শারীরিক ও আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান নারী-পুরুষের ওপর হজ ফরজ। কোরআন মাজিদে আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘আল্লাহর তরফ থেকে সেসব মানুষের জন্য হজ ফরজ, যারা তা আদায়ের সামর্থ্য রাখে।’ (সুরা-৩ আলে ইমরান; আয়াত: ৯৭)
হজের নির্দিষ্ট সময় হলো ‘আশহুরে হুরুম’ বা হারাম মাসসমূহ তথা শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ; বিশেষত ৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত ৫ দিন।
হজের নির্ধারিত স্থান হলো মক্কা মুকাররমা, কাবা, সাফা-মারওয়া, মিনা, আরাফা, মুজদালিফা ইত্যাদি এবং মদিনা মুনাওয়ারায় রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর রওজা মোবারক।
হজের আমল হলো ইহরাম, তাওয়াফ ও সাঈ, অকুফে আরাফা, অকুফে মুজদালিফা, অকুফে মিনা, দমে শোকর ও কোরবানি, হলক ও কসর এবং মদিনা মুনাওয়ারায় রওজাতুর রাসুল (সা.) জিয়ারত করা ইত্যাদি। (আসান ফিকহ, ইউসুফ ইসলাহি, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা: ২৫১)।
কবুলিয়ত বা গ্রহণযোগ্যতার দিক থেকে হজ তিন প্রকার—হজে মাবরুর, হজে মকবুল ও হজে মারদুদ। ‘হজে মাবরুর’ হলো সর্বোত্তম হজ, ‘হজে মকবুল’ হলো কবুল হজ আর ‘হজে মারদুদ’ হলো বাতিল হজ
সম্পাদন পদ্ধতির দিক থেকে হজ তিন প্রকার: ১. ইফরাদ, ২. কিরান ও ৩. তামাত্তু।
শুধু হজের ইহরামের নিয়ত করে তা সম্পন্ন করলে একে ‘ইফরাদ হজ’ বা একক হজ বলা হয়। ইফরাদ হজ পালনের জন্য ঢাকা থেকে শুধু হজের ইহরামের নিয়ত করে মক্কায় পৌঁছার পর তাওয়াফ ও সাঈ করে ইহরাম না ছেড়ে ১০ জিলহজ হজ সম্পাদন হওয়ার পর ইহরাম ছাড়তে হবে।
একই ইহরামে হজ ও ওমরাহ একত্রে সম্পন্ন করলে তাকে ‘কিরান হজ’ বা যৌথ হজ বলা হয়। একত্রে ইহরামের নিয়ত করে মক্কায় পৌঁছার পর প্রথমে ওমরাহর তাওয়াফ ও সাঈ করে ইহরাম না ছেড়ে সেই ইহরামেই হজ সম্পাদন করে ১০ জিলহজ ইহরাম ছাড়তে হবে।
একই সফরে প্রথমে ওমরাহর ইহরামের নিয়ত করে, তা সম্পন্নপূর্বক হজের জন্য নতুন করে ইহরামের নিয়ত করে তা সম্পাদন করাকে ‘তামাত্তু হজ’ বা সুবিধাজনক হজ বলা হয়। বাংলাদেশ থেকে অধিকাংশ হাজি তামাত্তু হজ করে থাকেন। তামাত্তু হজের ক্ষেত্রে ঢাকা থেকে শুধু ওমরাহর ইহরামের নিয়ত করে মক্কা শরিফ পৌঁছে তাওয়াফ ও সাঈ করে চুল কেটে বা মাথা মুণ্ডন করে ইহরাম সমাপ্ত করতে হবে। এরপর ৭ জিলহজ হজের জন্য নতুন করে ইহরামের নিয়ত করে ১০ জিলহজ তা সমাপ্ত করতে হবে।
কিরান ও তামাত্তু হজে দমে শোকর বা কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব। অন্যথায় ১০টি রোজা পালন করতে হবে, এর মধ্যে অন্তত তিনটি রাখতে হবে হজকালীন মক্কায়, তবে হজের বা আরাফাতের দিন ও কোরবানির ঈদের দিন ছাড়া অন্য দিনগুলোয়।
যাঁরা হজ পালনরত নন, তাঁদের জন্য ৯ জিলহজ রোজা রাখা সুন্নত। ৯ জিলহজ (হজের বা আরাফাতের দিন) হজ সম্পাদনরত হাজিরা রোজা রাখবেন না।
১০ জিলহজ (কোরবানির ঈদের দিন) এবং রোজার ঈদের দিন সবার জন্য রোজা রাখা নিষিদ্ধ। ১১, ১২ ও ১৩ জিলহজ হাজিরা রোজা রাখতে পারবেন; যাঁরা হজ পালনরত নন, তাঁদের এই তিন দিন রোজা রাখা নিষেধ।
হাজিদের জন্য কোরবানির ঈদের নামাজ নেই; যাঁরা হজ পালনরত নন, তাঁরা ১০ জিলহজ ঈদের নামাজ আদায় করবেন।
হজের ফরজ তিনটি: ১. ইহরামের নিয়ত বা ইচ্ছা করা, ২. অকুফে আরাফা করা, ৯ জিলহজ জোহর থেকে ১০ জিলহজ ফজরের আগপর্যন্ত যেকোনো সময় আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা, ৩. তাওয়াফে জিয়ারত করা, ১০ জিলহজ ভোর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত যেকোনো সময় কাবাঘর তাওয়াফ বা সাতবার প্রদক্ষিণ করা।
কবুলিয়ত বা গ্রহণযোগ্যতার দিক থেকে হজ তিন প্রকার—হজে মাবরুর, হজে মকবুল ও হজে মারদুদ। ‘হজে মাবরুর’ হলো সর্বোত্তম হজ, ‘হজে মকবুল’ হলো কবুল হজ আর ‘হজে মারদুদ’ হলো বাতিল হজ। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘হজে মাবরুরের বিনিময় জান্নাত ছাড়া কিছু নয়।’(মুত্তাফাক আলাইহি)
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম