রাশিয়াতে কর্তৃত্ববাদের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, রাশিয়াতে জনপ্রিয়তা রয়েছে শক্তিশালী শাসকদের। ষোড়শ শতাব্দীতে রাশিয়াকে শাসন করা ইভান দ্য ট্যরিবল, অষ্টাদশ শতাব্দীতে রাশিয়াকে শাসন করা পিটার দ্য গ্রেট আর ক্যাথরিন দ্য গ্রেট ছিলেন কর্তৃত্ববাদী শাসক।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে রাশিয়াকে শাসন করা নিকোলাস আর আলেকজান্ডারদের সরিয়ে ক্ষমতায় আসে কমিউনিস্ট পার্টি—রাজতন্ত্রের অনেক কিছু বদলে গেলেও সোভিয়েত ইউনিয়নেও থেকে যায় কর্তৃত্ববাদী শাসনের ধারা। জারদের জায়গায় রাশিয়াকে শাসন করতে শুরু করেন পার্টির সাধারণ সম্পাদকেরা।
কর্তৃত্ববাদী শাসনের পরম্পরা সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরেও বজায় আছে, কমিউনিজমের পতনের মাধ্যমে রাশিয়াতে পুঁজিবাদ আর ‘গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরেও। রাশিয়ার কর্তৃত্ববাদের সর্বশেষ চরিত্র ভ্লাদিমির পুতিন—দুই যুগ ধরে যিনি রাশিয়া শাসন করছেন।
রাশিয়াতে মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রেসিডেনশিয়াল নির্বাচন। রাশিয়ানদের পছন্দের শক্তিশালী আর দুর্দমনীয় চরিত্রের প্রতিকৃতি কাজে লাগিয়ে টানা পঞ্চমবারের মতো ক্ষমতায় এসেছেন পুতিন।
পুতিনের পক্ষে কাজ করেছে কর্তৃত্ববাদী আর ক্রেমলিনে কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থা। নির্বাচনে পেয়েছেন সোভিয়েত–পরবর্তী যুগের রাশিয়াতে সবচেয়ে নিরঙ্কুশ বিজয়, তাঁর ৮৭ শতাংশ ভোটের বিপরীতে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছে ৪ শতাংশের মতো ভোট।
দুই যুগের শাসন শেষে পুতিন এখন নিজেকে তুলনা করছেন অষ্টাদশ শতাব্দীতে পিটার দ্য গ্রেটের সঙ্গে। পুতিনের অধীনে রাশিয়ার কর্তৃত্ববাদী শাসনের দর্শন পরিচিতি পেয়েছে পুতিনইজম হিসেবে। পুতিনীয় শাসন-দর্শন রপ্তানি হচ্ছে নতুন এশিয়া আর আফ্রিকায়।
পুতিনবাদ একটা মিশ্র দর্শন
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর মানবসভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দেশে চালু হয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা আসলে এসব দেশের কুলীনরা বিলীন হয়ে যায়নি, প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখতে তারা অভিযোজিত হয়েছেন। নির্বাচনী ব্যবস্থা দুর্বল করে, রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের রাজনীতিকরণ করে এসব দেশে সূচনা হয়েছে নতুন কর্তৃত্ববাদের।
তবে ট্রাম্প, শ্যাভেজ বা এরদোয়ানের মতো প্রথাগত কর্তৃত্ববাদী শাসক ভ্লাদিমির পুতিন নন, ক্ষমতায় টিকে থাকা আর স্বার্থগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করা যাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নিয়ন্ত্রণ আর জটিল বৈশ্বিক রাজনীতিতে রাশিয়ার অবস্থান মিলে পুতিনের শাসনতান্ত্রিক দর্শন আরও বেশি কিছু।
পুতিনবাদের একদিকে যেমন রাশিয়ার সংস্কৃতিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে শাসনতন্ত্রকে গড়ে তোলা হয়েছে বর্তমান যুগের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপযোগী করে। রাশিয়ার অর্থনীতি নির্ভরশীল রয়ে গেছে প্রথাগত তেল আর গ্যাস থেকে অর্জিত অর্থের ওপর, বড় কোম্পানিগুলোকে ক্রেমলিন নিয়ন্ত্রণ করলেও মাঝারি আর ক্ষুদ্র শিল্পগুলো কার্যক্রম চালায় অনেকটা রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের পরিসর থেকে দূরে সরে।
পুতিন আর তাঁর সহযোগীরা মনে করেন, বিদ্যমান আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাশিয়া তার প্রাপ্য সম্মান পাচ্ছে না, পাচ্ছে না পরাশক্তিসুলভ স্বীকৃতি। পাশ্চাত্য দর্শনের প্রতিষ্ঠানগুলো এসে ভিড়েছে রাশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোতে, ন্যাটোকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে রাশিয়ার সীমান্তে, ভৌগোলিকভাবে ঘিরে ফেলা হচ্ছে রাশিয়াকে। ফলে পুতিনের শাসনের অন্যতম ভিত্তি পাশ্চাত্যবিরোধিতা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা।
পুতিনবাদের একদিকে যেমন রাশিয়ার সংস্কৃতিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে শাসনতন্ত্রকে গড়ে তোলা হয়েছে বর্তমান যুগের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপযোগী করে। রাশিয়ার অর্থনীতি নির্ভরশীল রয়ে গেছে প্রথাগত তেল আর গ্যাস থেকে অর্জিত অর্থের ওপর, বড় কোম্পানিগুলোকে ক্রেমলিন নিয়ন্ত্রণ করলেও মাঝারি আর ক্ষুদ্র শিল্পগুলো কার্যক্রম চালায় অনেকটা রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের পরিসর থেকে দূরে সরে।
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা বাড়াতে বিনিয়োগ বেশি হয়েছে প্রতিরক্ষা খাতে। তাতে সামরিক দিক থেকে শক্তিশালী দেশ হলেও বিনিয়োগের অভাবে রাশিয়া দুর্বল হয়েছে নাগরিক সুবিধার ক্ষেত্রগুলোতে। পুতিনবাদে যেমন লেনিনবাদ আর স্তালিনবাদের প্রভাব রয়েছে, তেমনি প্রভাব আছে থ্যাচারবাদ আর রিগ্যানবাদেরও।
‘আমি ক্রেমলিন নিয়ন্ত্রণ না করলে অন্য কেউ করবে’
পুতিনের আমলে সামরিক বাহিনীর প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে, তাঁর অধীনে তৈরি হয়েছে বিশেষায়িত বাহিনী ন্যাশনাল গার্ড অব রাশিয়ান ফেডারেশন। দেশজুড়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা কমেছে, দুর্নীতি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং নাগরিক স্বাধীনতা কমেছে।
রাজনৈতিক অধিকার প্রায় নেই বললেই চলে, প্রধান বিরোধী নেতা নাভালনি মারা গেছেন কারাগারে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের। পুতিন বিশ্বাস করেন, রাশিয়ানদের নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। যদি ক্রেমলিন তাদের নিয়ন্ত্রণ না করে, তবে অন্যান্য শক্তি তাদের নিয়ন্ত্রণ করবে। আরব বসন্তের ঘটনাগুলোর পরে পুতিন আর মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত কার্যক্রমকে বিশ্বাস করেন না, বিশ্বাস করেন না নিয়ন্ত্রণের মধ্যে না থাকা মানুষকে।
দিন শেষে যা গুরুত্বপূর্ণ!
পুতিন সেন্ট পিটার্সবার্গের যেই অঞ্চল থেকে উঠে এসেছেন, সেখানকার কিশোর সংঘগুলোতে আনুগত্য ছিল মৌলিক ভিত্তি, আনুগত্যকে অপরিহার্য উপাদান হিসেবে দেখা হতো কেজিবিতেও। ফলে পুতিনের দর্শনে আনুগত্য কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
পুতিনের রাজনৈতিক উত্থানেও রয়েছে আনুগত্যের শৃঙ্খল। ১৯৯৬ সালে মস্কোর মেয়র নির্বাচিত হয়ে যখন ভ্লাদিমির ইকোভলেভ মেয়র অফিসে কাজের প্রস্তাব দেন, পুতিন তখন বলেছিলেন, ‘বিশ্বাসঘাতক হিসেবে মৃত্যুর চেয়ে আনুগত্যের মৃত্যু সম্মানের।’
১৯৯৮ সালে তখনকার প্রেসিডেন্ট যখন দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তের মুখে এবং বরিসের ঘনিষ্ঠরা চাচ্ছিল পাবলিক প্রসিকিউটর ইউরি স্কুরাতোভকে সরিয়ে দিতে। সেই সময় স্কুরাতোভের একটি ব্যক্তিগত ভিডিও মিডিয়াতে আসে এবং এফএসবি চিফ পুতিন সেটিকে অথেনটিক হিসেবে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেন। প্রেসিডেন্ট বরিস ক্ষমতাচ্যুত করেন স্কুরাতোভকে, পুতিন আনুগত্যের পুরস্কার পান ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব। পরবর্তী সময়ে সেখান থেকেই হন প্রেসিডেন্ট।
অর্থাৎ ১৯৯০–এর দশকে পুতিন তাঁর বসদের প্রতি আনুগত্য দেখিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরের ১৫ বছর পুতিন আনুগত্য নিয়েছেন তাঁর মিত্র সংঘগুলো থেকে, দিয়েছেন রাষ্ট্রীয় সুবিধা আর আর্থসামাজিক উন্নতির সুযোগ। ২০১৫ সাল থেকে পুতিনের কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে তাঁর প্রতি ব্যক্তিগত আনুগত্য, বিভিন্ন জায়গায় ঘনিষ্ঠ সহযোগী আর মিত্রদের সরিয়ে নিয়ে এসেছেন সাবেক সহকারী আর বডিগার্ডদের।
পুতিন তাঁর আত্মজীবনী ‘ফার্স্ট পার্সন’–এ লিখেছেন, ‘আমার অনেক বন্ধু আছে, কিন্তু অল্প মানুষই আমার ঘনিষ্ঠ। তারা কখনো আমাকে ছেড়ে যায়নি কিংবা বিশ্বাসঘাতকতা করেনি। আমিও কখনো তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করিনি এবং এটিই দিন শেষে গুরুত্বপূর্ণ।’
বিলিয়নিয়ার হিসেবে অভিনয় করা কিছু মানুষ
রাশিয়াতে বিলিয়নিয়ার নেই, আছে বিলিয়নিয়ার হিসেবে অভিনয় করা কিছু মানুষ। পুতিনের শাসনামলে রাশিয়াতে নতুন একটি কোটিপতির শ্রেণি তৈরি হয়েছে, যাদের প্রায় সবাই কোনো না কোনোভাবে আগে থেকে পুতিনের সঙ্গে যুক্ত।
শাসনের শুরুতেই পুতিন কুলীনদের মধ্যে ২১ জন বিলিয়নিয়ারকে নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। এরা বরিসের সময়ে বিপুল সম্পত্তি অর্জন করেন, সেই সম্পত্তিতে হস্তক্ষেপ না করার শর্তে পুতিন তাদের সম্মত করান তাঁর শাসনের পথের মধ্যে না দাঁড়াতে। পরবর্তী কয়েক বছরে যারা পুতিনের কথা শুনেছে, তারা রাষ্ট্রীয় কন্ট্রাক্ট পেয়েছে, পেয়েছে সম্পদ বৃদ্ধির সুযোগ। যারা পুতিনের নির্দেশ মান্য করেননি, তাদের হয় সাইবেরিয়া যেতে হয়েছে, অন্যথায় হয়েছে রহস্যজনক মৃত্যু।
কুলীনদের মধ্যে পুতিনের প্রথম শিকার ভ্লাদিমির গুসিনস্কায়, যাকে সম্পত্তি আর অর্থ পেছনে ফেলে বিদেশ পালাতে হয়েছিল তাঁর মালিকানাধীন টিভি চ্যানেলে ক্রেমলিনকে নিয়ে স্যাটায়ার শো করায়। প্রায় এক যুগের সাইবেরিয়াতে জেলের ভাগ্য মেনে নিতে হয়েছিল মিখাইল খোদ্রোকোভস্কিকে, পুতিনের কর্তৃত্ব আর শাসনকে চ্যালেঞ্জ করে প্রেসিডেন্ট হওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করায়। তখনকার সময়ে রাশিয়ার সবচেয়ে ধনী এই ব্যক্তির তেল কোম্পানি হস্তান্তর করা হয় পুতিনের সহযোগী ইগর সেচিনের কাছে।
পুতিন আগের কুলীনদের নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি নিজের পছন্দের একটি নব্য-কুলীন শ্রেণিও তৈরি করেছেন। এঁদের একজন হলেন ইগর সেচিন। সেচিন দীর্ঘদিন পুতিনের অধীনে কাজ করেছেন, আনুগত্যের পুরস্কারস্বরূপ পেয়েছেন ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টারের দায়িত্ব। তাঁর নেতৃত্বে অসংগতির সমালোচনা থাকলেও বর্তমানে তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি রোসনেফটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। এতে প্রায় তিন লাখ কর্মকর্তা কাজ করেন, বৈশ্বিক তেল সরবরাহের ৬ শতাংশ আসে এই কোম্পানির মাধ্যমে। পুতিনের দীর্ঘদিনের পরিচিতি ব্যক্তিদের মধ্যে বিলিয়নিয়ার হয়েছেন পুতিনের পার্সোনাল ব্যাংকার হিসেবে পরিচিত ইউরি কোভালচোক, বিদ্যুৎ, অবকাঠামো আর পাইপলাইনের কাজে যুক্ত থাকা রটেনবার্গ ভাইয়েরা।
নব্বইয়ের দশকের কুলীন হোক কিংবা পুতিনের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে তৈরি হওয়া কুলীন হোক—এঁদের প্রত্যেকেই পুতিনের পক্ষে কাজ করেন। ভিন্নমত, স্বাধীনচেতা চিন্তা কিংবা ব্যর্থতা ঠেলে দিতে পারে মৃত্যুর দিকে, শুধু গত দুই বছরে রাশিয়াতে রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে অর্ধশতাধিক কুলীনের।
প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে প্রেসিডেন্ট, অপ্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে বস
রাশিয়াতে পুঁজিবাদ প্রবেশ করেছে নব্বইয়ের দশকে, পুঁজির বিকাশও হয়েছে রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে। রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদের যুগে রাশিয়াতে সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে ক্রেমলিনের সুনজরে থাকা ব্যক্তিদের, নিজেদের নেটওয়ার্ক তৈরি করে স্বার্থগোষ্ঠীরা আদায় করছে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ, উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদারি, বেসরকারি হওয়া রাষ্ট্রীয় সম্পদের মালিকানা, আর পাবলিক অফিস।
এসব নেটওয়ার্কের বিস্তৃতির কারণে রাশিয়া পরিচিত পেয়েছে নেটওয়ার্ক স্টেট হিসেবে। পুতিন প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে যেমন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নেতৃত্ব দেন, অপ্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর এসব নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে পুতিনের ভূমিকা বসের মতো। প্রতিটি নেটওয়ার্কই এসে শেষ হয় ক্রেমলিনে, স্বার্থগোষ্ঠীর ইচ্ছাপূরণ নির্ভর করে পুতিনের সম্মতির ওপর।
ক্রেমলিন যার, রাশিয়া তার
ক্রেমলিনকে কেন্দ্র করে রাশিয়াতে গড়ে উঠেছে একটি হাইপার-প্রেসিডেনশিয়াল কাঠামো। ক্রেমলিন সিদ্ধান্ত নেয় রাশিয়া আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কীভাবে ভূমিকা রাখবে, দেশের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে কে গ্রেপ্তার হবে, সামরিক বাহিনীর নেতৃত্ব আর পদায়ন কীভাবে হবে, বিরোধী দলের রাজনীতিবিদেরা কতটুকু রাজনৈতিক স্বাধীনতা উপভোগ করবেন, বাজারে কোনো পণ্যের দাম কমবে আর বাড়বে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর সিদ্ধান্ত আর পরবর্তী যুদ্ধকৌশল নির্ধারিত হয়েছে ক্রেমলিন থেকে, সেখানের অভিযানের সমাপ্তির সিদ্ধান্তও ক্রেমলিন থেকেই হবে।
ক্রেমলিনে একসময় জারেরা সিদ্ধান্ত নিতেন, এখন নেন ভ্লাদিমির পুতিন। সিদ্ধান্তের প্রকৃতি আর প্রয়োগের পদ্ধতি প্রায় একই আছে। কেন্দ্রীভূত এই সিদ্ধান্ত–কাঠামোর সুবিধা আর অসুবিধা দুটোই আছে। কেন্দ্রীভূত কাঠামো পুতিনকে অসীম ক্ষমতার অধিকারী করেছে, সমর্থকদের মধ্যে তৈরি হয়েছে পুতিনের রাজনৈতিক অবতারবাদ। সমর্থকেরা বিশ্বাস করেন, পুতিন সব ভুলের ঊর্ধ্বে। ফলে রাশিয়াতে নাগরিকবান্ধব ভালো কিছু হলে তার সাধুবাদ পুতিন নেন, কিন্তু ব্যর্থতার দাঁয় নিতে হয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।
মাহবুব মাসুম রাজনীতিবিজ্ঞান বিষয়ক গবেষক