হুট করেই সরকারের নজর এবার অপেক্ষাকৃত অপরিচিত দলগুলোর ওপর পড়েছে। ছোট ছোট দলের নেতা কর্মীদের আটক শুরু করেছে। দল হিসাবে এরা খুব বেশি পরিচিত না। প্রভাবশালী তো না-ই। এসব দলের কর্মী সংখ্যাও নগণ্য। কিন্তু এই ধরনের দলের নেতাদেরই ধরপাকড় শুরু করেছে সরকার।
বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অনেকেই কারাগারে। অনেকেই আত্মগোপনে। এই ধারপাকড় থেকে ছোট দলের নেতা কর্মীরাও ছাড় পাচ্ছে না। সাধারণত বড় দলের নেতাদের আটক করে সরকার। সম্প্রতি ১২ দলের সমন্বয়ক জাতীয় দলের এহসানুল হুদাকে আটক করা হয়েছে।
কী এমন হলো এসব ছোট দলের নেতাদের আটক করতে হচ্ছে। বিষয়টি বেশ আগ্রহ উদ্দীপক। এ নিয়ে একটু খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করলাম। দেশে রাজনীতির বিষয়ে আগ্রহ আছে, খোঁজ খবর রাখেন ও রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করলাম। বিদেশে থাকি। তাই টেলিফোনই ভরসা। ফোনেও আবার কথা বলতে ভয় পান অনেকে। কখন কার কথা সংরক্ষণ করে সামাজিক
যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় নজরদারি প্রতিষ্ঠানগুলো, এই ভয়ে থাকেন সবাই।
কথোপকথনে তারা জানালেন হুট করেই এসব ছোট দলগুলোর গুরুত্ব বেড়ে গেছে। সারা দিনই নানা জায়গা থেকে ফোন পাচ্ছেন। গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা তাদের অনুসরণ করছেন। ছোট দলের নেতারা কোথায় যাচ্ছেন, কার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলছেন, কোনো নেতার সঙ্গে চা পান করছেন সবই এখন গোয়েন্দাদের নখদর্পণে। এসব নেতারা প্রতিদিনই সরকার বিরোধী কর্মসূচিতে যান আটক হওয়ার ভয় নিয়ে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ হচ্ছে নির্বাচন অংশ নেওয়ার জন্য নানাভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ফোন আসে নিয়মিত। মাঝে মধ্যে চায়ের নিমন্ত্রণও থাকে। কোনো ক্যাফে বা রেস্টুরেন্টেও আড্ডা জমে। এসব আড্ডা, চা পানের আসরে নরমে গরমে অবস্থান পরিবর্তনের পরামর্শ থাকে। থাকে সহমর্মিতাও। প্রচ্ছন্ন হুমকি যে থাকে না তা বলা যাবে না। নিমন্ত্রণকারী কী ধরনের আচরণ করবে তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। কেউ অবস্থান পরিবর্তন করতে রাজি না হলেই নানা ধরনের ঝক্কি ঝামেলায় ফেলা হয়। চাপ উপেক্ষা করে যারা মাঠে ময়দানে সক্রিয় থাকার চেষ্টা করেন তাদের শেষ পর্যন্ত আটক করে ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
চাপ, ভয় দেখানোর পাশাপাশি বিভিন্ন প্রলোভনও দেখানো হয়। ছোট দলগুলোর নিজস্ব সমর্থন নেই তেমন কিন্তু নেতার নামে পরিচিতি আছে বেশ। এই ধরনের নেতাদের নির্বাচনে জিতে আসার সুযোগ ও সম্ভাবনা কম। তাদের প্রলোভনের ফাঁদে ফেলা হয়। নির্বাচনে আসার তাগিদ দেওয়া হয়। বিনিময়ে অবারিত সুযোগ ও সম্ভাবনার প্রতিশ্রুতি থাকছে। এমনকি সংসদ সদস্য হওয়ার টোপ ফেলা হচ্ছে।
চাপ ও প্রলোভনে যে একদম কাজ হচ্ছে না এমনটা বলা যাবে না। ইতিমধ্যেই অনেকের আচরণের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা দেখে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সম্ভবত এই দেখে চলার দলটি শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিতে পারে। তবে মজার বিষয় হচ্ছে আন্দোলনের অংশ হিসাবেই তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন। কী বলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন তাও ঠিক করে ফেলেছেন অনেকটাই। ২০১৪ সালের মতো আওয়ামী লীগকে ফাঁকা মাঠে গোল করতে দেওয়া হবে না এবং আন্দোলনের অংশ হিসাবেই নির্বাচনে গিয়ে আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করানোর কথা বলে এই অংশটি নির্বাচনে যেতে পারে শেষ পর্যন্ত।
চাপ ও প্রলোভনে যে একদম কাজ হচ্ছে না এমনটা বলা যাবে না। ইতিমধ্যেই অনেকের আচরণের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা দেখে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সম্ভবত এই দেখে চলার দলটি শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিতে পারে। তবে মজার বিষয় হচ্ছে আন্দোলনের অংশ হিসাবেই তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন।
এই অংশটি হতে পারে দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপির সঙ্গে জোট বা যুগপৎ আন্দোলনে থাকা কোনো দল। শেষ মুহূর্তে অনেকেই বিএনপির সঙ্গ পরিত্যাগ করতে পারে। আবার বিএনপির ভেতরে থাকা একটি অংশও আওয়ামী লীগকে ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার সুযোগ ঠেকানোর কথা নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় হতে পারে। এই অংশটি দীর্ঘদিন ধরেই রাজনীতি সক্রিয় না। দলেও খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ পদে নেই। নিষ্ক্রিয়তার কারণে রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়া ঠেকাতে এরা ভোল পাল্টালে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ইতিমধ্যেই অ্যাডভোকেট আহসান হাবিব ও ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামসহ ৫০ জনের মতো বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের ছোট ও মাঝারি নেতা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
চাপ দিয়ে, প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন দলকে নির্বাচনের আনার প্রচেষ্টার কিছুটা প্রতিফলন দেখা যায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে। তিনি বৃহস্পতিবার বলেছেন, ৩০ নভেম্বর মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। এর মধ্যে কত ফুল ফুটবে। আর শীতকাল তো এসে গেছে। কিছু কিছু ফুল ফোটারও সময় এসে গেছে। এখন কোন ফুল কোথায় ফুটছে...হঠাৎ জেগে উঠছে। অপেক্ষা করুন।
ওবায়দুল কাদের রসিক মানুষ। তার মধ্যে কাব্যের প্রভাব প্রবল। তাই কাব্যিক ভাষায় সম্ভাবনার কথা বলেছেন। কোন বাগানে ফুল ফুটবে তিনি তা বলেননি। তবে যেভাবে ফুল ফোটানোর চেষ্টা করছেন তা কতটা সফল হবে তা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় আওয়ামী লীগ শীতকালে এসে বর্ষার ফুল ফোটানোর চেষ্টা করছেন। তাই নানা কসরত করতে হচ্ছে। কাউকে ধরে নিয়ে যেতে হচ্ছে। ফুল হয়ে ফোটার জন্য দিতে হচ্ছে প্রলোভন। জোর করে ফোটানো এই সব ফুলের বর্ণ ও গন্ধ না থাকাই স্বাভাবিক।
ড. মারুফ মল্লিক লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক