বিরোধী রাজনীতি দমনে পাকিস্তানে যা হচ্ছে

ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ পাকিস্তান বা পিটিআইকে নিষিদ্ধ করতে চাইছে ক্ষমতাসীনেরা। অথচ জনসমর্থনে এটা এখন দেশটির প্রধান দল। পাকিস্তানের বর্তমান রাজনীতি নিয়ে লিখেছেন আলতাফ পারভেজ

পাকিস্তানে ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ এখনো সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়ফাইল ছবি: রয়টার্স

জনপ্রিয়তায় রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী শক্তিশালী হলেও রাষ্ট্রযন্ত্র পক্ষে না থাকলে তাদের কোণঠাসা করে রাখা যায়, অন্তত ক্ষমতাসীনেরা মরিয়া হয়ে সেই চেষ্টা করে। কীভাবে, কতটা আত্মঘাতী পথে কাজটি হতে পারে এবং এর ফল কী দাঁড়ায়, তার একটা করুণ দৃশ্যায়ন চলছে এখন পাকিস্তানে। সেখানে ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ পাকিস্তান বা পিটিআইকে নিষিদ্ধ করতে চাইছে ক্ষমতাসীনেরা। অথচ জনসমর্থনে এটা এখন দেশটির প্রধান দল।

ইমরানকে নির্মূল করার অভিযান যেভাবে শুরু

দক্ষিণ এশিয়ার দেশে দেশে রাজনৈতিক পরিভাষার নিজস্ব স্থানীয় চরিত্র আছে। যেমন ভারতে ক্ষমতাসীনেরা প্রতিপক্ষকে জনগণের সামনে ‘অ্যান্টি ন্যাশনাল’ বা ‘দেশদ্রোহী’ বলে সম্বোধন করে। বাংলাদেশে অনেক সময়ই বিরুদ্ধ মতাবলম্বীদের ‘পাকিস্তান চলে যেতে’ বলা হয়। আর পাকিস্তানে এখন বিরোধী মতগুলোকে তকমা দেওয়া হয় ‘ডিজিটাল সন্ত্রাসী’ বলে।

সেখানকার পরিভাষাকোষের সর্বমহলে ব্যবহৃত একটি শব্দ হলো ‘স্টাবলিশমেন্ট’। এই শব্দে সেখানকার সশস্ত্র বাহিনীকে বোঝানো হয়। পাকিস্তানের এই স্টাবলিশমেন্ট কয়েক বছর পরপরই রাজনীতিতে নতুন ‘পণ্য’ নিয়ে হাজির হয়।

সেই ধারাবাহিকতায় দুই থেকে তিন বছর আগেও পিটিআই ও তার প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান স্টাবলিশমেন্টের খুব পছন্দের ছিল। ২০২২-এ প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দেশের মুখ্য গোয়েন্দা কর্মকর্তা নিয়োগের অধিকার চাইলে, সেই ‘মধুচন্দ্রিমা’ শেষ হয়। স্টাবলিশমেন্ট একে বেয়াদবি হিসেবে শনাক্ত করে।

সেই থেকে ইমরানের কপাল পোড়া শুরু। প্রথমে ২০২২ সালের এপ্রিলে তাঁর বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলোকে একজোট করা হয়। রাতারাতি শরিফ বংশ ও ভুট্টো বংশ পাশাপাশি চলে আসে। পার্লামেন্টে আস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান।

তবে তাতেও রেহাই মেলেনি তাঁর। একের পর এক নানান ধরনের মামলা হতে থাকে। এখন বলা হচ্ছে, খোদ পিটিআইকেই নিষিদ্ধ করা হবে এবং এ জন্য সরকার সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন করবে।

সরকারের সর্বশেষ আক্রমণাত্মক উদ্যোগের একটা বড় কারণ, বহির্বিশ্বে পিটিআইয়ের প্রচারকাজের ব্যাপকতা পাওয়া। এ বছরের শুরুতে হয়ে যাওয়া জাতীয় নির্বাচনে স্টাবলিশমেন্ট ও শরিফ-ভুট্টোরা মিলেমিশে কীভাবে অনাচার করেছেন, তার অনেক চুম্বক তথ্য-উপাত্ত এ মাসে যুক্তরাজ্যের মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন পিটিআইয়ের প্রচারকেরা।

আরও পড়ুন

যুক্তরাজ্যের অন্তত ১২ জন এমপি এ রকম এক সভায় উপস্থিত ছিলেন। সেখানে পাকিস্তানি গবেষকদের উপস্থাপিত তথ্য-প্রমাণ এমন মোটাদাগের ছিল যে সেসবে বিশ্বাস স্থাপন না করে পারা যায় না।

এর আগে গত ২৫ জুন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক উভয় শিবিরের বিপুল ভোটে এমন একটা প্রস্তাব পাস হয়েছিল, যেখানে গত ৮ ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে ঘটে যাওয়া অনিয়মের তদন্ত চাওয়া হয়।

ওয়াশিংটন ও লন্ডন থেকে এ রকম খবরাখবর ইসলামাবাদের জন্য নিঃসন্দেহে বিব্রতকর। ধারণা করা হচ্ছে, এরই প্রতিশোধ হিসেবে পিটিআই নিষিদ্ধের আওয়াজ তোলা।

এল ‘ফায়ারওয়াল’

কারাগারে ঢোকানোর আগে-পরে গত দুই বছরে ইমরানকে কলঙ্কিত করার এত সব উদ্যোগ নেওয়া হয় যে সেগুলো মিলিয়ে অনেক বই লেখা যাবে। ভোটের আগে আগে তাঁকে ‘ব্যভিচারী’ পুরুষ হিসেবে প্রচার করা হয়। নতুন বিয়ের সময় কখন সেটা করেছেন, পাত্রীর ইদ্দতকালের আগে না পরে, এসব নিয়েও ইমরানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

কিন্তু এসবেও কাজ হচ্ছে না দেখে নির্বাচন ক্রমাগত পেছানোর চেষ্টা চলে। শেষ পর্যন্ত যখন নির্বাচন দিতেই হয়, তখন পিটিআইয়ের প্রতীক ‘ক্রিকেট ব্যাটে’র ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। এ কারণে দলটির প্রার্থীদের স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করতে হয়।

কিন্তু নির্বাচনে কথিত এই ‘স্বতন্ত্র’রা সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে যান। এ সময় নিয়ম অনুযায়ী এই ‘স্বতন্ত্র দল’কে পার্লামেন্টে নারী ও সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত আসনের কোটা থেকে বঞ্চিত করে দেশটির নির্বাচন কমিশন।

স্টাবলিশমেন্টের ইচ্ছেমতো, এর পরপরই নির্বাচন কমিশন শরিফদের মুসলিম লীগ ও ভুট্টোদের পিপিপিকে দিয়ে সরকার গঠন করায় এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় এসবের প্রতিবাদ বন্ধে ইন্টারনেট-ব্যবস্থায় ব্যয়বহুল ফায়ারওয়াল বসানো শুরু হয়। তারপর নিয়ন্ত্রণ আসে টুইটারে।

পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিসরে টুইটার খুব জনপ্রিয় ছিল। মূলত ভিন্নমতাবলম্বীদের জনবিচ্ছিন্ন করতে এসব নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। বিদেশে থাকা রাজনৈতিক কণ্ঠস্বরগুলো দমনেরও নানান আয়োজন চলছে। অর্থনীতির নাজেহাল দশার মধ্যে জনমতকে ধামাচাপা দিতে গিয়ে কেবল ফায়ারওয়াল বসাতে কয়েক বিলিয়ন রুপি খরচ করা হচ্ছে দেশটিতে। বলা হচ্ছে, ‘ডিজিটাল সন্ত্রাস’ বন্ধে এসব উদ্যোগ।

সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী আনুষ্ঠানিক এক সংবাদ সম্মেলনে ‘ডিজিটাল সন্ত্রাস’কে দেশের ‘নিরাপত্তার জন্য প্রধান হুমকি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাঁর কথায়, শাহবাজ শরিফ সরকার খুবই খুশি হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে মানুষ ‘আর্থিক সন্ত্রাসে’ বিপর্যস্ত। বিদ্যুতের ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে দিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে।

উচ্চ আদালতে পিটিআইয়ের পক্ষে রায়, জরুরি অবস্থার গুঞ্জন

স্টাবলিশমেন্টের সমর্থন, সহযোগিতা ও ইচ্ছায় যাবতীয় পদক্ষেপ নিলেও মুসলিম লীগ-পিপিপি জোট মোটেই ভালোভাবে দেশ চালাতে পারছে না। কোটি কোটি দরিদ্র মানুষের একটা দেশে অজনপ্রিয় হয়ে দীর্ঘকাল একটা সরকার চালানো কঠিন। এ বছরের শেষ নাগাদ পাকিস্তানের জনসংখ্যা হবে ২৫ কোটি।

এত বিশাল মানুষের একটা অর্থনীতি এখন প্রায় দেউলিয়া অবস্থায় রয়েছে। আমেরিকার সবুজসংকেতে আইএমএফ কিছু ঋণ দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার ভারসাম্য কোনোমতে ঠেকা দিয়ে রেখেছে। কিন্তু এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট হঠাৎ এক রায়ে বলেছেন, পিটিআইকে সংসদে সংরক্ষিত আসনের কোটা থেকে বঞ্চিত রাখা অবৈধ। এ রকম একটা রায় দেশটির রাজনীতিতে ভূমিকম্প হয়ে দেখা দিয়েছে।

উচ্চ আদালতের রায়ের পর এখন পিটিআইকে যদি সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী আসনের হিসাবে ‘সংরক্ষিত আসন’গুলোও দেওয়া হয়, তাহলে সরকার গঠনের এখতিয়ার দাঁড়ায় তাদেরই। সেই সম্ভাবনা থামাতে এ মুহূর্তে কারাগারের বাইরে থাকা পিটিআইয়ের অন্য নেতা-কর্মীদেরও গ্রেপ্তারের নতুন তৎপরতা শুরু হয়েছে।

আরও পড়ুন

দলটির মুখপাত্র হয়ে যিনিই মিডিয়ার সামনে কথা বলতে যাচ্ছেন, তাঁকেই আটক করা হচ্ছে। সর্বশেষ গ্রেপ্তার হয়েছেন দলীয় নেতা রউফ হাসান। ইমরানের তিন বোনের বিরুদ্ধেও সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শনের দায়ে অভিযোগ তোলা হয়েছে।

তারপরও স্টাবলিশমেন্ট সন্তুষ্ট নয়। তারা মুসলিম লীগ ও পিপিপিকে পরামর্শ দিচ্ছে ইমরানের দলকে নিষিদ্ধ করতে। কিন্তু তাতে দেশব্যাপী ব্যাপক বিক্ষোভের শঙ্কা রয়েছে এবং ক্ষমতাসীন দল দুটি আরও বেশি অজনপ্রিয় হয়ে পড়বে এতে।

তাহলে এর বিকল্প কী? বিকল্প হলো জরুরি অবস্থা বা সামরিক শাসন। বহুদিন পর আবারও পাকিস্তানে এই দুই বিকল্প নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আতাহার মিনাল্লাহ সম্প্রতি টিভি চ্যানেলগুলোকে সামরিক শাসনের পক্ষে প্রচারণার দায়ে অভিযোগ তুলেছেন।

রাজনৈতিক দমবন্ধ অবস্থার পার্শ্বফল হিসেবে অর্থনৈতিক সংকট ও সশস্ত্রতা

পাকিস্তানের দুই মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও চীন গত দুই বছর চলমান সব রাজনৈতিক অনাচার দেখেও না দেখার ভান করে চুপ করে আছে। তারা উভয়ে স্টাবলিশমেন্টকে হাতে রাখতে চায়। বেলুচিস্তান অঞ্চলে চীনের যে বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে, সেটার নিরাপত্তার জন্য চীন যেকোনো মূল্যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগিতা পেতে আগ্রহী।

অন্যদিকে দেশের ভেতর স্বৈরতন্ত্র রক্ষায় সমর্থনের বিনিময়ে এখানকার স্টাবলিশমেন্ট যুক্তরাষ্ট্রও পাকিস্তানে ভূকৌশলগত কিছু জায়গা দিতে প্রস্তুত। ২০২১-এর আগস্টে আফগানিস্তান ছাড়তে বাধ্য হয়ে ওয়াশিংটন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ওপর ক্ষুব্ধ হলেও কোনোভাবে পাকিস্তানে চূড়ান্ত প্রভাব হারাতে চাইছে না। এর ফল হিসেবে ইমরান খানের অপসারণের পর থেকে পাকিস্তানের ব্যাপারে বাইডেন প্রশাসনের আগ্রহ ক্রমাগত বাড়ছে।

‘ঠান্ডা যুদ্ধের’ কালে ছোট দেশগুলোকে হাতে রাখতে আমেরিকা-চীন-ভারত যেভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে উদাসীন থাকার নীতি নিয়েছে, পাকিস্তানকে তার জীবন্ত এক নজির বলা যায় এখন। এটা যদিও একমাত্র নজির নয়, তবে এ রকম ক্ষেত্রে ছোট দেশগুলোর শাসকদের পক্ষে দীর্ঘসময় ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন। চীন বা যুক্তরাষ্ট্র, কাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত, তা নিয়ে পাকিস্তানের স্টাবলিশমেন্টে ক্রমে মতদ্বৈধতা বাড়ছে।

তবে পাকিস্তানে ইতিমধ্যে চলতি অবস্থার মোটাদাগের দুটি পার্শ্বফল দেখা দিয়েছে। একটা হলো অর্থনৈতিক বিপর্যয়, অপরটি সশস্ত্র রাজনীতির বিস্তার। শেষের সমস্যাটি পাকিস্তানে এত গুরুতর আকার নিয়েছে যে সেখানে সশস্ত্র বাহিনীকে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশজুড়ে ‘টিটিপি’ নামে পরিচিত তেহরিক-ই-তালেবানের বিরুদ্ধে ‘আজমে ইজতেকাম’ (স্থিতিশীলতার অঙ্গীকার) নামে যুদ্ধাভিযানে নামতে হচ্ছে এবং ইতিমধ্যে ওই অঞ্চলের সংঘাতে প্রায় প্রতিদিন নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ানেরা মরছে।

মুসলিম লীগ, পিপিপি ও স্টাবলিশমেন্ট অনেক দিন থেকে টিটিপি সমস্যার ব্যাপকতার জন্য আফগান তালেবানদের দোষারোপ করছে। এখন অবশ্য বলা হচ্ছে, ইমরানের দলও টিটিপিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে।

তালেবান সশস্ত্রতার জন্য ক্রমাগত কাবুলকে অভিযুক্ত করা কূটনীতির ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে আত্মঘাতী প্রমাণিত হয়েছে। ইসলামাবাদের দিক থেকে ক্রমাগত অভিযোগ শুনতে শুনতে বিরক্ত আফগান সরকার ক্রমে তার ব্যবসা-বাণিজ্যের বিষয়ে ইরান ও ভারতের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এই কৌশলে তারা পাকিস্তান–নির্ভরতা অনেকখানি কমিয়ে ফেলেছে গত তিন বছরে।

এটা এখন বেশ কৌতুককর এক অবস্থা যে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগান অর্থনীতি যখন একটু একটু করে সবল হচ্ছে, পাকিস্তান তখন বিদেশি দেনায় হাবুডুবু খাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে মূল সমস্যাটা ঋণ নয়, ঋণের অনুৎপাদনমূলক ব্যবহার। জবাবদিহিহীন সরকার হলে সচরাচর এ রকমই ঘটে। এর একটি পার্শ্বফল হলো ঋণ পরিশোধে যত ব্যর্থতা বাড়ে, তত সমাজে দমন-পীড়ন বাড়িয়ে দেয় সরকার।

আইএমএফ বলছে, আগামী বছর থেকে পাকিস্তানকে কর হিসেবে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সংগ্রহ এখনকার চেয়ে দ্বিগুণ করতে হবে। দমন-পীড়ন ছাড়া এ রকম কর্মসূচি চালু করা কঠিন। তার জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী বিরোধী দলকে দমিয়ে রাখা ছাড়া অন্য কোনো উপায়ও হয়তো অজনপ্রিয় সরকারের হাতে নেই।

এদিকে আইএমএফের পরামর্শগুলোর যেকোনো সমালোচনাকেও রাষ্ট্রবিরোধী ‘স্যাবোটাজ’ হিসেবে প্রচার করছেন মন্ত্রীরা। অর্থাৎ জনজীবনের অর্থনৈতিক সংকটের দায়ভারও বিরোধী দলের কাঁধে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। সারসহ কিছু কিছু পণ্যে রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি প্রায় পুরোটা তুলে নিতে হবে শিগগির। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকগুলো বিক্রি হবে বলে শোনা যাচ্ছে।

গায়ের জোরে ও প্রচারমাধ্যমের জোরে রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের কোণঠাসা রেখে লাগাতার কর্তৃত্ব করে যাওয়ার যে নজির পাকিস্তানের স্টাবলিশমেন্ট রাখছে, সেটা দক্ষিণ এশিয়ায় মোটেই অভিনব নয়। তবে যেটা নতুন উপাদান দেখা যাচ্ছে, সেটা হলো, এ রকম শাসনে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঠেকানোর মতো বৈশ্বিক সহায়তা এখন আর কারও কাছে থেকে আগের মতো শর্তহীনভাবে পাওয়া যায় না।

শ্রীলঙ্কার মানুষ বিপুল দুঃখ-কষ্টের ভেতর দিয়ে যেসব দিন পার করেছে, পাকিস্তানে এখন সেই অধ্যায় শুরু হয়েছে। অন্য নজিরগুলোর বেলায়ও ভিন্ন কিছু ঘটনার সম্ভাবনা কম। এসবই হলো কার্যত ভিন্নমতকে ছাড় দেওয়ার ন্যূনতম গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির ঘাটতি থেকে সৃষ্ট ‘রোগবালাই’।

মুশকিল হলো, এ রকম অবস্থায় বিদেশি বিনিয়োগও মোটাদাগে কমে যায়। দেশটিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৯ বিলিয়ন ডলারমাত্র; অথচ বৈদেশিক দেনা প্রায় ১২৫ বিলিয়ন ডলার, যা জিডিপির ৪০ ভাগ হয়ে গেছে। সম্ভবত এ তথ্যই জানিয়ে দিচ্ছে পাকিস্তানের সমস্যা বিরোধী দল নয়, ক্ষমতাসীনেরা।

  • আলতাফ পারভেজ  ইতিহাস বিষয়ে গবেষক