ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের যেসব এলাকা রাশিয়া দখল করে নিয়েছে, তা পুনর্দখল করতে কিয়েভ যখন ধীরগতিতে অগ্রসর হচ্ছে, তখন সেখানকার লড়াইয়ে ড্রোনের ব্যবহার বাড়তে দেখা যাচ্ছে। রাশিয়ার প্রাণকেন্দ্র মস্কো এবং কৃষ্ণসাগরের পূর্ব উপকূলের রাশিয়ান বন্দর নভোরোসিয়েস্কের মতো হাই প্রোফাইল রুশ এলাকায় ড্রোনের ব্যবহার ইউক্রেনের রণকৌশলের ওপরও ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।
সাম্প্রতিক ঘটনায় গত জুলাই ও আগস্ট মাসে মস্কোর গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য এলাকায় যে ড্রোন হামলা হয়েছে, সেই হামলাসহ বাদবাকি ড্রোন হামলার দায় ইউক্রেন নিয়মিত অস্বীকার করে যাচ্ছে। কিন্তু এ বিষয়ে প্রায় কারোরই সন্দেহ নেই যে ইউক্রেন তার যুদ্ধ সক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ও সুরক্ষিত শহরগুলোতে ড্রোন হামলা চালাচ্ছে।
শুধু মস্কোর ওপর হামলায় নয়, লড়াইয়ের ময়দানেও ড্রোনের ব্যবহার বাড়ানো হয়েছে। স্থলভাগে এবং সাগরেও ড্রোন থেকে হামলা চালানো হচ্ছে। যুদ্ধে ড্রোনের ব্যবহার এতটাই বাড়ানো হয়েছে যে শুধু গত মাসেই ইউক্রেন প্রায় ১০ হাজার ড্রোন হারিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও চিত্র থেকে আন্দাজ করা যায়, রাশিয়ান জাহাজ ও ট্যাংক বিধ্বংসের ক্ষেত্রে ইউক্রেনীয় ড্রোন কতটা ভূমিকা রাখছে।
রাশিয়ার অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ ও ট্যাংক মোকাবিলায় ইউক্রেন যে ড্রোন ব্যবহার করছে, তা একদিকে অপেক্ষাকৃত কম ব্যয়সাপেক্ষ, অন্যদিকে এই সস্তা সামরিক সরঞ্জামটি ব্যয়বহুল ট্যাংক ও যুদ্ধযান ধ্বংসের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
শুরুর দিকটায় ইউক্রেনের বাহিনী যে ড্রোন ব্যবহার করত, তার প্রায় সবই ছিল তুরস্কের। যুদ্ধের প্রথম দিককার মাসগুলোতে রাশিয়ার ট্যাংক বিধ্বস্ত করার ক্ষেত্রে এই ড্রোন সাংঘাতিক কার্যকর ভূমিকা রেখেছিল। কিন্তু রাশিয়া ইতিমধ্যে আধুনিক ও নতুন আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা স্থাপন করা সে ধরনের ড্রোন এখন আর কাজ করতে পারছে না। ফলে সেসব ড্রোন ইউক্রেনীয় সেনাদের আগের মতো সহায়তা দিতে পারছে না।
সম্প্রতি খবর বেরিয়েছে রাশিয়ার জ্যামিং সিস্টেমকে অকার্যকর করে দেওয়ার মতো প্রযুক্তি ইউক্রেনের হাতে এসেছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
বর্তমানে কামিকাজের ড্রোন নামে একটি অত্যাধুনিক ড্রোন প্রযুক্তি ইউক্রেন এবং রাশিয়া উভয় দেশ ব্যবহার করছে। এই ড্রোন একক ব্যক্তির হাতে পরিচালিত হওয়া ক্যামেরার ব্যবহারে কাজ করে বিধায় এগুলো সহজেই জিপিএস জ্যামিং সিস্টেমকে ফাঁকি দিতে পারে।
বাণিজ্যিকভাবে সহজলভ্য ও দামে সস্তা এই ড্রোনগুলো ব্যবহার করা খুবই সহজ। সবচেয়ে বড় কথা হলো কামান এবং মোটর থেকে ছোড়া গোলার চেয়েও নিশানায় অনেক গুণে অব্যর্থ আঘাত হানতে পারে এ ড্রোন। এগুলো হ্যান্ড গ্রেনেড থেকে শুরু করে ট্যাংকবিধ্বংসী গোলা বহন করতে সক্ষম। এই ড্রোন থেকে ক্যামেরার মাধ্যমে যেসব ফুটেজ সংগ্রহ করা সম্ভব, তা–ও যুদ্ধের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হামলার লক্ষ্যবস্তু নিখুঁতভাবে নির্ধারণ করার ক্ষেত্রেও এই ড্রোন ভূমিকা রাখছে। রাশিয়ার সেনাবাহিনীর জন্য যেসব যানবাহন রসদ পরিবহন করে থাকে, সেসব পরিবহন যানকে টার্গেট করে কামান এবং মোটর থেকে যখন ইউক্রেনীয় সেনারা গোলা ছোড়েন, সেই লক্ষ্যকে নিখুঁতভাবে নিশানা করার ক্ষেত্রে এসব ড্রোনের পাঠানো ছবি ও তথ্য ভূমিকা রাখে।
জার্মান অস্ত্র কোম্পানি রেইন মেটাল যখন ইউক্রেনকে নুনা নামক ড্রোন সরবরাহ করবে বলে ঘোষণা দেয়, তখন ইউক্রেনীয় সেনাদের মনোবল চাঙা হয়ে ওঠে। এই ড্রোনগুলো প্রায় ৩০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ১২ ঘণ্টা ধরে উড়তে পারে।
যদিও রাশিয়ার ইউক্রেনের প্রায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার দখল করা এলাকার সবখানে ইউক্রেনীয় ড্রোন ঢুকতে পারছে না, এ বিস্তীর্ণ এলাকার সবখানেই ইউক্রেনের ড্রোন যদিও ঢুকতে পারছে না, তথাপি এটি নিশ্চিত যে গত ১৮ মাসে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেন যে অগ্রগতি পেয়েছে, তার পেছনে ড্রোনের ব্যবহার বড় ভূমিকা পালন করেছে।
এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিতভাবে অনূদিত
● ডেভিড হেস্টিংস ডান বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক গবেষণা বিভাগের অধ্যাপক