রাজনৈতিক কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বৈষম্য করা হয়েছিল

মুক্তিযুদ্ধের সময় ফারুক আজিজ খান ছিলেন প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের একান্ত সচিব। সেই সময়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি স্প্রিং ১৯৭১ নামক একটি বই লিখেছেন। আসজাদুল কিবরিয়ার অনুবাদে বসন্ত ১৯৭১: মুজিবনগর সরকারের কেন্দ্র থেকে দেখা মুক্তিযুদ্ধ নামের বইটি প্রকাশ করেছে প্রথমা। বিজয়ের মাসে সেই বইয়ের চুম্বক অংশ দুই পর্বে প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হয়েছে। আজ প্রকাশিত হলো শেষ পর্ব

মে মাসের মাঝামাঝি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গেরিলা প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। প্রবাসে বাংলাদেশ সরকারের এটা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ছাত্র, কৃষক ও শ্রমিকদের নিয়ে গঠন করা হয় মুক্তিযোদ্ধা বাহিনী। সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ ও ইপিআরের সদস্যরা, যাঁরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য জানিয়েছিলেন, তাঁদের সবাইকে একটি অভিন্ন বাহিনীর আওতায় আনা হয়, যার নাম মুক্তিফৌজ। এই মুক্তিফৌজ ও মুক্তিযোদ্ধারা একত্রে মুক্তিবাহিনী নামে পরিচিত। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছে তাদের পরিচয় ছিল ‘মুক্তি’ হিসেবে।

এই ‘মুক্তি’রা পাকিস্তানিদের মধ্যে ত্রাসের সঞ্চার করতে সক্ষম হন। পাশাপাশি প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধার্থে বাংলাদেশকে ছয়টি অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়। প্রতিটি অঞ্চলের জন্য একটি করে আঞ্চলিক কাউন্সিল ছিল, যার প্রধান ছিলেন একজন এমএনএ বা এমপি। বেসামরিক প্রশাসন চালানোর জন্য ছিলেন সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এসব অঞ্চলের প্রধান কার্যালয়গুলো ছিল সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত। স্বাধীনতার পরপরই এগুলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নিয়ে যাওয়া হয়।

বছরের শেষ দিকে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি কর্নেল ওসমানী তিনটি ফোর্সের আওতায় বাংলাদেশের নিয়মিত সশস্ত্র বাহিনী গঠন করেন। এগুলো ছিল ‘কে’ ফোর্স (মেজর খালেদ মোশাররফের নামের আদ্যাক্ষর), ‘এস’ ফোর্স (মেজর সফিউল্লাহ) এবং ‘জেড’ ফোর্স (মেজর জিয়া)। তাঁরা তিনজন তিনটি সেক্টরের কমান্ডার হলেও নিজেদের নামে বিশেষ বাহিনী পেয়েছিলেন। আমি জেনেছিলাম যে কমান্ডারদের নামে বাহিনীর নামকরণের এই অস্বাভাবিক ধারণাটি ওসমানী সাহেবের একান্ত নিজস্ব।

■ মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং প্রবাসী সরকার উভয়ই প্রায় পুরোটা আওয়ামী লীগের লোকজন নিয়ে গঠিত ছিল।

■ মুক্তিযোদ্ধারা ‘যুব ক্যাম্প’ নামক শিবিরে সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিল। সীমান্ত এলাকায় এ রকম ১০০টি প্রশিক্ষণশিবির ছিল, যার মধ্যে কতগুলো আবার ছিল বাংলাদেশের ভূখণ্ডে। 

■ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর স্থানীয় দোসরদের লজ্জিত হতে হবে ওই সময় তারা নারী-পুরুষ ও শিশুদের প্রতি কত বড় অপরাধ করেছে, তার স্বরূপটা দেখে।

মুক্তিযোদ্ধারা ‘যুব ক্যাম্প’ নামক শিবিরে সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন। সীমান্ত এলাকায় এ রকম ১০০টি প্রশিক্ষণ শিবির ছিল, যার মধ্যে কতগুলো আবার ছিল বাংলাদেশের ভূখণ্ডে। কেন্দ্রীয়ভাবে বাংলাদেশ সরকার এবং স্থানীয়ভাবে এমএনএ, এমপিও ও জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক নেতারা এসব শিবির পরিচালনা করতেন।

দিনাজপুরের এমএনএ অধ্যাপক ইউসুফ আলী (যিনি মুজিবনগরে ১৭ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন), এমপি ডা. মফিজ চৌধুরী এবং উইং কমান্ডার (অব.) এম আর মির্জা এবং ফ্লাইট লে. (অব.) আহমেদ রেজা এসব শিবির প্রশাসনের দায়িত্বে ছিলেন। আর স্থানীয়ভাবে কোনো এমএনএ, এমপি বা জ্যেষ্ঠ নেতা ছিলেন একটি করে শিবিরের দায়িত্বে। প্রতিটি শিবিরে ১ হাজার লোকের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল। তবে সব সময় অত প্রশিক্ষণার্থী পাওয়া যেত না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা প্রশিক্ষণ দিতেন। প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধারা অপারেশন চালাতে যেতেন। প্রশিক্ষণ শিবিরগুলোর অবস্থা অনেক ক্ষেত্রেই ভালো ছিল না। অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির অভিযোগ ছিল নিয়মিত বিষয়। খাবার ও রসদের অপর্যাপ্ততায় প্রশিক্ষণার্থীদের বড় কঠিন সময় পার করতে হয়েছে।

প্রথম দিকে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বৈষম্য করা হয়েছিল। তবে শেষের মাসগুলোয় আর তা থাকেনি। ন্যাপ ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি কিছু প্রশিক্ষণ শিবির পরিচালনা করত। তাদের সহযোগিতা দিয়েছিল ভারতের বামপন্থী দলগুলো। তারপরও রসদ ও অর্থের বেশ ঘাটতি ছিল। তা ছাড়া সুপ্রশিক্ষিত ও উন্নত অস্ত্রে সজ্জিত মুজিব বাহিনীর সদস্যরা এই বামপন্থীদের হেস্তনেস্ত করত বলে অভিযোগ ছিল।

...

সীমান্ত পেরিয়ে প্রশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধাদের বাংলাদেশের ভেতরে প্রবেশ ও অভিযান পরিচালনা যেন তুষার গোলকের মতো স্ফীত হওয়ার প্রভাব তৈরি করে। মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেক অল্পবয়সী বালকও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। এমনকি ১০ বছর বয়সী অনেক ছেলেও স্বেচ্ছায় ছুটে আসে অস্ত্র তুলে নিতে শত্রু নিধনের জন্য। এ রকম কতশত ছেলে যে মাতৃভূমিকে স্বাধীন করার জন্য অকাতরে প্রাণ দিয়েছে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। আর তাই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয় করাও সম্ভব হয়নি, জানা যায়নি।

আরও পড়ুন

গেরিলাদের অস্ত্র সরবরাহ করার বিষয়টি আগস্ট-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনিষ্পন্ন ছিল। এরপর কলকাতায় ৮ থিয়েটার রোডে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠক করতে আসেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ জেনারেল এম এ এম মানেকশ এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা। কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম হলো ইস্টার্ন কমান্ডের সদর দপ্তর। আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীকে সহযোগিতা করেন ২ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফ। অজ্ঞাত কারণে কর্নেল ওসমানী এই গুরুত্বপূর্ণ সভায় উপস্থিত ছিলেন না।

খালেদ মোশাররফ মুক্তিযোদ্ধাদের ভারী অস্ত্র দেওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করছিলেন। তবে জেনারেল মানেকশ যুক্তি দিয়ে তাঁকে নিবৃত্ত করেন। তিনি বোঝান যে গেরিলারা ভারী অস্ত্র বহন করে না। ভারী অস্ত্র একদিকে তাদের দ্রুত চলাচলে বাধা তৈরি করে, অন্যদিকে শত্রুর কাছে অবস্থান জানান দিয়ে দেয়। দুই দিনের সমঝোতা বৈঠক শেষে উভয় পক্ষ মতৈক্যে পৌঁছায়। সিদ্ধান্ত হয়, ১০ জনের একটি গেরিলা বাহিনীর জন্য নিম্নরূপ অস্ত্র সরবরাহ করা হবে:

(ক) দলনেতার জন্য একটি স্টেনগান

(খ) তিনটি এসএলআর (সেলফ-লোডিং রাইফেল)

(গ) ছয়টি পয়েন্ট থ্রি নট থ্রি (.৩০৩) রাইফেল

(ঘ) প্রত্যেকের জন্য দুটি করে হ্যান্ড-গ্রেনেড

...

কলকাতায় উদ্বাস্তু মানুষের একটা উল্লেখযোগ্য অংশই ছিল বিভিন্ন ধরনের পেশাজীবী। তাঁদের অনেকে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। যাঁরা অতটা সৌভাগ্যবান ছিলেন না, তাঁদের অনেকেই আবার নিজেদের ও পরিবারের শত বিপর্যয়ের মধ্যেও কিছু না কিছু কাজ করে আমাদের সহযোগিতা করেছেন। রেডিও পাকিস্তানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিল্পীরা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগদান করেন।

বালিগঞ্জের একটি ভাড়া বাড়িতে ছিল এর স্টুডিও। তবে সম্প্রচারযন্ত্রটি কোথায় ছিল, আমরা কেউ তা জানতাম না। প্রতিদিন বিকেল চারটায় ধারণ করা অনুষ্ঠানের একটি ম্যাগনেটিক টেপ একটি নির্দিষ্ট জায়গায় বিএসএফের একজন কর্মকর্তাকে হস্তান্তর করতে হতো। এরপর তা কোথায় কীভাবে যেত, তা আর জানার উপায় থাকত না। তবে সন্ধেবেলা ধারণ করা অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হতো।

এম আর আখতার মুকুলের ‘চরমপত্র’ ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অনন্য এক প্রেরণাদায়ী অনুষ্ঠান। স্বাধীন বাংলা বেতারে সক্রিয়ভাবে যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন সৈয়দ হাসান ইমাম, আলমগীর কবির, সমর দাস, বারীন মজুমদার, মাধুরী চ্যাটার্জি, আলী যাকের, রাজু আহমেদ, বাদল রহমান, শহীদুর রহমান বাবু, লিজা হোসেন, কল্যাণ মিত্র, রুমা মুরশিদ, আবদুল জব্বার, আপেল মাহমুদ, কল্যাণী ঘোষ, রাখি চক্রবর্তী, মিতালী মুখার্জি, তারেক আলী, সুকুমার বিশ্বাস প্রমুখ। ধারাবাহিক নাটক জল্লাদের দরবারে বাংলায় এবং ভুট্টো কি কাহানি উর্দুতে প্রচারিত হতো। প্রথমটিতে ইয়াহিয়া খানকে জল্লাদ হিসেবে রূপায়িত করা হয়। দ্বিতীয়টিতে লারকানায় জুলফিকার আলী ভুট্টোর বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরা হতো। দুটি নাটকই চমৎকারভাবে লেখা হতো।

রংতুলি নিয়ে যাঁরা এই সংগ্রামে শরিক হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন পটুয়া কামরুল হাসান, দেবদাস চক্রবর্তী, নিতুন কুন্ডু, হাসি চক্রবর্তী প্রমুখ। সবার নাম উল্লেখ করতে না পারায় আমার খারাপ লাগছে। খুনি ইয়াহিয়ার যে ব্যঙ্গচিত্র কামরুল হাসান অঙ্কন করেছিলেন, তা একটি অসাধারণ কাজ, যা আরও বহু বছর অম্লান থাকবে। আমাদের শিল্পীরা চমৎকার কিছু পোস্টার তৈরি করেছিলেন। যাঁরা মানবাধিকার নিয়ে বড় বড় কথা বলছিলেন, তাঁদের মুখে একটা চপেটাঘাতস্বরূপ ঘটনা হয়ে উঠেছিল জহির রায়হানের স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি স্টপ জেনোসাইড। এই ছবি আমাদের জাতিকে সব সময়ই স্মরণ করিয়ে দেবে যে পাকিস্তানিরা আমাদের সঙ্গে কী করেছে।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর স্থানীয় দোসরদের লজ্জিত হতে হবে ওই সময় তারা নারী-পুরুষ ও শিশুদের প্রতি কত বড় অপরাধ করেছে, তার স্বরূপটা দেখে। পার্ক সার্কাসের বালু হাক্কাক লেনের ছোট্ট একটি অফিস থেকে জয় বাংলা পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হতো। মন্ত্রীর অবর্তমানে এমএনএ আবদুল মান্নান ছিলেন তথ্য ও গণমাধ্যমের দায়িত্বে এবং তিনি তাঁর দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে চলেছিলেন। ভারতে আমরা ওই দিনগুলো নিশ্চয়ই ভালো যাপন করছিলাম না, যদিও অনেকে তা-ই মনে করেছিল।

...

ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে জুলাই মাসে বাংলাদেশ সরকার পরিকল্পনা কমিশন গঠন করে। মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের নিয়ে এটি গঠন করা হয়। পাকিস্তানিদের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ ও পোড়ামাটি নীতির ফলে বাংলাদেশের অবকাঠামো, শিল্প ও অর্থনীতিতে কী ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা যাচাই করা এবং স্বাধীনতা অর্জনের পর পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনে কী পরিমাণ অর্থসম্পদ প্রয়োজন হবে, তা প্রাক্কলন করার দায়িত্ব দেওয়া হয় এই কমিশনকে। বিশেষত, ভারতে আশ্রয় নেওয়া এক কোটি শরণার্থীর পুনর্বাসন আর দেশের ভেতরে অবরুদ্ধ তিন-চার কোটি নারী, পুরুষ ও শিশুর জীবন বসবাসযোগ্য করে তোলার দুরূহ কাজটি অপেক্ষা করছিল।

প্লাস্টিক বিস্ফোরক ব্যবহার করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী শত শত সেতু ও কালভার্ট উড়িয়ে দিয়েছিল, যেন মুক্তিবাহিনী সহজে চলাচল করতে না পারে। অন্যদিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী যাতে চলাচল করতে না পারে, সেই লক্ষ্য থেকে পদ্মার ওপর হার্ডিঞ্জ রেলসেতু ও মেঘনার ওপর পঞ্চম জর্জ রেলসেতুর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী। যদিও পাকিস্তানি বাহিনীর দাবি ছিল ভারতীয় বিমানবাহিনী এ কাজ করেছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ চৌধুরী ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের চেয়ারম্যান। সদস্য ছিলেন অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদ, অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এবং রেলওয়ের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী এ গফুর। বিরাট ক্ষয়ক্ষতির হিসাব ও পুনর্বাসনে সম্পদ প্রাক্কলন করতে গিয়ে কমিশনকে যথেষ্ট কষ্ট পোহাতে হয়েছে। খান সারওয়ার মুরশিদ ও আনিসুজ্জামান বক্তৃতা ও বিবৃতি লিখতে প্রধানমন্ত্রীকে সহযোগিতা করেছেন।

মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং প্রবাসী সরকার উভয়ই প্রায় পুরোটা আওয়ামী লীগের লোকজন নিয়ে গঠিত ছিল। তবে স্বাধীনতাসংগ্রামকে বৃহত্তর রাজনৈতিক ভিত্তি দিতে সেপ্টেম্বর মাসে একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়, যেখানে প্রায় সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এই কমিটির চেয়ারম্যান। সদস্য ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী (ন্যাপ-বি), কমরেড মণি সিংহ (সিপিবি), অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ (ন্যাপ-এম), বাবু মনোরঞ্জন ধর (বাংলাদেশ কংগ্রেস) ও কামারুজ্জামান (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী)। এই কমিটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে সম্পৃক্ত ছিল না। তবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করত ও পরামর্শ দিত। প্রথম বৈঠকটিতে সভাপতিত্ব করেছিলেন মওলানা ভাসানী। পরের বৈঠকগুলোতে আর তিনি আসতে পারেননি দেরাদুনে থাকার কারণে। সব এমএলএ ও এমপিএ ছিলেন আওয়ামী লীগের সদস্য। উপদেষ্টা কমিটির সদস্যরা ছাড়া আর কোনো ক্ষমতাসম্পন্ন রাজনৈতিক নেতাও ছিলেন না। তাই দেশের বাইরে জাতীয় সরকার গঠন করার কোনো উপায় ছিল না। ...

ফারুক আজিজ খান মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের একান্ত সচিব ও বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক চেয়ারম্যান।