অপপ্রচার রোধে প্রবাসীদের যেভাবে যুক্ত করা যেতে পারে

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এসে দাঁড়িয়ে আছে। অভিবাসী এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য একটি শক্তিশালী বার্তা দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে তাদের অর্থনৈতিক অবদান শুধু রেমিট্যান্স পাঠানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্যও অপরিহার্য। অপপ্রচার রোধে প্রবাসীদের কীভাবে যুক্ত করা যায়, তা নিয়ে লিখেছেন মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন শিকদার

বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে তাঁর প্রথম ভাষণে বাংলাদেশের অভিবাসী কর্মী ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রবাসী (ডায়াসপোরা) সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রবাসীরা শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নে নয়, দেশের নানা ঐতিহাসিক আন্দোলনেও ভূমিকা রেখেছেন। পাশাপাশি তিনি তাদের আহ্বান জানিয়েছেন আরও বেশি বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিকে মজবুত করতে। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে মিথ্যা তথ্য এবং ভুয়া খবরের বিরুদ্ধে লড়াই একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

ভারতের নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠী থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অসত্য প্রচারণা চালানো হচ্ছে, যা দেশের স্থিতিশীলতা এবং ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এই পরিস্থিতিতে প্রবাসী ও অভিবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে একটি শক্তিশালী যোগাযোগ তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ এখন এমন সময়ে দাঁড়িয়েছে, যখন তার প্রবাসী এবং অভিবাসী কর্মীরা শুধু রেমিট্যান্সের জন্য নয়; বরং তথ্য প্রচার এবং আন্তর্জাতিক লবিংয়ের মাধ্যমে দেশের সুরক্ষা ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। 

ভুলে গেলে চলবে না ড. ইউনূসসহ বাংলাদেশি প্রবাসীরা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অর্থ সংগ্রহ, আন্তর্জাতিক লবিং এবং বৈশ্বিক জনমত গঠনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। অতীতে আমরা দেখেছি, অনেক দেশ তাদের সংকট কাটিয়ে উঠতে প্রবাসী সম্প্রদায়ের সহায়তা নিয়েছে।

কীভাবে অন্য দেশগুলো প্রবাসীদের সহায়তা পেয়েছে

প্রবাসী সম্প্রদায়ের সহযোগিতা যেকোনো দেশের জন্য কতটা কার্যকর হতে পারে, তা আমরা বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে পারি। উদাহরণস্বরূপ ফিলিপাইনের কথা বলা যেতে পারে। প্রবাসীদের সহযোগিতায় একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরি করেছে ফিলিপাইন। প্রবাসী ফিলিপিনোরা শুধু রেমিট্যান্সই পাঠাননি; বরং তাঁদের দেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছেন। ফিলিপাইন সরকার তাদের প্রবাসীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখে এবং তাদের জন্য বিমা, প্রশিক্ষণ এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

■ ড. ইউনূসসহ বাংলাদেশি প্রবাসীরা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অর্থ সংগ্রহ, আন্তর্জাতিক লবিং এবং বৈশ্বিক জনমত গঠনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ■ প্রবাসী ও অভিবাসী কর্মীরা শুধু রেমিট্যান্সের জন্য নয়; বরং তথ্য প্রচার এবং আন্তর্জাতিক লবিংয়ের মাধ্যমে দেশের সুরক্ষা ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। 

দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসীদের মাধ্যমে উন্নয়নের জন্য উদাহরণ তৈরি করেছে। দেশটির যুদ্ধ–পরবর্তী সময়ে প্রবাসী সম্প্রদায়ের পাঠানো অর্থ এবং আন্তর্জাতিক লবিংয়ের মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়া তার অর্থনৈতিক পুনর্গঠন সম্পন্ন করেছে। প্রবাসী কোরিয়ানরা তাদের দেশে বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। 

লেবানন একটি দীর্ঘ সময় ধরে রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। এ সময়ে তাদের প্রবাসী সম্প্রদায় আর্থিক সহায়তা এবং তথ্য প্রচারের মাধ্যমে দেশের পাশে দাঁড়িয়েছে। লেবানন সরকার প্রবাসী সম্প্রদায়কে সমন্বিত করার জন্য একটি কেন্দ্রীভূত প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে, যা অর্থনীতি এবং কূটনৈতিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। 

এই উদাহরণগুলো আমাদের দেখায় যে প্রবাসী সম্প্রদায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এবং সমন্বয় কীভাবে একটি দেশের জন্য শক্তিশালী সম্পদ হতে পারে। বাংলাদেশেরও এখন সময় এসেছে তার প্রবাসী (ডায়াসপোরা) এবং অভিবাসী সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্ককে নতুনভাবে শক্তিশালী করার।

অন্তর্বর্তী সরকারের অংশগ্রহণ কেন গুরুত্বপূর্ণ

প্রবাসী ও অভিবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ শুধু একটি আনুষ্ঠানিক সম্পর্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। তাঁদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা এবং তাঁদের সমস্যাগুলো শোনার মাধ্যমে তাঁদের মনে এই অনুভূতি তৈরি করতে হবে যে তাঁরা দেশের শক্তির অংশ। ড. ইউনূস যদি প্রবাসীদের সঙ্গে একটি সরাসরি অনলাইন সেশনের মাধ্যমে কথা বলেন, তাহলে এটি তাঁদের মনে একটি গভীর প্রভাব ফেলবে। তাঁরা মনে করবে যে সরকার তাদের কথা শুনছে এবং তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এটি তাঁদের মধ্যে একধরনের ক্ষমতায়ন অনুভূতি তৈরি করবে এবং তাঁদের দেশের জন্য কাজ করতে অনুপ্রাণিত করবে। 

একইভাবে অভিবাসী ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ অভিবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে সরকারের সরাসরি সংযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অভ্যন্তরীণ অভিবাসী শ্রমিকেরা দেশের অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ। তাঁরা পোশাক খাত, নির্মাণশিল্প, কৃষি ও সেবামূলক বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন। এই শ্রমিকদের অবদান দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে অপরিসীম; কিন্তু তাঁদের সমস্যাগুলো প্রায়ই উপেক্ষিত হয়।

প্রবাসীদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে সুসংগঠিত কৌশল

বাংলাদেশ সরকারকে এ বিষয়ে একটি সুসংগঠিত কৌশল গ্রহণ করতে হবে। প্রথমত, প্রবাসীদের সঙ্গে সরকারের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। বাংলাদেশি প্রবাসীরা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং পশ্চিমা দেশগুলোতে বসবাসরত প্রবাসীরা, বৈশ্বিক কূটনীতি এবং তথ্য প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। 

এই দেশগুলোতে প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য এবং তাদের মধ্যে অনেকেই শিক্ষা, অর্থনীতি এবং সামাজিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছেন। সরকার যদি এই প্রবাসীদের সঙ্গে একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করতে পারে, তাহলে তাঁদের মাধ্যমে বাংলাদেশের পক্ষে একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক লবিং তৈরি করা সম্ভব। তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ, তথ্য বিনিময় এবং বাংলাদেশি দূতাবাসের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই লক্ষ্যে পৌঁছানো যেতে পারে।

দ্বিতীয়ত, প্রবাসীদের মধ্যে অনেকেই গণমাধ্যমের কাছে মতপ্রকাশ করতে চান বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশি দূতাবাসগুলো এই প্রবাসীদের প্রশিক্ষণ এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে পারে, যাতে তাঁরা সত্য প্রচার ও মিথ্যা তথ্যের মোকাবিলা করতে সক্ষম হযন। প্রবাসীদের জন্য একটি বিশেষ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা যেতে পারে, যেখানে তাঁরা তথ্য যাচাই এবং প্রচারের কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারবেন। এটি প্রবাসীদের মধ্যে একটি ঐক্যের পরিবেশ তৈরি করবে এবং তাঁরা দেশকে রক্ষার জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসেবে কাজ করবেন।

তবে শুধু প্রবাসীদের প্রশিক্ষণই যথেষ্ট নয়। সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে যে দূতাবাসগুলো সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। দূতাবাসগুলোকে কূটনৈতিক সম্পর্কের পাশাপাশি প্রবাসীদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করতে হবে। এটি কেবল প্রবাসীদের ক্ষমতায়নই করবে না; বরং দেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় দূতাবাসগুলোকে আরও কার্যকর করে তুলবে। 

অনেক ক্ষেত্রে প্রবাসী শ্রমিকেরা মিথ্যা তথ্য এবং ঘৃণার ফাঁদে পড়ে যান। তাদের এই ফাঁদ থেকে মুক্ত করতে সরকার এবং দূতাবাসের যৌথ উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই উদ্যোগগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রবাসীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ এবং প্রশিক্ষণ প্রদান।

তৃতীয়ত, অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে অনেকেই নিরক্ষর বা আধা শিক্ষিত এবং তাঁরা তথ্য যাচাই করার সক্ষমতা রাখেন না। তাঁদের জন্য সহজ ভাষায় প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করা উচিত, যাতে তাঁরা জানতে পারেন, কীভাবে মিথ্যা প্রচার এড়ানো যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে দূতাবাসগুলো একটি কেন্দ্রীভূত তথ্যভান্ডার তৈরি করতে পারে, যেখানে প্রবাসীরা মিথ্যা তথ্য এবং বিভ্রান্তি সম্পর্কে সচেতন হতে পারবেন। একই সঙ্গে অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশ্বাস তৈরি করতে দূতাবাসগুলো নিয়মিত আলোচনা এবং কর্মশালার আয়োজন করতে পারে।

চতুর্থত, বাংলাদেশি দূতাবাসগুলো অন্য দেশের দূতাবাস বা প্রবাসী সম্প্রদায়ের সঙ্গে সহযোগিতা করতে পারে। বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোকে ভারতের প্রবাসী সম্প্রদায় এবং ভারতীয় অভিবাসীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের উদ্যোগ নিতে হবে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ইতিহাস, ভূগোল ও সংস্কৃতিগত যোগাযোগ গভীর হলেও বর্তমানে ভুয়া তথ্যে ও অপপ্রচারের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে।

এই বিভ্রান্তি মোকাবিলায় ভারতীয় প্রবাসী সম্প্রদায়কে সত্য জানানো গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো ভারতীয় প্রবাসীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে সরাসরি আলোচনা আয়োজন করতে পারে। এই আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশকে নিয়ে প্রচারিত মিথ্যা তথ্যের প্রকৃতি এবং তা যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, সেটি ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।

পঞ্চমত, বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো কেবল তথ্য প্রচারে নয়; বরং ভুয়া খবর এবং বিভ্রান্তি মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যান্য দেশের দূতাবাস এবং প্রবাসী সম্প্রদায়ের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি তথ্য প্রচারকাঠামো তৈরি করা যেতে পারে। বাংলাদেশি প্রবাসীদের কণ্ঠস্বর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও দৃঢ় করতে হবে। 

একটি আন্তর্জাতিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা জরুরি, যেখানে বাংলাদেশি প্রবাসীরা শুধু তাঁদের নিজস্ব সম্প্রদায় নয়, অন্যান্য দেশের প্রবাসী সম্প্রদায়ের কাছেও সত্য তথ্য প্রচারের কাজ করতে পারবেন। এভাবে প্রবাসীদের মাধ্যমে একটি কৌশলগত শক্তি তৈরি করা সম্ভব, যা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারের মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

সপ্তমত, বাংলাদেশি প্রবাসী যুবসমাজ এবং ছাত্রদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হতে পারে। তারা প্রবাসে বসবাস করলেও তাদের শিকড় বাংলাদেশে সংযুক্ত। তাঁদের জন্য এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা উচিত, যেখানে তাঁরা তাঁদের মেধা ও দক্ষতাকে দেশের জন্য কাজে লাগাতে পারেন। প্রবাসী যুবসমাজ যদি দেশের প্রতি তাদের দায়িত্ব অনুভব করে, তবে এটি শুধু তাদের ব্যক্তিগত উন্নয়ন নয়; বরং দেশের উন্নয়নের জন্যও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

হুন্ডি: মিথ্যা প্রচার এবং অবৈধ কার্যক্রমের অর্থায়ন

হুন্ডি শুধু দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় হুমকি নয়, এটি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্যও ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রতিবছর
১০-১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হুন্ডির মাধ্যমে দেশের বাইরে চলে যায়। এই অর্থ কেবল দেশের বৈধ অর্থনীতির বাইরে চলে যাচ্ছে না; বরং এটি ভারত ও মিয়ানমারের অবৈধ মাদক, মানব পাচার, স্বর্ণ পাচার এবং মিথ্যা তথ্য প্রচারের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। 

বিশেষ করে হুন্ডির মাধ্যমে যে অর্থ ভারত ও মিয়ানমারে প্রবাহিত হয়, তা সরাসরি ভুয়া খবর ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য অর্থায়নে ব্যবহার করা হচ্ছে। মিথ্যা তথ্য এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার পেছনে এই অর্থ একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। যাঁরা দেশের জন্য কঠোর পরিশ্রম করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেন, তাঁরা জানেন না যে তাঁদের উপার্জিত অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে অবৈধ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।

অভিবাসী শ্রমিকদের এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্পষ্ট বার্তা দিতে হবে যে তাঁদের উপার্জিত অর্থ বৈধ চ্যানেলে পাঠালে তা দেশের উন্নয়ন এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ব্যবহৃত হবে। তবে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠালে তা অনৈতিক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং দেশের প্রতি দায়বদ্ধতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

সরকার ও বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোকে এই বিষয়ে বড় আকারে সচেতনতা কর্মসূচি চালু করতে হবে। তাদের জানাতে হবে যে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠানো বন্ধ করে বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠালে তা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সঠিক অবস্থান রক্ষায় সাহায্য করবে।

শেষ কথা

বাংলাদেশ এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এসে দাঁড়িয়ে আছে। অভিবাসী ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য একটি শক্তিশালী বার্তা দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে তাদের অর্থনৈতিক অবদান শুধু রেমিট্যান্স পাঠানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্যও অপরিহার্য। এ রকম অবস্থায়, অভিবাসী ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক শুধু সময়ের দাবি নয়, এটি একটি জাতীয় প্রয়োজন। এটা বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন এবং স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে; তাঁদের এই অবদান দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি শক্তিশালী ও স্থিতিশীল বাংলাদেশ নির্মাণে সহায়ক হবে।

মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন শিকদার শিক্ষক ও সদস্য, সেন্টার ফর মাইগ্রেশন স্টাডিজ, সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এসআইপিজি), নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়