আলতাফ পারভেজের বিশ্লেষণ
দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন রাজনীতির আকাঙ্ক্ষা ও কূটনীতির টানাপোড়েন
বিদায় নেওয়া বছরের চেয়ে ২০২৫ সালে দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বেশি অস্থিরতার আলামত দেখা যাচ্ছে। এসব অঞ্চলের রাজনীতি–অর্থনীতি–কূটনীতি নিয়ে লিখেছেন আলতাফ পারভেজ।
যেকোনো গণ–অভ্যুত্থান লম্বা এক অস্থিরতার কাল নিয়ে আসে। নতুন বছরে জুলাই আন্দোলনের পাঁচ মাস পূর্তির সময়ও বাংলাদেশ সেই অস্থিরতা আর অনিশ্চয়তার ভেতর দিয়েই যাচ্ছে। হয়তো এ পথের আরও ক্ষতবিক্ষত অংশ দেখা বাকি। একই ধরনের অবস্থার ছাপ আছে আশপাশের অনেক দেশে। আবার অনেক জনপদে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের কলাকৌশল ও আকাঙ্ক্ষার ছাপ পড়ছে।
বাংলাদেশর মতোই নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সন্ধানে আছে এ মুহূর্তে প্রতিবেশী মিয়ানমার, বিশেষভাবে আরাকান। পশ্চিমবঙ্গও মৃদুপায়ে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পথে হাঁটছে। মণিপুরের সহিংসতা মিজোরামকে জাতিগতভাবে আন্দোলিত করছে। মণিপুর, মিজোরামসহ আশপাশের জাতিগুলো নতুন প্রশাসনিক বন্দোবস্ত চাইছে।
কাছের অবস্থা ছাড়িয়ে দূরে চোখ ফেরালেও তেমনই দেখা যায়। নেপালে মাওবাদীদের উত্থান রাজনৈতিক কাঠামোয় যে নাড়া দিয়েছিল, সে অবস্থা এখনো থিতু হয়নি। পাশের দুই বড় প্রতিবেশীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার ছাপ কাঠমান্ডুর রাজনীতির মেরুকরণে এখনো বেশ নজর কাড়ে।
শ্রীলঙ্কায় গণ–অভ্যুত্থান রাজপক্ষেদের হটিয়ে দিলেও রাষ্ট্রের ঔপনিবেশিক ধরন পাল্টানোর পথ খুঁজছে। চীন-ভারতের ছায়া এখনো এড়াতে পারছে না মালদ্বীপ। বেলুচিস্তান ও সীমান্ত প্রদেশকে ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে পাকিস্তান। তুমুল সংঘাত বেধেছে তাদের সঙ্গে পাশের আফগান পশতুদের।
সম্ভাবনার হাতছানি চট্টগ্রামের দিকে
বাংলাদেশের গণ–অভ্যুত্থানের সিদ্ধান্তসূচক দিনটি গত ৬ আগস্টের বদলে ৫ আগস্ট কেন এগিয়ে আনা হয়েছিল, সেটা ঢাকায় এখনো ভালো করে জানাজানি হয়নি বলেই মনে হয়। মজার ব্যাপার হলো, এই অভ্যুত্থানের ভূরাজনৈতিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া দেখে আরাকানিরা বাধ্য হয়েছিল তাদের গেরিলা ‘টাইম-লাইন’ লক্ষ্য এগিয়ে আনতে। কারণ, ৫ আগস্টের পরপরই গণচীন মিয়ানমারে তার এত দিনের কৌশল অনেক পাল্টে ফেলেছিল।
২০২৫ সালে আরাকান ও চিন প্রদেশ ক্রমে যত বেশি স্বায়ত্তশাসিত চেহারা নেবে, তত বাংলাদেশ দেখবে দক্ষিণ-পূর্বে সম্পূর্ণ নতুন কয়েক জনপদের সঙ্গে তাকে সম্পর্ক গড়ার বন্দোবস্তে নামতে হচ্ছে। ঢাকায় বুদ্ধিমত্তা ও স্থিরতার কাল এলে সহজেই ক্যাম্প ভিক্টোরিয়া, আইজল ও আকিয়াব চট্টগ্রামের নতুন দিগন্ত হয়ে উঠতে পারে। মণিপুর দাঙ্গার স্থায়িত্ব যত বাড়ছে, তত দক্ষিণ-পূর্বের জনপদগুলো অপার এক সম্ভাবনার আকুতি নিয়ে বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে আছে।
গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত মিয়ানমারে আরও নাটকীয় কোনো অবস্থা বাংলাদেশের সামনে ‘অভিভাবকসুলভ’ ভূমিকার দাবি নিয়ে হাজির হতে পারে নতুন বছরে। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের খোঁজে ব্যস্ত থাকা ঢাকার নীতিনির্ধারক ভরকেন্দ্রগুলো তার জন্য কতটা প্রস্তুত, সে প্রশ্নও আছে। ভূরাজনীতিতে সম্ভাবনা হাতের মুঠোয় নিতে না পারলে সেটা ঝুঁকিতে পরিণত হয়।
পশ্চিমবঙ্গ-আসাম-ত্রিপুরায় বাংলাদেশবিদ্বেষের বাড়বাড়ন্ত
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-আরএসএসের উত্থান নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশের জন্য সতর্ক প্রস্তুতি দাবি করছে। আর ১৪-১৫ মাস পর পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন হবে। পরের দুই বছরে হবে আসাম ও ত্রিপুরায়। বাংলাদেশের গণ–অভ্যুত্থানকে ঘিরে আরএসএস-বিজেপির প্রচারযুদ্ধ মূলত এই তিন নির্বাচনকে লক্ষ্য করেই।
এর ভেতর পশ্চিমবঙ্গ দখল বিজেপির জন্য দিল্লি দখলের পরই দ্বিতীয় গুরুত্বের টার্গেট। গত বিধানসভা নির্বাচনে তারা ৩৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিল এখানে, যা আগের নির্বাচনের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। ২০১৬ সালে তারা এখানে ৩টি আসন পায়। ২০২১ সালে পায় ৭৭টি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনকে ব্যবহার করে আসন ও ভোট বৃদ্ধির এই গতিকে ভবিষ্যতে রীতিমতো ঝড়ে পরিণত করতে চায় বিজেপি। ঢাকা থেকে অনেকে বুঝে, না-বুঝে বিজেপির ‘গেম প্ল্যানে’ ইতিমধ্যে যথেষ্ট জ্বালানি জুগিয়ে দিয়েছেন।
‘মিনি বাংলাদেশ’ বলে কথিত সেন্ট্রাল কলকাতার মির্জা গালিব স্ট্রিটের মার্কেটগুলোর ফাঁকা ফাঁকা দশায় বাংলাদেশে অনেকেই উল্লসিত। তাঁরা এটা হয়তো খেয়াল করছেন না, দুই দিকে যেভাবে ভীতি ও ঘৃণার জাগরণ ঘটানোর প্রকল্পগুলো কাজ করছে, তাতে ভবিষ্যতের ঝামেলার আগুন পোড়াবে অনেক কিছু।
আরএসএসপন্থী মিডিয়ার চলতি লক্ষ্য স্পষ্ট; বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল ও সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ একটা রাষ্ট্র হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের মধ্যবিত্তের মনে ভীতিকর করে তোলা। ইতিমধ্যে তার বিরক্তিকর ছাপ পড়েছে কলকাতা ও আশপাশের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনে অভূতপূর্ব কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থায়। বইমেলা থেকে বাংলাদেশকে বাদ রাখার চেষ্টায়।
একই ধরনের লক্ষ্যে কিছুটা ভিন্ন কৌশলে এগোচ্ছে আরএসএস পরিবার আসাম ও ত্রিপুরায়। বাংলাদেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি বাংলাভাষীর বাস এই তিন রাজ্যে। বরাবরই এখানকার বাংলাভাষীদের প্রত্যাশা, বাংলাদেশ তাদের সংস্কৃতির রাজধানী হয়ে উঠুক। কিন্তু বাংলাদেশের গণ–অভ্যুত্থান কোনো কারণ ছাড়াই তাদের বাড়তি গেরুয়া বিপ্লবের ঝুঁকিতে ফেলেছে।
বাংলাদেশের তরুণ ‘সংস্কারবাদীরা’ ওই সব অঞ্চলের প্রগতিশীল শক্তিগুলোর সঙ্গে সাংস্কৃতিক মৈত্রী গড়ার কৌশলের বদলে নয়াদিল্লির শাসকদেরই পুরো ‘ভারত’ হিসেবে বিবেচনা করেছেন। তাঁরা সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বক্তৃতা-বিবৃতি দিতে শুরু করায় নাগপুরে আরএসএস সদপর দপ্তরের বেশ সুবিধাই হলো। উত্তর ভারতে ভাটার টানের মুখে বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে তারা এখন ভারতীয়দের মনোযোগ টানছে। শ্রীলঙ্কার জেভিপি অবশ্য এ রকম ভুলের ফাঁদে পড়েনি।
পরিণত তারুণ্যের রাজনৈতিক প্রতীক হয়ে উঠল জেভিপি
মোদি প্রশাসনকে বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সুযোগ না দিয়েই লঙ্কার তরুণ-তরুণীরা ভোট–বিপ্লবের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ ও পার্লামেন্ট দুটোই দখল করলেন চব্বিশে। শ্রীলঙ্কার গণ–অভ্যুত্থান প্রায় ব্যর্থ হওয়ার মুখে সেখানকার রাজনীতিমনস্ক তরুণ-তরুণীরা কী কৌশল নিয়েছিলেন, সেটা এখন বাংলাদেশের জন্য নজরকাড়া মডেল হতে পারে।
ফ্রন্টলাইন সোশ্যালিস্ট পার্টি (এফএসপি) ও জনতা বিমুক্তি পেরামুনার (জেভিপি) যে তরুণ কর্মী দল ওই পরিবর্তনে নেতৃত্ব দেয়, তারা সেখানে ঐতিহাসিকভাবে ‘ভারতবিরোধী’ শক্তি হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু গত দুই বছর তারা মূলত মনোযোগী ছিল বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার সংগঠন ও সংহতি বাড়ানোর কাজে। সেই সামাজিক শক্তির ওপর দাঁড়িয়ে তারা ভারতের শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে পারস্পরিক এক ‘অনাক্রমণমূলক সমঝোতা’য় এসে নির্বাচনে প্রথাগত রাজনৈতিক কুলীনদের ধূলিসাৎ করে নির্বিঘ্নে কলম্বোয় প্রবেশ করল।
২০১৯ সালে যে জেভিপি জোট ৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিল, এবার তারা পেল ৪২ শতাংশ। তার চেয়ে বড় ঘটনা, পার্লামেন্টের নির্বাচনে তারা হিন্দু-তামিলদের রাজনৈতিক রাজধানী জাফনায় ছয়টা আসনের তিনটা পেয়েছে। এই তিন আসন পাওয়া তাকে ভারতের শাসকশ্রেণির সামনে যেভাবে নৈতিক শক্তি জুগিয়েছে, সেটা সিংহলি দক্ষিণের ত্রিশ আসনের চেয়ে বেশি কিছু।
জেভিপি একসময় ভারতীয় সৈনিকদের বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কায় সশস্ত্র যুদ্ধে নেমেছিল। এখন দিব্যি নয়াদিল্লিকে শান্ত রাখার কায়দা শিখে গেছে। তাদের কৌশল খুব সাদামাটা। জাতিগত বিবাদ আর বাড়াতে চায় না তারা।
বাস্তববাদী একই রকম কৌশল নিচ্ছে এ মুহূর্তে মালদ্বীপের তথাকথিত ভারতবিরোধী সরকারও। এই দুই সরকার দেখাচ্ছে, কোথায় অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সীমানার শেষ, কোথায় আন্তরাষ্ট্রীয় বুদ্ধিমত্তার শুরু এবং কোথায় এই দুটোকে মেলাতে হয়।
শ্রীলঙ্কার মধ্যপন্থী অনূঢ়া সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের ৫ আগস্ট–পরবর্তী সরকারের সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক মৈত্রীর যে বিপুল সুযোগ রয়েছে, তার কথা ঢাকায় কেউ ভাবছে কি না, বোঝা মুশকিল। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জোরের সঙ্গে কাছে টেনে বাংলাদেশ তার গণ–অভ্যুত্থানকে দ্রুত আরও উচ্চতায় নিতে পারত; এখনো হয়তো সে সুযোগ আছে। তবে বাংলাদেশকে এ মুহূর্তে পকিস্তানের দিকেই বেশি আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে। যদিও ইসলামাবাদের ‘ডিপস্টেট’ নিজ দেশে গণমানুষের বিপুল ক্ষোভের মুখে আছে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনৈতিক ও অন্যায্য ভূমিকার মাধ্যমে।
পাকিস্তান-ভারত সীমান্তের বদলে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে পাকিস্তান-আফগান সীমান্ত
২০২৪ পাকিস্তানকে অনেক ধরনের সংকটে ফেলে নতুন বছরে নিয়ে এসেছে। প্রথমত, সেখানকার ‘জেন-জি’রা রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর ‘ভেটো’ ক্ষমতা পছন্দ করছে না। সেই সূত্রেই ইমরানের দল বাংলাদেশ ধাঁচের একটা রক্তাক্ত গণ–অভ্যুত্থানের চেষ্টায় আছে এ মুহূর্তে। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদকে জেলে পুরে সশস্ত্র বাহিনী–সমর্থিত সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে চাইলেও পার্শ্ব উপসর্গ হিসেবে সশস্ত্র তালেবান হয়ে উঠেছে ‘অদম্য’। আফগান সরকারের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সীমান্ত সংঘাতেও জড়াচ্ছে পাকিস্তান।
অতীতে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে নিয়মিত রক্তপাত হলেও ২০২৪–এ নাটকীয়ভাবে সেই দৃশ্য চলে গেছে ডুরান্ট লাইনের দিকে। তালেবান এ সীমানা মানছে না। এর ভেতর কাছের বেলুচরা চাইছে আরেকটা ‘নতুন বাংলাদেশ’ হয়ে উঠতে।
গদার বন্দরে গণচীনের উপস্থিতি বেলুচিস্তানজুড়ে নতুন অর্থনৈতিক বন্দোবস্তের দাবি উসকে দিয়েছে এবং ক্রমে তা সশস্ত্র চেহারা নিচ্ছে। এখানে চীনের সামরিক ঘাঁটিরও গুঞ্জন আছে। এসব কারণে নতুন বছরে মিয়ানমারের পাশাপাশি সবার চোখ থাকবে পাকিস্তানের ওপর।
ইমরানের পিটিআই সেখানে শক্তিশালী আমলা সমাজ ও রাজনৈতিক কুলীনদের ঐতিহাসিক চক্র ভাঙার চেষ্টা করছে। দলটির এই চেষ্টার সঙ্গে অনেকখানি মিল আছে বাংলাদেশের জেন-জিদের, যাদের ক্ষোভের তালিকায় ছিল ব্যবসায়ীদের মাফিয়া অংশও।
কিন্তু উভয় দেশে মধ্যপন্থীদের সঙ্গে লেপটে আছে দক্ষিণপন্থীরাও। সে জন্য উভয় পরিসরের রাজনৈতিক পরিণতিতে অনিশ্চয়তার ছায়া আছে, যার আরেক খারাপ উপসর্গ হিসেবে আপাতত এসব দেশে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তাও কাটছে না; যদিও সবাই মিলে দক্ষিণ এশিয়ায় আগামী দুই বছর ৬ শতাংশের বেশি হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটতে চলেছে বলে বিশ্বব্যাংকের অনুমান। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কার ঘুরে দাঁড়ানো মনোযোগ কাড়ছে।
শ্রীলঙ্কা–নেপাল–মালদ্বীপের নেতারা কূটনৈতিক ভারসাম্য রেখে এগোতে চাইছেন
বিগত বছরে দক্ষিণ এশিয়ায় একটা প্রবণতা হিসেবে দেখা গেছে কলম্বো ও কাঠমান্ডুর শাসক বামপন্থীদের সঙ্গে সহজে মানিয়ে নিচ্ছে বড় দুই প্রতিবেশী। অনূঢ়া এ বছর দুবার রাজনৈতিক সহযোগীদের বিশাল দল নিয়ে ভারতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে গেছেন। উভয় দেশ নিজ মুদ্রায় আন্তরাষ্ট্রীয় লেনদেনে সম্মত হয়েছে। দুই সপ্তাহের মধ্যে অনূঢ়া গণচীনেও যাচ্ছেন।
একইভাবে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণায় প্রেসিডেন্ট হলেও গেল অক্টোবরে সফর করে গেলেন নয়াদিল্লি এবং তার আগে চীন। মুইজ্জু, অনূঢ়া এবং নেপালি নেতারা এশিয়ার প্রধান দুই অর্থনীতির সঙ্গে ভারসাম্য রেখে এগোতে চান। লক্ষ্য অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থান বাড়ানো এবং তরুণদের শান্ত রাখা।
‘ইন্ডিয়া আউট’ স্লোগান তুলে ক্ষমতায় এলেও মুইজ্জু পর্যটন খাত চাঙা রাখতে ভারতীয় পর্যটকদেরও চাইছেন এখন। মরিশাসের সঙ্গে জলসীমা নিয়ে যে বিরোধ আছে, তাতে নিজেদের জোর বাড়াতেও ভারতকে দরকার তাঁর। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অঙ্কও মুইজ্জুকে নয়াদিল্লির কাছাকাছি আনছে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের সমর্থকদের সহায়তায় ছদ্মপ্রার্থী হিসেবে মুইজ্জু নির্বাচিত হলেও এখন আর ইয়ামিনের ওপর নির্ভরশীল থাকতে চান না, বরং আরেক দফা ক্ষমতায় থাকতে তিনি আগ্রহী। গড়ে তুলেছেন নতুন এক ‘কিংস পার্টি’। ভারত সফরকালে তিনি বিজেপির শীর্ষ নেতা নাড্ডার সঙ্গেও বসেছিলেন।
অনেকের অনুমান, ভবিষ্যতে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক মুইজ্জুকে ইয়ামিন সমর্থকদের বৈরিতা থেকে বাঁচাবে। শ্রীলঙ্কায় অনূঢ়ারও বিবেচনা কাছাকাছি। ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক তামিলদের শান্ত রাখতে সাহায্য করবে। তাতে দেশটিতে বহুদিক থেকে বিনিয়োগ বাড়বে। নিশ্চিতভাবে চীনও তাতে সামিল থাকবে বড় আকারে।
চীন-ভারত কাকে কতটুকু দিয়ে সামলে রাখা যাবে, সেই অঙ্কে বিগত বছর সবচেয়ে বেশি কাটাকুটি হলো নেপালে। গত ২৪ মাসে সেখানে চারবার পার্লামেন্টে আস্থা ভোটের অধিবেশন বসেছিল। শেষমেশ চীনঘেঁষা ইউএমএল এবং ভারতপন্থী নেপালি কংগ্রেস জোট বেঁধে যেন দক্ষিণ এশিয়ায় সবাইকে জানিয়ে দিল যে ভারসাম্য রক্ষা করে এগোনোই টিকে থাকার পথ। এমনকি অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বেলায়ও সেটা সত্য।
ভারতে ২০২৪ সালেই দেখা গেল হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ভরকেন্দ্র উত্তর প্রদেশে বিজেপির উগ্রতা তার বড় ক্ষতির কারণ ঘটিয়েছে। আগের নির্বাচনের ৭৫ আসন থেকে এবার তাদের শক্তি নেমেছে ৩৩ আসনে। একইভাবে প্রতিবেশী দেশে বাড়তি প্রভাবের নীতির মাধ্যমেও এই দল ভারতের জন্য বিপর্যয় বয়ে এনেছে, বিশেষভাবে শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশে। তবে মোদির আমলেই এ বছর ভারত জাপানকে পেছনে ঠেলে চতুর্থ বড় অর্থনীতির স্বীকৃতি আদায় করতে পারে বলে আইএমএফের অনুমান।
ভারতের পাশাপাশি পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় বিশাল এক মধ্যবিত্ত এবং এর ভেতরকার জেন-জির উত্থান নতুন রাজনৈতিক পছন্দ ও নমনীয় কূটনীতির পাশাপাশি আন্তদেশীয় এক অর্থনৈতিক সম্ভাবনারও ইঙ্গিত দিচ্ছে।
আলতাফ পারভেজ দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস বিষয়ে গবেষক