জুলাই মাসের ১১-১২ তারিখে লিথুয়ানিয়ার ভিলনিয়াসে ন্যাটোর ৩১ সদস্যরাষ্ট্র বার্ষিক সম্মেলনে মিলিত হয়েছিল। এই সম্মেলনের প্রস্তুতির জন্য ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বিষয়সূচি নিয়ে আগেই আলোচনা করেছিলেন।
জেনস স্টলটেনবার্গ ও জো বাইডেন ইউক্রেনের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে পশ্চিমা সমর্থনের বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন। স্টলটেনবার্গ বাইডেনকে বলেছিলেন, যত শিগগির সম্ভব সুইডেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ দিতে পদক্ষেপ নেবেন তিনি। ১৩ জুন যৌথ সংবাদ সম্মেলনে স্টলটেনবার্গ কিংবা বাইডেনের কেউই ন্যাটোতে ইউক্রেনের সদস্যপদ প্রসঙ্গে একটি শব্দও আলোচনা করেননি। যদিও বাইডেন বলেছেন, তিনি আশা করেন যে খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে সুইডেন ন্যাটোর সদস্য হবে।
জার্মানির ডানপন্থী ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্যরা ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ দেওয়ার জোরালো দাবি জানিয়েছেন। তা সত্ত্বেও বর্তমান পরিস্থিতিতে ইউক্রেনে ন্যাটোর সদস্যপদ বিষয়ে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস খুব সতর্কতা অবলম্বন করে চলেছেন। ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করার ক্ষেত্রে নীতিগতভাবে ভিন্নতা না থাকলেও যুদ্ধকালে কিয়েভকে সদস্যপদ দিতে আপত্তি রয়েছে জার্মানির। কিন্তু ন্যাটোতে সুইডেনের সদস্যপদ দেওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা আরও বেশি।
২০২২ সালের মে মাসে ফিনল্যান্ড ও সুইডেন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য হতে আবেদন করে। সে সময় স্টলটেনবার্গ দুই দেশকেই স্বাগত জানিয়েছিলেন। প্রকৃতপক্ষে, সবাই আশা করেছিল ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের এই আবেদন দ্রুততার সঙ্গে গ্রহণ করা হবে এবং স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চলের সব কটি দেশকেই সামরিক জোটটির সদস্য করা হবে। এ অঞ্চলের অন্য দুটি দেশ নরওয়ে ও ডেনমার্ক ন্যাটোর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য।
২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল ফিনল্যান্ডকে ন্যাটোর সদস্য করা হয়। এ উপলক্ষে স্টলটেনবার্গ বলেন, ন্যাটোতে যোগদান ফিনল্যান্ডের জন্য ভালো হলো। এটা নর্ডিক অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য এবং সামগ্রিকভাবে ন্যাটোর জন্য ভালো ঘটনা। রাশিয়ার সঙ্গে ফিনল্যান্ডের ১ হাজার ৩৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিংবা ন্যাটোর যেকোনো দেশের ক্ষেত্রেই এটি দীর্ঘতম সীমান্ত। ন্যাটোতে ফিনল্যান্ড যুক্ত হওয়ায় রাশিয়ার সঙ্গে ন্যাটোর সীমান্ত বেড়ে দ্বিগুণ হলো।
ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়া উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিস্তো বলেছেন, সুইডেনের সদস্যপদ ছাড়া তাঁর দেশের সদস্যপদ পাওয়া একটি অসম্পূর্ণ ঘটনা। এ সময় পাশে দাঁড়ানো স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘সুইডেনকেও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সদস্যপদ দেওয়ার ব্যাপারে আমি পদক্ষেপ নেব।’
ওরবান খুব স্পষ্টভাবেই উত্তর দেন, সুইডেন খুব অন্যায্যভাবে হাঙ্গেরির গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি ও আইনের শাসন নষ্ট করার মতো মতামত দিয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ইউরোপীয় আইনপ্রণেতাদের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘হাঙ্গেরিতে এখন সংসদীয় স্বৈরতান্ত্রিক হাইব্রিড শাসন’ চলছে। ওরবান এ প্রতিবেদন নিয়ে অত্যন্ত হতাশ।এ সময় পাশে দাঁড়ানো স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘সুইডেনকেও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সদস্যপদ দেওয়ার ব্যাপারে আমি পদক্ষেপ নেব।’
প্রশ্ন হলো, সুইডেনকে কেন পশ্চিমা সামরিক জোটে নেওয়া হলো না?
১৯৪৯ সালে ন্যাটোর প্রতিষ্ঠাকালে যেকোনো সিদ্ধান্তের ব্যাপারে সদস্যরাষ্ট্রগুলোর ঐকমত্যে পৌঁছানোর নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল। ফিনল্যান্ডের সঙ্গে রাশিয়ার সরাসরি ও দীর্ঘতম সীমান্ত থাকার পরও দেশটির ব্যাপারে যখন তারা আপত্তি তোলেনি, তার মানে সুইডেনের ব্যাপারে তুরস্ক ও হাঙ্গেরির আপত্তির পেছনে ইউক্রেন যুদ্ধ কারণ নয়, সুইডেনের সঙ্গে দেশ দুটির সরাসরি সমস্যা রয়েছে।
কয়েক দিন আগে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও ন্যাটো মহাসচিব স্টলটেনবার্গের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর সাংবাদিক ভিভিয়ান সালামা প্রশ্ন করেন, ‘ন্যাটোতে তুরস্ক যে ক্রমেই সংহতি বিনাশকারী হয়ে উঠছে, এ ব্যাপারে আপনাদের উদ্বেগ কতটা?’
এ প্রশ্নে ব্লিঙ্কেন ও স্টলটেনবার্গ দুজনেই মাথা নিচু করে ফেলেন। এরপর সিএনএনের সাংবাদিক কাইলি আটউড তাঁদের সরাসরি সুইডেনের সদস্যপদ নিয়ে প্রশ্ন করেন। স্টলটেনবার্গ ঘুরিয়ে উত্তর দেন, সুইডেনে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) উপস্থিতির কারণে তুরস্কের উদ্বেগ রয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চল ও সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল থেকে নির্বাসিত কুর্দিদের সুইডেন আশ্রয় দিয়েছে। নির্বাসিত কুর্দিরা স্টকহোমে নানা সময়ে প্রতিবাদ করেন। এ ব্যাপারে আঙ্কারায় অবস্থিত সুইডেনের দূতাবাসকে দফায় দফায় উদ্বেগ জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান।
গত মে মাসে হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ওরবান দোহায় কাতার ইকোনমিক ফোরামে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কেন তাঁর ক্ষমতাসীন জোট ন্যাটোতে সুইডেনের যুক্ত হওয়ার ব্যাপারে অসম্মতি জানিয়েছে?
ওরবান খুব স্পষ্টভাবেই উত্তর দেন, সুইডেন খুব অন্যায্যভাবে হাঙ্গেরির গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি ও আইনের শাসন নষ্ট করার মতো মতামত দিয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ইউরোপীয় আইনপ্রণেতাদের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘হাঙ্গেরিতে এখন সংসদীয় স্বৈরতান্ত্রিক হাইব্রিড শাসন’ চলছে। ওরবান এ প্রতিবেদন নিয়ে অত্যন্ত হতাশ।এ সময় পাশে দাঁড়ানো স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘সুইডেনকেও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সদস্যপদ দেওয়ার ব্যাপারে আমি পদক্ষেপ নেব।’
এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
বিজয় প্রসাদ ভারতীয় ইতিহাসবেত্তা, সম্পাদক ও সাংবাদিক