পত্রিকা মারফত জানতে পারলাম, আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নাকি ভালো কলামিস্ট বা কলাম লেখক খুঁজছে। সামনে নির্বাচন; এ জন্য ভালো সম্মানী দিয়ে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কলামিস্টদের দিয়ে বাংলাদেশ এবং সরকার সম্পর্কে ইতিবাচক কলাম লেখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। এ খবর পড়ে মনে হয়েছে, এইবার যদি একটা সরকারি দায়িত্ব শেষ বয়সে এসে বাগিয়ে নেওয়া যায়! তাই ভাবলাম মন্ত্রণালয়কে ‘চাকরি চাহিয়া একটি আবেদনপত্র’ না লিখলেই নয়। কপালে থাকলে জুটে যেতেও পারে।
দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, লোডশেডিং এবং জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির মধ্যেই আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, দেশের মানুষ নাকি বেহেশতে আছে। সাধারণ মানুষ মৌলিক চাহিদা মেটাতে হাঁসফাঁস খাচ্ছে, আর উনি বলে বসলেন, মানুষ বেহেশতে আছে! এই নিয়ে একটা বিশ্লেষণধর্মী কলাম লিখলে চাকরিটা পাওয়া যাবে তো?
এই তো আর বছরখানেক পর জাতীয় নির্বাচন। এই সময়ে এসে আমাদের মন্ত্রী মশাই এমন মন্তব্য করে বসলেন—‘ভারতে গিয়ে আমি বলে এসেছি, আমাদের যেন সরকারে রাখা হয়!’ এ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে যা যা করার জন্য ভারতকে তিনি অনুরোধ করেছেন। একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের মন্ত্রী হয়ে এ কথা বলার পরও তিনি দিব্যি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এই নিয়ে একটা বস্তুনিষ্ঠ কলাম লিখলে কি চাকরিটা পাওয়া যাবে?
শুনেছি অভিজ্ঞতা ছাড়া দেশে চাকরি পাওয়া বড্ড কঠিন! দেশসেরা গণমাধ্যমে দীর্ঘদিন দেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে স্রেফ দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের জন্য কলম হাতে নেওয়ার অভিজ্ঞতা থাকলে কলামিস্ট চাকরিটা কি পাওয়া যাবে? নাকি এর সঙ্গে তেল, চাল, ডাল মিশিয়ে জগাখিচুড়ি বানানোর অভিজ্ঞতাও থাকতে হবে?
সার্বিক বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও কিছুটা চাপের মধ্যে আছে। এই চাপ থেকে বের হতে বিদেশে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনুরোধ করা হয়েছে, তাঁরা যেন বেশি বেশি করে বৈধ পথে দেশে টাকা পাঠান। প্রবাসীরা তো বছরের পর বছর দেশের অর্থনীতিতে অবদান রেখে চলেছেন। এবারও নিশ্চয় তাঁরা নিজেদের মতো করে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবেন।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যে দেশের বড় কর্তাব্যক্তিরা নিজেরাই বিদেশে অবৈধ পথে টাকা পাচার করে ইউরোপ-আমেরিকায় বেগমপাড়া বানান, সে দেশের সরকারকে এখন প্রবাসীদের কাছে অনুরোধ করতে হচ্ছে, তাঁরা যেন বৈধ পথে বেশি বেশি করে টাকা পাঠান! তা ছাড়া আপনারা প্রবাসীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা কী দিচ্ছেন? সুযোগ-সুবিধার কথা বাদই থাক, দেশের বিমানবন্দরে তাঁরা যেন কোনো হয়রানির শিকার না হন; সেই ব্যবস্থাই তো করতে পারছেন না! উল্টো আপনাদের কর্তাব্যক্তিরা বিমানবন্দরে চড় মেরে বসছেন।
এ নিয়ে একটা বিস্তারিত কলাম লিখলে কলামিস্ট চাকরিটা পাওয়া যাবে কি?
শুনেছি অভিজ্ঞতা ছাড়া দেশে চাকরি পাওয়া বড্ড কঠিন! দেশসেরা গণমাধ্যমে দীর্ঘদিন দেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে স্রেফ দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের জন্য কলম হাতে নেওয়ার অভিজ্ঞতা থাকলে কলামিস্ট চাকরিটা কি পাওয়া যাবে? নাকি এর সঙ্গে তেল, চাল, ডাল মিশিয়ে জগাখিচুড়ি বানানোর অভিজ্ঞতাও থাকতে হবে?
ড. আমিনুল ইসলাম সিনিয়র লেকচারার, এস্তোনিয়ান এন্টারপ্রেনরশিপ ইউনিভার্সিটি। ই-মেইল: [email protected]