নারীর অংশগ্রহণ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে টেকসই শান্তি আসবে না

নারী শান্তিকর্মীরা মধ্যপ্রাচ্য শান্তির ক্ষেত্রে একটি গতি এনেছেনছবি: এএফপি

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ১৯ জুলাই বলেছেন, গাজায় আটক জিম্মিদের মুক্তি এবং যুদ্ধবিরতির একটি চুক্তি সম্পাদনের বিষয়ে আলোচনা শেষের পথে। এই ধরনের একটি চুক্তির জন্য বিশ্ববাসী দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করছে। কারণ, এই ধরনের একটি চুক্তিই শান্তি মীমাংসার ভিত্তি স্থাপন করতে পারে। কিন্তু শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই নারীদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

ইসরায়েলি শান্তিকর্মী ইয়ায়েল ব্রাউডো-বাহাতের (যিনি গত ৩০ মে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন) ভাষ্যমতে, এই প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তিনি উইমেন ওয়েজ পিস-এর সহপরিচালক। ইসরায়েলে এই শান্তি আন্দোলন সংগঠনটির ৫০ হাজারের বেশি সদস্য রয়েছে।

ব্রাউডো-বাহাত ফিলিস্তিনের উইমেন অব দ্য সান (পশ্চিম তীর ও গাজায় এই সংগঠনের তিন হাজারের বেশি সদস্য রয়েছে) নামের একটি শান্তি সংগঠনের সহপ্রতিষ্ঠাতা এম এইচের (যিনি ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কারণে তাঁর নাম আদ্যক্ষর দিয়ে প্রকাশ করে থাকেন) সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করছেন। 

দশকব্যাপী ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি সংঘাতের অহিংস সমাধানের পক্ষে এই দুই সংস্থা একত্রে কাজ করছে। বিশেষ করে ৭ অক্টোবরের মাত্র কয়েক দিন আগে তাঁরা ধারাবাহিকভাবে চলে আসা রক্তপাত অবসানের দাবিতে একটি গণবিক্ষোভের আয়োজন করেছিলেন।

টাইম ম্যাগাজিনের ২০২৪ সালের উইমেন অব দ্য ইয়ার তালিকায় এই দুই সংগঠনের দুই প্রতিষ্ঠাতা আছেন। তাঁরা দুজনেই তাঁদের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২৪ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য যৌথভাবে মনোনয়ন এবং পোপের কাছ থেকে সমর্থন পেয়েছেন। এই শান্তিকর্মীরা মধ্যপ্রাচ্য শান্তির ক্ষেত্রে একটি গতি এনেছেন। যে ফিলিস্তিনি সংগঠনগুলোতে বিশিষ্ট নেতৃত্বের ভূমিকায় নারীরা আছেন, সেই সংগঠনগুলো গত ২৯ মে রামাল্লায় শান্তির ডাক দেয়।

১ জুলাই উইমেন ওয়েজ পিসসহ কয়েক ডজন ইসরায়েলি সংগঠন তেল আবিবে একটি বিশাল শান্তি সমাবেশ করেছে, যা শান্তি আন্দোলনের মধ্যে এক দশকের রাজনৈতিক বিভাজন অবসানে সাহায্য করেছে। এখন এই নারী সংগঠনগুলোর দিকে আরও মনোযোগ দেওয়া এবং তাদের আরও আর্থিক সহায়তা দেওয়া দরকার।

মার্কিন কংগ্রেস নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা আইন ২০১৭ পাস করার পর যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সালে একটি জাতীয় কৌশল গ্রহণ করেছে, যাতে নারীরা ‘স্থিতিশীল ও স্থায়ী শান্তির প্রচারে ক্রমবর্ধমানভাবে অংশগ্রহণে সক্ষম হতে’ পারে।

বাইডেন প্রশাসন ২০২৩ সালে একটি হালনাগাদ করা নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা কৌশল এবং কর্মপরিকল্পনা জারি করেছে। হালনাগাদ পরিকল্পনায় শান্তি কার্যক্রম এবং নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিষয়ে নারীদের অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণের বিষয় প্রচারের জন্য বিভিন্ন মার্কিন সংস্থার প্রচেষ্টাগুলো পর্যালোচনা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ইতিমধ্যে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গ্লোবাল উইমেনস ইস্যু অফিস, হোয়াইট হাউসের জেন্ডার পলিসি কাউন্সিল অ্যান্ড উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটিসহ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ভেতরকার বিভিন্ন অফিস, নীতি এবং তহবিলের একটি বড় প্রবাহ এই নারী নেতৃত্বের এজেন্ডাকে সমর্থন করেছে। এই মাসেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে একটি নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা সংবর্ধনার আয়োজন করেছিলেন। যদিও সেখানে তিনি ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন–সম্পর্কিত আলোচনায় নারীদের অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করেননি। তবে শান্তি উদ্যোগে নারীর অংশগ্রহণে যুক্তরাষ্ট্রের বড় প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এখনো বক্তৃতা ও বাস্তবতার মধ্যে বড় ব্যবধান রয়ে গেছে। 

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধবিরতির আলোচনায় শীর্ষ মার্কিন নীতিনির্ধারকেরা সবাই পুরুষ। মার্কিন কর্মকর্তারা সম্প্রতি তালেবানের সঙ্গে জাতিসংঘের আয়োজনে যে আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন, সেখানে আফগান নারীদের বাদ দেওয়া হয়েছিল। ২০২২ সালে সারা বিশ্বে ১৮টি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তার মধ্যে মাত্র একটি চুক্তিতে একজন নারীর স্বাক্ষর আছে। নীতিনির্ধারকদের বুঝতে হবে, শান্তিচুক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ না থাকলে তা টেকসই হওয়া কঠিন। এ বিষয়, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য শান্তিচুক্তির ক্ষেত্রে মাথায় রাখা বেশি জরুরি। 

অ্যান-মারি স্লটার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতি পরিকল্পনা বিভাগের সাবেক পরিচালক 

জ্যান্থি স্কার্ফ জর্জটাউন ইনস্টিটিউট ফর উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো

স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, ইংরেজি থেকে সংক্ষেপে অনূদিত