দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পরপর বেশ কয়েকটি ধর্ষণ এবং যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেকে এনে গৃহবধূকে ধর্ষণের মতো ঘটনার অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়টিকে সতর্কও করেছে। এদিকে চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন করার অভিযোগ উঠেছে।
এ অভিযোগগুলো প্রমাণসাপেক্ষ ব্যাপার। তবে কিছু বিষয় নিয়ে সাধারণের মনে প্রশ্ন তো জাগতেই পারে। এই যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযুক্ত অধ্যাপককে তিন মাসের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এটির কারণ কী হতে পারে?
ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগ তদন্ত করা তো কোনো রকেট সায়েন্স নয়। তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে দুই সপ্তাহের মধ্যেই কি তদন্ত শেষ করে যেত না? এটি না করে কেন তাঁকে তিন মাসের ছুটিতে পাঠানো হলো? যাহোক, এটি হয়তো কর্তৃপক্ষ ভালো বুঝবে। তাদের নিশ্চয় এ বিষয়ে আলাদা কোনো যুক্তি আছে। তবে এটি তো সত্য যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এ ধরনের যৌন নিপীড়নের ঘটনা বেড়েই চলেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা বলতেই হয়।
আমাদের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় কিছু ব্যাপার প্রচলিত আছে। এই যেমন প্রথম ক্লাসেই কোনো শিক্ষক হয়তো ছাত্রছাত্রীকে জিজ্ঞাসা করে বসেন, তোমার বাবা কী করেন?’ কিংবা ‘তোমার জিপিএ কত?’ অথবা ধরুন অন্যান্য ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ। এই চর্চা কিন্তু আমাদের দেশে প্রচলিত আছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এসব বিষয় কি একজন শিক্ষকের আদৌ জানার দরকার আছে?
তাঁর কাজ তো ছাত্রছাত্রীদের পড়ানো। জটিল বিষয়গুলোকে তিনি সহজভাবে ছাত্রদের মধ্যে উপস্থাপন করবেন, যাতে তারা বুঝতে পারে। পুরো সম্পর্কই তো হবে একাডেমিক। এখানে ছাত্র বা ছাত্রীর বাবা কী করেন? তার বর্তমান জিপিএ কত? এসব কেন জানতে হবে?
কারণ, সেটা কখনোই পাবলিক করা হয় না। কোনো কোর্সের রেজাল্টই পাবলিক করা হয় না। ছাত্রছাত্রীরা নিজেরাই কেবল জানে নিজেদের জিপিএ। যুক্তরাষ্ট্রে তো এমনও নিয়ম আছে, ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে প্রেম-ভালোবাসায় জড়ালে চাকরি চলে যায়।
অনেক সময় দেখা যায়, কোর্স টিচাররা ক্লাসে এসে প্রথম দিনই ঘোষণা করেন, আমার কোর্স কিন্তু অনেক কঠিন। এই কোর্সে কেউ এত জিপিএর বেশি পায় না ইত্যাদি। এসব কেন বলা হয়? কেন ছাত্রছাত্রীদের এভাবে প্রথম দিনই ভয় পাইয়ে দেওয়া হয়? এসব বলে কি শিক্ষকেরা ছাত্রদের কাছ থেকে আলাদা একটা মূল্য নিতে চান? তাঁদের তো বরং ছাত্রছাত্রীদের ভয় ভাঙিয়ে বিষয়টিকে সহজভাবে উপস্থাপন করার কথা। এটিই তো তাঁদের কাজ।
মূল বিষয় হচ্ছে লেখাপড়ার বিষয় ছাড়া অন্য বিষয় নিয়ে তো শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পরিবেশে অন্তত কথা বলার প্রয়োজন নেই। পশ্চিমা অনেক দেশেই আমরা কেউ জানিও না কোন ছাত্রের জিপিএ কত।
কারণ, সেটা কখনোই পাবলিক করা হয় না। কোনো কোর্সের রেজাল্টই পাবলিক করা হয় না। ছাত্রছাত্রীরা নিজেরাই কেবল জানে নিজেদের জিপিএ। যুক্তরাষ্ট্রে তো এমনও নিয়ম আছে, ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে প্রেম-ভালোবাসায় জড়ালে চাকরি চলে যায়।
তাই এই বিষয়গুলো আমাদের শিক্ষকদের বুঝতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে শিক্ষা ও গবেষণার জায়গা। এখানকার পরিবেশ হবে একাডেমিক। কারও ব্যক্তিগত বিষয়গুলো যেন একাডেমিক পরিবেশে আলোচনার বিষয়বস্তু না হয়।
ড. আমিনুল ইসলাম জ্যেষ্ঠ প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি
ই-মেইল: [email protected]