবস্থানরত রাষ্ট্রদূতেরা এই অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আমাদের সবাইকেই উপকৃত করেছে। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, সংস্থাটির টেকসই অর্থায়ন নিশ্চিত করা।’ অন্যদিকে বিশ্বের বর্তমান স্বাস্থ্য সমস্যা ও তা মোকাবিলায় করণীয় বর্ণনা করে বিল গেটস বলেন, ‘বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান বৈশ্বিকভাবেই করতে হবে। সমন্বিতভাবে অর্থের জোগাড়ে উদ্যোগ নিতে হবে।’
সম্মেলনের শেষ অধিবেশন ছিল স্বাস্থ্যে অর্থায়ন বিষয়ে ল্যানসেট কমিশন নিয়ে। ল্যানসেট ২০১৩ ও ২০১৮ সালে অর্থায়ন ও বিনিয়োগ বিষয়ে দুটি কমিশন করে। ২০৫০ সালকে সামনে রেখে ল্যানসেট স্বাস্থ্যে বিনিয়োগ নিয়ে নতুন কমিশন করেছে। এই অধিবেশন ও সম্মেলন শেষ হয় অধিবেশনের চেয়ার ও ল্যানসেটের এডিটর-ইন-চিফ রিচার্ড হর্টনের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে।