বিশ্লেষণ
রোহিঙ্গা শরণার্থী তরুণদের কর্মসংকট সমস্যা বাড়াবে
মিয়ানমারে গণহত্যার শিকার হয়ে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার সাত বছর পূর্ণ হলো। ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। কর্মসংস্থানহীন থাকা বিপুল এ জনগোষ্ঠী নানা অপরাধকর্মে জড়িয়ে পড়ছে, যার নেতিবাচক প্রভাব আমরা নানাভাবে দেখতে পারছি। তাদের কর্মসংস্থানের জন্য পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ নিয়ে লিখেছেন শেখ তৌফিক এম হক, ইশরাত জাকিয়া সুলতানা, এস এম মাশরুর আরেফিন
সোহেলের পরিবারকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ধ্বংস করে দিয়েছিল। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর একটু ভালোভাবে বাঁচার আশা করেছিল সে। কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। শরণার্থীশিবিরে থাকা অন্য কিশোরদের মতো সোহেলও পড়ে যায় অপরাধের ফাঁদে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে প্রবেশের পর থেকে সোহেল কিশোর বয়সেই মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। তার না ছিল স্কুলে যাওয়ার সুযোগ, না ছিল আয়–রোজগারের সুযোগ।
মাসের পর মাস অলস সময় কাটাতে গিয়ে পরিচয় হয় কিছু অবৈধ ব্যবসায়ীর সঙ্গে। ধীরে ধীরে সোহেল হয়ে ওঠে একজন মাদক পাচারকারী। পুলিশের কাছে অপরাধের জন্য অন্যদের সঙ্গে সেও ধরা পড়লে যে প্রশ্নটি অনিবার্যভাবে চলে আসে তা হলো—এই পরিণতির জন্য কি সোহেল দায়ী?
রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে কর্মসংস্থানের অভাবে অনেকেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। মাদক পাচার, চোরাচালানসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তারা নিজেদের এবং এ দেশের জন্য বিপদ ডেকে আনছে। বাংলাদেশ মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিল। তবে সেই আতিথেয়তা ক্রমেই বৈরিতায় রূপ নিয়েছে তাদের দেশে ফেরার অনিশ্চয়তার কারণে।
সংকটের শুরু ও বর্তমান
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সর্বশেষ আগমনের ফলে সৃষ্ট সংকটের সাত বছরের বেশি সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। যদিও এ সমস্যা দীর্ঘদিনের। ১৯৭৭-৭৮ সালে অপারেশন ড্রাগন কিং নামে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির চক্র শুরু হয়। তবে ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নে যে বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ঘটে, তাতে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় রোহিঙ্গা প্রবেশের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ফলে পূর্ববর্তী সংকটগুলোর চেয়ে এখনকার সংকটও অনেকাংশে ভিন্ন। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই দমন-পীড়ন মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। আর তারই প্রতিবেশী দেশ হয়ে সে সময় বাংলাদেশ এই শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দাবি নিরাপদ, স্বেচ্ছা ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসন। কিন্তু মিয়ানমারের বর্তমান অবস্থা প্রত্যাবাসনের এই শর্ত বাস্তবায়নের জন্য অনুকূল নয়। ৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের কেন্দ্রস্থল থেকে রোহিঙ্গারা নাফ নদের তীরে বাংলাদেশে পালানোর উপায় খুঁজতে গিয়েছিল। কিন্তু তাদের লক্ষ্য করে ড্রোন বোমা ও গোলা নিক্ষেপ করে। সেদিন শিশু, নারী, বৃদ্ধসহ কমপক্ষে ২০০ রোহিঙ্গা নিহত হয়, আহত হয় ৩০০। এ ঘটনার জন্য দায়ী করা হচ্ছে আরাকান আর্মিকে। (দ্য গার্ডিয়ান, ১২ আগস্ট ২০২৪)
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে মিয়ানমারের তৎকালীন ক্ষমতাসীন অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন বেসামরিক সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিল। সে সময় তারা রোহিঙ্গাদের ‘জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক’ হিসেবে উল্লেখ করেছিল। যদিও ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটিকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল, সেটি বাস্তবে আলোর মুখ দেখেনি। ২০১৯ সালে চীনের উদ্যোগে আরেকটি প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টা নেওয়া হয়, কিন্তু নাগরিকত্বের বিষয়টি সমাধান না হওয়ায় রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় যেতে চায়নি। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শাসনক্ষমতা দখল করার পর, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন–সংক্রান্ত আলোচনা কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।
এখানে উল্লেখ্য, ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই মিয়ানমার জান্তা বামারদের সমর্থন পেয়ে এসেছে, যারা সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতিগোষ্ঠী। তবে এবার বামাররা জান্তা সরকার থেকে সমর্থন তুলে নিয়েছে, ফলে জান্তার অবস্থান উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ‘থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের’ মাধ্যমে তিনটি প্রধান সশস্ত্র গোষ্ঠী জান্তাদের কোণঠাসা করে ফেলেছে। এর মধ্যে আরাকান আর্মি আরাকান রাজ্যের রাজধানীসহ কিছু শহর বাদে অন্যান্য অংশের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলেছে। (৩১ জুলাই ২০২৪, নিকেই এশিয়া)
মূলত আরাকানের এ এলাকারই বাসিন্দা রোহিঙ্গারা। এমন অবস্থায় জান্তা–সমর্থিত সরকারের সঙ্গে রোহিঙ্গা বিষয় নিয়ে আলোচনা কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা প্রশ্নের দাবি রাখে। তা ছাড়া নন-স্টেট অ্যাক্টর হিসেবে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা যেমন জরুরি, আবার এটাও মনে রাখতে হবে যে তাদের সঙ্গে আলোচনার আইনগত ভিত্তি কূটনৈতিক মহলে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
বিপথে রোহিঙ্গা তরুণেরা
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটি টেকসই সমাধান কী হতে পারে? ইউএনএইচসিআর-বাংলাদেশ সরকারের (২০২৪) যৌথ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে বসবাসরত শরণার্থীদের বয়সভিত্তিক বিভাজনে দেখা যায় ৫১ শতাংশ (৪৭২,৫৪৬) শিশু (০ থেকে ১৭ বছর), ৪৫ শতাংশ (৪১৬,৯৫২) প্রাপ্তবয়স্ক (১৮ থেকে ৫৯ বছর), ৪ শতাংশ (৩৭,০৬২) বৃদ্ধ (৬০+) এবং ১ শতাংশ (৯,২৬৫) প্রতিবন্ধী। এই তরুণ সম্প্রদায়কে যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে না লাগানো গেলে, তাদের বিপথে চলে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, কর্মসংস্থানের অভাবে ইতিমধ্যে রোহিঙ্গা তরুণদের অনেকে মাদক পাচার, অবৈধ কাজ বা তরুণীদের কেউ কেউ দেহ ব্যবসায় নিযুক্ত হয়েছে। যা কেবল তাদেরই নয়, স্থানীয় জনগণকেও হুমকির মুখে ফেলছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা মুসলিম হওয়ার কারণে সারা দেশের জনসাধারণের মনোবৃত্তি তাদের পক্ষেই ছিল। তাদের এ দেশে আসার পর আমরা বিদেশি এনজিও এবং জাতিসংঘের পক্ষ থেকে তহবিল পাই। এই তহবিলের মাধ্যমেই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাহায্য করছে বাংলাদেশ। কিন্তু ইতিমধ্যে বৈশ্বিক নানা কারণে তহবিলে টান পড়তে শুরু করেছে। তাহলে কোথা থেকে রোহিঙ্গাদের সহায়তা দানের অর্থ জোগাড় করবে বাংলাদেশ?
অধিকাংশ অভিবাসন গবেষকের মতে, শরণার্থীদের সাধারণত গড়ে ১৭ বছর অপেক্ষা করতে হয় একটি স্থায়ী সমাধান পাওয়ার আগে। ৭ বছর ইতিমধ্যে অতিবাহিত হয়ে গেছে, ১০ বছর এখনো বাকি, যদি ২০১৭ সাল থেকে সময় গণনা করি। আর ১৯৭৮ থেকে হিসাব করতে চাইলে অপেক্ষার সময়টি বেশ ভালোই দীর্ঘ। এমন অবস্থায় তহবিল সংকট এবং বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে রোহিঙ্গাদের বিনা কাজে বসিয়ে রাখা কতটা যুক্তিসংগত? ২০১৭ সালে আসা একজন রোহিঙ্গাকেও আমরা ফেরত পাঠাতে পারিনি। বর্তমান মিয়ানমারে পরিস্থিতিতে সেটি আরও বেশি অনিশ্চিত হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় আমাদের স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করা জরুরি।
সমস্যার সমাধান যেভাবে হতে পারে
বাস্তবতা বিবেচনায় এ সমস্যা সমাধানের আশা তিনভাবে করা যায়, যার প্রতিটিতেই রয়েছে প্রতিকূলতা:
১. বর্তমান অবস্থা বজায় রাখা
বর্তমানে যেমনভাবে চলছে, সেভাবেই চলতে পারে। সে ক্ষেত্রে আমাদের পুরোপুরি বিদেশি অনুদানের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হবে এবং বৈশ্বিক পটপরিবর্তনে সামনের দিনগুলোয় অনুদানের অনিশ্চয়তায় রোহিঙ্গা সংকট জটিলতর হয়ে উঠবে। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ ও গাজা যুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহের দিকে এখন সারা পৃথিবীর মনোযোগ। সুতরাং এই তহবিল অব্যাহত থাকা বা সহসা বেড়ে যাওয়ার কোনো কারণ দেখা যায় না। তাই প্রত্যাবাসনের আশায় বসে থাকা রোহিঙ্গাদের জন্য এবং আমাদের দেশের জন্যও বাস্তবসম্মত সমাধান নয়।
২. আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানো
সংকট সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বরাবরই পেছনে। আন্তর্জাতিক চাপকে শুধু অনুদান এবং ত্রাণের বাইরে নিয়ে গিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে হবে। আমাদের কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে শুধু যে বাড়াতে হবে তা নয়, সেই সঙ্গে কৌশলী হতে হবে, যেন প্রভাবশালী দেশগুলো (জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য ও চীন–ভারতসহ আঞ্চলিক শক্তি) রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে সক্রিয় ভূমিকা নিতে আগ্রহী হয়। বাংলাদেশের কূটনীতি বরাবরই এ জায়গাতে পিছিয়ে আছে। তবে রাতারাতি দুর্বল কৌশলগুলো সবল হয়ে উঠবে, এমনটা আশা করা যায় না।
৩. অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অন্তর্ভুক্তি
নাগরিকত্বের প্রশ্ন একেবারেই বাদ রেখে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অন্তর্ভুক্তির ব্যবস্থা রোহিঙ্গা সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দেওয়ার একটি বাস্তবসম্মত বিকল্প পথ। বিপুলসংখ্যক কর্মক্ষম রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আমাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ইতিমধ্যে ব্র্যাকসহ অন্যান্য এনজিও কৃষিখাতে এ কাজ শুরু করেছে। আমাদের এই প্রচেষ্টাকে আরও প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ও বিশেষ কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জন্য উপার্জনের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। দরকার হলে বিশেষ অর্থনৈতিক জোন তৈরি করে এ ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে তাদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হয় এবং আমাদের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করা যায়।
সিরীয় শরণার্থীদের অভিজ্ঞতা
সিরিয়া থেকে আসা শরণার্থীদের সফলভাবে জার্মানি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করেছে। বেশির ভাগ সিরীয় শরণার্থীকে সাময়িক সুরক্ষা প্রদান করা হয়েছে, অস্থায়ী সুরক্ষাপ্রাপ্ত অবস্থায় নিবন্ধন করলে তারা স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সেবা এবং নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকায় ও পেশায় কাজ করার অনুমতির জন্য আবেদন করার অধিকার পায়। এ উদাহরণগুলো বিবেচনা করা যেতে পারে।
বাংলাদেশে একটি ফ্যাশন হাউস ভাসানচরে রোহিঙ্গা নারীদের উৎপাদনশীল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ দান ও কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা নারীকে তারা পোশাক তৈরির ওপর নানা ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এটিকে আরও বাড়ানো যায় এবং কক্সবাজারের রোহিঙ্গাদের কর্মসংস্থানের জন্যও এটি চমৎকার উদহারণ হতে পারে। পৃথিবীর অনেক দেশে নাগরিক না হয়েও শরণার্থীরা আশ্রয়দানকারী দেশের শ্রমবাজারে তথা অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।
কিন্তু এ ব্যবস্থার প্রধান ঝুঁকি হলো বাংলাদেশের সমাজের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের একীভূত হওয়ার আশঙ্কা। এই ঝুঁকি নিরসনের জন্য আমাদের একটি কার্যকর ভারসাম্য ব্যবস্থা রাখতে হবে। আরও একটি বিপজ্জনক দিক হলো, এ উদ্যোগ মিয়ানমারকে ভুল বার্তা দিতে পারে। আন্তর্জাতিক মহলও ভাবতে পারে, গণহত্যার শিকার রোহিঙ্গাদের তাহলে বাংলাদেশ ‘গ্রহণ’ করে নিল। কোথাও ভুল বার্তা যেন না যায়, সে জন্য একদিকে যেমন রোহিঙ্গা বিষয়ে যাঁরা গবেষণা করেন তাঁদের মতামত নিতে হবে, অন্যদিকে বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশের বাইরে বাস করা রোহিঙ্গাদের সঙ্গেও কথা বলতে হবে।
সেই সঙ্গে এটিও বুঝতে হবে, আপাতত এর বাইরে বাস্তবসম্মত আর কোনো পথ সংকট নিরসনের জন্য খোলা নেই। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেবে না। তৃতীয় কোনো দেশেও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পুনর্বাসন নিয়ে আমাদের নানাভাবে উদ্যোগী ও কৌশলী হতে হবে। অদূরদর্শী কূটনীতির ফলে ইতিমধ্যে অনেকটা সময় নষ্ট হয়েছে। এভাবে রোহিঙ্গাদের কর্মহীন অবস্থায় রেখে দিলে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি—উভয়ের জন্য পরিস্থিতি জটিলতর হয়ে উঠবে।
রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবসে আমাদের স্মরণ করা উচিত, তারা শুধু জীবনের নিরাপত্তা ও সম্মানের খোঁজে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের কাহিনি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে আমরা যদি তাদের সঠিক দিকনির্দেশনা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ দিতে পারি, তবে তারা অপরাধের পথ থেকে সরে এসে একটি সৃজনশীল ও উৎপাদনশীল জীবনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। আমরা একটি কার্যকর ও মানবিক পন্থার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে পারি, যেন তাদের সঙ্গে সম্পর্কটা বৈরিতায় রূপান্তরিত হওয়ার গল্পগুলো আর পুনরাবৃত্তি না হয়।
ড. এস কে তৌফিক এম হক, ড. ইশরাত জাকিয়া সুলতানা, এস এম মাশরুর আরেফিন শিক্ষক ও গবেষক, এসআইপিজি, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়