উন্নয়নের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক উপাত্ত কেন প্রয়োজন

উপাত্ত আসলে কী করে? এটা পরিবর্তন বুঝতে সহায়তা করে, নির্দেশ করে কোথায় পৌঁছাতে হবে, সমাজে কারা পিছিয়ে, সুরক্ষাহীন অবস্থায় কিংবা অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের বাইরে রয়েছে। সহনশীল ভবিষ্যৎ গড়তে উপাত্ত ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে লিখেছেন মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম

আজ ১১ জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। প্রতিবছর জাতিসংঘ ও সদস্যদেশগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে এ দিবস পালন করে থাকে। বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় ২০২৪ সালে এ দিবসের মূল প্রতিপাদ্যকে বাংলায় ভাষান্তর করেছে এভাবে, ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উপাত্ত ব্যবহার করি, সাম্যতার ভিত্তিতে সহনশীল ভবিষ্যৎ গড়ি’।

বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস ২০২৪-এর পরিপত্র অনুযায়ী তিনটি বার্তা রয়েছে। প্রথমত, প্রামাণ্যনির্ভর সমাধান এবং নির্ভরযোগ্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক উপাত্তের ব্যবহারে সহনশীল ব্যবস্থা নির্মাণের মাধ্যমে শান্তি ও সমৃদ্ধিময় ভবিষ্যৎ অর্জন করা। দ্বিতীয়ত, উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ উপকরণ যথেষ্ট উন্নত হলেও তাৎপর্যময় তথ্য ঘাটতি ও সম্ভাব্য ঝুঁকি (যেমন ভুল তথ্য উপস্থাপন বা উপাত্তের অপপ্রয়োগ) রয়েছে। তৃতীয়ত, ওই সব দেশ বা সমাজই সফল, যারা জনমানুষকে যার যার অবস্থানে, এমনকি জটিল পরিস্থিতিতেও উপাত্ত সংগ্রহে অন্তর্ভুক্ত করে।

এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্ভুক্তিমূলক উপাত্ত বলতে সবার উপাত্ত সংগ্রহকে বুঝিয়ে থাকে। তবে প্রতিনিধিত্ব, বিভাজন, পরিচিতির আন্তচ্ছেদ, একাধিক সূত্র, গোপনীয়তা ও সহযোগিতা (জনবল ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা)—এসব মূলনীতি অন্তর্ভুক্তিমূলক উপাত্তে জড়িত। এটি ন্যায্য ও ন্যায়সংগত সমাজ নির্মাণে উপাত্তের ব্যবধান বা শূন্যস্থান পূরণ করে এবং সবাইকে দৃশ্যমান, শোনা ও গণনায় অন্তর্ভুক্ত করে।

ফলে আমরা কেবল তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের অগ্রগতি নিয়েই উদ্‌যাপন করব না, বরং উপাত্ত সংগ্রহে আত্মজিজ্ঞাসা করতে হবে, আমরা কি সঠিক প্রশ্ন করছি? উপাত্ত সংগ্রহ কি সবার জন্য নিরাপদ? কারা এখনো গণনায় ও জবাবদিহির বাইরে রয়েছে?

পরিবর্তিত বৈশ্বিক ও দেশীয় প্রেক্ষাপটে এ প্রশ্নগুলো করা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ ক্ষেত্রে চিন্তার কারণও রয়েছে, জনমিতিক পরিবর্তন ও ক্রমধারা সম্পর্কে ভুল তথ্য প্রদান ও তা রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে অপব্যবহার করার ঝুঁকি। ফলে অধিকতর অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সহনশীল সমাজ ও ব্যবস্থা নির্মাণে আমাদের উপাত্তের গভীরে যেতে হবে, উন্নত মানসম্মত উপাত্ত ব্যবহার ও উপাত্তের বিশ্লেষণ করতে হবে।

১৯৯৪ সালের ৫-১৩ সেপ্টেম্বর মিসরের কায়রোতে অনুষ্ঠিত যুগান্তকারী জনসংখ্যা ও উন্নয়নবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে (আইসিপিডি) বিশ্ব একমত হয় যে উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে মানুষ, তার অধিকার ও পছন্দ। প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার প্রবেশগম্যতায় তাৎপর্যময় উন্নতি, মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস এবং জেন্ডারসমতায় অগ্রগতি সাধনের বিষয়গুলোতে এ সম্মেলনে গুরুত্ব প্রদান করা হয়। ফলে গত ৩০ বছরে এসব ক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি ঘটেছে।

এ অগ্রগতির পেছনে যেটা চালিকা শক্তি বা নির্দেশক হিসেবে কাজ করেছে, তা হলো ‘উপাত্ত’। উন্নয়ন গতিপথে ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে অত্যাবশ্যকীয় হলো উপাত্তব্যবস্থা। এ ক্ষেত্রে উপাত্ত সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে গত ৩০ বছরে অধিকতর সামগ্রিক ও সুনির্দিষ্ট তথ্য সরবরাহে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। এটা বাংলাদেশসহ বিশ্বের দেশগুলোর উন্নয়ন পরিমাপ ও লক্ষ্য অর্জনে, মানুষের অধিকার ও পছন্দের পূর্ণতা আনয়নে ভূমিকা রাখছে।

উপাত্ত আসলে কী করে? এটা পরিবর্তন বুঝতে সহায়তা করে, নির্দেশ করে কোথায় পৌঁছাতে হবে, সমাজে কারা পিছিয়ে, সুরক্ষাহীন অবস্থায় কিংবা অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের বাইরে রয়েছে। উন্নয়নের জন্য বিশেষ করে দরকার বিভাজিত উপাত্ত। ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশগুলোর ১৭টি টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সাফল্য পরিমাপে ২৪৮টি সূচকে দরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক উপাত্ত।

টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ৯ বছর ইতিমধ্যে অতিক্রান্ত হয়ে গেছে, সামনে রয়েছে মাত্র ৬ বছর। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে মাত্র এক–তৃতীয়াংশ উপাত্ত পাওয়া গেছে, বাকি দুই–তৃতীয়াংশ অগ্রগতির মধ্যে রয়েছে কিংবা নেই। কোনো কোনো বিশেষ অভীষ্ট লক্ষ্যের ক্ষেত্রে এ হার অনেক বেশি। যেমন অভীষ্ট ১২ (পরিমিত ভোগ ও টেকসই উৎপাদন ধরন নিশ্চিত করা) এবং অভীষ্ট-১৪ (টেকসই উন্নয়নের জন্য সাগর, মহাসাগর ও সামুদ্রিক সম্পদের সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহার)-এর ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশের বেশি উপাত্ত নেই।

৩৫ শতাংশের বেশি উপাত্ত নেই অভীষ্ট ৫ (জেন্ডারসমতা অর্জন এবং নারী ও মেয়েদের ক্ষমতায়ন), অভীষ্ট ১০ (অন্ত ও আন্তদেশীয় অসমতা কমিয়ে আনা), অভীষ্ট ১৩ (জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব মোকাবিলায় জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ) ও অভীষ্ট ১৫–এ (স্থলজ বাস্তুতন্ত্রের পুনরুদ্ধার ও সুরক্ষা প্রদানে টেকসই ব্যবহারে পৃষ্ঠপোষণ, টেকসই বন ব্যবস্থাপনা, মরুকরণ প্রক্রিয়ার মোকাবিলা, ভূমির অবক্ষয় রোধ ও ভূমি সৃষ্টি প্রক্রিয়ার পুনরুজ্জীবন এবং জীববৈচিত্র্য হ্রাস প্রতিরোধ)।

জনসংখ্যা বাড়ানো বা কমানো নয়, বরং সবার সুযোগ গ্রহণে সমান প্রবেশগম্যতা ও সুযোগকে কাজে লাগাতে প্রতিবন্ধকতা দূর করা এবং প্রান্তিক বা পিছিয়ে রয়েছে এমন জনগোষ্ঠীর (যেমন নারী, যুব, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ও স্থানান্তরিত) দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়াটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত। জনমিতিক সহনশীলতা নিশ্চিত করতে হলে সবার মানবাধিকার, ব্যক্তির প্রজননস্বাস্থ্য অধিকার ও পছন্দকে গুরুত্ব দিতে হবে।

বাংলাদেশে ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সূচকের সংখ্যায় অগ্রগতি হলেও (২৩২ থেকে ২৪৮) হালনাগাদ বা লভ্য সূচকীয় উপাত্তের সংখ্যা হ্রাস পায়। তবে ২০২৪ সালে এসে তা বৃদ্ধি পায়। স্থানীয় পর্যায়ে টেকসই উন্নয়নকে পৌঁছে দিতে বাংলাদেশ সরকার ২০১৮ সাল থেকে ৩৯+১ অগ্রাধিকার সূচক নির্ধারণ করেছে। তবে ৩৯টির মধ্যে ১৫টির এখনো উপাত্ত পাওয়া যায়নি। অনলাইন ট্র্যাকিংয়েও তথ্য জটিলতা রয়েছে। জেলা-উপজেলা এমনকি আরও নিম্নস্তরে এসব উপাত্ত পাওয়া দরকার। অনেক ক্ষেত্রেই উপাত্ত আংশিকভাবে রয়েছে।

উপাত্ত সংগ্রহে বাংলাদেশের অগ্রগতি থাকলেও অগ্রগতির পাশাপাশি সীমাবদ্ধতাও দৃষ্টিগোচর হয়েছে। নির্ভরযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উপাত্ত নিয়ে, বিশেষ করে উপাত্তের লভ্যতা, গুণগত দিক, প্রবেশাধিকার ও ব্যবহার নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে সুরক্ষাহীন মানুষ এবং প্রতিবন্ধী মানুষের সঠিক উপাত্ত জানা জরুরি।

কিন্তু সর্বশেষ জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ অনুযায়ী যে তথ্য জানা গেছে, তা গবেষক ও নীতিনির্ধারক মহলে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য উঠে আসেনি। ফলে অন্তর্ভুক্তিমূলক উপাত্তের জন্য একাধিক সূত্রকে বিবেচনায় নেওয়ার বিকল্প নেই এবং সমতা বজায়ে কার্যকর কর্মসূচি বা পদক্ষেপ গ্রহণে উপাত্তকে বিভিন্ন বিভাজনে ও মাত্রায় দেখতে হবে।

একইভাবে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ৩–এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হলো মাতৃমৃত্যুর হার। এ হার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এসভিআরএস-প্রতিবেদনে প্রতিবছর উল্লেখ করা হয়, এমনকি সরকার নীতি কৌশলেও তা ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু নমুনাগত ঘাটতির কারণেএ উপাত্তটি গুণগত বা সঠিক চিত্র তুলে ধরছে না। ফলে আমাদের বিদ্যমান নিয়মিত ও গুণগত উপাত্তকে বিবেচনায় নিতে হবে।

উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশ জনমিতিক ও স্বাস্থ্য জরিপ-২০২২ অনুযায়ী, বাংলাদেশে কিশোরী মাতৃত্ব ও বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী মেয়েরা এখনো অধিকতর ঝুঁকিতে রয়েছে। ফলে সুরক্ষাহীন এ রকম জনগোষ্ঠীকে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্তর্ভুক্তিমূলক উপাত্তের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। যেমনটি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো সর্বশেষ জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এ হিজড়া জনগোষ্ঠীকে গণনায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।

১৯৯৪ সালের আইসিপিডি সম্মেলনে বিশ্বনেতারা নির্ভরযোগ্য, সময়মতো, সাংস্কৃতিকভাবে প্রাসঙ্গিক উপাত্ত—জেন্ডার, জাতিগত এবং আরও অন্যান্য কারণে বিভাজিত উপাত্তের জন্য তাগিদ দিয়েছিলেন। তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি সে অনুযায়ী ঘটেনি।

এখনো সব মানুষ, সম্প্রদায় এবং তাদের চাহিদা বিবেচনায় কিংবা সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনা যায়নি। জনসংখ্যা উপাত্তব্যবস্থা, সবার জন্য নিরাপদ উপাত্ত সংগ্রহ এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যথার্থ বিনিয়োগ হয়নি। নতুন ও উদ্ভাবনী উপাত্ত উপকরণ অদৃশ্য ইস্যুকে দৃশমান করছে বটে, তবে এগুলোর প্রয়োগে সতর্কভাবে ব্যবস্থাপনা করতে হবে। ব্যক্তির অধিকার নিশ্চিতকরণে তথ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা যথাযথ সুরক্ষিত রাখতে হবে।

মনে রাখতে হবে, উপাত্ত এককভাবে সমগ্র দৃশ্য তুলে ধরতে পারে না, তাতে পক্ষপাত ঘটতে পারে। ফলে পক্ষপাত ও অসমতা দূরীকরণে আমাদের উপাত্ত সংগ্রহের প্রক্রিয়াকে অন্তর্ভুক্তিমূলক, সমতাভিত্তিক এবং স্বচ্ছ করতে হবে। আমাদের দরকার সংখ্যার পেছনে তাকানো এবং সংখ্যার চেয়ে অধিকার ও পছন্দকে অগ্রাধিকার প্রদান করা। কম বা বেশি জনসংখ্যা নয়, বরং সবার ক্ষেত্রে সমসুযোগ ও সমসম্ভাবনা নিশ্চিত করতে হবে, প্রতিবন্ধকতা পরিহার বা নির্মূল করতে হবে।

 প্রান্তিক বা সুবিধাবঞ্চিত মানুষ, যেমন নারী ও মেয়ে, তরুণ-যুব গোষ্ঠী, বয়স্ক জনগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী ও স্থানান্তরিত জনগোষ্ঠীকে বিবেচনায় নিতে হবে। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য জেন্ডার, এথনিসিটি, শ্রেণি, ধর্ম, প্রতিবন্ধিতাসহ অন্যান্য কারণভিত্তিক গুণগত মানসম্পন্ন উপাত্ত তৈরি করতে হবে। কার্যকর বহুমুখী অংশীদারত্বে, সমন্বয়ে ও একীকরণে সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।

গুণগত উপাত্তের ভিত্তিতে টেকসই উন্নয়ন অগ্রগতি পরিমাপ করতে হবে। জনসংখ্যা ও উন্নয়নসংক্রান্ত জাতীয় নীতি কৌশল আইসিপিডি এবং টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডার ভিত্তিতে সংস্কার ও পরিমার্জন করতে হবে। জাতীয় উপাত্তব্যাংক বা তথ্যব্যাংক গড়তে হবে, যেখানে থাকবে প্রাসঙ্গিক উপাত্তের সমাহার ও বিভাজন এবং তা সংযুক্ত থাকবে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ট্রাকারের সঙ্গে।

কোথায় গুরুত্ব বেশি দিতে হবে, তা অন্তর্ভুক্তিমূলক উপাত্তের বিবেচনায় সঠিকভাবে চিহ্নিত করা এবং অধিকতর বিনিয়োগ করতে হবে সহনশীল ও সমতাপূর্ণ ভবিষ্যতের জন্য। এ ক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজন দৃঢ় রাজনৈতিক অঙ্গীকার, কার্যকর ও যুগোপযোগী বাস্তবায়ন।

উপাত্তব্যবস্থা শক্তিশালীকরণে এক ডলার বিনিয়োগে ৩২ ডলারের অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়া যায় (সূত্র: সেপ্টেম্বর ২০২২-এ প্রকাশিত ‘টেকসই উন্নয়ন উপাত্তের জন্য বৈশ্বিক অংশীদারত্ব’ শীর্ষক প্রতিবেদন)। ফলে জাতিসংঘ উপাত্ত ও পরিসংখ্যান খাতে দেশগুলোকে ২০৩০ সালের মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে ৫০ শতাংশ আর্থিক বিনিয়োগ এবং একই সময় দাতাগোষ্ঠীকে তাদের বৈদেশিক সাহায্যের ক্ষেত্রে কমপক্ষে দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে (সূত্র: টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট প্রতিবেদন ২০২৩)।

লক্ষণীয় যে বিশ্বব্যাপী গত ৩০ বছরে যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অসাধারণ অগ্রগতি ঘটেছে। এর অধিকাংশই সম্ভব হয়েছে অধিকতর সুপরিকল্পনা এবং পরিবীক্ষণ সহায়ক পরিবেশে উপাত্তের সরবরাহ ও বিশ্লেষণের বৃদ্ধিতে। বর্তমানে জাতিসংঘের বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতি ২০২৪ প্রতিবেদন অনুযায়ী, পৃথিবীর জনসংখ্যা পৌঁছে গেছে ৮ দশমিক ১১ বিলিয়নে। একই সূত্রে বাংলাদেশের জনসংখ্যাও এখন পৌঁছে গেছে ১৭৪ দশমিক ৭ মিলিয়নে।

এটি একটি বড় সংখ্যা, বড় চ্যালেঞ্জ এবং বড় সম্ভাবনার। এ ক্ষেত্রে মানুষের জীবনের অভিজ্ঞতাগুলোকে কেবল একক পরিসংখ্যানে বা উপাত্তের ভারে প্রকাশ করা যায় না; বরং বড় আকারের এ জনসংখ্যা হতে পারে আশার বন্ধন এবং যে যে অবস্থায় রয়েছে, তাদের বৈচিত্র্যকে গণনায় অন্তর্ভুক্তির মধ্য দিয়ে আইসিপিডির আহ্বানে শান্তিময় ও সমৃদ্ধিময় ভবিষ্যৎ সৃষ্টি করা সম্ভব।

জনসংখ্যা বাড়ানো বা কমানো নয়, বরং সবার সুযোগ গ্রহণে সমান প্রবেশগম্যতা ও সুযোগকে কাজে লাগাতে প্রতিবন্ধকতা দূর করা এবং প্রান্তিক বা পিছিয়ে রয়েছে এমন জনগোষ্ঠীর (যেমন নারী, যুব, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ও স্থানান্তরিত) দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়াটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত। জনমিতিক সহনশীলতা নিশ্চিত করতে হলে সবার মানবাধিকার, ব্যক্তির প্রজননস্বাস্থ্য অধিকার ও পছন্দকে গুরুত্ব দিতে হবে।

জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) ‘বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতি ২০২৪’ প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বে প্রান্তিক মানুষ বা জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশও এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। যেমন স্বাস্থ্যসেবার প্রবেশগম্যতায় অসমতা রয়েছে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট, যেমন মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাসে রয়েছে চ্যালেঞ্জ।

‘পপুলেশন এইজিং’, জলবায়ুর পরিবর্তন, দ্বন্দ্ব ও সংকট সব ক্ষেত্রেই অন্তর্ভুক্তিমূলক উপাত্ত এখন অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। যারা পিছিয়ে রয়েছে, তাদের চাহিদার ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে এগুলো ব্যবহার করতে হবে। কেননা সহনশীল ভবিষ্যৎ গড়তে অন্তর্ভুক্তিমূলক উপাত্ত হলো উন্নয়ন–অগ্রগতির হাতিয়ার।

  • ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম, অধ্যাপক ও সাবেক চেয়ারম্যান, পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়