গাজা যে কারণে একুশ শতকের প্রাণঘাতী যুদ্ধ 

গাজা যুদ্ধের এক বছর পূর্ণ হতে চলেছে। ফিলিস্তিনের এই উপত্যকার ওপর অসম যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে এখন পর্যন্ত ৪০ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। নিহতের মধ্যে প্রায় ১৭ হাজার শিশু। একুশ শতকের অন্যতম প্রাণঘাতী যুদ্ধে পরিণত হয়েছে এ যুদ্ধ। গত কয়েক দশকে বিশ্বের অন্যান্য যুদ্ধের সঙ্গে তুলনামূলক পর্যালোচনা করে গাজা যুদ্ধের ভয়াবহতা নিয়ে লিখেছেন আসজাদুল কিবরিয়া

মৃত্যুহার বিবেচনায় গাজা একুশ শতকের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘাতের অন্যতমছবি : রয়টার্স

‘দক্ষিণ আফ্রিকা তখন কোথায় ছিল, যখন সিরিয়া ও ইয়েমেনে লাখ লাখ মানুষ নিহত হচ্ছিল?’ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এ বছরের জানুয়ারি মাসে এভাবেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। কারণটা খুব সোজা। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় গণহত্যা চালানোর অভিযোগ এনে দক্ষিণ আফ্রিকা গত ২৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের দ্বারস্থ হয়। তাতেই ক্ষিপ্ত হন নেতানিয়াহু। সে সময় তিনি আরও দাবি করেন, ‘না, দক্ষিণ আফ্রিকা, গণহত্যার অপরাধ আমরা করিনি, করেছে হামাস। তারা পারলে আমাদের সবাইকে হত্যা করত। বরং ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স যতটা সম্ভব নৈতিকভাবে কাজ করার চেষ্টা করেছে।’ 

উল্লেখ্য, গত বছর ৭ অক্টোবরের ঘটনা। ফিলিস্তিনি মুক্তিকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের কয়েক শ বন্দুকধারী গাজা সীমান্ত অতিক্রম করে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে প্রবেশ করে। হামলা চালিয়ে প্রায় ১ হাজার ৩০০ ইজরায়েলি নাগরিক হত্যা করে, যার বেশির ভাগই বেসামরিক মানুষ। এ ছাড়া ২৫৫ জন ইসরায়েলিকে জিম্মি করে নিয়ে যায়। হামাসের হামলার প্রতিশোধ নিতে পরদিন থেকেই ইসরায়েল গাজায় প্রথমে বিমান হামলা চালায়। এরপর স্থলাভিযান শুরু করে। সমুদ্রপথেও হামলা হয়। এভাবে হামাসের সঙ্গে এক অসম যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ইসরায়েল। নেতানিয়াহুর উন্মত্ততায় সেই থেকে নির্বিচার হামলা চালিয়ে ইতিমধ্যে ১১ মাসে ৪০ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে ইসরায়েল; যার প্রায় ১৭ হাজার শিশু। সিংহভাগই বেসামরিক নাগরিক। আহত হয়েছেন প্রায় ৯৫ হাজার গাজাবাসী ফিলিস্তিনি। এরপরও ইসরায়েল ও তার মিত্রদেশগুলো একে গণহত্যা মনে করে না।

হতাহতের গা হিম করা পরিসংখ্যান

কিন্তু গাজা হত্যা ও ধ্বংসজ্ঞের তথ্য-পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে গা হিম করা এক ছবি সামনে উঠে আসে। ইসরায়েলের সবচেয়ে পুরোনো দৈনিক হারেৎজ এ রকম এক বিশ্লেষণ তুলে ধরে বলেছে, এখানে মৃত্যুর হার এবং জীবিতদের শোচনীয়ভাবে জীবন ইতিমধ্যে ইরাক, ইউক্রেন ও মিয়ানমারকে ছাড়িয়ে গেছে। 

■ ইতিমধ্যে ইরাক, ইউক্রেন ও মিয়ানমারকে ছাড়িয়ে গেছে গাজায় মৃত্যুর হার। জীবিতদের জীবন শোচনীয়।

■ আড়াই বছরে ইউক্রেন যুদ্ধে নিহতের হার দশমিক ৫০ শতাংশ। আর ১১ মাসে প্রাণ হারিয়েছে গাজার জনসংখ্যার ২ শতাংশ। 

■ সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে অন্তত ১০ লাখ মানুষ প্রাণ বাঁচাতে দেশ ত্যাগ করলেও গাজায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ২০ লাখ অধিবাসী। 

■ কড়া প্রহরাধীন এবং অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টনী দিয়ে ঘেরা গাজাকে বলা হয় পৃথিবীর বৃহত্তম উন্মুক্ত কারাগার।

■ গাজায় ১১ মাসে ৪০ হাজারের কিছু বেশি প্রাণহানির যে উপাত্ত মিলছে, প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। 

প্রতিবেদন অনুসারে, গত বছরের ৭ অক্টোবর ৩৬৫ বর্গকিলোমিটারের উপত্যকাটিতে প্রায় ২০ লাখের কিছু বেশি মানুষের বসবাস ছিল। এ বছরের ৮ সেপ্টেম্বরে অর্থাৎ ১১ মাস পরে এসে দেখা যায় যে গাজার অন্তত ৪০ হাজার বা ২ শতাংশ মানুষ নিহত হয়েছেন ইসরায়েলি হামলায়। অথচ সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে ১৩ বছরে ৪০ লাখ মানুষ নিহত হলেও তা ছিল দেশটির মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশ।

রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ইউক্রেনে গত আড়াই বছরে প্রায় ১ লাখ ৭৭৫ হাজার ইউক্রেনীয় প্রাণ হারিয়েছেন, যা দেশটির মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় দশমিক ৪৫ শতাংশ। আরও পিছিয়ে দেখা যাক। গত শতকের নব্বইয়ের দশকে প্রায় ১০ বছরব্যাপী সাবেক যুগোস্লাভিয়ার যুদ্ধে এক লাখ মানুষ প্রাণ হারায়, যা মোট জনসংখ্যার দশমিক ৫০ শতাংশ। আবার ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা দিয়ে শুরু হওয়া ইরাক যুদ্ধে ২০ বছরে ২ লাখ ১০ হাজার ইরাকি প্রাণ হারিয়েছেন, যা দেশটির জনসংখ্যার ১ শতাংশ। আবার জাতিসংঘের হিসাবে, সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যায় ২৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।

গাজায় হতাহতের পরিসংখ্যান পুরোটাই হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রে পাওয়া যায়। তাই এটা নিয়ে ইসরায়েল তো বটেই, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানিসহ পশ্চিমা মিত্রদেশগুলো বিভিন্ন সময় প্রশ্ন তুলে আসছে। কিন্তু ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের দেওয়া উপাত্তকে জাতিসংঘসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা নিরীক্ষা করে দেখে তা গ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছে। যেমন ব্রিটিশ গবেষণা সংস্থা এয়ারওয়্যারস যুদ্ধের প্রথম ১৭ দিনে নিহত হওয়া তিন হাজার মানুষের তালিকা যাচাই করে এর ৭৫ শতাংশ সঠিক বলে অভিমত দিয়েছে।

আবার লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিশেল এসপাগাট ২৮ হাজার ১৮৫ জন নিহতের তালিকায় ৭০০টি নামে সমস্যা পেয়েছেন উল্লেখ করে হারেৎজকে বলেছেন, ‘ফিলিস্তিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতাহতের বিস্তারিত প্রকাশ করে থাকে, যেন তা স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করা যায়। কিন্তু ইসরায়েল সরকার শুধু নিহত সন্ত্রাসী ছাড়া আর কোনো হতাহতের তথ্য প্রদান করে না। আবার সন্ত্রাসী নিহত হওয়ার যে তথ্য দেয়, তা–ও অনেকটা ভিত্তিহীন।’ 

এটা ঠিক যে বিভিন্ন ধরনের সংঘাত ও যুদ্ধে হতাহতের মধ্যে পরিসংখ্যানগত তুলনামূলক বিশ্লেষণ একটি কঠিন কাজ। সংঘাত শুরু হওয়ার কারণ, যোদ্ধাদের সংখ্যা ও সক্ষমতা, অস্ত্রশস্ত্রের পরিমাণ এবং যুদ্ধক্ষেত্রের ভিন্নতার জন্য কাজটি জটিল বটে।

যুদ্ধরত দুই পক্ষই সব সময় নিজেদের অনুকূলে তথ্যবিকৃতি ঘটাতে চেষ্টা করে থাকে। হারেৎজ–এর জন্য প্রতিবেদনটি তৈরির কাজে প্রতিবেদক নির হাসন সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয় ও জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণালব্ধ তথ্য-উপাত্তকেও কাজে লাগিয়েছেন। উপসালা কনফ্লিক্ট ডাটা প্রোগ্রামকে সংঘাত ও যুদ্ধ বিষয়ে বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ তথ্যভান্ডারগুলোর অন্যতম হিসেবে ধরা হয়।

বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করলে গাজার চেয়েও প্রাণঘাতী যুদ্ধ ও সংঘাত বিশ্বে যে ঘটেছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে মৃত্যুহার বিবেচনায় গাজা একুশ শতকের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘাতের অন্যতম। এ বিষয়ে হারেৎজ–এর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজায় প্রতি মাসে গড়ে প্রায় চার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।

অথচ রুশ আগ্রাসনে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম বছরে প্রতি মাসে গড়ে নিহত হয়েছেন ৭ হাজার ৭৩৬ জন । আবার ইরাক যুদ্ধের সবচেয়ে রক্তাক্ত বছর ২০১৫ সালে প্রতি মাসে গড় মৃত্যুর হার ছিল প্রায় ১ হাজার ৩৭০ জন। অন্যদিকে সাবেক যুগোস্লাভিয়ার যুদ্ধে বসনিয়ায় ১৯৯১ সালে গড়ে প্রতি মাসে মারা গিয়েছিল ২ হাজার ৯৭ জন আর ওই বছর মোট মৃত্যু ছিল ৬৩ হাজার। ওই বছরটিই নব্বই দশকের বলকান যুদ্ধের সবচেয়ে রক্তাক্তকাল হিসেবে পরিচিত।

অন্য সংঘাত থেকে যে কারণে আলাদা 

একুশ শতকের অন্য সংঘাত ও যুদ্ধগুলোর সঙ্গে গাজা যুদ্ধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হলো যুদ্ধক্ষেত্রের আয়তন এবং এখানকার বেসামরিক নাগরিকদের যুদ্ধ থেকে বাঁচতে অন্যত্র আশ্রয় নেওয়ার অক্ষমতা। মাত্র ৩৬৫ বর্গকিলোমিটারের গাজায় ২০ লাখের কিছু বেশি মানুষের বসবাস। ২০০৭ সাল থেকে গাজার ওপর জলে-স্থলে-অন্তরিক্ষে অবরোধে আরোপ করে রেখেছে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে।

একদিকে ভূমধ্যসাগর, তিন দিকে ইসরায়েল ও দক্ষিণ দিকে মিসরের সিনাই সীমান্ত। কড়া প্রহরাধীন এবং অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টনী দিয়ে ঘেরা গাজাকে বলা হয় পৃথিবীর বৃহত্তম উন্মুক্ত কারাগার। অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এই উপত্যকার বেশির ভাগ অধিবাসীরাই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন কিন্তু তাঁদের পালিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নেওয়ার জায়গাও নেই বললেই চলে। ইসরায়েলি বাহিনী কিছু নিরাপদ অঞ্চল নির্ধারণ করে দিলেও বেশির ভাগ সময় সেখানে আশ্রয় নেওয়া গাজাবাসীর অনেকেও ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন। 

আল–জাজিরার এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে গত বছর ডিসেম্বর মাসে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী পুরো উপত্যকাকে ৬০০টির বেশি ছোট ছোট খোপে (ব্লক) ভাগ করে একটি অনলাইন মানচিত্র প্রকাশ করে। এ সময় লিফলেট ছেড়ে গাজাবাসীকে তাদের নিকটস্থ খোপগুলো চিহ্নিত করতে বলা হয়। উদ্দেশ্য, সেনা অভিযানের আগে যখন বাসস্থান ছাড়তে বলা হবে, তখন তারা যেন সরে যেতে পারে।

এ রকম নির্দেশনাই বিভ্রান্তিকর। তা ছাড়া দিনের বেশির ভাগ সময় বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেটবিহীন থাকা গাজাবাসীর পক্ষে কিউ আর কোড স্ক্যান করে অনলাইন থেকে এভাবে কিছু খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। পুরো বিষয়টিই হত্যাযজ্ঞ চালানোর পথ সহজ করার একটি ইসরায়েলি কৌশলমাত্র। হারেৎজ–এর প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, কথিত মানবিক এলাকাগুলোতে শরণার্থীদের অতিরিক্ত চাপ, নানা রোগবালাই, অপ্রতুল ওষুধপত্র, অনিরাপদ পানি ও খাদ্যসংকটের কারণে জীবনযাপন অমানবিক। 

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে ১০ লাখের বেশি মানুষ প্রাণ বাঁচাতে দেশ ত্যাগ করে শরণার্থী হিসেবে জর্দান, তুরস্ক ও ইউরোপের কিছু দেশে আশ্রয় নিয়েছে। হাজার হাজার ইউক্রেনীয় যুদ্ধাঞ্চল ছেড়ে পশ্চিম দিকে সরে গেছে। গাজাবাসীর এ রকম কোনো সুযোগই নেই। রাফা সীমান্ত দিয়ে মিসরে প্রবেশের সুযোগ দেশটির স্বৈরাচারী সিসির সরকার অনেক আগে থেকেই বন্ধ করে দিয়েছে। আবার সিরিয়া, ইরাক ও ইউক্রেনের যুদ্ধগুলোয় সংঘাত, ধ্বংসযজ্ঞ ও হতাহতের ঘটনা দেশগুলোর বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘটেছে। কিন্তু গাজার যুদ্ধ ঘটছে খুবই ছোট একটি এলাকার মধ্যে। 

ভয়ংকর মানবিক বিপর্যয়

একটি যুদ্ধে এক বছরের কম সময়ে আক্রান্ত এলাকার মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশের প্রাণহানিকে খাটো করে দেখার কোনোই অবকাশ নেই। এটা গাজার ভয়ংকর মানবিক বিপর্যয়কেই তুলে ধরে। হারেৎজ–এর মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কোনো বড় ধরনের যুদ্ধ-সংঘাতকে বিবেচনায় নিলে এই মৃত্যুর হার অস্বাভাবিক ও ব্যতিক্রমী। এটা ঠিক যে ভিয়েতনাম যুদ্ধে দেশটির অন্তত ৫ শতাংশ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। তবে যুদ্ধ চলেছিল ২০ বছর ধরে।

তা ছাড়া গাজায় ১১ মাসে ৪০ হাজারের কিছু বেশি প্রাণহানির যে উপাত্ত মিলছে, প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। গাজায় চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন এমন ৪৫ জন আমেরিকান গত ২৫ জুলাই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে এক খোলা চিঠিতে বলেছেন, প্রকৃত মৃত্যুর হার প্রকাশিত সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি। তাঁদের মতে, অন্তত ৯২ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।

এর কয়েক দিন আগে মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেট–এর এক নিবন্ধে দাবি করা হয়, গাজা উপত্যকার জীবনযাপন ও চিকিৎসা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে সেখানে মৃত্যুর সংখ্যা কয়েক মাসের মধ্যেই প্রায় পৌনে দুই লাখে পৌঁছাবে। এই মৃত্যুর বেশির ভাগই হবে রোগাক্রান্ত হয়ে। অবশ্যই এই অসুখ ও রোগ সংক্রমণের মূল কারণ ইসরায়েলের অবরোধ ও নির্বিচার হামলা চালিয়ে গাজার যাবতীয় স্বাস্থ্য-চিকিৎসা অবকাঠামোর প্রায় পুরোটা ধ্বংস ও অকেজো করে দেওয়া। 

অনেকেই অবশ্য এসব পরিসংখ্যানকে বাহুল্য বা অতিরঞ্জিত হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন যে এসবের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধে জড়িত ব্যক্তিদের হিসাবটি পৃথক করা হয়নি। কেননা হামাস যোদ্ধারাও প্রতিরোধের লড়াইয়ে প্রাণ দিচ্ছেন। ফলে প্রকৃত চিত্রটি এখনো পরিষ্কার নয়। আবার গণহত্যার প্রামাণ্য সংজ্ঞার বিচারে গাজায় ইসরায়েল যে গণহত্যা চালাচ্ছে, সেটাও মানতে নারাজ অনেকে।

এসব সীমাবদ্ধতা মেনে নিলেও হারেৎজ–এর ভাষায় এটা বলতে হয় যে গাজায় চলমান ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসযজ্ঞ একুশ শতকের সবচেয়ে প্রাণঘাতী একটি অধ্যায়, গাজা যুদ্ধ একুশ শতকের সবচেয়ে রক্ত ঝরানো সংঘাতগুলোর অন্যতম।


● আসজাদুল কিবরিয়া লেখক ও সাংবাদিক [email protected]