আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল: অন্য দেশের অভিজ্ঞতায় আইন সংস্কারে কিছু প্রস্তাব

১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনের কাঠামোয় জুলাই-আগস্টে সংঘটিত অপরাধগুলোর সুষ্ঠু বিচার করতে হলে অবশ্যই আইনটির এবং আইনসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের যথাযথ সংস্কার প্রয়োজন। সেই সংস্কারের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা যেতে পারে, তা নিয়ে লিখেছেন ইমরান আজাদ

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালফাইল ছবি

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এ বিষয়ে একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (প্রথম আলো অনলাইন, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪)।

মোটাদাগে যেসব সংশোধনীর কথা আপাতত বলা হচ্ছে, তার মধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধের সংজ্ঞার পরিমার্জনের বিষয়টি রয়েছে। এই অপরাধের সংজ্ঞায় অন্যান্য অপরাধের সঙ্গে গুম, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, যৌন দাসত্ব, জোরপূর্বক যৌনকর্মে বাধ্য করা, জোর করে গর্ভধারণ ইত্যাদি কর্মকাণ্ড অপরাধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দল যদি এই আইনের অধীনে কোনো অপরাধ করে, তাহলে সে দলকে ১০ বছর পর্যন্ত নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। খসড়া প্রস্তাবে এ-ও বলা হয়েছে যে বিচারপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য ট্রাইব্যুনাল চাইলে আদালতকক্ষের শুনানি সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবেন। এমনকি অভিযুক্ত ব্যক্তি ইচ্ছা করলে তাঁর পক্ষে বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ দিতে পারবেন।

এটা নিয়ে দ্বিমত করার কোনো সুযোগ নেই যে ১৯৭৩ সালের আইনি কাঠামোতে সুষ্ঠু বিচার করতে হলে অবশ্যই আইনটির এবং আইনসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও অংশীজনের যথাযথ সংস্কার প্রয়োজন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তাবিত সংশোধনীর অনেকগুলোই প্রশংসনীয়। তবে বিচার কার্যক্রম ফলপ্রসূ করতে আইনটি নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা, মতামত গ্রহণ এবং এ ধরনের অপরাধের বিচারের বৈশ্বিক অভিজ্ঞতার আলোকে বিবেচনাপ্রসূত সংস্কার আনা প্রয়োজন মনে করি। এই আইনের অধীনে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত অপরাধগুলোর বিচার সম্পন্ন করার পাশাপাশি এমনভাবে সংস্কার করা প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতেও যদি একই ধরনের অপরাধ বাংলাদেশে সংঘটিত হয়, তবে এই আইন দিয়েই তা বিচার করা যাবে।

ইকোসাইডের মতো অপরাধ প্রসঙ্গে

জুলাই-আগস্টের প্রেক্ষাপটে ইকোসাইডের (পরিবেশবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড) মতো কোনো অপরাধ সংঘটিত হতে আমরা দেখিনি। কিন্তু বাংলাদেশে সামনের দিনগুলোতে এই অপরাধটা সংঘটিত হবে না, সেটার তো কোনো নিশ্চয়তা নেই। সে জন্য আন্তর্জাতিক আইনের বিবর্তন ও উৎকর্ষসাধনের বিষয়টির কথা মাথায় রেখে এখনই আমাদের আইনে ইকোসাইড বা পরিবেশবিধ্বংসী কর্মকাণ্ডকে একটা স্বতন্ত্র অপরাধ হিসেবে যুক্ত করা যেতে পারে।

ইতিমধ্যে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক স্টপ ইকোসাইড ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক আইনের ১২ জন বিশেষজ্ঞ ১৯৯৮ সালের আইসিসি রোম সংবিধিতে ইকোসাইডকে স্বতন্ত্র অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ইকোসাইডের একটি আইনি সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছেন। এই ১২ জন বিশেষজ্ঞ দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশবিষয়ক উপদেষ্টা আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

বিশেষজ্ঞদের সেই সংজ্ঞাকে মডেল হিসেবে ধরে রোম সংবিধিতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার জন্য ২০২৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ভানুয়াতু, ফিজি ও সামোয়া যৌথভাবে জাতিসংঘের মহাসচিব এবং রোম সংবিধি সংশোধনের কাজে নিয়োজিত সংস্থা ‘ওয়ার্কিং গ্রুপ অন অ্যামেন্ডমেন্টস অব দ্য অ্যাসেম্বলি অব পার্টিস’-এর কাছে প্রস্তাব রেখেছে। আশা করা হচ্ছে, এ বছরের ২ থেকে ৭ ডিসেম্বর নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে অনুষ্ঠেয় আইসিসির অ্যাসেম্বলি অব পার্টিসে এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ট্রাইব্যুনাল নিয়ে অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা

১৯৭৩ সালের আইন সংস্কারের ক্ষেত্রে এ আইনে বর্ণিত কিছু কিছু অপরাধের সংজ্ঞা পুনর্নির্ধারণের ক্ষেত্রে ১৯৯৮ সালের রোম সংবিধির সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। যেমন আমাদের আইনে মানবতাবিরোধী অপরাধের সংজ্ঞাটি অসম্পূর্ণ। কারণ, রোম সংবিধি মোতাবেক এমনকি নব্বইয়ের দশকে রুয়ান্ডায় সংঘটিত আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারের জন্য প্রতিষ্ঠিত ট্রাইব্যুনালের সংবিধি অনুযায়ীও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের জন্য ওয়াইডস্প্রেড অর সিস্টেমেটিক অ্যাটাক ডিরেক্টেড এগেইনস্ট অ্যানি সিভিলিয়ান পপুলেশন (অর্থাৎ যেকোনো বেসামরিক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একটি বিস্তৃত অথবা পরিকল্পিত আক্রমণ) উপাদানটি অবশ্যই প্রমাণ করতে হয়। এ বিষয়টি আমাদের আইনে অনুপস্থিত।

অনেকে বলতে পারেন যে এই উপাদানের কথা আলাদাভাবে আইনে উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। কারণ, উপাদানটি ইতিমধ্যে কাস্টমারি ইন্টারন্যাশনাল ল বা আন্তর্জাতিক প্রথা আইনের অংশ হয়ে গেছে। ফলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালগুলো বিচারকার্য পরিচালনার সময় এই উপাদানকে চাইলেই অবজ্ঞা করতে পারেন না এবং নিশ্চিতভাবে অপরাধের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে এর বিচারিক প্রয়োগ ঘটে। যদি তা-ই হয়, এটাকে আইনে সরাসরি উল্লেখ করে দেওয়াই শ্রেয় এবং এতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অন্যান্য আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে আমাদের আইনে এ উপাদানের কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা থাকলে বিচারিক কাজ সহজতর হবে।

রোম সংবিধির ৯ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা আছে যে বিচারিক কাজে সহায়তার জন্য তথা অপরাধসংশ্লিষ্ট ব্যাখ্যা ও তার সুষ্ঠু প্রয়োগের জন্য ‘এলিমেন্টস অব ক্রাইমস’ (অপরাধ সংঘটনের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানসমূহ) শীর্ষক সহায়িকা অনুসরণ করা হবে। ২০১০ সালে দুই-তৃতীয়াংশ রাষ্ট্রের সম্মতিতে সহায়িকাটি প্রথম গ্রহণ করা হয়। এই সহায়িকায় বিস্তারিতভাবে বলা আছে যে কোনো অপরাধ প্রমাণ করার জন্য কোন কোন উপাদান প্রসিকিউশনকে আদালতে প্রমাণ করতে হবে।

এটা শুধু বাদী-বিবাদী বা আদালতের জন্য সহায়ক দলিল নয়; অপরাধ তদন্ত দলের জন্যও এটি খুবই কার্যকর দিকনির্দেশনামূলক সহায়িকা। কেননা প্রতিটি উপাদানের কথা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে দেওয়ায় তদন্ত দলের জন্য তদন্তকৌশল সঠিকভাবে নির্ধারণ করে যথাযথভাবে তদন্তকাজ সম্পন্ন করা সম্ভব। কারণ, এই ‘এলিমেন্টস অব ক্রাইমস’ মূলত রোম সংবিধিতে বলা অপরাধগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা হয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, রোম সংবিধির অনুচ্ছেদ ৭(১)(ক) অনুসারে মানবতাবিরোধী হত্যাকাণ্ড (ক্রাইম এগেইনস্ট হিউম্যানিটি অব মার্ডার) প্রমাণ করার জন্য অন্তত তিনটি উপাদান পৃথকভাবে প্রমাণ করতে হয়: (১) অভিযুক্ত ব্যক্তি এক বা একাধিক মানুষকে হত্যা/খুন করেছেন; (২) এই হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে বেসামরিক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একটি বিস্তৃত (ওয়াইডস্প্রেড) অথবা পরিকল্পিত (সিস্টেমেটিক) আক্রমণের অংশ হিসেবে এবং (৩) অভিযুক্ত ব্যক্তি এ ধরনের আক্রমণের বিষয়ে অবহিত ছিলেন বা তিনি নিজেই ইচ্ছা করে এ ধরনের আক্রমণ ঘটিয়েছিলেন। আমাদের ১৯৭৩ সালের আইনের সংশোধনের পাশাপাশি এ ধরনের একটা এলিমেন্টস অব ক্রাইমস দলিল প্রস্তুত করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

আইন প্রয়োগে জনবল ও অংশীজনদের প্রশিক্ষণ

শুধু আইনের সংশোধনী নয়; একই সঙ্গে যাঁরা আইনটা প্রয়োগ করবেন, অর্থাৎ বিচারক, বাদী-বিবাদীর আইনজীবী, তদন্ত কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আইন বিষয়ে পর্যাপ্ত (তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক) জ্ঞান থাকা নিশ্চিত করতে হবে। আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু করার পূর্বে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আইন বিষয়ে ৩ থেকে ৪ মাসের বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা উচিত। তাঁরা যেন আধুনিক প্রযুক্তি, যেমন ডিজিটাল এভিডেন্স, এআই, ডিপফেক, মিসইনফরমেশন ইত্যাদি নিত্যনতুন বিষয়ে প্রয়োজনীয় জ্ঞানসম্পন্ন হন, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

বর্তমানে সংখ্যায় কম হলেও নিম্ন আদালতের কিছু তরুণ বিচারক যাঁরা সুইজারল্যান্ড, জাপান, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক যুদ্ধ আইন, মানবাধিকার আইন ও ফৌজদারি আইন বিষয়ে পড়াশোনা করে দেশে ফিরে বিভিন্ন আদালতে কর্মরত, তাঁদের আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ে গবেষণালব্ধ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিভিন্ন অফিসে নিয়োগের জন্য বিবেচিত ব্যক্তিদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা যাচাই করে যতটা সম্ভব ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া অধিকতর যুক্তিযুক্ত।

অবস্থাদৃষ্টে প্রসিকিউশন অফিসে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি হিসেবে ইদানীং যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, যাঁদের কেউ কেউ একসময় কোনো কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের নেতাদের আইনজীবী হিসেবে এই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেই কাজ করেছিলেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কতটুকু নিরপেক্ষ থেকে সম্পূর্ণ পেশাগত দায়িত্ব তাঁরা পালন করবেন, সে বিষয়ে অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ নিয়ে আলোচনা

খসড়া সংশোধনীর প্রস্তাব অনুযায়ী, রাজনৈতিক দলকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নিষিদ্ধ করার আলোচনাও হয়েছে। তবে বিষয় হচ্ছে, রাজনৈতিক দলের ধারণা একটি বিমূর্ত ধারণা এবং রাজনৈতিক দল কখনো অপরাধ সংঘটন করতে পারে কি না, সেটি নিয়েও আলোচনা হতে পারে। মূলত রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্ব বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আনা হয়ে থাকে।

এ পর্যন্ত সুপ্রতিষ্ঠিত সব আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আইনি কাঠামো ও বিচারপ্রক্রিয়া পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে কোথাও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আইন দিয়ে রাজনৈতিক দলকে বিচার করা যায়নি বা নিষিদ্ধ করা হয় না। রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধকরণের বিষয়টি অন্যান্য আইনি কাঠামো অনুসারে বিবেচনা করা যেতে পারে।

১৯৭৩ সালের আইন নিয়ে ভবিষ্যতে সমালোচনা এড়াতে উপরিউক্ত বিষয়গুলো পুনর্বিবেচনা করার দরকার আছে।

ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রসঙ্গে

আমাদের ১৯৭৩ সালের আইনের অন্যতম দুর্বলতা হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধের শিকার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা পরিবারের জন্য কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিধান নেই। রোম সংবিধির আলোকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য একটা ভিকটিম ট্রাস্ট ফান্ড প্রতিষ্ঠা করার বিধান আইনে থাকা উচিত। যাদের অপরাধ প্রমাণিত হবে, বিশেষত ধনিক শ্রেণির অপরাধীর সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করে ওই ট্রাস্ট ফান্ডে জমা রাখার ব্যবস্থা করে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের কল্যাণে ব্যয় করার পন্থা বের করতে হবে। আর্থিক ক্ষতিপূরণ আদেশ প্রদানের পাশাপাশি ‘সিম্বলিক রেপারেশন’ প্রদানের বা আয়োজনের বিধান আইনে রাখা উচিত।

ট্রাইব্যুনালে বিদেশি আইনজীবীদের নিয়োগের বিধানসংবলিত প্রস্তাবটি প্রশংসার দাবি রাখে। তবে এ ক্ষেত্রে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে আমাদের দেশি আইনজীবীরা যেন একটা লেভেল প্লেয়িং অবস্থানে থাকেন। এ জন্য বিচারকসহ আইনজীবীদের দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

পরিশেষে বলতে হয়, বিচারপ্রক্রিয়ায় নিরপেক্ষতা আনার জন্য সুচিন্তিত খসড়া প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে আমাদের বিচারব্যবস্থার প্রতি দেশি ও আন্তর্জাতিক আস্থা বৃদ্ধি পাবে। কম্বোডিয়ার যুদ্ধাপরাধ আদালতের মতো কিংবা রোম সংবিধির অধীনে প্রতিষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের (আইসিসি) মতো বিচারকাজ সরাসরি সম্প্রচার করা গেলে আমাদের ট্রাইব্যুনালের স্বচ্ছতা অনেকাংশে বেড়ে যাবে।

সাধারণ মানুষের অনুধাবনের ব্যবস্থা

কম্বোডিয়ার সরকার বাসে করে গ্রামাঞ্চল থেকে বিভিন্ন বয়সীদের, বিশেষ করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের যুদ্ধাপরাধ আদালতের বিভিন্ন শুনানিতে নিয়ে আসে এ জন্য যে তারা যেন নিজ চোখে দেখে বুঝতে পারে, তাদের অঞ্চলে অতীতে কী ধরনের অপরাধ হয়েছিল এবং বর্তমানে কীভাবে সেগুলোর বিচার নিশ্চিত করা হচ্ছে। আইনে একটা নীতির কথা খুব গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়, ন্যায়বিচার কেবল আয়োজন করলেই হয় না, ন্যায়বিচার যে আসলেই হয়েছে, তা সাধারণ মানুষের জন্য অনুধাবনের ব্যবস্থাও করতে হয়।

জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একের পর এক মামলা করা হচ্ছে। এতে ট্রাইব্যুনালের পূর্ণাঙ্গ সংস্কার করা ছাড়া বিচারকাজ শুরু করলে কোনোভাবেই ট্রাইব্যুনালের তথা বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তির জন্য সহায়ক হবে না। এই বিচার যেন শেষ পর্যন্ত কোনোভাবেই একটা প্রতিহিংসাপরায়ণ বিচার না হয়, সে জন্য জনগণের আস্থা অর্জন করা এবং সব মত-পথের মানুষের সঙ্গে উন্মুক্ত আলোচনা করা দরকার।

  • ইমরান আজাদ সহকারী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস