ট্রাম্পের ওপর এই হামলার কারণ কী

আহত ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছেছবি : এএফপি

শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যের বাটলারে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমাবেশে গুলি চালানোর ঘটনা বলছে যে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক সহিংসতার বিরুদ্ধে জোরালো আওয়াজ তোলার সময় এসেছে।

ট্রাম্পের সমাবেশে যে ব্যক্তি গুলি চালিয়েছেন, তাঁর রাজনৈতিক বিশ্বাসই–বা কী, এটা এখনো পরিষ্কার নয়। সিক্রেট সার্ভিস জানিয়েছে, ট্রাম্প নিরাপদ। কিন্তু তাঁর সমাবেশে আসা অন্তত একজন এবং সন্দেহভাজন হামলাকারী নিহত হয়েছেন।

কিন্তু এ ঘটনা নিশ্চিত করেই ইঙ্গিত দিচ্ছে, নির্বাচনী বছরে অঘটনের মাত্রা বাড়বে। বিশেষ করে, যখন নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা অব্যাহত হুমকি ও সহিংসতার ভয় পাচ্ছেন।

গত জুনের শেষ দিকে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপে বেরিয়ে এসেছে, ট্রাম্পের পক্ষে সহিংসতায় সমর্থনের চেয়ে তাঁর বিরুদ্ধে সহিংসতায় সমর্থন বেড়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক আমেরিকানদের মধ্যে ১০ শতাংশ বা ২ কোটি ৬০ লাখ মানুষ ট্রাম্পের বিপক্ষে সহিংসতায় সমর্থন জানিয়েছেন। অন্যদিকে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ বা ১ কোটি ৮০ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ট্রাম্পের পক্ষে সহিংসতায় সমর্থন করেছেন। জানুয়ারি মাসের জরিপে ট্রাম্পের পক্ষ হয়ে সহিংসতায় অপেক্ষাকৃত বেশি মানুষ সমর্থন করেছিলেন।

যে ২ কোটি ৬০ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদে আসা ঠেকাতে সহিংসতাকে সমর্থন করেন, তাঁদের ৩০ শতাংশের বেশি মানুষের হাতে নিজেদের বন্দুক আছে। আর ৮০ শতাংশ মানুষের ইন্টারনেট অর্গানাইজেশনাল টুলসে প্রবেশগম্যতা আছে।

শনিবার রাতে গোলাগুলির ঘটনার আগে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিকাগো প্রজেক্ট অন সিকিউরিটি অ্যান্ড থ্রেটসের পরিচালক বব পেপ এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘ট্রাম্পের পক্ষ নিয়ে সহিংসতা করার চেয়ে তাঁর বিরুদ্ধে সহিংসতা করার মনোভাব বেশি লোকের মধ্যে রয়েছে। সুতরাং ট্রাম্পের শাসনের বিরোধিতা করে বাঁ দিক থেকে আসা সহিংসতার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বরাতে সিবিএস নিউজের খবরে জানা যাচ্ছে, রিপাবলিকানদের সম্মেলনটি বিদেশি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, হোমগ্রন (দেশের ভেতরে জন্ম নেওয়া) সহিংস চরমপন্থী, দেশের ভেতরকার সহিংস উগ্রপন্থী গোষ্ঠী, তথাকথিত লোন-উলফ (একক হামলাকারী) কিংবা বন্দুকবাজদের হামলার শিকার হতে পারে বলে বড় ধরনের উদ্বেগ আছে।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে রাজনৈতিক সহিংসতার প্রতি সমর্থনের এই উত্থান চরম পক্ষপাতিত্ব, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপতথ্যের ছড়াছড়ি এবং ট্রাম্প ও তাঁর মিত্রদের সহিংস কথাবার্তার মধ্য দিয়ে ঘটেছে। এসব বিষয় একত্র হওয়ায় ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি হাজার হাজার মানুষ ক্যাপিটল হিলে হামলা চালিয়েছিলেন।

রাজনৈতিক সহিংসতা ও গণতন্ত্রের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বিষয়ে একটা সিরিজের অংশ হিসেবে গার্ডিয়ানে প্রথম প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় জানা যাচ্ছে, দুই পক্ষের (ট্রাম্পের পক্ষে ও বিপক্ষে) মধ্যেই সহিংসতায় সমর্থনের কারণ হলো, স্টাবলিশমেন্টের ওপর অবিশ্বাস ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব।

দুই পক্ষে যাঁরা সহিংসতা সমর্থন করেন, তাঁরা প্রধানত শহুরে আমেরিকান।
সমীক্ষায় আরও উঠে আসে, প্রাপ্তবয়স্ক আমেরিকানদের মধ্যে ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ মনে করে, আজকে যুক্তরাষ্ট্রে যে পরিস্থিতি, তাতে নির্বাচন দেশটির সবচেয়ে মৌলিক রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারবে না।

অধ্যাপক পেপ বলেছেন, ‘ট্রাম্পের ওপর গুলি আমাদের দেশের রাজনৈতিক সহিংসতার প্রতি সমর্থনের ফলাফল। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রতি প্রতিশোধের হুমকির বিষয়েও আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়া প্রয়োজন।’

তিনি আরও বলেছেন, যে দলের বিরুদ্ধেই সহিংসতা হোক না, সবাইকে তাৎক্ষণিকভাবে তার নিন্দা জানানো জরুরি।

ট্রাম্পের সমাবেশে গোলাগুলির ঘটনায় রাজনৈতিক নেতাদের দিক থেকে যে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া এসেছে, সেটা বৃহৎ অর্থে এই ধারণারই অনুরণন। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের সহিংসতার কোনো জায়গা নেই। এ ঘটনার নিন্দা জানানোর জন্য আমাদের অবশ্যই এক জাতি হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

বারাক ওবামা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমাদের গণতন্ত্রে রাজনৈতিক সহিংসতার কোনো ঠাঁই নেই।’

কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক সহিংসতা নানা রূপ পেয়েছে। এর মধ্যে গত ৬ জানুয়ারির বিদ্রোহ, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও সহিংস হুমকি এবং নির্বাচনী কর্মকর্তাদের লক্ষ্যবস্তু করার প্রচেষ্টা।

২০২০ সালের অক্টোবর মাসে সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র এক মাস আগে মিশিগানের গভর্নর গ্রিচেন হুইটমারকে অপহরণের ষড়যন্ত্র করা হয়। আর নির্বাচনের মাত্র এক সপ্তাহ পর নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা একজন নির্বাহীকে লুকিয়ে থাকতে বাধ্য করা হয়েছিল। কারণ হলো, পরাজিত পক্ষের বিশ্বাস ছিল, নির্বাচনের ফলাফল চুরি করা হয়েছে। তাঁরা ওই নির্বাহীর বাড়ির ঠিকানা প্রকাশ করে দিয়ে তাঁর জন্য মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন।

যাঁরা চরম রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাস করেন, ইন্টারনেটে তাঁদের কাছাকাছি হওয়ার সুযোগ অনেক বেশি। ন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম ফর দ্য স্টাডি অব টেরোরিজম অ্যান্ড রেসপন্সেস টু টেররিজমের সূত্রমতে, যুক্তরাষ্ট্রে যে রাজনৈতিক সহিংসতা ঘটে, তার বেশির ভাগই এমন লোকেরা ঘটান, যাঁরা কোনো আনুষ্ঠানিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন।
রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় সম্মেলনের মাত্র দুই দিন আগে ট্রাম্পের সমাবেশে গোলাগুলির এ ঘটনা ঘটল। সেই সম্মেলনে ট্রাম্পকে আনুষ্ঠানিকভাবে রিপাবলিকানদের প্রার্থী করার কথা রয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বরাতে সিবিএস নিউজের খবরে জানা যাচ্ছে, রিপাবলিকানদের সম্মেলনটি বিদেশি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, হোমগ্রন (দেশের ভেতরে জন্ম নেওয়া) সহিংস চরমপন্থী, দেশের ভেতরকার সহিংস উগ্রপন্থী গোষ্ঠী, তথাকথিত লোন-উলফ (একক হামলাকারী) কিংবা বন্দুকবাজদের হামলার শিকার হতে পারে বলে বড় ধরনের উদ্বেগ আছে।

  • কিরা লারনার, গার্ডিয়ানের গণতন্ত্র বিষয়ে সম্পাদক

গার্ডিয়ানে প্রকাশিত, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত