২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

সংকটকালের নতুন অর্থমন্ত্রীর ১০ করণীয়

নতুন সরকারে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পেশাদার কূটনীতিক ও অর্থনীতির শিক্ষক আবুল হাসান মাহমুদ আলী। দেশের আর্থিক খাতকে আবার শক্ত অবস্থানে আনা তাঁর জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ বৈকি। তবে সাবেক অর্থমন্ত্রীর ভুল সিদ্ধান্ত থেকে শিক্ষা নিয়ে সঠিক পদক্ষেপ নিলে আশা করা যায়, অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে।

আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে নিয়োগ দিয়েছে। তিনি আজ থেকে ৬০ বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই বছর শিক্ষকতা করেছেন। এরপর দীর্ঘদিনের পেশাদার এই কূটনীতিক দুই যুগ আগে রাজনীতিতে আসেন।

মাহমুদ আলী নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়েছেন। এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন। সব মিলিয়ে তাঁর জীবন বর্ণাঢ্য এবং অর্থনীতি, কূটনীতি ও রাজনীতির মিশ্রণে সমৃদ্ধ। তাঁর মতো মানুষকে অর্থমন্ত্রী বানানো প্রধানমন্ত্রীর বিজ্ঞোচিত সিদ্ধান্ত। অনেক দিন পর অর্থনীতির শিক্ষায় শিক্ষিত একজন মানুষকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ দেওয়ায় মানুষের শ্রদ্ধা ও প্রত্যাশা বেড়েছে। অর্থমন্ত্রীকে অভিনন্দন!

আরও পড়ুন

মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও প্রত্যাশা

অর্থমহলে মাহমুদ আলীর নিয়োগ নিয়ে দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। কেউ কেউ সংশয় প্রকাশ করেছেন, এই বয়সে অর্থমন্ত্রীর মতো এত বিশাল দায়িত্ব তিনি কী করে সামাল দেবেন। অন্যরা বলছেন, গত আমলে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি থাকাকালে খুব একটা কর্মতৎপরতা দেখাতে পারেননি কিংবা কোনো অনিয়মের প্রতিবাদে উচ্চবাক ছিলেন না।

আসলে মন্ত্রী হলেই বেশি কাজ করতে হয় না। নেতৃত্ব ও নৈতিকতার দিকনির্দেশনা দিয়ে বেশি কাজ করিয়ে নিতে হয়। মনমোহন সিং কিংবা মাহাথির মোহাম্মদ এর জ্বলন্ত প্রমাণ। দ্বিতীয়ত, আমাদের দেশে সংসদীয় কমিটিগুলো অনেকটা পাণ্ডবদের মতো অজ্ঞাতবাসে থাকে। খুব একটা কার্যকর ভূমিকা রাখে না বা রাখতে দেওয়া হয় না। আশা করব, মাহমুদ আলী এই দুই সংশয় অপ্রমাণ করে এবং একজন কূটনৈতিক আমলার ভাবমূর্তি পেছনে ফেলে পুরো অর্থব্যবস্থার একজন ‘সুনীতির সাহসী নেতা’ হিসেবে আবির্ভূত হবেন।

আরও পড়ুন
বর্তমান গভর্নর কিছুটা স্বাধীনভাবে কাজ করছেন বলে সাবেক অর্থমন্ত্রী শেষ দিকে খুব একটা জুৎ করতে পারেননি। মূল্যস্ফীতিও কিছুটা নামতে শুরু করেছে, যদিও এর পেছনে বিশ্ববাজারে তেল ও পণ্যমূল্যের পতন বড় ভূমিকা রেখেছে। বর্তমান অর্থমন্ত্রী কেন্দ্রীয় ব্যাংককে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিলে ২০২৫ অর্থবছর শেষে মূল্যস্ফীতিকে সাড়ে পাঁচ ভাগে নামিয়ে আনা কঠিন হবে না। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারেও সে রকম লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

সাবেক অর্থমন্ত্রীর প্রত্যাশিত বিদায়

আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে অর্থমন্ত্রী করা হবে, বিষয়টি অনুমানের মধ্যে আসেনি। তবে আগের অর্থমন্ত্রীর যে বিদায়ঘণ্টা বেজে গেছে, সেখানে কোনো চমক ছিল না। আওয়ামী লীগের তৃতীয় মেয়াদে (২০১৯-২৩) তিনি অর্থ খাতকে এককথায় বিপর্যস্ত করে গেছেন। ঘুরেফিরে কোভিড আর পুতিনের ইউক্রেন আক্রমণের ওপর দোষ চাপিয়েছেন, যা গ্রহণযোগ্য নয়।

তবে ধন্যবাদ, তিনি চতুর্দশ শতাব্দীর প্লেগ মহামারির ওপর দোষ চাপাননি। সাবেক ‘সাহসী’ অর্থমন্ত্রী হিসাববিদ হয়েও অর্থনীতিতে একের পর এক ‘নবতত্ত্ব’ উপহার দিয়ে গেছেন। যেমন চাপ খাওয়া সুদহার তত্ত্ব, রেমিট্যান্সের প্রণোদনা তত্ত্ব, খেলাপি ঋণের নবসংজ্ঞায়ন, রিজার্ভ নিয়ে হতাশামুক্তি ইত্যাদি। সবই তাঁর মনগড়া, শেষতক কোনোটিই ফল দেয়নি। সংকটকে ঘনীভূত করেছে মাত্র। অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নতি সত্ত্বেও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে।

বিদায়ের আগের দিনও বিদায়ী অর্থমন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতি ছাড়া অর্থনীতি চলে না। এর অর্থ বোঝা গেল না। আরও বললেন, বাজারে কোনো জিনিস অবিক্রীত থাকছে না। শুনে মনে হলো, অষ্টাদশ শতাব্দীর অ্যাডাম স্মিথ বুঝি বাংলার মাটিতে নেমে এলেন এবং ‘মার্কেট ক্লিয়ারিং কন্ডিশন’ পুনর্ব্যক্ত করলেন।

তিনি দুঃসাহসী বলেই বলতে পেরেছেন, দেশের অবস্থা নিয়ে সমালোচক অর্থনীতিবিদেরা আসলে অর্থনীতি বোঝেন না। একজন হিসাববিদ হয়েও অর্থনীতিবিদদের যে সনদ তিনি দিলেন, তাতে অনেক অর্থনীতিকেরা শেষতক না খেয়ে মরেন কি না, সেই ভয়ে ছিলেন। তাঁর বিদায়ে শঙ্কা কেটে গেছে।

আরও পড়ুন

ভুল শোধরানোই কঠিন কাজ

শাস্ত্রে বলে, ‘গতস্য শোচনা নাস্তি।’ ইংরেজি প্রবাদ আছে—‘মৃত ঘোটকের জন্য কেঁদো না।’ কিন্তু বর্তমান অর্থনীতির করণীয় বুঝতে হলে সর্বাগ্রে গত পাঁচ বছরের ভুলগুলো বুঝতে হবে।

১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ বারবার বলেছে, এর আগের ২১ বছরের জঞ্জাল তাদের আগে পরিষ্কার করতে হয়েছে। এবার একইভাবে নতুন অর্থমন্ত্রীকে গত পাঁচ বছরের জঞ্জাল সরাতে কঠিন সময় পাড়ি দিতে হবে।

উন্নত দেশে গিয়ে প্রায় সবাইকে ‘ড্রাইভিং’ শিখতে হয়। ড্রাইভিং লাইসেন্সই সর্বজনস্বীকৃত পরিচয়পত্র। আমিও অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী হয়ে গাড়িচালনার প্রশিক্ষণ নিলাম। কিন্তু পরীক্ষা দিতে গিয়ে সুকুমার রায়ের গঙ্গারামের মতো পরপর তিনবার ফেল করলাম। আমার অপদার্থতা প্রকাশিত হয়ে যাওয়ায় অনেক বাঙালি আমার সঙ্গ ত্যাগ করল।

এবার ইনাশিয়া মেন্ডেস নামের এক নামকরা পর্তুগিজ প্রশিক্ষককে ধরলাম। ভদ্রমহিলা বললেন, ‘বাংলাদেশ থেকে তুমি যে ভুল ড্রাইভিং শিখে এসেছ, সেটা সারাতেই সমস্যা হচ্ছে।‘ নতুন অর্থমন্ত্রী প্রথমেই বিগত ভ্রান্তনীতির ধাক্কা খাবেন। অর্থব্যবস্থার প্রতিষ্ঠানগুলোকে তিনি দুর্বল করে গেছেন।

আরও পড়ুন

অর্থব্যবস্থার গুণগত অধঃপতন

কোনো অপনীতি সংখ্যাগত পরিবর্তন আনলে তা বদলানো সহজ; কিন্তু সাবেক অর্থমন্ত্রী অর্থ খাতে বিশেষত খেলাপি ঋণ ও মুদ্রা পাচারের ক্ষেত্রে যেসব পরিবর্তন এনেছেন, সেগুলো গুণগত বা চরিত্রগত অধঃপতন।

২০১৯ সালে প্রথম দায়িত্ব পেয়েই তিনি খেলাপি ঋণ কমাবেন বলে হুংকার দিয়ে শেষপর্যন্ত খেলাপি ঋণের সংজ্ঞাই পাল্টে দিলেন। ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ আজ মোট ঋণের ২৫ শতাংশ, যা আগে কখনো ছিল না। ঋণের ৫ থেকে ১০ ভাগ জমা দিলেই খেলাপি ঋণ রাতারাতি অখেলাপি হয়ে যাবে, এমন লুটেরাতুষ্টির কাজটি এক অর্থে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় চারিত্রিক অধঃপতন ঘটিয়েছে। অর্থনীতির ভাষায় একে বলে নৈতিক বিপর্যয় বা ‘মোর‍্যাল হ্যাজার্ড’।

অর্থনীতিবিদ আতিউর রহমান অলিগার্কি বা গোষ্ঠীবদ্ধ একচেটিয়াবাদকে অর্থনীতির হুমকি হিসেবে দেখছেন। তাঁর ভাষায় এর নাম কতিপয়তন্ত্র। ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যাংকের পরিচালকের মেয়াদ বাড়িয়ে ব্যাংকগুলোকে পারিবারিক দোকানে পরিণত করা হয়েছে। আধুনিক করপোরেট সংস্কৃতিকে ক্রমে ‘ফ্যামিলি ডাইনেস্টি’র দিকে ঠেলে দেওয়া আরেক নৈতিক অবক্ষয়। যৎসামান্য কর দিয়ে পাচার করা অর্থকেও জায়েজ বানানোর কসরত আরেক মোর‍্যাল হ্যাজার্ড। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। মাঝখান থেকে পেশাদার পাচারকারীরা সৎ মানুষের স্বীকৃতি পেয়ে গেছে।

অর্থনীতিবিদ মইনুল ইসলামের মতে, মুদ্রা পাচার এখন অর্থনীতির ১ নম্বর সমস্যা। অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাতের অনুধাবন যথার্থ, ঋণখেলাপি ও মুদ্রা পাচারকারীরা একই মুদ্রার এপিঠ–ওপিঠ। এই দুই শ্রেণিকেই সাবেক অর্থমন্ত্রী অপনীতির আশ্রয়ে বলবান করেছেন। সরকারের রাজস্ব দুর্বলতা এই দুই পাপের অনিবার্য ব্যাধি। এই ব্যাধি সারানো নতুন ‘চিকিৎসকের’ জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

আরও পড়ুন

অর্থমন্ত্রীর ১০টি করণীয় পদক্ষেপ

নতুন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব অনেক। সংকটে থাকা অর্থনীতির চাহিদাফর্দ কিছুটা কাটছাঁট করে যা দাঁড়ায় তা হচ্ছে—

১. অর্থনীতির নৈতিকতার জায়গাগুলো পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। খেলাপি ও মুদ্রা পাচার রোধে প্রয়োজনে কমিশন গঠন করে সুপারিশ
নিতে হবে।

২. মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে অগ্রাধিকার কাজ।

৩. কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানো অর্থমন্ত্রীর সাফল্যের প্রধান মাপকাঠি। এই জায়গায় সাবেক অর্থমন্ত্রী ক্রমাগত ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। আগামী দুটি বাজেটকে যথাসম্ভব সংকুচিত করা প্রয়োজন। নতুন করে বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া অযৌক্তিক।

৪. কর্মসংস্থান বাড়াতে বাকি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গড়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে নেতৃত্ব দিতে হবে।

৫. কেন্দ্রীয় ব্যাংককে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। বছরে দুবার গভর্নরকে অর্থ ও ব্যাংকিং–বিষয়ক সংসদীয় কমিটির কাছে জবাবদিহির বিধান থাকা প্রয়োজন। সেখানে আলোচ্য বিষয় জনসমক্ষে আনতে হবে।

আরও পড়ুন

৬. অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং ডিভিশন বিলুপ্ত করতে হবে। এর মাধ্যমে রাঘববোয়ালেরা ব্যাংকিং–ব্যবস্থার ওপর রাজনৈতিক চাপ বাড়িয়ে অর্থ খাতে দুরবস্থা সৃষ্টি করে। সঞ্চয় আহরণের পুরো কাজটি ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর ছেড়ে দিয়ে সরকারি সঞ্চয় অধিদপ্তর লুপ্ত করতে হবে।

৭. ২০২৫ সাল থেকে বাজেটকে পঞ্জিকাবর্ষের সঙ্গে যুক্ত করা প্রয়োজন। সেটিই হোক অর্থবছর। এতে উৎপাদন বাড়বে। কারণ, এর শুরু ও শেষ—দুটি পর্বেই শুষ্ক মৌসুম থাকায় এডিপির বাস্তবায়ন বাড়বে ও অপচয় কমবে। সৌদি আরব তাদের কাজকর্ম এত দিন পর ইংরেজি বছরে এনেছে। বাঙালিরা বিদেশি সাহায্যের কারণে উদ্ভট অর্থবছর চালু করেছিল। এখন আর বাজেট সাহায্যনির্ভর নয়। এই বেখাপ্পা অর্থবছর ধরে রাখার কোনো যুক্তি নেই।

৮. রেমিট্যান্সের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় কোনো প্রণোদনা দেবে না। সেটি কেন্দ্রীয় ব্যাংককেই সামাল দিতে হবে। ডলারের ন্যায্য বাজারমূল্য না দিয়ে শত প্রণোদনা দিয়েও কাজ হচ্ছে না।

৯. জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নেতৃত্বে একজন প্রতিমন্ত্রী থাকা প্রয়োজন। এখানে শুধু আমলা দিয়ে কাজ হবে না—বিষয়টি অর্থমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে বোঝাবেন।

১০. বাজেটকে সহজবোধ্য গণদলিলে পরিণত করতে হবে। বক্তৃতার ধরন পাল্টে একে ৩০ থেকে ৩৫ পৃষ্ঠায় আনতে হবে, যা সাধারণ মানুষের জন্য সুখপাঠ্য হয়। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে অল্প কথায় বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে হবে।

আরও পড়ুন

বেকারত্বের নীরব যন্ত্রণা

বেকারত্ব মধ্যরাতে হার্ট অ্যাটাকের মতো এক নীরব ঘাতক, যা বাইরে থেকে ধরা পড়ে না। আইএলও প্রবর্তিত বেকারত্ব পরিমাপের ভুল যন্ত্র দিয়ে যে বেকারত্বের হার দেখানো হচ্ছে, তা দেখলে জার্মানিও লজ্জা পাবে। ভাঙা থার্মোমিটারে জ্বর মাপলে চিকিৎসার অভাবে রোগী মারা যায়। বেকারত্বও সে রকম।

গত নির্বাচনে নেতাদের পেছনে ঘোরাফেরা করে তরুণদের হাতে কিছু টাকাপয়সা এসেছে। তা দিয়ে আর কয়দিন চলবে? প্রকট যুব বেকারত্ব দূর করতে না পারলে মাদক ও সন্ত্রাস দুই-ই বাড়বে।

কৃষি, শিল্প, শিক্ষা ও বাণিজ্য—মূলত এই চার মন্ত্রণালয়কে যুক্ত করে নতুন অর্থমন্ত্রীকে নিয়োগ বৃদ্ধির বিশেষ প্রকল্প হাতে নিতে হবে। কারিগরি ও আত্মকর্মসংস্থান বৃদ্ধির শিক্ষা নিয়ে নতুন শিক্ষামন্ত্রীকে কাজ শুরু করতে হবে। নির্মাণ ও পরিবহন খাতে প্রচুর ‘ফরমাল’ কাজ বৃদ্ধির সুযোগ বাড়াতে হবে। যান্ত্রিকীকরণের ফলে কৃষি খাতে ছদ্মবেশী বেকারদের আর লুকিয়ে থাকার জায়গা থাকছে না।

আরও পড়ুন

মূল্যস্ফীতি কীভাবে কমবে

আশা করব, অর্থনীতির শিক্ষক হিসেবে নতুন অর্থমন্ত্রী টেকসই প্রবৃদ্ধি ও ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়নের স্বার্থে কাজ করবেন। ধনিকগোষ্ঠীকে দায়িত্ববোধে উদ্বুদ্ধ করে তাদের রাজস্ব বৃদ্ধির কাজে শরিক করবেন। তাদের করবৃদ্ধিই বর্তমানে মূল্যস্ফীতি কমানোর সবচেয়ে কার্যকর ওষুধ। এতে রাজস্ব সক্ষমতা বাড়ে। ব্যাংক থেকে কম ঋণ নিতে হয় কিংবা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে টাকা ছাপাতে বাধ্য করতে হয় না। এই বিপজ্জনক কাজটি গত অর্থমন্ত্রী করেছেন ঠান্ডা মাথায়।

বর্তমানের উচ্চ মূল্যস্ফীতির স্থিতি বহুলাংশে এই অবিমৃশ্যকারী টাকা ছাপানোর অনিবার্য পরিণতি। এটি উচ্চ রক্তচাপের রোগীর শরীরে লবণ ঢুকিয়ে দেওয়ার মতো কাজ।

আরও পড়ুন

মূল্যস্ফীতি কমাতে সামগ্রিক চাহিদা দুই পথে কমাতে হয়। মুদ্রানীতিতে সুদহার বাড়িয়ে ঋণপ্রবাহে লাগাম টানতে হয়। অন্যদিকে রাজস্বনীতিকে কর বাড়িয়ে বড়লোকের ভোগবিলাসের ঐরাবতকে কষনি দিতে হয়। সাবেক অর্থমন্ত্রী এই দুই ক্ষেত্রেই ঠিক উল্টো কাজটি করেছেন। মুদ্রানীতির উল্টো কাজটি সাবেক বৈষ্ণব গভর্নরকে দিয়ে করিয়েছেন।

বর্তমান গভর্নর কিছুটা স্বাধীনভাবে কাজ করছেন বলে সাবেক অর্থমন্ত্রী শেষ দিকে খুব একটা জুৎ করতে পারেননি। মূল্যস্ফীতিও কিছুটা নামতে শুরু করেছে, যদিও এর পেছনে বিশ্ববাজারে তেল ও পণ্যমূল্যের পতন বড় ভূমিকা রেখেছে।

বর্তমান অর্থমন্ত্রী কেন্দ্রীয় ব্যাংককে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিলে ২০২৫ অর্থবছর শেষে মূল্যস্ফীতিকে সাড়ে পাঁচ ভাগে নামিয়ে আনা কঠিন হবে না। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারেও সে রকম লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

  • ড. বিরূপাক্ষ পাল অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক অ্যাট কোর্টল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র