মতামত
নারীরা কি গণ–অভ্যুত্থানের ‘অবহেলিত কারিগর’
নারীদের ত্যাগ ও নেতৃত্ব ছিল এবারের গণ–অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত সাফল্যের অন্যতম মূল ভিত্তি। কিন্তু তাঁদের অবদান কতটুকু মূল্যায়িত হয়েছে? গণ–অভ্যুত্থানে নারীর ভূমিকা নতুন করে কেন পর্যালোচনা করা প্রয়োজন, তা নিয়ে লিখেছেন সৈয়দা লাসনা কবীর ও মোহাম্মদ ঈসা ইবনে বেলাল
২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টের গণ–অভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে গণতন্ত্র, সুশাসন এবং সামাজিক ন্যায়ের আকাঙ্ক্ষার জন্য লড়াইয়ের এক উজ্জ্বল অধ্যায়। এই অভ্যুত্থান বৈষম্যের বিরুদ্ধে সমগ্র জাতিকে একত্র করেছিল।
নারী শিক্ষার্থীরা ছিলেন এই আন্দোলনের প্রথম সারির যোদ্ধা। ১৪ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে উত্তেজিত হয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের নাতি–নাতনি’ বলে অবমাননাকর মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রীর এই বিতর্কিত ও কটাক্ষপূর্ণ মন্তব্য আন্দোলনকারীদের গভীরভাবে আহত করে।
সেই রাতে, প্রধানমন্ত্রীর অবমাননাকর বক্তব্যে ক্ষোভে ফেটে পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হল ও বেগম রোকেয়া হলের সাহসী নারী শিক্ষার্থীরা। ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠা ওই নারী শিক্ষার্থীরা হলের গেট ভেঙে রাস্তায় নেমে আসেন, আর তাঁদের কণ্ঠে ধ্বনিত হয় এক ঐতিহাসিক স্লোগান: ‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার। কে বলেছে? কে বলেছে? স্বৈরাচার, স্বৈরাচার।’
নারী শিক্ষার্থীদের এই অদম্য সাহসিকতা ও প্রতিবাদের চেতনা স্বৈরাচারী সরকারকে গভীরভাবে আতঙ্কিত করে তোলে। নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে এবং আন্দোলনের ঢেউ থামাতে সরকার অমানবিক কৌশল অবলম্বন করে। সেই রাতেই তাঁরা দলীয় ক্যাডার বাহিনীকে আন্দোলনকারীদের দমন করার নির্দেশ দেয়। উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার্থীদের কণ্ঠ রোধ করা এবং আন্দোলনকারীদের ভয় দেখিয়ে আন্দোলন থামিয়ে দেওয়া।
১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এক কালো দিন। এদিন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী হামলা ও নির্যাতনের ফলে শত শত নিরপরাধ ছাত্রছাত্রী রক্তাক্ত হন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের এই উত্তাল পর্যায়ে সেদিন সকালে রাজু ভাস্কর্যের সামনে একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের ঘোষণা দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য ছিল তাঁদের ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানানো।
বিজয় একাত্তর হলে সরকারদলীয় ক্যাডাররা বেশ কয়েকজন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীকে আটক করে রাখে। এ খবর শুনে বিক্ষোভকারীরা তাঁদের মুক্ত করার জন্য হলে এগিয়ে যান। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর আগেই, হলের ছাদ থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করা হয়। এরপর তারা লাঠি, রড, এবং অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে সরাসরি আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়।
সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এক বিরল দৃশ্যের অবতারণা হয়, যেখানে নারী ও পুরুষ শিক্ষার্থীরা একে অপরের জন্য ঢাল হয়ে দাঁড়ান। যখন সন্ত্রাসীরা নারী শিক্ষার্থীদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে, তখন পুরুষ শিক্ষার্থীরা তাঁদের রক্ষা করতে ছুটে আসেন। আবার যখন পুরুষ শিক্ষার্থীরা হামলার শিকার হন, তখন সাহসী নারী শিক্ষার্থীরা তাঁদের আশ্রয় দেন।
সেদিন নারী শিক্ষার্থীরা প্রমাণ করেছিলেন, তাঁরা কেবল নিজেদের অধিকারের জন্য নয়, সহপাঠীদের রক্ষার জন্যও প্রাণপণে লড়াই করতে প্রস্তুত। তাঁরা দেখিয়ে দেন যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সাহসই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। এই সাহস পরবর্তী সময়ে পুরো জাতির মধ্যে অসীম সাহসের সঞ্চার করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
আন্দোলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব স্তরের নারীদের অংশগ্রহণ ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিক ড. চৌধুরী সায়েমা ফেরদৌস ২ আগস্ট উত্তাল সময়ে আগুনঝরা কণ্ঠে উচ্চারণ করেছিলেন, ‘আমার ছাত্রদের মুখ চেপে ধরার সাহস পুলিশকে কে দিয়েছে?’
শিক্ষার্থীদের পুলিশের লাঠিপেটা ও গ্রেফপ্তার থেকে রক্ষা করার জন্য নিজেকে ঢাল হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রভাষক এবং বর্তমান সহকারী প্রক্টর শেহরীন আমিন ভূঁইয়া।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থী সেদিন দৃঢ়প্রত্যয়ে বলেছিলেন, ‘আমাদের একটি মেধা পড়লে ১০টি কোটা গিলে খাব। গিলে খাব মানে গিলে খাব। বাবাকে বলে এসেছি, যদি মরে যাই বিজয়ের পর যেন আমার লাশ দাফন করা হয়।’
আন্দোলনের সময় এক অসুস্থ মা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলছিলেন, ‘বাবা, আমি অসুস্থ, তাই তোমাদের সঙ্গে যেতে পারছি না। তোমাদের জন্যই দোয়া করেছি, তোমরা বিজয় নিয়ে আসবে।’ অনেক মা তাঁদের কোলের শিশুদের নিয়ে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, ‘আমার তো বড় কোনো সন্তান নেই, তাই এই কোলের শিশুকে নিয়েই আন্দোলনে এসেছি।’
আন্দোলনের কণ্ঠস্বর হয়ে দাঁড়ানো এই অসমসাহসী নারীদের অনেকেই শেষ পর্যন্ত মৃত্যুকে বরণ করেছিলেন। সরকার পতনের দিন ৫ আগস্ট পুলিশের গুলিতে সাভার থানা রোডে নিহত হন নাফিসা। একই দিনে বেলা ১১টায় গাজীপুরের ২ নম্বর ওভারব্রিজের কাছে মিছিলে থাকা অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান রিতা আক্তার।
হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিতে নিহত হয় নারায়ণগঞ্জের বাসার ছাদে খেলতে থাকা মাত্র ছয় বছরের শিশু গোপী রায়। উত্তরাতেও হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিতে প্রাণ হারায় দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাইমা সুলতানা।
৫ আগস্ট টঙ্গীতে এইচএসসি পরীক্ষার্থী নাফিসা হোসাইন মারওয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। বেলা দুইটার দিকে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তিনি বাবাকে ফোনে বলেছিলেন, ‘আব্বু, আমি মারা যাচ্ছি। লাশটা নিয়ো।’ এই কথাগুলোই বলে দেয়, নারীরা কী পরিমাণ সাহস এবং প্রতিজ্ঞার সঙ্গে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।
নারীদের এত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও কয়েক মাস যেতে না যেতেই কোটা সংস্কার আন্দোলনের অভ্যুত্থানের ইতিহাস থেকে নারী শিক্ষার্থীদের অবদান ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে শুরু করে। যাঁরা সাহসের সঙ্গে আন্দোলনের প্রথম সারিতে থেকে বৈষম্যের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন, তাঁদের নাম ও ভূমিকা ইতিহাসের পৃষ্ঠায় ক্রমশ ম্লান হয়ে যাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাফল্যের পেছনে কয়েকটি মুহূর্ত নির্ধারক ভূমিকা পালন করেছিল। প্রথমত, সাহসী নারী শিক্ষার্থীদের হলের গেট ভেঙে রাস্তায় নেমে আসা এবং ঐতিহাসিক স্লোগান উচ্চারণ করা ‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার।’
দ্বিতীয়ত, নারী শিক্ষার্থীদের ওপর নির্মম হামলার দৃশ্য, বিশেষত সেই মর্মস্পর্শী ছবিটি, যেখানে এক নারী শিক্ষার্থী হাতে একটি লাঠি ধরে, রক্তাক্ত মুখ নিয়ে আতঙ্কিত অবস্থায় হলের দিকে যাচ্ছিলেন। এই ছবি গোটা জাতিকে গভীরভাবে নাড়িয়ে দিয়েছিল। এটি শুধু একটি ছবি নয়, বরং রাষ্ট্রের নিপীড়নের বিরুদ্ধে এক নীরব প্রতিবাদ হিসেবে রূপ নিয়েছিল।
তৃতীয়ত, আবু সাইদের অভূতপূর্ব সাহসিকতা, যিনি পুলিশের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের বুকে গুলি চালানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন। তাঁর এই আত্মত্যাগের প্রস্তুতি এবং দৃঢ় মানসিকতা পুরো জাতিকে অনুপ্রাণিত করেছিল।
কিন্তু পরিতাপের বিষয়, বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশে নারীরাই প্রথম বৈষম্যের শিকার হন। সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জুলাই-আগস্ট মাসে নিহত ব্যক্তিদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে তাদের ওয়েবসাইটে। এই তালিকায় ছয়জন বিভিন্ন বয়সী নারীর নাম উল্লেখ করা হলেও সব নারী শহীদের স্থান সেই তালিকায় হয়নি।
আন্দোলনে নিহত ছাত্রদের মতো কোনো শহীদ নারী শিক্ষার্থী জাতীয় বীর হয়ে উঠতে পারেননি। উদাহরণস্বরূপ, মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্রী নাইমা সুলতানার কথা বলা যায়। নাইমা ছিল আন্দোলনের একজন সৈনিক, যে বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জীবন উৎসর্গ করেছে। কিন্তু তার জন্য নির্মিত হয়নি কোনো স্মৃতিসৌধ বা কোনো প্রাঙ্গণ। মুগ্ধ বা আবু সাঈদের মতো নাইমা বা নাফিসাদের কথা সর্বস্তরে স্মরণ করা হয় না।
৫ আগস্ট–পরবর্তী প্রায় প্রতিটি পদক্ষেপে নারীদের প্রতি এই বৈষম্যের চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকে। আন্দোলন–পরবর্তী উপদেষ্টা পরিষদে নারীদের অংশগ্রহণ নিতান্তই অল্প ২০ শতাংশেরও কম। ২৩ জন উপদেষ্টার মধ্যে মাত্র ৪ জন নারী উপদেষ্টা, যা নারীদের অধিকার ও দাবি পূরণে কতটা সহায়ক, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থেকে যায়। এই বিষয়টি আরও উদ্বেগজনক এই কারণে যে এই আন্দোলনের প্রতিটি ধাপে, মিছিলে, সংগ্রামে নারীরা নেতৃত্ব দিয়েছে, সামনের কাতারে থেকেছেন। এমনকি ডিবি অফিসে যখন ছাত্রদের আটক রেখে নির্যাতন করা হয়, সেখানেও একজন নারী শিক্ষার্থী ছিলেন। কিন্তু আন্দোলন শেষ হওয়ার পর যখন উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়, সেখানে তিনজন ছাত্র উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পেলেও কোনো নারী শিক্ষার্থীকে সেখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
এ ছাড়া জুলাই আন্দোলনের পর ১০টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হলেও মাত্র একটি (নারীবিষয়ক) সংস্কার কমিশনের নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে একজন নারীকে। এতে স্পষ্ট প্রতিফলিত হয়, যদিও নারীরা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন, তাঁদের অবদান পরবর্তী সময়ে যথাযথভাবে মূল্যায়িত হচ্ছে না। এটি নারী নেতৃত্বের প্রতি রাষ্ট্র ও সমাজের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির একটি করুণ উদাহরণ।
ইতিহাসের প্রতিটি বিপ্লব–সংগ্রামে নারীদের অংশগ্রহণ থাকলেও পুরুষতান্ত্রিক সমাজে তাঁদের অবদানের যথাযথ স্বীকৃতি দেওয়া হয় না। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৩০-৩১ সালে ভারতে লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনে ৮০ হাজার মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। এর মধ্যে ১৭ হাজার ছিলেন নারী। অথচ ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসে কোথাও তাঁদের স্থান মেলেনি।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং তার পরবর্তী সময়জুড়ে এ দেশে নারী মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান নিয়ে তেমনভাবে আলোচনা হয়নি। যে কারণে বিথীকা বিশ্বাস বা শিশির কণার মতো নারীরা, যাঁরা একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাদের গানবোট গ্রেনেড মেরে উড়িয়ে দিয়েছিলেন, যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে যথাযোগ্য সম্মান ও স্বীকৃতি পাননি। এমনকি তাঁরা তাঁদের পরিবার ও সমাজের কাছ থেকেও কোনো ধরনের সহানুভূতি পাননি, বরং প্রত্যাখ্যাত হতে হয়েছিল।
তেমনই আরেকজন সংগ্রামী নারী ছিলেন চট্টগ্রামের লেখক রমা চৌধুরী, যিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে অংশগ্রহণ করেন এবং পথে-প্রান্তরে, অলিগলিতে গান গেয়ে উপার্জিত অর্থ মুক্তিযুদ্ধের কাজে ব্যয় করেন। একাত্তরে তিনি পাকিস্তানি সেনাদের দ্বারা শারীরিকভাবে নির্যাতিত হন, যার কারণে যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে তাঁর স্বামী তাঁকে গ্রহণ করেননি। এসব ঘটনা হাজারো সংগ্রামী নারীর বঞ্চনার প্রতীক।
ইতিহাসের পরিক্রমায় এ ধারণা অমূলক নয় যে চব্বিশের অভ্যুত্থানের নারী সংগ্রামীরাও হয়তো ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে যাবেন, যদি–না এখনই তাঁদের বিষয়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
আশার কথা হলো, সাম্প্রতিক সময়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার নারীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণে দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করেছে। তাঁর মতে, নারীদের নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার হতে হবে। এই উদ্দেশ্যে তিনি প্রতিবছর ১০ ডিসেম্বর নারীদের রাস্তায় নেমে বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর বিশ্বাস, নারীরা রাস্তায় নামলে, যাঁরা নারীদের উন্নতি ও অগ্রগতিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন, তাঁরা নীরব হতে বাধ্য হবেন। তিনি আরও আশ্বাস দিয়েছেন যে তাঁর সরকার এই উদ্যোগে সর্বাত্মক সমর্থন এবং সহায়তা প্রদান করবে।
নারীদের আন্দোলনে ভূমিকা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা এবং আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক মাহফুজ আলম প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এই আন্দোলনে মেয়েদের অংশগ্রহণ ছিল বিশাল। এখন অনেকে হয়তো ভুলে গেছেন, কিন্তু এটি অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে মেয়েরা না থাকলে এই আন্দোলন সফল হতো না।’
তবে শুধু বক্তব্য বা বিবৃতিতে সীমাবদ্ধ থাকলে বৈষম্য দূরীকরণ সম্ভব নয়। সরকারের উচিত, কার্যকর এবং দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করা, যা নারীদের সামনে থাকা সব ধরনের বাধা দূর করতে সক্ষম হবে। আইন প্রণয়ন, কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং নারীদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুযোগ বৃদ্ধিতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
নারীর সব অবদানকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন এবং স্বীকৃতি প্রদান করা শুধু সরকারের নয়, বরং দেশের প্রতিটি সচেতন নাগরিকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এটি শুধু নারীদের ক্ষমতায়ন নয়, বরং একটি ন্যায্য ও সুষম সমাজ গঠনের জন্য অপরিহার্য।
ড. সৈয়দা লাসনা কবীর অধ্যাপক, লোকপ্রশাসন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মোহাম্মদ ঈসা ইবনে বেলাল গবেষক