জো বাইডেন একজন অজনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট এবং নিজের ভাবমূর্তি কিছুটা পুনরুদ্ধার করতে না পারলে ২০২৪ সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে তাঁর পরাজয় সুনিশ্চিত। এতে খুব আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। তাঁর দুই পূর্বসূরিও সরকার গঠনের এই পর্যায়ে অজনপ্রিয় হয়েছিলেন। জিততে পারবেন কি না আবারও, সেই সংশয়ও ছিল।
ট্রাম্প ও বারাক ওবামার বেলায় অপেক্ষাকৃত সহজ একটা ব্যাখ্যা দেওয়া যায়। ওবামার সময় বেকারত্বের হার ২০১১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। আর ছিল ওবামাকেয়ার নিয়ে দ্বন্দ্ব। ট্রাম্প অবশ্য কখনো জনপ্রিয়ই ছিলেন না। অজনপ্রিয়তাই তাঁর জন্য স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে মধুচন্দ্রিমার কালও কাটিয়েছিলেন, তাঁর বেশ গ্রহণযোগ্যতাও ছিল। আফগানিস্তান থেকে তড়িঘড়ি করে সেনা প্রত্যাহার তাঁর জনপ্রিয়তায় ভাটা আনে। আর তখন থেকেই তাঁর জনপ্রিয়তার এই ভগ্নদশার কী কারণ, তার একক কোনো কারণ বা ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
ওবামার প্রথম মেয়াদের তুলনায় বাইডেন আমলে অর্থনীতি ভালো ছিল। অর্থনৈতিক মন্দার যে ঝুঁকি ছিল, সেটাও কেটেছে। বামপন্থী উদারনৈতিকদের নিয়ে বা কোভিড নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের যে যুদ্ধ, তা এখন থিতিয়ে গেছে। বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক দল এখন পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে উত্তেজনা পরিহার করতে পেরেছে। বাইডেন এমনকি কিছু বিষয়ে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের একটা জায়গায় আনতে পেরেছেন। এত কিছুর পরও কেন নির্বাচনী লড়াইয়ে বাইডেন এগোতে পারছেন না, তা নিয়ে ডেমোক্র্যাটরা ধন্দে আছেন। বাইডেনকে টেনে ধরছে কোন বিষয়গুলো, তা নিয়ে সত্যি নিশ্চিত করে বলা কঠিন, তা আমিও বিশ্বাস করি।
তাত্ত্বিকভাবে বলতে গেলে বাইডেনের জনপ্রিয়তার পথে প্রধান বাধা হলো মূল্যস্ফীতি। মানুষ চায় না জিনিসপত্রের দাম বাড়ুক। বাইডেন অর্থনৈতিক মন্দা এড়িয়েছেন ঠিকই, মানুষের আয়ও কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু বাড়তি এই আয় চলে যাচ্ছে মূল্যস্ফীতির পেটে।
এটিই যদি বাইডেনের অজনপ্রিয়তার প্রধান কারণ হয়, তাহলে হোয়াইট হাউসের ধৈর্য ধরা ছাড়া উপায় নেই। ইউক্রেনে যুদ্ধ থামলে গ্যাসের দাম কিছুটা কমবে, এই একটা সম্ভাবনা ছাড়া বাইডেন প্রশাসনের হাতে আপাতত আর কোনো নীতি নেই।
কিন্তু বাইডেনের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ার পেছনে অর্থনীতি একমাত্র দায়ী নয়। বিভিন্ন ধরনের ভোটে দেখা যাচ্ছে, বাইডেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতো ক্রমেই সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর সমর্থন হারিয়ে ফেলছেন। সামাজিক কিছু বিষয়ও আসলে ডেমোক্র্যাটদের জন্য চিন্তার কারণ। দলের সক্রিয় কর্মীদের মধ্যে আফ্রিকান, আমেরিকান ও হিসপানিকদের একটি অংশ রিপাবলিকানদের দিকে ঝুঁকে পড়ছে।
বাইডেনের বয়সটা একটা উদ্বেগের কারণ। আফগানিস্তান সংকটের সময় তাঁর জনপ্রিয়তায় চিড় ধরার কারণ হয়তো তাঁদের জনসমক্ষে না আসা। কিছু ভোটার হয়তো ভাবছেন, বাইডেনের পক্ষে একটি ভোট দেওয়ার মানে হলো, দুর্ভাগা কমলা হ্যারিসের পক্ষে একটি ভোট দেওয়া। সেদিক থেকে প্রেসিডেন্ট পদে প্রচারণায় ট্রাম্প যে শক্তি নিয়ে হাজির হচ্ছেন, তাই তাঁকে সুবিধা দিচ্ছেন। নীতি অপরিবর্তিত রেখে কীভাবে কোনো ব্যক্তি এই অবস্থায় জনপ্রিয় হতে পারেন? এমন কোনো নেতাকে আরও মহান করে তোলা বেশ কঠিন। এ ক্ষেত্রে বাইডেন যা করতে পারেন, তা হলো তিনি আরও বলিষ্ঠ ভূমিকায় মানুষের কাছে এসে দাঁড়াতে পারেন। এতে যে ঝুঁকিই থাকুক না কেন!
বলতে গেলে, এটা শুধুই একরকম কৌশল। বাইডেনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে গেঁথে বসে যাওয়া হতাশা ও নৈরাশ্য। এ সমস্যার মূল শিকার তরুণেরা। কোভিড ও গভীর সামাজিক সমস্যা এই হতাশা বাড়িয়েছে।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে রুটিনমাফিক কাজ করে গেলেই এ সমস্যার সমাধান হবে বলে আমি মনে করি না। আমি জিমি কার্টারের মতো তাঁকে কোনো বক্তৃতা নিয়ে হাজির হতে বলছি না। আর আমি এ–ও মনে করি না যে প্রযুক্তির এই গোলমালের যুগে তিনি কোনো ক্রুসেডার হিসেবে উপস্থিত হবেন বা তাঁর হাত ধরে ধর্মের পুনরুত্থান ঘটবে। ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল—এই বিশ্বাস নিয়ে তাঁকে পুনর্নির্বাচনে উদ্যোগী হতে হবে।
তবে আমেরিকার মানুষ যেখানেই আশা খুঁজে পান না কেন, জরাগ্রস্ত এক প্রেসিডেন্ট একাই এই আশা তৈরি করে দেবেন, আমরা বোধ হয় এ ধারণা থেকে বহু আগে বেরিয়ে এসেছি।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিতভাবে অনূদিত
● রস ডাউথ্যাটদ্য নিউইয়র্ক টাইমস–এর রাজনীতি, ধর্ম ও শিক্ষাবিষয়ক কলাম লেখক