বৃষ্টির জন্য সুন্নত আমল ইস্তিস্কা নামাজ
‘ইস্তিস্কা’ শব্দের অর্থ পানির জন্য প্রার্থনা করা। খরা বা দাবদাহের অবস্থা থেকে নিষ্কৃতি পেতে আল্লাহ তাআলার কাছে তওবা করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে আকুতি ভরে বৃষ্টির জন্য দোয়া করতে হয়। এই নামাজকে ইস্তিস্কার নামাজ বলে। পরপর তিন দিন ইস্তিস্কার নামাজ পড়া সুন্নত। যদি ইতিমধ্যে বৃষ্টি হয়েও যায়, তবু তিন দিন করা উত্তম। এই তিন দিন নফল রোজা রাখা মুস্তাহাব।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজের মাঠের দিকে বের হয়ে গেলেন, অতঃপর ইস্তিস্কা (আল্লাহর কাছে পানি তলব) করলেন। তিনি কিবলামুখী হলেন। তাঁর চাদর উল্টিয়ে পরলেন এবং দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)।
ইস্তিস্কার নামাজের সময়: সূর্যোদয়ের পর ২০ মিনিটের মতো সময় অতিবাহিত হলে ইস্তিস্কার নামাজ পড়তে হয়, ইশরাক নামাজ ও ঈদের নামাজের সময়ের মতো।
পরপর তিন দিন ইস্তিস্কার নামাজ পড়া সুন্নত। যদি ইতিমধ্যে বৃষ্টি হয়েও যায়, তবু তিন দিন করা উত্তম। এই তিন দিন নফল রোজা রাখা মুস্তাহাব
ইস্তিস্কার নামাজের স্থান: এই নামাজ মাঠে আদায় করা সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সা.) এরূপই করেছেন। তবে প্রয়োজনে মসজিদেও পড়া যাবে।
ইস্তিস্কার নামাজ আদায়ের পদ্ধতি: ইস্তিস্কার নামাজ দুই রাকাত। এই নামাজ আজান ও ইকামতবিহীন হয়ে থাকে। প্রকাশ্য কিরাতে তা আদায় করতে হয়। প্রথম রাকাতে তাকবিরে তাহরিমার পর সাতবার তাকবির দিতে হবে আর দ্বিতীয় রাকাতের রুকুর পূর্বে পাঁচবার তাকবির দিতে হবে। প্রতি তাকবিরের সময় হাত ওঠাবে এবং তাকবিরগুলোর মধ্যে সামান্য বিরতি নিয়ে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা এবং রাসুলুল্লাহ (সা.) এর ওপর দরুদ শরিফ পড়বে। নামাজের পর ইমাম খুতবা দেবেন। খুতবায় বেশি বেশি ইস্তিগফার ও কোরআনের ইস্তিগফার ও মাগফিরাতের আয়াত তিলাওয়াত করা বাঞ্ছনীয়।
মিনতির সঙ্গে দোয়া করা এবং হাদিস শরিফে বর্ণিত দোয়াগুলো বেশি পড়া উত্তম। ইমাম ও মুসল্লি সবাই কিবলামুখী হয়ে পোশাক উল্টিয়ে পরবেন, ডান দিকের অংশ বাঁ দিকে এবং বাঁ দিকের অংশ ডান দিকে দেবেন, উভয় হাত তুলে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকবেন। (আল হিদায়া, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ১৬৭ ই. ফা; বেহেশতি জেওর (গওহর), ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠ: ২২৩ এমদাদিয়া)।
ইস্তিস্কার নামাজের বিশেষ কিছু বিধান: ইস্তিস্কার নামাজের আগে ওয়াজ নসিহত করা, মানুষের হৃদয় গলে যায় এমন কথাবার্তা বলা, গুনাহ থেকে তওবা করার গুরুত্ব তুলে ধরা চাই। জুলুম ও অন্যায়ভাবে হাতিয়ে নেওয়া সম্পদ তার হকদারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা উচিত, কেননা, মানুষের পাপ-গুনাহর কারণেই বৃষ্টি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ইস্তিস্কার নামাজের পূর্বে করণীয়: এই নামাজ পড়ার পূর্বে সবাইকে নিজ নিজ গুনাহের জন্য তওবা করা, পাওনাদারের পাওনা মিটিয়ে দেওয়া ও গরিব মিসকিনদের দান খয়রাত করা আবশ্যক। সব বয়সের মুমিন পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধ একত্র হয়ে খোলা মাঠে হাজির হবেন। সবাই খালি পায়ে, সাধারণ পোশাকে, হেঁটে ময়দানে যাবেন।
নামাজ শেষে ইমাম সাহেব ঈদের নামাজের মতো দুটি খুতবা দেবেন। খুতবার সময় ইমাম মিম্বরে বা উঁচু জায়গায় দাঁড়াবেন না, বরং সমতলে দাঁড়িয়েই এই খুতবা দেবেন। খুতবা শেষে সবাই কিবলামুখী হয়ে বসে, ইমাম কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে আবেগ ও আকুতিসহকারে চোখের পানি ফেলে, ভয় ও আশা নিয়ে বিনয়ের সঙ্গে নিম্নের দোয়া পাঠ করবেন। ইমাম ও মুসল্লি সবাই হাত মাথা বরাবর তুলে মোনাজাত করবেন। (বুখারি: ১০২৪)
ইস্তিস্কার দোয়া: ‘আল্লাহুম্মা আগিছনা গয়ছাম মুগিছান নাফিআন আজিলান গয়রা দররিঁও ওয়া লা মুদির্র।’ অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি দয়াপরবশ হয়ে অতি শিগগির আমাদের রহমতের বৃষ্টি দান করুন, যা আমাদের উপকারে আসে এবং যা আমাদের কারও কোনো প্রকার ক্ষতির কারণ না হয়।’ (আবু দাউদ, বুখারি, ইবনে হিব্বান, মুস্তাদরাকে হাকিম, আলবানি ও আরনাউত-হাসান)।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম