পিতা-মাতার খেদমত অন্যতম ইবাদত। পিতা-মাতার খেদমতের মাধ্যমে মানুষ জান্নাত লাভ করেন। রমজান মাস নাজাতের মাধ্যম, পিতা-মাতা জান্নাতের বাহন। যাঁরা পিতা-মাতার খেদমত থেকে বঞ্চিত হলেন, তাঁরা আল্লাহ তাআলার রহমত থেকে বঞ্চিত হলেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমার রব এই ফয়সালা দিয়েছেন, আল্লাহ ছাড়া কারও ইবাদত করবে না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে। তাদের কোনো একজন বা উভয়জন যদি বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে (বিরক্তিতে) তাদের উফ বা উহ শব্দটিও বলবে না এবং তাদের ধমক দেবে না।
বরং তাদের সঙ্গে স্নেহসিক্ত কথা বলো। তাদের জন্য দয়ার্দ্রতা ও বিনয়ে হস্ত সম্প্রসারিত করে দাও, আর বলো, “হে আমার প্রতিপালক, আপনি তাঁদের প্রতি দয়া করুন, যেভাবে শৈশবে তাঁরা আমাকে প্রতিপালন করেছেন।”’(সুরা-১৭ ইসরা, আয়াত: ২৩-২৪)
সারা দুনিয়ায় মাত্র তিনটি জিনিস এমন আছে, যা শুধু দেখলেই সওয়াব হয়। কাবা শরিফ, কোরআন শরিফ ও পিতা-মাতার চেহারা মুবারক। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যখন কোনো সন্তান স্বীয় পিতা-মাতার প্রতি মহব্বতের নজরে দৃষ্টিপাত করে, আল্লাহ তাআলা তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে কবুল হজের সওয়াব দান করেন।’
পিতা-মাতার অধিকার বিষয়ে আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তাঁর সঙ্গে শরিক কোরো না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো।’ (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ৩৬) ‘আর আমি নির্দেশ দিয়েছি মানুষকে তার পিতা-মাতার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার।’ (সুরা-৪৬ আহকাফ, আয়াত: ১৫) ‘আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি, তুমি আমার ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে।’ (সুরা-৩১ লুকমান, আয়াত: ১৪)
হাদিস শরিফে আছে, ‘পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি, পিতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি।’ (তিরমিজি ও হাকিম, সহিহ আলবানি) ‘মায়ের পদতলে সন্তানের জান্নাত।’ (নাসায়ি ও ইবনে মাজাহ)
যাঁরা পিতা-মাতার খেদমত না করার কারণে জান্নাত থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁদের অভিসম্পাত করেছেন। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘একদা জুমার দিনে রাসুলুল্লাহ (সা.) মিম্বরের প্রথম ধাপে পা রেখে বললেন, “আমিন!” অতঃপর দ্বিতীয় ধাপে পা রাখলেন, বললেন, “আমিন!” এরপর তৃতীয় ধাপে পা রাখলেন এবং বললেন, “আমিন!” এরপর খুতবা দিলেন ও নামাজ আদায় করলেন। নামাজ শেষে সাহাবায়ে কিরাম প্রশ্ন করলেন, “হে আল্লাহর রাসুল (সা.), আজ যা দেখলাম, তা ইতিপূর্বে কখনো দেখিনি। এটা কি কোনো নতুন নিয়ম নাকি?” নবী করিম (সা.) বললেন, “না, এটা নতুন কোনো নিয়ম নয়।
আমি মিম্বরে ওঠার সময় হজরত জিবরাইল (আ.) এলেন। আমি যখন মিম্বরের প্রথম ধাপে পা রাখি, তখন তিনি বললেন, “আল্লাহ তাআলা বলেছেন, যারা পিতা-মাতা উভয়কে বা একজনকে বার্ধক্য অবস্থায় পেয়েও তাদের খেদমতের মাধ্যমে জান্নাত অর্জন করতে পারল না, তারা ধ্বংস হোক।” তখন আমি সম্মতি জানিয়ে বললাম, “আমিন! (তা-ই হোক)।”
যখন দ্বিতীয় ধাপে পা রাখি, তখন তিনি বললেন, “আল্লাহ তাআলা বলেছেন, যারা রমাদান মাস পেল, কিন্তু ইবাদতের মাধ্যমে তাদের গুনাহ মাফ করাতে পারল না, তারা ধ্বংস হোক।” তখন আমি বললাম, “আমিন!” আমি যখন মিম্বরের তৃতীয় ধাপে পা রাখি, তখন তিনি বললেন, “আল্লাহ তাআলা বলেছেন, যারা আপনার পবিত্র নাম মুবারক (মুহাম্মদ) শুনল, কিন্তু দরুদ শরিফ পাঠ করল না, তারা ধ্বংস হোক।” তখন আমি সম্মতি জানিয়ে বললাম, “আমিন!”’ (মুসলিম শরিফ)
সারা দুনিয়ায় মাত্র তিনটি জিনিস এমন আছে, যা শুধু দেখলেই সওয়াব হয়। কাবা শরিফ, কোরআন শরিফ ও পিতা-মাতার চেহারা মুবারক। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যখন কোনো সন্তান স্বীয় পিতা-মাতার প্রতি মহব্বতের নজরে দৃষ্টিপাত করে, আল্লাহ তাআলা তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে কবুল হজের সওয়াব দান করেন। সাহাবিরা বললেন, যদি দৈনিক ১০০ বার তাকায়! নবীজি (সা.) বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহ মহান ও পবিত্র।’ (বায়হাকি শরিফ)
সাহাবায়ে কিরাম (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.), আমার পিতা-মাতা ইন্তেকালের পরও কি তাঁদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহারের কোনো কিছু দায়িত্ব অবশিষ্ট থাকে?
তখন নবী করিম (সা.) বললেন, হ্যাঁ, থাকে। তা হলো তাদের জন্য দোয়া করা, তাদের গুনাহের জন্য তওবা ইস্তিগফার করা, তাদের শরিয়তসম্মত অসিয়তগুলো পূর্ণ করা, তাদের আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, তাদের বন্ধুবান্ধবদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। এগুলো পিতা-মাতার মৃত্যুর পরও তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণের শামিল।’ (সুনানে আবু দাউদ)
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম