২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে বৈশ্বিক মহামারি শুরুর পর প্রথম বিদেশ সফরে যাচ্ছেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। উজবেকিস্তানের সমরখন্দে সাংহাই কো–অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আগে তিনি কাজাখস্তান সফরও করবেন।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, বৃহস্পতি ও শুক্রবার এসসিও সম্মেলনে চীন, রাশিয়া ও মধ্য এশিয়ার নেতারা মুখোমুখি বৈঠকে বসবেন। এই বৈঠকের উদ্দেশ্য হচ্ছে, সংস্থাটির সদস্যদেশগুলোকে ঘনিষ্ঠ অবস্থানে নিয়ে আসা, যাতে করে পশ্চিমাবিরোধী নতুন স্নায়ুযুদ্ধের শিবির তৈরি করা যায়।
ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধের পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁকে জানাবেন। এর আগে ফেব্রুয়ারি মাসে বেইজিংয়ে দুই নেতার মধ্যে সরাসরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যার সাত দিন পর রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করেছিল।
সাংহাই কো–অপারেশন অর্গানাইজেশনের এবারের সম্মেলনে খুব শক্তভাবেই জ্বালানি সহযোগিতার বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় থাকা ইরান সংস্থাটির নতুন সদস্যপদ পাবে। মিসর, কাতার ও সৌদি আরব সংলাপ অংশীদার হিসেবে সম্মেলনে উপস্থিত থাকবে। চীনের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা ইরান ও রাশিয়া থেকে বেইজিং জ্বালানি আমদানি বাড়াতে চায়।
১২ সেপ্টেম্বর চীনের সংবাদমাধ্যম সিনহুয়ায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, সি চিন পিংয়ের এই সফর মানবজাতির একই ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা দেশগুলোর মধ্যে নতুন যাত্রা ও নতুন যুগ সৃষ্টি করবে। ওই নিবন্ধে আরও বলা হয়েছে, সম্মেলনে সি চিন পিং ও অন্য নেতারা যৌথভাবে বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলা এবং নিরাপত্তা ও উন্নয়ন বিষয়ে আলাপ করবেন।
চীনের আরেকটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইরানের ওপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে চীন দুই বছর ধরে ইরানের কাছ থেকে ছাড়কৃত মূল্যে তেল কিনছে। গত মার্চ মাসে তেহরান থেকে চীন তিন কোটি ব্যারেল অপরিশোধিত তেল কিনেছে। এর অর্থ হচ্ছে ইরান এখন যে তেল রপ্তানি করছে, তার প্রায় সবটাই কিনছে চীন। ওই নিবন্ধে আরও বলা হয়েছে, জ্বালানি খাতে চীন তার সব কটি ডিম এক ঝুড়িতে রাখতে চায় না। বিচিত্র উৎস ব্যবহার করতে চায়।
নিবন্ধে আরও জানানো হয়, এ বছর এসসিও সনদ স্বাক্ষরের ২০ বছর এবং সদস্যরাষ্ট্রগুলোর মধ্যকার দীর্ঘমেয়াদি ভালো প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরের ১৫ বছর পূর্তি হচ্ছে। মধ্য এশিয়ার দেশগুলো ঐতিহাসিকভাবে রাশিয়ার প্রভাববলয়ের। তা সত্ত্বেও বড় বড় প্রকল্প ও উদ্যোগের মাধ্যমে চীন এ চুক্তি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে।
২০১৩ ও ২০১৬ সালে উজবেকিস্তান সফরে যান সি চিন পিং। ২০১৬ সাল থেকে চীন-উজবেকিস্তান সম্পর্ক সমন্বিত কৌশলগত অংশীদারত্ব সম্পর্কে উন্নীত হয়। একই বছর চীন ও উজবেকিস্তানের মধ্যে রেল যোগাযোগ শুরু হয়। সম্প্রতি উজবেকিস্তানে শিল্প পার্কসহ আরও কিছু বড় প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে চীন।
এসসিওর সাধারণ সম্পাদক ঝাং মিং বলেছেন, ‘এসসিওর রূপরেখার মধ্যে সদস্যরাষ্ট্রগুলো উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জনগণের জীবনমানের প্রভূত উন্নয়ন এবং একে অপরের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক উপভোগ করছে। এতে বাইরের দেশগুলোও এ সংস্থার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, এসসিও সব সময়ের জন্য একটি সত্যিকারের বহুপক্ষীয় সম্পর্কের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ সঙ্গে যেকোনো ধরনের আধিপত্যবাদী, প্রভাববিস্তারী ও গুন্ডামি কৌশলের বিরোধিতা করে। একই সঙ্গে উপদল গঠনের যেকোনো চেষ্টার বিরোধিতা করে।
ইরানকে এসসিও সংস্থায় নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু হয় গত বছর। ইরান এখন রাশিয়ার কারণে ইউরোপে যে গ্যাসঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণের আশা জিইয়ে রেখেছে। গত ২৫ আগস্ট চীনে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হচ্ছে, শীত মৌসুমের জন্য ইউরোপ প্রতি মাসের জন্য কমপক্ষে দুই কোটি ব্যারেল তেলের বিকল্প উৎস খুঁজছে। সম্ভবত এই বিকল্প ইরান।
চীনের আরেকটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইরানের ওপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে চীন দুই বছর ধরে ইরানের কাছ থেকে ছাড়কৃত মূল্যে তেল কিনছে। গত মার্চ মাসে তেহরান থেকে চীন তিন কোটি ব্যারেল অপরিশোধিত তেল কিনেছে। এর অর্থ হচ্ছে ইরান এখন যে তেল রপ্তানি করছে, তার প্রায় সবটাই কিনছে চীন। ওই নিবন্ধে আরও বলা হয়েছে, জ্বালানি খাতে চীন তার সব কটি ডিম এক ঝুড়িতে রাখতে চায় না। বিচিত্র উৎস ব্যবহার করতে চায়। মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে অ্যাঙ্গোলা, ভেনেজুয়েলা ও রাশিয়া—সব জায়গা থেকে জ্বালানি কিনবে চীন।
গত মে মাসে চীন সৌদি আরবের চেয়ে রাশিয়ার কাছ থেকে বেশি তেল কিনেছে। ভবিষ্যতে চীন রাশিয়া ও ইরান দুই দেশ থেকেই পর্যাপ্ত পরিমাণ তেল আমদানি করতে চায়। একই সঙ্গে ওই দুই দেশে চীনের উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি করতে চায়। গত মার্চ মাসে ইরানের সঙ্গে চীন ২৫ বছরের সহযোগিতা চুক্তিও করেছে।
এদিকে গত ১ আগস্ট ইরানের তেল ও জ্বালানি পণ্য বিক্রিতে সহায়তা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ছয়টি কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। এর মধ্যে তিনটি কোম্পানি চীনের। ফলে জ্বালানি নিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধের নতুন ক্ষেত্র বিস্তার লাভ করছে।
এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
জেফ পাউ এশিয়া টাইমস–এর চীনবিষয়ক সম্পাদক