ব্যবসায়িক রেকর্ড জাল করাবিষয়ক ৩৪টি অপরাধমূলক কাজের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তবে এর কারণে রিপাবলিকান পার্টিতে তেমন কোনো অদলবদল আসার সম্ভাবনা নেই।
ট্রাম্প এখনো শুধু রিপাবলিকান পার্টির অবশ্যম্ভাবী মনোনীত প্রেসিডেন্ট প্রার্থীই নন; বরং রিপাবলিকানরা বারবার প্রমাণ করেছেন, ট্রাম্প যত বড় অবিবেচনাপ্রসূত কাজই করুন না কেন, তাঁকে তাঁরা ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখতে রাজি আছেন।
এটি নিশ্চিত করে বলতে পারি, সংবাদপত্রের শিরোনামগুলোতে ট্রাম্পের অবস্থানকে যতটা শক্তিশালী হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে, তিনি ততটা শক্তিশালী অবস্থায় আসলে নেই। ফক্স নিউজের মতো ডানপন্থী মিডিয়া, থার্ড পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী, ডার্কমানি গ্রুপ এবং রাশিয়ার প্রভাব-সংশ্লিষ্ট ক্রিয়াকলাপের সহায়তা যদি ট্রাম্প না পান, তাহলে আজ তিনি যত ভোট পাবেন বলে মনে হচ্ছে, তার চেয়ে বহুগুণ কম ভোট তাঁর বাক্সে জমা হবে।
তবু যে হাই প্রোফাইল রিপাবলিকানরা একসময় ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনা করেছেন, তাঁরাও নভেম্বরের আগে এই সাবেক প্রেসিডেন্টের ভালো দিকগুলো তুলে ধরার জন্য উতলা হয়ে উঠেছেন। আমরা ভালো করেই জানি, ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ (মাগা) স্লোগান শুনে তাঁদের মধ্যে এই ভাবের উদয় হয়নি। এর পেছনে আছে অন্য কারণ। কী সেই কারণ?
এ ধরনের হাই প্রোফাইল রিপাবলিকানের নামের তালিকা ধরে যদি এগোই, তাহলে প্রথমেই যাঁর নাম আসবে তিনি হলেন সাবেক মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার। তিনি একসময় ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডকে ‘বিবমিষা উদ্রেককারী’ এবং ‘ঘৃণাজনক’ হিসেবে বর্ণনা করে এই উপসংহার টেনেছিলেন যে ট্রাম্পের ‘ওভাল অফিসের ধারেকাছেও থাকা উচিত হবে না।’
কিন্তু সেই উইলিয়াম বারের সুর এখন একেবারে উল্টে গেছে। সম্প্রতি ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে তিনি নিশ্চিত করেছেন, আগামী নভেম্বরের নির্বাচনে তিনি ট্রাম্পকে ভোট দেবেন। তিনি প্রেসিডেন্টের ‘নিরঙ্কুশ নির্বাহী ক্ষমতা তত্ত্ব’ বলে এমন একটি ধারণা দিয়েছেন, যেখানে প্রেসিডেন্ট যা করবেন, সেটিই আইনি দিক থেকে বৈধ হবে। তিনি এই তত্ত্বের বিভিন্ন ভালো দিক তুলে ধরে তার প্রশংসা করেছেন।
ধারণা করি, ট্রাম্পকে সমর্থন দেওয়ার এই ভণ্ডামিকে ছোট করে দেখানোর চেষ্টা হিসেবেই উইলিয়াম বার দাবি করেছেন, তিনি ‘সব সময় বলে এসেছেন’, ‘দুটি খারাপ পছন্দের মধ্যে’ যেটি কম ক্ষতিকর, সেটিকে বেছে নেওয়া তাঁর ‘কর্তব্য’।
তিনি বলেছেন, তাঁর বিশ্বাস, যে প্রার্থী ‘দেশের জন্য কম ক্ষতিকর’ তাঁকেই তিনি বেছে নেবেন এবং সেই বিবেচনায় তাঁর উচিত হবে ‘রিপাবলিকান টিকিট পাওয়া’ প্রার্থীকে ভোট দেওয়া।
কিন্তু যে বিষয়টি বুঝতে আমাদের ভুল করা চলবে না তা হলো, বারের এই চিন্তায় আসার পেছনে দেশের লাভের কোনো ব্যাপার নেই, তাঁর এই ভাবনার অনুপ্রেরণা হলো তাঁর ব্যক্তিগত লাভ।
ট্রাম্প বলে রেখেছেন, তিনি জিতলে তাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিকভাবে যাঁরা ‘অন্যায়’ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে তিনি প্রতিশোধ নেবেন। বার ভালো করে জানেন, ট্রাম্প জিতলে তিনি সত্যিই প্রতিশোধ নেবেন।
ট্রাম্প ইতিপূর্বে এ-ও বলেছেন, যাঁরা প্রকাশ্যে তাঁর সামনে মাথা নত করবেন, তাঁদের তিনি ‘ক্ষমা’ করবেন। উইলিয়াম বার জেলে যেতে চান না। এ কারণে আপাতত অনুশোচনা যত অপমানজনকই হোক, তিনি তা দেখিয়ে বড় অপমান থেকে বাঁচার চেষ্টা করে দেখবেন।
এরপর ওকলাহোমার সিনেটর জেমস ল্যাঙ্কফোর্ডের কথা বলা যায়। দ্বিদলীয় অভিবাসন বিল নিয়ে আলোচনায় তাঁর ভূমিকার জন্য তাঁকে ট্রাম্প আক্রমণ করেছিলেন। তা সত্ত্বেও ল্যাঙ্কফোর্ড সম্প্রতি ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছেন। বার, ল্যাঙ্কফোর্ড এবং নিউ হ্যাম্পশায়ারের গভর্নর ক্রিস সুনুনুর মতো অন্যদের এভাবে জনসমক্ষে আত্মবিক্রয়ে রাজি হওয়ার পেছনে আরেকটি কারণ আছে।
দ্য আটলান্টিক ম্যাগাজিনের সাংবাদিক ম্যাককে কপিন্সের কথা থেকে সেই কারণ বোঝা যাবে। তিনি সম্প্রতি এক পর্যবেক্ষণে বলেছেন, ট্রাম্পের শিবিরে যোগ দিতে হলে রিপাবলিকানদের এখন আবশ্যিকভাবেই ‘তাঁদের সামাজিক (এবং রাজনৈতিক) ইকোসিস্টেম’ পরিত্যাগ করতে হবে।
রিপাবলিকান নেতারা প্রত্যেকে এমন একটি কর্তৃত্ববাদী আন্দোলনের ফসল, যা কিনা নেতার প্রতি সম্পূর্ণ আনুগত্য প্রকাশে ঢিলেমি করা সমর্থকদের ‘শুদ্ধ’ করার বিষয়ে কোনো দ্বিধা করে না।
আপনি এই আন্দোলনের সঙ্গে ‘ট্রাম্প’, ‘মাগা’, ‘আমেরিকা ফার্স্ট’—যা ইচ্ছা জুড়ে দিতে পারেন, তাতে আলোচ্য আন্দোলনের নেতৃত্বের পদাধিকার নিয়ে কোনো মতবিরোধ তৈরি হবে না। সবাই সেই আন্দোলনের নেতাকে নিঃশর্তভাবে মেনে নেবে। রিপাবলিকান পার্টি এখন কার্যত কাপুরুষ, খামখেয়ালি ও ফ্যাসিবাদীদের খপ্পরে পড়ে গেছে।
● রিড গ্যালেন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করার লক্ষ্যে সাবেক রিপাবলিকান কৌশলবিদদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্রপন্থী সংস্থা দ্য লিংকন প্রজেক্টের সহপ্রতিষ্ঠাতা
স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে অনূদিত